হলুদ বরণ স্মৃতি

সিনেমা দেখলে বোঝা যায়, সিরিয়াল কিলার আর সিরিয়াল কিলিং বিষয় দুটো আসলে ভিন্ন। সিরিয়াল কিলার নিয়ে করা সিনেমা মানে রমরমে উত্তেজনা, অযাচিত কাটাছেঁড়া আর অকারণেই হৃদয় ভাঙা। কিন্তু সিরিয়াল কিলিং নিয়ে করা সিনেমা মানে সমাজ-মনস্তাত্ত্বিক চেতনা, সহিংসতার লুকোচুরি আর ভগ্ন হৃদয়ের শৈল্পিক উপস্থাপন। সিরিয়াল কিলিং বিষয়ক সিনেমার সংজ্ঞা না দিয়ে এতদিন কেবল “দ্য সায়লেন্স অভ দ্য ল্যাম্বস” (১৯৯১) নামটা বলে দিলেই হতো। কারণ সমাজ-মনস্তাত্ত্বিক দিক বাদ দিলেও কেবল থ্রিল আর রহস্যের বিচারে সে সবাইকে ছাড়িয়ে যেতে পারতো। “মেমোরিস অভ মার্ডার” (২০০৩) সেই অনন্যতায় ভাগ বসিয়েছে। দক্ষিণ কোরিয়ার তরুণ পরিচালক বোং জুন-ও (Bong Joon-ho) তার এই নাট্য চলচ্চিত্রে থ্রিল, ডার্ক হিউমার, ভ্যান গগীয় সিনেমাটোগ্রাফির যে শৈল্পিক সমন্বয় ঘটিয়েছেন তা রীতিমত বিস্ময়কর। শিল্প ও সমাজ-মনস্তত্ত্ব বিচারে সারিনুই চুয়োক (মূল কোরীয় নাম) যে সায়লেন্স অভ দ্য ল্যাম্বসকে কেবল স্পর্শই করেছে তা নয়, অনেক দিক দিয়ে ছাড়িয়েও গেছে।

পোস্টার

দক্ষিণ কোরিয়ার ইতিহাসের সবচেয়ে বড় ট্র্যাজেডিগুলোর একটি হল “হোয়াসেওং সিরিয়াল মার্ডার”- ১৯৮৬ থেকে ১৯৯১, এই পাঁচ বছরে Gyeonggi প্রদেশের ছোট্ট স্বল্পোন্নত শহর হোয়াসেওং এ এক কুখ্যাত সিরিয়াল কিলারের আবির্ভাব ঘটেছিল। তার শিকার ছিল মেয়েরা, মেয়েদেরকে ধর্ষণ এবং অমানবিক নির্যাতন করার পর সে হত্যা করতো। সেই দুঃস্বপ্ন ভেঙে দেশটির অনেকে এখনও জেগে উঠতে পারেনি, কারণ এখনও ধরা পড়েনি সেই পীশাচ। ১৯৯৫ সালে এই অপ্রাকৃতিক কাহিনী নিয়ে নির্মীত হয়েছিল মঞ্চ নাটক, ২০০৩ এ হল সিনেমা। তবে বোং জুন-ও সামাজিক দায়িত্ববোধ থেকেই থ্রিলের অশুভ উপাদানগুলো সযত্নে এড়িয়ে গেছেন। তার সিনেমায় কঙ্কাল হিসেবে বেছে নিয়েছেন সিরিয়াল মার্ডার, স্বৈরাচারী সামরিক সরকারের অমানবিকতাসহ বহুবিধ চাপে পিষ্ট একটি সমাজের অতি সাধারণ মানুষকে। ডার্ক হিউমার, অনিন্দ্য সুন্দর চিত্রগ্রহণ, থ্রিল এগুলোকে বলা যায় সিনেমাটির অস্থিমজ্জা। তবে মেমোরিস অভ মার্ডারের প্রকৃত স্বাদ পেতে হলে ফিরে যেতে হবে কঙ্কালের কাছেই- ১৯৮০-র দশকেও কোরিয়া এত উন্নত ছিল না। হোয়াসেওং এর মত কৃষিনির্ভর ছোট শহর পুরো কোরিয়া জুড়েই ছড়িয়ে ছিল। মিলিটারি কিলিং মেশিনের সিভিল ড্রিল করতে করতে মানুষ বিধ্বস্ত, ঠিক এমন সময়ই তাদের এক কিলিং হিউম্যান এর মুখোমুখী হতে হয়, যে মানুষ হিসেবে বেঁচে থাকার জন্যই খুন করে। সাধারণ মানুষকে এই নরপীশাচের সামনে দাড় করিয়ে দিয়ে সরকার মেতে থাকে বিরোধী পক্ষ দমনে। সাধারণ মানুষের অতি সাধারণ এবং ভোঁতা বুদ্ধির ছাপ পুরো সিনেমা জুড়ে স্পষ্ট। চতুর সরকারের প্রেতাত্মারা বারবারই এই সিনেমায় সিরিয়াল কিলারের খেলার সাথী হয়ে ওঠার খেলায় মেতে উঠে।

