সাউন্ড অভ সাইলেন্স

“দ্য গ্র্যাজুয়েট” মাইক নিকোলসের সেরা সিনেমা কি-না বলতে পারব না, তবে আমি তার যতগুলো সিনেমা দেখেছি তার মধ্যে এটা সেরা। সেরা বললে কম বলা হবে, এটার সাথে তার অন্য সিনেমাগুলোর তুলনাই চলে না। সিডনি লুমেটের সাথে এক দিক দিয়ে তার মিল আছে। লুমেট জীবনের প্রথম সিনেমা দিয়েই বাজিমাত করেছিলেন, তার “১২ অ্যাংগ্রি মেন” যারা দেখেছে তারা বিষয়টা ভাল বুঝতে পারবে। নিকোলসও প্রথম সিনেমায় ভেল্কি দেখিয়েছিল- “হু’জ অ্যাফ্রেইড অভ ভার্জিনিয়া উলফ”। দ্য গ্র্যাজুয়েট তার দ্বিতীয় সিনেমা। প্রথমটা আমি দেখিনি, তবে দ্বিতীয়টা যে অনায়াসেই প্রথমটাকে ছাড়িয়ে যেতে পারে এটা বুঝতে কষ্ট হচ্ছে না। কত ভাল হলে সিনেমাটা এমন অন্ধ অনুরাগের দাবীদার হতে পারে বুঝতেই পারছেন।

দ্য গ্র্যাজুয়েট (১৯৬৭) এ যুক্তরাষ্ট্রের সমাজ-রাজনৈতিক বাস্তবতার অনেক ছাপ আছে। কিন্তু ষাটের দশকের সেই উত্তাল সময়ের সাথে ভাল পরিচয় না থাকায় আমি সেদিকে যাব না। অর্ধেক পৃথিবী ঘুরে এসে এই বাংলাদেশের একজন যুবকের জন্য এটা কত আবেদনময়ী হয়ে উঠতে পারে সেটাই বলব।

seduction

সদ্য স্নাতক হওয়া এক মার্কিন যুবক (বেন ব্র্যাডক) বাড়িতে ফিরে এসেছে। বেনের বিশাল এক ক্লোজ-আপ দিয়ে সিনেমা শুরু হয়। বেনের পুরো চরিত্র এই ক্লোজ-আপে ধরা পড়ে- লক্ষ্যহীন, উদভ্রান্ত, অজানা কোন কিছুর জন্য লালায়িত। এই লক্ষ্যহীন যুবককে সিডিউস করার চেষ্টা করে এক বর্ষীয়ান মহিলা (মিসেস রবিনসন) যে কি-না আবার তার বাবার পার্টনারের স্ত্রী।

সিনেমার মূল আকর্ষণ বেন চরিত্রে ডাস্টিন হফম্যানের অনন্যসাধারণ অভিনয়, মিসেস রবিনসন চরিত্রে অ্যান ব্যানক্রফটের শক্তিশালী অভিনয়, মাইক নিকোলসের অনন্যসাধারণ পরিচালনা এবং মোহনীয় ও যুতসই আবহ সঙ্গীত। এই সিনেমা দেখার আগে আমার প্রিয় ডাস্টিন হফম্যান চরিত্র ছিল “রেইন ম্যান” এর রেমন্ড। কিন্তু গ্র্যাজুয়েটের বেন এর সাথে হফম্যানের আর কোন অভিনয়েরই তুলনা চলে না। সিনেমা করার সময় তার বয়স ছিল ৩০ বছর, আর ব্যানক্রফটের ৩৬ বছর। অথচ সিনেমায় ঠিকই ব্যানক্রফটকে বর্ষীয়ান অথচ আকর্ষণীয় নারী হিসেবে ফুটিয়ে তোলা হয়েছে যার ৯০% কৃতিত্ব স্বয়ং ব্যানক্রফটেরই। বেনের এই কথায় মিসেস রবিন সনের প্রতিক্রিয়াটা দেখার মতো-

Mrs. Robnson, you’re trying to seduce me… aren’t you?

সিনেমার প্রথম অংশ শেষ হয় যখন বেন মিসেস রবিনসনেরই মেয়ের (এলেইন) প্রেমে পড়ে।

মাইক নিকোলস হলিউড ঘরানার রোমান্টিক কমেডি বানাতে চাননি। তার সিনেমায় রোমান্স থাকলেও সেটা মুখ্য না, কমেডিই মুখ্য। দ্য গ্র্যাজুয়েটের প্রতিটি দৃশ্যে পরিচালকের মেধার ছাপ দেখা যায়, মন্টেজ থেকে শুরু করে, কাট, জুম ইন-আউট, এক দৃশ্য থেকে সবার অন্তরালে অন্য দৃশ্যে চলে যাওয়া, থিমের সাথে মিল না রেখে মাঝেমাঝে একেবারে উল্টো দৃশ্য পরিবেশন সবকিছু মিলে এর প্রতিটি মুহূর্ত উপভোগ্য করে তুলেছে। একটি দৃশ্যে সরাসরি সেক্স না দেখিয়ে নিকোলস কাট করেছেন। বেন ঠাস করে দরজা বন্ধ করে, শুরু হয় “দ্য সাউন্ডস অভ সাইলেন্স” গানটি। নিরবচ্ছিন্ন কোন দৃশ্য না দেখিয়ে এ সময় পরিচালক অনেকগুলো আপাত সম্পর্কহীন দৃশ্য দেখান, সাউন্ডস অভ সাইলেন্স শেষে “এপ্রিল শি উইল কাম” শুরু হয়। দুইটি গানের সমান দীর্ঘ এই মন্টেজ সিকোয়েন্স আমার জীবনে দেখা অন্যতম সেরা সিনেমাটিক দৃশ্য। এছাড়া টোস্টার থেকে হঠাৎ করে উঠে আসা কয়েক টুকরো পাউরুটি, চিড়িয়াখানায় বানরদের নিয়ে মশকরা ইত্যাদি অনেক দৃশ্যই উল্লেখ করার মত। আসলে এই সিনেমার এমন কোন দৃশ্য নেই যা স্মরণীয় না। আর দৃশ্যগুলোর শতকরা ৯০ ভাগই বেনকে নিয়ে।

আবহ সঙ্গীত সিনেমাটিকে পরিপূর্ণ করে তুলেছে। মূলধারার সমসাময়িক গান ব্যবহার করে এত সুন্দর আবহ খুব কম পরিচালকই তৈরি করতে পারে। আসলে গানগুলোই গ্র্যাজুয়েটের সমাজ-রাজনৈতিক আবেদন তৈরি করেছে। Simon ও Garfunkel তাদের “দ্য সাউন্ডস অভ সাইলেন্স” লিখেছিলেন মূলত কেনেডি হত্যা পরবর্তী মার্কিন সমাজের অস্থিরতা নিয়ে। এই অস্থিরতার সাথে বেঞ্জামিন ব্র্যাডকের অস্থিরতার এক নৈসর্গ্যিক সমন্বয় ঘটিয়েছেন নিকোলস। প্লেন থেকে নেমে বেন যখন লবির দিকে যাত্রা শুরু করে তখনই প্রথম সাউন্ডস অভ সাইলেন্স বাজে, প্রায় পুরোটা। মিসেস রবিনসনের সাথে সম্পর্ক শুরুর পর বেনের মানসিক ও শারীরিক অবস্থা প্রকাশে এটা আবারও উঠে আসে, সবশেষে এক কিংকর্তব্যবিমূঢ় বেনের পেছনে আবার বেজে ওঠে সাউন্ডস অভ সাইলেন্স।

অন্তিম মুহূর্তেই আসলে দ্য গ্র্যাজুয়েটের মূল সুর বোঝা যায়, একটিমাত্র চাহনি, সাথে ভেসে আসা সুর, অস্থির লিরিকের (সাউন্ড অভ সাইলেন্স) সার্থক চিত্রায়ন-

And in the naked light I saw
Ten thousand people, maybe more.
People talking without speaking,
People hearing without listening,
People writing songs that voices never share
And no one dared
Disturb the sound of silence.