সারিনুই চুয়োক

সারিনুই চুয়োক

সাধারণ মানুষের তুলনায় মুল্য বিচারে সরকার কতটা অক্ষম সেটাই ফুটে উঠেছে সারিনুই চুয়োকের ডার্ক হিউমারে। সিনেমার প্রথম শটেই দেখা যায় একটি বাচ্চা ছেলে ক্ষেতের আড়াল থেকে বেরিয়ে এসে রাস্তায় দাড়িয়েছে। বড় দুজন লোক তাকে ঘরে যেতে বলছে কিন্তু সে যাচ্ছে না। সেচের জন্য তৈরী ড্রেনের যে অংশে ঢাকনা আছে সেদিকে যায় লোক দুটি, ছেলেটি গিয়ে বসে সেই ঢাকনার উপর। আবছা থেকে ধীরে ধীরে স্পষ্ট কর শটে দেখা যায় হাত পা বাঁধা একটি মেয়ে, মুখ দেখেই বোঝা যায় তার দেহে প্রাণ নেই। আয়না দিয়ে সূর্যের আলো চুরি করে গোয়েন্দা দেখছে মেয়েটিকে, ঢাকনার উপরে উপবিষ্ট ছেলেটি তার কিছুই জানে, সবার কথা অমান্য করে সে গোয়েন্দাকে ভেংচাচ্ছে। এটা আমার দেখা অন্যতম সেরা ব্ল্যাক কমেডি দৃশ্য। একটু একটু করে সিনেমার মূল দর্শনটি যখন রন্ধ্র রন্ধ্রে প্রবেশ করতে শুরু করে তখন কারোরই বুঝতে অসুবিধা হওয়ার কথা না যে, এই ভেংচি গোয়েন্দার প্রতি নয় বরং মানবতার প্রতি। যে শিশুটি এখনও মানবতা নিয়ে চিন্তার অবকাশ পায়নি যে যেন চিৎকার করে বলছে, সূর্যের আলো চুরি করে তোমরা তিল তিল করে যে সভ্যতা তৈরী করে চলেছো তার মূলে আছে মানবতা, আর দেখো কত সহজেই তার ভিত ভেঙে পড়ে, কত সহজেই মানুষ ভুলে যেতে চায় যে সে মানুষ। এর পরেও বেশ কয়েকটি দৃশ্যে ব্ল্যাক কমেডির ছাপ স্পষ্ট যদিও সামগ্রিকভাবে এটাকে ব্ল্যাক কমেডি বলার অবকাশ নেই।

হিচককীয় রহস্য চলচ্চিত্রের প্রধান উপাদান ব্যবহার করেছেন বোং জুন-ও। এই সিনেমার মূল দুটি শৈল্পিক মাত্রার প্রথমটি তৈরী হয়েছে এই উপাদানের মাধ্যমে। সিনেমায় অপ-মানবতার মুখোশ উন্মোচন করা হয়েছে ধীরে। এমনভাবে সাজানো হয়েছে যেন মানুষ প্রথমেই ভুলে যেতে না চায় যে সে মানুষ। প্রথম শটগুলো থেকে আমরা বুঝতে পারি, এই শহরেরই কোন এক কোণে এমন এক মানুষ বাস করে যাকে দেখার জন্য আমাদের আত্মা ফেটে যাচ্ছে। তাকে একবার সামনে পেতে চাই, মানব পরিচয় ভুলে গিয়ে রসিয়ে রসিয়ে খুন করার জন্য। এখানেই পরিচালক অসাধারণ সংযম ও মূল্যবোধের পরিচয় দিয়েছেন। প্রথমে শুধু ধর্ষণ ও খুনের খবর, এরপর মৃতদেহ, মারার আগে মেয়েগুলোর উপর দিয়ে বয়ে যাওয়া অমানবিক নির্যাতন সব একে একে নিয়ে এসেছেন। এমনকি প্রথমবারের মত সিরিয়াল কিলারের উপস্থিতি ক্যামেরায় ধরা পড়ে সিনেমার প্রায় এক ঘণ্টার মাথায়, আর তার মুখ আমরা কখনই দেখতে পাই না। হিচককীয় ছায়ামানবের ছবি দেখানো হয়েছে কিন্তু সেটা অধিকাংশ ক্ষেত্রেই চিত্তবিকারগ্রস্ত খুনীর না হয়ে হয়েছে গোয়েন্দার। এভাবে আমাদের শিরায় শিরায় বইতে শুরু করেছে সারিনুই চুয়োক, স্রোত বেড়েছে খুব ধীরে ধীরে, আমাদেরকে চিন্তা করার অবকাশ দিয়ে। এক্ষেত্রে একটি দৃশ্যের উল্লেখ না করলেই নয়। গোয়েন্দারা প্রথম দুটি ক্লু পেয়েছে- এই খুনী বৃষ্টির রাতে লাল পোশাক পরা মেয়েদের হত্যা করে। বৃষ্টি নেই তো খুনও নেই। তাই এক বৃষ্টির রাতে গোয়েন্দা বিভাগের একটি মেয়েকে লাল পোশাক পরিয়ে খুনীর দৃষ্টি আকর্ষণের চেষ্টা করা হয়। গভীর অন্ধকারেও কিছু লাইটের আলো আছে, রাস্তা দিয়ে ছাতা হাতে হেটে যাচ্ছে মেয়েটি, দুপাশে গভীর বন, বনের মধ্যে দিয়ে মেয়েটিকে অনুসরণ করছে আরেকজন গোয়েন্দা। রাজধানী সিউল থেকে আসা এই গোয়েন্দার মধ্যেই প্রথম হিচককীয় ছায়ামানব দেখা যায়।

সবুজ বরণ অবক্ষয়

সবুজ

সিনেমার দ্বিতীয় শৈল্পিক মাত্রা হচ্ছে নৈসর্গ্যিক সিনেমাটোগ্রাফি (চিত্রগ্রহণ)। হলুদ শস্যক্ষেত্রের এমন লং টেক শট প্রথম দেখেছিলাম আকিরা কুরোসাওয়ার “ইয়ুমে” (Dreams) ছবিতে। ড্রিমসের একটি দৃশ্য ছিল এমন: চিত্রকলার এক ছাত্র ভ্যান গগের ছবি দেখতে দেখতে ছবির মধ্যে ঢুকে গেছে, গগের সেই বিখ্যাত ছবি: “Wheatfield with Crows”। গিয়ে দেখে ক্ষেতের পাশে দাড়িয়ে ছবি আঁকছে স্বয়ং ভ্যান গগ (মার্টিন স্করসেজি ভ্যান গগের চরিত্রে অভিনয় করেছিল)। যাহোক মেমোরিস অভ মার্ডারের প্রথম দৃশ্যই ছিল- দিগন্ত বিস্তৃত ধান ক্ষেত, মাঝ দিয়ে একটি কাঁচা রাস্তা। এই রাস্তার ধারেই সেচের ড্রেন যেখানে প্রথম লাশটি পাওয়া যায়। সিউল থেকে গোয়েন্দাটি এমন একটি পথ ধরেই আসে যে পথে থাকে একটি কাকতাড়ুয়া। এটা দেখে বারবারই ভ্যান গগের ছবির কথা মনে হয়েছে। গগের ছবিতে মানুষ হিসেবে তার নিজের ক্ষয় ফুটে উঠেছিল, এই ছবি আঁকার পর সে খুব বেশিদিন বাঁচেনি। মেমোরিস অভ মার্ডারে হলুদাভ সৌন্দর্য্যকে আবহ সঙ্গীতের মাধ্যমে যে অতিপ্রাকৃতিক রূপ দেয়া হয়েছে তা যেন মানবতার অবক্ষয়কে নির্দেশ করে। এটাই বিশেষ শৈল্পিক মাত্রা যোগ করেছে। নয়ত এরকম সুন্দর-সুন্দর দৃশ্য তোলা তো কোন ব্যাপার না। বাংলাদেশের যেকোন গ্রামের যেকোন গাছের মাথায় যে বাবুই পাখির বাসা তার মধ্যে ক্যামেরা রেখে দিলে আপনিতেই এর চেয়ে সুন্দর দৃশ্য চলে আসবে। কিন্তু দৃশ্যের চেয়েও বড় ব্যাপার হচ্ছে তার সামনে আঁচল টেনে দেয়া। আঁচল ছাড়া যেমন শাড়ি হয় না, তেমনি শিল্পও হয় না।