এই এন্ডিং সিকোয়েন্স আমার জীবনে দেখা অন্যতম সেরা দৃশ্য। তবে অবশ্যই খেয়াল রাখতে হবে, এটা কমিক। এখানে হলিউডের রোমান্টিক কমেডির স্বর্ণযুগের অনেক উপাদান পাওয়া গেলেও দৃশ্যায়ন একেবারে অন্যরকম। “ইট হ্যাপেনড ওয়ান নাইট” এ বিয়ের অনুষ্ঠান থেকে নায়ক-নায়িকার পলায়নের সাথে এখানকার পলায়ন দৃশ্য মিলিয়ে দেখলেই ব্যাপারটা বোঝা যায়। আগের পলায়নটা যেখানে রোমান্টিকভাবে কমেডিক এখানকার পলায়নটা সেখানে প্যারডিকভাবে কমেডিক।

সিনেমায় কিছু ফাস্ট মোশনের ব্যবহার লক্ষ্যনীয়। এলেইনকে খুঁজতে গিয়ে বেন যখন দৌড়াতে থাকে তখন নিকোলস ইচ্ছে করেই সেটাকে চার্লি চ্যাপলিন স্টাইলে ফাস্ট ফরওয়ার্ড করে দেন, পরে আরও একটি দৃশ্যে এই ফাস্ট ফরওয়ার্ড দেখা যায়, পেছনে থাকে বিশালকায় গীর্জা। এছাড়া গীর্জার ভেতর বেনের চিৎকারের দৃশ্যটাকে অনায়াসেই ক্রুশবিদ্ধ যীশুর সাথে তুলনা করা যায়।

সিনেমা দেখার পর আমি সাধারণত রজার ইবার্টের রিভিউ পড়ি। এবারও পড়লাম। ১৯৬৭ সালে মুক্তি পাওয়ার পর ইবার্ট খুবই পজিটিভ রিভিউ লিখেছিলেন। কিন্তু ১৯৯৭ সালে ৩০ বছর পূর্তি উপলক্ষ্য পুনরায় মুক্তি পাওয়ার পর তিনি খানিকটা নেগেটিভ রিভিউ দিয়েছেন। তার মতে দ্য গ্র্যাজুয়েটের একমাত্র জীবিত চরিত্র মিসেস রবিনসন। এজন্য ইবার্টের পরবর্তী রিভিউটা হয়েছে পুরোপুরিই Simon ও Garfunkel এর “মিসেস রবিনসন” গানের লিরিকের মত। এ বিষয়ে আমিও একমত। এখানে একমাত্র মিসেস রবিনসনই পূর্ণাঙ্গ মানুষ, ইবার্ট তো তাকে বলতে গেলে প্রণামই করেছে। তবে অপূর্ণাঙ্গ হলেও তো অন্যান্য চরিত্রগুলো মানুষ। মানুষকে পূর্ণাঙ্গ হতে হবে এমন তো কোন কথা নেই। বেন হয়তো উত্তাল ষাটের দশকের মার্কিন যুবকদের প্রতিনিধিত্ব করে না, এলেইন হয়তোবা অবিশ্বাস্য চরিত্র, তারপরও সিনেমাটা আগাগোড়া উপভোগ্য এবং মনে অনুরণন জাগানোর মত।

দ্য গ্র্যাজুয়েটের জন্য করা Simon ও Garfunkel এর তিনটি গান:

দ্য সাউন্ডস অভ সাইলেন্স

Get this widget | Track details | eSnips Social DNA

[উল্লেখ্য এই গানের একটি বাংলা সংস্করণ আছে, চন্দ্রবিন্দুর গাওয়া, নাম “মৌন মুখরতা”। বাংলাটাও খুব সুন্দর।]

চন্দ্রবিন্দু – মৌন মুখরতা

Get this widget | Track details | eSnips Social DNA

স্কারবরো ফেয়ার

Get this widget | Track details | eSnips Social DNA

মিসেস রবিনসন

Get this widget | Track details | eSnips Social DNA

২৫ টি মন্তব্য : “সাউন্ড অভ সাইলেন্স”

  1. কামরুল হাসান (৯৪-০০)

    মাইক নিকোলসের অন্য দুইটা ছবি দেখেছি, চার্লি উইলসন ওয়ার (টম হ্যাঙ্কস) আর ক্লোজার (জুলিয়া রবার্টস)। ভালো লেগেছিলো, বিশেষ করে চার্লি উইলসন ওয়ারের মেকিং খুব ভালো।