ভ্যান গগ

ভ্যান গগের Wheatfield with crows

মেমোরিস অভ মার্ডারের এনসেম্বল কাস্টও লক্ষ্যণীয়। অনেকগুলো চরিত্র এবং সবগুলোই সমানভাবে বিকশিত, সমান হলেও প্রায় সমান। প্রতিটি চরিত্র নির্মাণে পরিচালকের যত্ন চোখে পড়ার মত। প্রধান দুই গোয়েন্দা চরিত্রের টানাপোড়েন চলে সিনেমার অর্ধেক জুড়ে। এরপর ক্লাইমেক্সের সাথে সাথে তাদের সম্পর্ক অন্য দিকে মোড় নেয়। গোয়েন্দা পাক দু-মান হোয়াসেওং এর স্থানীয়, কোরীয় মফস্বলের আট-দশটা সাধারণ গোয়েন্দার মতই মাথামোটা, রগচটে এবং ডেসপারেট। সিউল থেকে আসে গোয়েন্দা সা তে-ইয়ুন। পাক তাকে শোনায়- কোরিয়া দেশ ছোট, পায়ে হেটেই পার হওয়া যায়; তাই এদেশের গোয়েন্দারা গোয়েন্দাগিরি করে পা দিয়ে; আমেরিকা অনেক বড় দেশ বলেই এফবিআই গোয়েন্দাদের কাজ করতে হয় মাথা দিয়ে”। সা তে-ইয়ুনের বুদ্ধির খেলায় তার মধ্যে তৈরী হওয়া ইনফেরিয়রিটি কমপ্লেক্সে সিনেমার গোটা কাহিনী থিমের সাথে যেভাবে মিশে গেছে তা প্রশংসনীয়। এছাড়া আরেক স্থানীয় গোয়েন্দা জো ইয়ং-কু, দুই পুলিশ প্রধানসহ সবার অভিনয় লক্ষ্য করার মতো। তবে প্রধান চরিত্র ডিটেকটিভ পাক দু-মান চরিত্রে কোরিয়ার সবচেয়ে জনপ্রিয় অভিনেতা সোং কাং-ও এর অভিনয় অতুলনীয়।

টানেলের মুখে দুঃস্বপ্ন

টানেলের মুখে দুঃস্বপ্ন

পরিণতি

পরিণতি

মানুষের আবেগে যুক্তিগত স্বজ্ঞার যে প্লাটফর্ম আছে সেটাকেই নাড়িয়ে দেয় মেমোরিস অভ মার্ডার। স্কুলের একটি মেয়ে জাম্বুরিতে ট্রেনিং এর সময় পিঠে ব্যাথা পেয়েছিল, যে মেয়েটির সাথে কথা বলা দরকার ডিটেকটিভ সা তে-ইয়ুনের। ডিটেকটিভ তার ব্যাথ্যার জায়গাটিতে নিজ হাতে ব্যান্ড এইড পরিয়ে দিয়েছিল। সেই ব্যান্ড এইড নির্মম হাতে আবার খুলে নেয়া দেখতে হয় সা তে-ইয়ুনকে। ঠিক এইখান থেকেই শুরু হয় চূড়ান্ত ক্লাইমেক্স। পরিণতিসর্বস্ব কোন কাহিনী না থাকার পরও এখান থেকে শেষ পর্যন্ত পরিচালক যেভাবে পুরো সিনেমাকে গুটিয়ে এনেছেন তার সাথে একমাত্র ফ্রান্সিস ফোর্ড কপোলারই তুলনা চলে। এই অংশের মূল আকর্ষণ টানেলের শেষপ্রান্তে রেললাইনের ধারে ঘটে যাওয়া এক অ্যাক্টের নাটিকাটি। এখানে আবারও মনে পড়ে যায় আকিরা কুরোসাওয়ার কথা। ড্রিমসেরই আরেকটি দৃশ্য ছিল টানেলের মুখে, একজন মৃত সৈনিকের প্রেতাত্মার দুঃস্বপ্ন দেখার দৃশ্য। মেমোরিস অভ মার্ডারের এই নাটিকা পর্বে ডিটেকটিভ সা তে-ইয়ুনের দুঃস্বপ্ন এবং ডিটেকটিভ পাক দু-মানের পরিণত উপলব্ধি অভিনীত হয়, আমরা এগিয়ে যাই সিনেমার ভয়ংকর আকাঙ্ক্ষিত সমাপ্তির দিকে।