    এটা দেখা হয় নায়।

    চন্দ্রবিন্দুর 'মৌন মুখরতা' আমার খুব পছন্দের গান, কিন্তু এটা যে এই ছবির জানা ছিলোনা। ইংরেজিটা শুনলাম, এটাও ভালো লেগেছে।
    পারলে পোস্টের শেষে 'মৌন মুখরতা'র লিঙ্ক দিয়ে দিস, দুটো পাশাপাশি শুনলে তুলনা করা যায়।

    সুন্দর রিভিউ।


    ---------------------------------------------------------------------------
    বালক জানে না তো কতোটা হেঁটে এলে
    ফেরার পথ নেই, থাকে না কোনো কালে।।

    জবাব দিন
  2. নূপুর কান্তি দাশ (৮৪-৯০)

    ছবিটা দেখা হয়নি।
    তবে এত প্রাঞ্জল ভাষায় তুমি বলেছো
    যে না দেখেও উপলব্ধি করা গেলো ছবিটার মাহাত্ম্য।
    অসাধারণ তোমার গদ্য লেখার হাত মুহাম্মদ।
    ছবিটা নিশ্চয়ই দেখবো।

    জবাব দিন
  3. সাল্লু (৯২/ম)

    কিছুদিন আগে চ্যানেল সার্ফিং করতে করতে হঠাৎ এক ফরাসী চলচিত্র পরিচালকের(নাম মনে নাই) সাক্ষাৎকারের ২/৩ টা কথা কানে গেল।

    : পরিচালক হিসেবে আপনার সবচেয়ে বড় প্লাস পয়েন্ট কি?
    : স্মার্ট অডিয়েন্স, যারা আমার ক্রিয়েটিভিটির সাথে রিলেট করতে পারে।
    : আর সবচেয়ে বড় মাইনাস পয়েন্ট কি?
    : স্টুপিড অডিয়েন্স, যাদের গ্রস সেন্সিবিলিটি বড় বোমব্লাস্ট বা আইক্যান্ডি কোনোকিছু ছাড়া মুভড্ হয় না।

    অডিয়েন্স হিসেবে আমি অবশ্যই উপরিউক্ত ২য় শ্রেনীটিতে। “দ্য গ্র্যাজুয়েট” ছবিটা ৫০বার দেখলেও তার ভেতরের এই শৈল্পিক মাধূর্য্য আমি ধরতে পারতাম না। মুহাম্মদ তোমাকে ধন্যবাদ, এই রিভিউ পড়ার পর আমি “দ্য গ্র্যাজুয়েট” দেখার ট্রাই নিব। দেখি একটা মুভির জন্য হলেও নিজেকে "স্মার্ট অডিয়েন্স"-এ উন্নীত করা যায় কিনা।

    জবাব দিন
    • মুহাম্মদ (৯৯-০৫)

      আমি নিজেকে কোন শ্রেণীতে ফেলছি না।
      তবে অবশ্যই মনে করি, সিনেমা দেখার আসল মজা পাওয়া যায় পরিচালকের সৃজনশীলতার সাথে নিজেকে জড়িয়ে নিতে পারলে। এটা করতেই হবে এমন কোন কথা নেই, তবে করতে পারলে যে মজা সেটার তুলনা নেই।

      সিনেমাটা দেখতে পারেন। তবে মনে রাখা উচিত, এটা কাহিনী নির্ভর সিনেমা না। এখানে নিকোলসের কমেডি সেন্স এবং সৃজনশীলতাই মুখ্য যা সে সময়কার মার্কিন সমাজে খুব গুরুত্বপূর্ণ মুখপাত্র হিসেবে দেখা দিয়েছিল। অনেকের মতে এটা সর্বকালের সেরা ২০টি মার্কিন সিনেমার একটি।

      তবে অনেকেরই মতে এটা সময়কে অতিক্রম করতে পারেনি। আবেদন কমে আসছে। মার্কিন না হওয়ার কারণেই বোধহয় আমি কমে আসা আবেদনটা পুরো ধরতে পারিনি। তবে বেন ও এলেইন চরিত্র দুটিকে ঠিকই অসম্পূর্ণ মনে হয়েছে।

      হলিউডী রোমান্টিক কমেডির স্বর্ণযুগটাও খেয়াল রাখবেন। ষাটের দশকের আগেই এই যুগ শেষ হয়েছে। ১৯৬৭ সালে সেই ঘরানায় পিউর কমেডি বানানোর চিন্তাটা ছিল বিপ্লবী যাতে সামাজিক অস্থিরতা ফুটিয়ে তোলা গেছে সহজেই। আমাদের চেয়ে মার্কিনীদের কাছে এর গুরুত্ব স্বভাবতই অনেক বেশি হবে।

      জবাব দিন
  4. এহসান (৮৯-৯৫)

    আজকাল সময় একদম পাচ্ছি না। ব্লগ লেখা দূরের কথা কমেন্টও করতে পারছি না। এই রিভিউ নিয়ে আজকে বেশ কিছুক্ষন কামরুলের সাথে কথা বললাম। সিনেমাটা দেখি নাই। কিন্তু কমেন্ট পরে বুঝলাম ক্লোজার আর চার্লি উইলসনস ওয়ার ও এই পরিচালকের সিনেমা।

    এই রিভিউটা আমার বেশ ভালো লেগেছে। গতানুগতিক মুহম্মদীয় রিভিউ না। কাহিনীর মধ্যে রেসলারের নীড় খোঁজা অথবা নো কান্ট্রি ফর ওল্ড ম্যান মার্কা না। তারমানে এইনা যে ওই রিভিউগুলা আমার ভালো লাগে নাই। আমার আসলে গল্প বলে দেয়া স্পয়লার ওয়ার্নিং থাকা সত্বেও কাহিনী ভিত্তিক রিভিউ পছন্দ না। এই রিভিউতে তুমি কিছু সংলাপ, দুয়েকটা দৃশ্য, অভিব্যক্তির কথা বলেছো।

    বেনের এই কথায় মিসেস রবিন সনের প্রতিক্রিয়াটা দেখার মতো... টোস্টার থেকে হঠাৎ করে উঠে আসা কয়েক টুকরো পাউরুটি, চিড়িয়াখানায় বানরদের নিয়ে মশকরা ইত্যাদি অনেক দৃশ্যই উল্লেখ করার মত... এলেইনকে খুঁজতে গিয়ে বেন যখন দৌড়াতে থাকে তখন নিকোলস ইচ্ছে করেই সেটাকে চার্লি চ্যাপলিন স্টাইলে ফাস্ট ফরওয়ার্ড করে দেন, পরে আরও একটি দৃশ্যে এই ফাস্ট ফরওয়ার্ড দেখা যায়, পেছনে থাকে বিশালকায় গীর্জা। এছাড়া গীর্জার ভেতর বেনের চিৎকারের দৃশ্যটাকে অনায়াসেই ক্রুশবিদ্ধ যীশুর সাথে তুলনা করা যায়।

    আর এজন্যই আমার বেশ ভালো লেগেছে। আগের রিভিউগুলা রজার ইবার্টের মতো সিনেমা ক্রিটিকের মনে হলেও এই রিভিউটা একজন সচেতন দর্শকের মনে হয়েছে। আর একজন ক্রিটিক থেকে একজন সচেতন দর্শককেই আমার কাছের মানুষ মনে হয়।

    অঃটঃ মন্টেজ শব্দটা ইংরেজী মনে হয়; অন্ততঃ ভিনদেশী। আমাদের দেশে আমরা এটার বাংলা ভার্সন ব্যবহার করি মনে হয়। আমরা বলি মন্তাজ তত্ব। আমি শিওর না। আমি মন্তাজের কথা শিখেছি ১৯৯৬ তে। বিতর্ক করতে গিয়ে। এরপর অনেকবার শব্দটা মন্তাজ হিসেবেই ব্যবহার করেছি। কেউ ভুল ধরিয়ে দেয়নি। তুমি কি আমাকে এই ব্যাপারটায় কনফার্ম করতে পারবা। হয়তো এতদিন ভুল জানতাম।

    জবাব দিন
    • মুহাম্মদ (৯৯-০৫)

      আমি আসলে সতর্কভাবেই সিনেমা নিয়ে লেখার এই নতুন স্টাইলটা গ্রহণ করেছি। আপনার অপেক্ষাকৃত ভাল লেগেছে জেনে ভাল লাগল। এই স্টাইল নিয়েছি কারণ এতে সময় কম লাগে এবং নিজের কথা বেশি বলা যায়।
      আগের স্টাইলেও মাঝেমাঝে লিখবো তবে সেক্ষেত্রে সেটা আর রিভিউ হবে না। যেমন ইনল্যান্ড এম্পায়ার ও বার্টন ফিংক নিয়ে লেখা দুটোকে আমি রিভিউ বলিনি।