হলুদ বরণ স্মৃতি

হলুদ বরণ স্মৃতি

এই সিনেমার সমাপ্তি আমার জীবনে দেখা সেরা সমাপ্তিগুলোর একটি। পাক দু-মানকেই আবার দেখা যায় এখানে। প্রথম দৃশ্যে তাকে ভেংচি কেটেছিল একটি ছেলে, এবার তার দিকে অদ্ভুত বিষন্ন মুখে সহানুভুতি মাখা সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেয় একটি ছোট্ট মেয়ে। এটা তার সারা জীবনের প্রাপ্তি। যার পরিপক্কতা এসেছে মানবতার দলন দেখতে দেখতে তার জীবনের সেরা অপ্রাপ্তিটা স্মৃতির ডানায় ভর করে ফিরে আসে শেষ দৃশ্যে। ঠিক পুরনো দিনগুলোর মতই চারপাশে থাকে হলুদ বরণ প্রকৃতি, যেন তার স্মৃতির রঙ, যে স্মৃতিতে মানবতা আছে ঠিক ততটুকুই যতটুকু আছে অপ-মানবতা। অনেক বছর আগে এক নারকীয় টানেলের মুখে দাড়িয়ে যে মানুষটিকে সে দুচোখ ভরে দেখেছিল সে মানুষটির কথা তার আবার মনে হয়। অনেক দিন আগে সেই টানেলের মুখে দাড়িয়ে সে পরিপক্ক সুরে বলেছিল, আমি তোমাকে চিনতে পারছি না, আমি কিচ্ছু জানি না। কিন্তু আজকে হলুদ প্রকৃতির মাঝখান থেকে নিষ্পাপ শিশুর রূপ নিয়ে উঠে আসা এক দেবীর কাছ থেকে বর পেয়ে তার মনে হচ্ছে, না আমি তোমাকে চিনেছি যদিও দেখতে পাব না কোনদিন। এই চেনাটাই তো মানব জনমের সবকিছু। না, এত নিশ্চিত করে বলার কোন উপায় নেই, বরং বলি সেই অন্তিম মুহূর্তে পুরো স্ক্রিন জুড়ে যে মুখটি ভেসে বেড়াচ্ছিল ছিল তার প্রকৃতি আমি বুঝতে পারিনি, এই না বোঝাটাই বোধহয় মানবতা।

৩২ টি মন্তব্য : “হলুদ বরণ স্মৃতি”

  1. কামরুল হাসান (৯৪-০০)

    ছবির ফ্রেমগুলি দেখে মুগ্ধ হয়ে গেলাম। বুঝাই যায়, দারুণ কিছু শট নিয়েছেন বোং জুন-ও ।

    পেনড্রাইভে করে আমাকে দিয়ে যাবি নিশ্চয়ই। 🙂 আরো একটা ছবি চেয়েছিলাম মনে আছে?

    লেখা সব সময়ের মতো ভালো। :thumbup:


    ---------------------------------------------------------------------------
    বালক জানে না তো কতোটা হেঁটে এলে
    ফেরার পথ নেই, থাকে না কোনো কালে।।

    জবাব দিন
  2. সানাউল্লাহ (৭৪ - ৮০)

    অই মিয়া তোমার আর কুনু কাজ নাই? খালি সিনেমা দেখো, আর আমারে হিংসিত করো!! তোমার আর মাসুমের লেখা পইড়া ঠিক ছবিগুলা দেখমু। কিন্তু সময় যে পাই না.. :(( :(( :((


    "মানুষে বিশ্বাস হারানো পাপ"

    জবাব দিন
  3. রায়হান রশিদ (৮৬ - ৯০)

    সত্যিই অসাধারণ ছবি এটি। দক্ষিণ কোরিয়ার চলচ্চিত্র কিন্তু অনেক অনেক এগিয়ে। প্রিয় কয়েকটি কোরিয়ান ছবির নাম শেয়ার করি:

    -The Way Home
    -Joint Security Area
    -The Chaser
    -Old Boy
    -The Host
    -Chingoo (friend)
    -A moment to remember
    -Sex is Zero
    -Taegukgi (the Brotherhood of War)