      মন্টেজ আর মন্তাজের ব্যাপারটা আমি শিউর না। মন্তাজ যে আসলেই বাংলায় ব্যবহৃত হয় এটা নাটকে দেখেছি। একটা বাংলা নাটকে মন্তাজ শব্দটি ব্যবহৃত হতে দেখেছিলাম। তারপরও মূলধারার বাংলা চলচ্চিত্রমোদীদের সাথে পরিচয় না থাকায় এই বিষয়টা আমাকে কেউ সামনাসামনি ধরিয়ে দেয়নি। এজন্যই রিস্ক না নিয়ে মূল ইংরেজিটা ব্যবহার করেছি।
      আপনি পুরো নিশ্চিত হলে বইলেন, এরপর থেকে মন্তাজই ব্যবহার করবো...

      জবাব দিন
  5. সানাউল্লাহ (৭৪ - ৮০)

    দ্য গ্র্যাজুয়েট আগেই দেখেছি। তবে তোমার মতো এমন সচেতন দর্শকের দৃষ্টিতে নয়। সাল্লুর ভাষায় আমি দ্বিতীয় শ্রেনীর দর্শক। ছবিটির নির্মাণশৈলী ভালো লেগেছে। তোমার লেখায় এর ভেতরের আরো অনেক কিছু জানা গেল। ধন্যবাদ :clap:


    "মানুষে বিশ্বাস হারানো পাপ"

    জবাব দিন
  6. শওকত (৭৯-৮৫)

    এই ছবিটা প্রথম দেখি ভিসিআরের যুগে। সেই সময় থেকেই এটা প্রিয় মুভির একটি। অসাধারণ ছবি। সব দিক থেকে। আমার যে কোন তালিকায় এই ছবিটা ধাকবে। উপরি পাওনা সায়মন ও গারফুনকালের গান।
    শেষ দৃশ্যটাও অসাধারণ।

    জবাব দিন
  7. আসিফ (২০০১-'০৭)

    সাউন্ড অভ সাইলেন্স :clap: :clap: :clap: :clap: দা গ্র্যাজুয়েট মুভির জন্য তথা মাইক নিকলস সম্পরকে লেখার জন্য এর চাইতে ভাল কোনো টাইটেল পাওয়া যেত কিনা সন্দেহ, আসলে অসম্ভব। প্রথমবার আমি যখন দা গ্রাজুয়াট দেখা শুরু করি, নেহায়েত দাস্তিন হফমান এর ফ্যান বিধায় আর অস্কার পাওয়া চরিত্রের জন্যই, কিন্তু মুভি দেখে আমি পুরোপুরি বাক ্রুদ্ধ!! Sound OF Silence গান টার সাথে আমি এর আগে পরিচিত ছিলাম না।। কিন্তু এখানে গানটা এত অসাধারন আর পুরোপুরি পারফেক্ট মনে হইছে যে গানটা সম্পরকে আমি নেট এ ডিটেলস জানা শুরু করি......... এখনো গানটার সব অডিও এবং ভিডিও আমার কালেকশনে রেখে দিছি, গানটা পরবরতিতে জ্যাক স্নাইদার এর ওয়াচমেন সহ আর অনেক মুভিতে সুনেছি। মাইক নিকলস অসাধারন ডিরেক্টর, দা গ্র্যাজুয়েট আমার দেখা সরবকালের সেরা মুভিগুলার একটা, সময় পেলেই আমি এই মুভি দেখতে বসে যাই। শুনতে কিছুটা হাস্যকর বা অসংলগ্ন মনে হতে পারে, কিন্তু আসলে "কেয়ামত সে কেয়ামত' ইন্দিয়ায় বা বাংলাদেশে ''কেয়ামত থেকে কেয়ামত'' 😀 😀 😀 😀 যেমন ক্রেজ স্রিস্তি করেছিল। আমেরিকাতে এই মুভির আবেদন সেই সময়ে ছিল প্রায় একি রকম। আরথসামাজিক প্রেক্ষাপট থেকে থেকে শুরু করে ব্যক্তিগত ও সামজিক সম্পর্ক এবং মূল্যবোধ তখন এক ক্রান্তিকালের মধ্যে দিয়ে যাচ্ছিল, আর ঠিক সেই সময়ে দা গ্রাজুএট মুভিটি তার গতিপথ নির্দিষ্ট করে দিল। আরেকটি বিসয়ে আমি আপনার সাথে পুরোপুরি একমত।' ইট হ্যাপেন্ড ওয়ান নাইট' এ শেষ দৃশ্যে বিয়ের আসর থেকে পালিয়ে যাওয়া ছিল পুরোপুরি রোমান্টিক, দ্যা গ্রাজুয়াট এ সেটা আর তেমন ছিল না, পরিবর্তন সেখানে সুস্পষ্ট !
    অনেক কিছু নিয়ে একমত হলেও একটা বিষয় না বলে পারছি না। 12 Angry Men সিডনি লুমেট এর প্রথম বা সেরা মুভি, আমার মতে মনে হয়, দা গ্রাজুয়াত নয়, ওনার মত মাইক নিকলস এর সেরা মুভি প্রথম টি, “হু’জ অ্যাফ্রেইড অভ ভার্জিনিয়া উলফ”।।
    সিডনি লুমেট এর ডগ ডে আফটারনুন, সারপিকো , নেটওয়ার্ক, অল দা কিংস ম্যান আমার কাছে খুবি অসাধারন মানের কিছু মুভি মনে হয়েছে, কিন্তু প্রথম ছবিকে সে ছাড়িয়ে যেতে পারেনি। ঠিক তেমনি মাইক নিকলস এর প্রথম মুভি “হু’জ অ্যাফ্রেইড অভ ভার্জিনিয়া উলফ” এর অসামান্য কিছু মুহূর্তকেও আর কোনো মুভিতে তিনি ছাড়িয়ে যেতে পারেন নি।
    আমি তার “হু’জ অ্যাফ্রেইড অভ ভার্জিনিয়া উলফ”, দা গ্রাজুয়াট, কারনাল নলেজ থেকে শুরু করে হালের ক্লোজার বা চারলি উইলসন্স ওয়ার, প্রায় সব মুভিই দেখেছি। ক্লোজার এর সাথে প্লট বা কাহিনির বেজে “হু’জ অ্যাফ্রেইড অভ ভার্জিনিয়া উলফ” মুভির প্রচুর মিল রয়েছে। জুলিয়া রবারটস এবং নাতালিয়া পোর্টমেন এর মত লাস্যময়ী ২ অভিনেত্রী এবং ক্লাইভ ওয়েন এবং জুদ ল এর মত ড্যাজলিং ২ জন এক্টর থাকা সত্ত্বেও “হু’জ অ্যাফ্রেইড অভ ভার্জিনিয়া উলফ” এ লিজ টেলর এবং রিচারড বারটন এর তুলনায় টা নিতান্তই সধারন মানের বলে মনে হয়েছে। ক্লোজার এর মত 'রাফ ল্যাঙ্গুয়াজ' আমি আর কোন মুভিতে দেখিনি, রীতিমত খিস্তখেউর যাকে বলা যায় 😛 😛 😛 😛 । কিন্তু “হু’জ অ্যাফ্রেইড অভ ভার্জিনিয়া উলফ” মুভিতে অই ২ জন যে অভিনয় দেখিয়েছেন, আমার দেখা সরবকালের সেরা অভিনয়ের দিকে একেবারে প্রথম দিকের সারির মনে হয়েছে। শুধুমাত্র অভিনয়ের মাধ্যমে সাধারন মানের এক্টি মুভির প্লটকে 'চিরায়ত ক্লাসিক' এর পর্যায়ে উন্নিত করা... ::salute:: অবিশ্বাস্য !! (সম্পাদিত)

    জবাব দিন

মওন্তব্য করুন : রাশেদ (৯৯-০৫)

জবাব দিতে না চাইলে এখানে ক্লিক করুন।

দয়া করে বাংলায় মন্তব্য করুন। ইংরেজীতে প্রদানকৃত মন্তব্য প্রকাশ অথবা প্রদর্শনের নিশ্চয়তা আপনাকে দেয়া হচ্ছেনা।