    আরও নাম মনে পড়লে জানাবো।

    জবাব দিন
    • মুহাম্মদ (৯৯-০৫)

      আমি এই প্রথম কোন কোরিয়ান সিনেমা দেখলাম। দক্ষিণ কোরিয়ার আরেকটা সিনেমা আমার কাছে আছে: A Dirty Carnival. এটা বোধহয় আজকে দেখবো।
      আপনার লিস্টের একটাও দেখিনি। অনেকগুলো ভাল মুভির নাম পেয়ে খুব লাভ হল। আমার আসলে নতুন একটা সংস্কৃতির সাথে পরিচিত হতে খুব ভাল লাগে। আর আমার জন্য বর্তমানে সবচয়ে ভাল উপায় হল সেদেশের ভাল কিছু মুভি দেখা। অনেক ধন্যবাদ রায়হান রশিদ ভাই।

      জবাব দিন
    • মুহাম্মদ (৯৯-০৫)

      সবগুলো সিনেমার উইকি আর্টিকেল দেখলাম। দ্য হোস্ট এই মেমোরিস অভ মার্ডারের ডিরেক্টরেরই সিনেমা।
      ওল্ড বয় এবং জয়েন্ট সিকিউরিটি এরিয়া কোরিয়ার অন্যতম সেরা পরিচালক পাক চান-উক এর করা।
      দ্য ওয়ে হোম কোরিয়ার সর্বোচ্চ চলচ্চিত্র পুরস্কার পেয়েছে।
      বাকিগুলোও ভাল। ডাউনলোড শুরু করতে হবে। দেখি কোথাও পাওয়া যায় কি-না।

      জবাব দিন
      • মুহাম্মদ (৯৯-০৫)

        ওহ হো। এইটা দেখি ট্রাইলজির অংশ: "The Vengeance Trilogy"
        প্রথম পার্ট "Sympathy for Mr. Vengeance" এর নাম শুনেছিলাম রজার ইবার্টের ওয়েবসাইটে। তার সাইটে নাম লেখা ছিল "Vengeance is Mine", সে এটার ভূয়সী প্রশংসা করেছিল। অনেক খুঁজেও মুভিটা পাই নাই। ওল্ড বয় খুঁজতে গিয়ে এটা বেরিয়ে এল। ট্রাইলজির তিনটাই ডাউনলোড করব। তিনটারই ডাউনলোড লিংক পেলাম। থার্ড পার্টের নাম Sympathy for Lady Vengeance.
        কাহিনীও সেইরকম, জাপানী ম্যাংগা থেকে করা।

        জবাব দিন
        • রায়হান রশিদ (৮৬ - ৯০)

          মুহাম্মদ, দক্ষিণ কোরিয়ার ছবি আমার কাছেও নতুন দেশ আবিষ্কারের মতই ঘটনা। আর নতুন সংস্কৃতির সম্বন্ধে জানতে আসলেই ফিল্ম দেখার বিকল্প নেই। ভাষাগত সমস্যা না থাকলে এমনকি হয়তো সাহিত্যও পড়ে দেখা যেত, কিন্তু সেটা তো সবসময় করা যায় না।
          Old Boy দেখলেই বুঝতে পারবে কেন ওদের ছবি এতো পছন্দ করি। একেবারে "মগজ ধাঁধানো"! এক ধরণের স্ট্রেট ফরোয়ার্ড সারল্য থাকে চরিত্রগুলোর মধ্যে, আর কোন ধরণের মানসিক বাধা বা সীমাবদ্ধতাই যেন নেই পরিচালক কিংবা স্ক্রিপ্ট লেখকদের মনের ভেতর। কোরিয়ানদের আমার কেন যেন প্রায়ই বাঙ্গালীদের মতো মনে হওয়াতে চরিত্রগুলোকেও কেমন যেন খুব আপন মনে হয়, বুঝতে অনেক সহজ হয়।

          ভুক্তভোগীর সতর্কবাণী: টরেন্টে কোরিয়ান ছবি ডাউনলোডের আগে জেনে নেয়ার চেষ্টা করবে যে সাথে ইংরেজী সাবটাইটেল আছে কি না। আমি বেশ কয়েকবার ধরা খেয়েছি!

          A Dirty Carnival দেখিনি। কেমন লাগলো জানিও। আরও দু‍টো ছবির নাম দিই, এই দু‍টোই আবার রোমান্টিক:
          -I am a Cyborg, but that is OK
          -My Sassy Girl (এটা একটু বেশী জোলো মনে হয়েছে যদিও)

          Vengeance সিরিজের কথা তুলে মনে পড়িয়ে দিলে জাপানী কয়েকটি ছবির নাম। যেমন: Ring, Audition, Battle Royale, Death Note সিরিজের যে কোন ছবি। একেবারে চোখ বন্ধ করে কালেকশানে রাখার মতো।
          কিংবা হংকংয়ের Infernal Affairs সিরিজের সবগুলো (এটা থেকে হলিউড Departed বানিয়েছে)।

          জবাব দিন
          • মুহাম্মদ (৯৯-০৫)
            এক ধরণের স্ট্রেট ফরোয়ার্ড সারল্য থাকে চরিত্রগুলোর মধ্যে, আর কোন ধরণের মানসিক বাধা বা সীমাবদ্ধতাই যেন নেই পরিচালক কিংবা স্ক্রিপ্ট লেখকদের মনের ভেতর।

            এটা আমারও মনে হয়েছে। হলিউডের অনেক সিনেমা এখনও আপন করে নিতে পারিনি, অথচ কোরিয়ার প্রথম সিনেমাটাই একেবারে আপন করে নিল।

            রিং এর ইংরেজি রিমেইক দেখেই ভাল লেগেছিল। মূলটা দেখতে পারলে খুব ভাল হতো। ব্যাটেল রয়েল আর ডেথ নোটও দেখা হয়েছে। ডেথ নোট ছিল আমার একসময়কার অবসেশন।

            ইন্টার্নাল অ্যাফেয়ার্স থেকেই তো স্করসেজি "দ্য ডিপার্টেড" করেছিলেন। ডিপার্টেড আমার দেখা অন্যতম সেরা থ্রিলার। হলিউডের শেখার আছে অনেক কিছু, এশিয়ানদের কাছ থেকে।

            জবাব দিন
            • রায়হান রশিদ (৮৬ - ৯০)

              ছবিটার নাম আসলে Infernal Affairs, এই ভুলটা আমিও একসময় করেছি। মূলটা এমনকি সাবটাইটেল দিয়ে দেখেও আমার ধারণা স্করসেজী‍রটার চেয়ে বেশী ভাল লাগবে তোমার। কি যেন একটা মাত্রা আছে, বোঝাতে পারবো না। হয়তো আমার ভাষার সীমাবদ্ধতা কিংবা ফিল্মের টেকনিক্যাল ভোকাব্যুলারীর সাথে যোগাযোগের অভাব সে জন্য দায়ী।
              আর রিং এর জাপানী ভার্সনটাও হলিউডের চেয়ে ভাল লাগার কথা তোমার। হলিউডি রিমেকগুলো অতিরিক্ত গ্লস/এ্যাকশন আনতে গিয়ে কোথায় যেন মূল সুরটাই মিস্ করে যায়। এক ধরণের পরিমিতিবোধের অভাবই হয়তোবা। কিংবা জানিনা, প্রাচ্য দেশীয় চেতনা-মননের যে বহুমাত্রিক খেলা (এমনকি আধিভৌতিক ব্যাপারগুলোও), সেটাই হয়তো ওরা ধরতে পারে না। যেমন ধরো আমরা ছোট থেকে বড়ই হয়েছি ভুত-প্রেত আর যাবতীয় আধিভৌতিক গল্প কাহিনী শুনে শুনে। পরিচিত জগতের পাশে এমন একটা অতিপ্রাকৃতিক জগতের অস্তিত্ব কল্পনা করে নিয়ে (সে অনুযায়ী উপভোগ করা) আমাদের জন্য হয়তো অনেকটাই সহজ। এমনকি নিজে নাস্তিক/বস্তুবাদী হয়েও সেই রস আস্বাদনে কোনদিন কোন বাধার সৃষ্টি হয়নি মনে।
              ডেথ নোটে তোমার প্রিয় চরিত্র কোনটা?

              জবাব দিন
    • মুহাম্মদ (৯৯-০৫)

      মাসুম ভাই, ঐখানে একটা ঝামেলা হয়ে গেছে। আসলে বাংলা সিনেমা সম্পর্কে আমার অভিজ্ঞতা এবং ধারণা কোনটাই যথেষ্ট না। আর হলে গিয়ে সিনেমা দেখার সুযোগ খুবই কম। পাশাপাশি শেষ সেমিস্টার হওয়ার কারণে প্রেশারটা একটু বেশি। এজন্য এত চমৎকার একটা সুযোগ হারাতে হল।
      তারপরও আপনাকে অনেক অনেক ধন্যবাদ। 🙂

      জবাব দিন
  4. রাশেদ (৯৯-০৫)

    তোর লেখা পড়ে মনে হচ্ছে সিনেমা দেখা উচিত মাঝে মাঝে। আর এটা আমার পড়া সেরা সিনেমার রিভিউ। পড়ে কেন জানি মনের মাঝে সিনেমাটা কল্পনা করতে পারছি 🙂


    মানুষ তার স্বপ্নের সমান বড়

    জবাব দিন
  5. মহিব (৯৯-০৫)

    দোস্ত, কোরিয়ান সিনেমা দেইখা সেই যে ঘোরের মধ্যে গেছি এখনো কাটাইয়া উঠতে পারি নাই। মেমরিজ অফ মার্ডারের কাছে সাইলেন্স অফ দ্য ল্যাম্বস তুচ্ছ মনে হইছে।
    চিন্তা করছি- আস্তে আস্তে হলিউডি সিনেমা দেইখা ছাইড়া দিমু। ওদের সিনেমা ভাবটা সিনেমাতে বেশি- যেটা কোরিয়ান সিনেমাতে একেবারেই দেখলাম না।
    কোরিয়ান সিনেমা আরো দেখতে মঞ্চায়।

    আঁতলামি লেখাটা ভালৈছে। তুই পারস ও। 😛

    জবাব দিন
  6. কামরুল হাসান (৯৪-০০)

    ছবিটা দেখলাম কাল রাতে। ক্যামেরার কাজ মারাত্মক। কিছু শট দেখে মুগ্ধ হয়ে গেছি, সেই রেশ এখনো যায় নায়।

    গল্পও পছন্দ হইছে, শেষের চমক অসাধারণ।
    খালি সমস্যা একটাই, ভাষা বুঝি না বলে সাবটাইটেলের দিকে বেশি তাকিয়ে থাকতে হয়। 😀


    ---------------------------------------------------------------------------
    বালক জানে না তো কতোটা হেঁটে এলে
    ফেরার পথ নেই, থাকে না কোনো কালে।।

    জবাব দিন
  7. আসিফ (২০০১-'০৭)

    আমার ব্যাক্তিগত অভিমত, কোরিয়ান রা বিশ্বের সেরা থ্রিলার নির্মাতা জাতি 😛 😛 😛 😛 এশিয়ান রা মুভি নিরমানে কতটা এগিয়ে গেছে, কোরিয়ান, জাপানিজ, তাইওয়ানিজ, হংকং এবং চীন এর কিছু মুভি দেখলে বঝা যায়। সামনে এশিয়ান থ্রিলার নিয়ে বিশাল একটা ফিচার লেখার প্ল্যান আছে , তাই এখানে বেশি কিছু বলতে চাই না। আমি IMDB তে মুভি নিয়ে কিছু লিস্ট তৈরি করছি, তার মধ্যে কোরিয়ান থ্রিলার ( অন্ন সব জেনার বাদ, সব গুলো নিয়ে আলাদা একটি লিস্ট তৈরি করব) নিয়ে একটি লিস্ট করেছি। তার লিঙক
    http://www.imdb.com/list/3BTc8eaeTQc/
    আামার মতে কোরিয়া এখন একটি মুভি রেনেসাঁ এর মধ্যে দিয়ে যাচ্ছে, আজ থেকে বেশ অনেক বছর আগে হলিউড যেমন গিয়েছিল। অন্য সব কিছু বাদ দিলেও শুধু মিউজিক এবং সিনেমাতগ্রাফি দিয়েই কোরিয়ান মুভি গুলো মাথা নষ্ট্ :brick: করে দেয়ার জন্য যথেষ্ট ! :brick: :brick: :brick: :brick: :brick:

    জবাব দিন

মওন্তব্য করুন : ইশতিয়াক (৯৯-০৫)

জবাব দিতে না চাইলে এখানে ক্লিক করুন।

দয়া করে বাংলায় মন্তব্য করুন। ইংরেজীতে প্রদানকৃত মন্তব্য প্রকাশ অথবা প্রদর্শনের নিশ্চয়তা আপনাকে দেয়া হচ্ছেনা।