দি অ্যাক্সিডেন্টাল ওটার – ৪

আব্বাস কিয়ারোস্তামির সাক্ষাৎকার নিচ্ছেন Bert Cardullo:
১ম পর্ব | ২য় পর্ব | ৩য় পর্ব

কবিতা ও চলচ্চিত্রের মধ্যে একটি পার্থক্য হচ্ছে: মানুষ মনে করে এক বা দুইবার দেখেই যেকোন সিনেমা বোঝা সম্ভব, কিন্তু কবিতার প্রতি তাদের দৃষ্টিভঙ্গি অন্যরকম। আমরা সাধারণত একই কবিতা অসংখ্য বার পড়ি। মানুষ যেহেতু একই সিনেমা বারবার দেখতে অভ্যস্ত না, সেহেতু কাব্যিক চলচ্চিত্র দিয়ে দর্শকদের মন জয় করা কি কোনদিন সম্ভব হবে? আপনার সিনেমা দর্শকরা অনেক বার দেখুক- এটা কি চান, কিংবা অন্তত এই আশা কি করেন?

আমার সিনেমা সবাইকেই একাধিকবার দেখতে হবে এমনটা বলব না। কারণ সেক্ষেত্রে নিজেকে খুব স্বার্থপর মনে হবে। কিন্তু একটা বিষয়ে আমি নিশ্চিত: অনেক দর্শক হল থেকে অসন্তুষ্ট অবস্থায় বেরিয়ে এলেও সিনেমাটা কখনও ভুলতে পারবে না। আমি জানি, সে রাত্রে খাবার টেবিলে বসেও তারা এটা নিয়ে আলাপ করবে। আমি চাই দর্শকরা আমার সিনেমার জন্য আরেকটু বেশী সময় ব্যয় করে এর মধ্য থেকে কিছু একটা বের করে আনার চেষ্টা করুক। সেদিক থেকে চিন্তা করলে, তাদেরকে সিনেমাটা একাধিকবার দেখতেই হবে।

“কাব্যিক” ও “বিমূর্ত” ফাইভ-এর মত আপনার প্রমাণ্য চিত্র “এ.বি.সি আফ্রিকা”-ও তো ডিজিটাল ভিডিওতে করেছিলেন, তাই না?

হ্যাঁ, এ.বি.সি আফ্রিকাতেই প্রথমবারের মত এই আধুনিক ফরম্যাট ব্যবহার করেছি। আসলে ডিজিটাল ক্যামেরা দিয়ে সিনেমা করার ব্যাপারে প্রথমটায় সিরিয়াস ছিলাম না। মানুষ যেমন কোথাও গেলে ছবি তোলার জন্য সাথে ক্যামেরা নিয়ে যায়, আমিও তেমনি কিছু নোট তৈরীর জন্য ডিজিটাল ক্যামেরা সাথে নিয়েছিলাম। কিন্তু কাজ শুরুর পর বুঝেছিলাম এই ক্যামেরা দিয়ে কতকিছু করা সম্ভব। এটা আমাকে বিস্মিত করেছিল, আমার সামনে এক বিশাল সম্ভাবনার দুয়ার খুলে দিয়েছিল। তখন মনে হচ্ছিল, ৩৫মিমি দিয়ে কাজ করে জীবনের ৩০টা বছর নষ্ট করেছি। কারণ, আগেই বলেছি আমি যে ধরণের অন্তরঙ্গ ও তাৎক্ষণিক শ্যুটিং করি তার জন্য ৩৫মিমি এক ধরণের বাঁধা হিসেবে কাজ করে। অথচ ক্যামেরার কাজ করা উচিত যোগাযোগের মাধ্যম হিসেবে।

দ্য উইন্ড উইল ক্যারি আসে আমরা দেখেছি, প্রকৌশলী অনেক ক্রু নিয়ে সিনেমা করা বাদ দিয়ে এক বিচ্ছিন্ন গ্রামে চলে যায়। গ্রামে গিয়ে নিভৃতে স্থির ছবি তুলতে থাকে। আপনি যখন দ্য উইন্ড উইল ক্যারি আস শেষ করে এ.বি.সি. আফ্রিকা শ্যুট করতে গেলেন তখনকার অভিযানের সাথে তো এই প্রকৌশলীর অভিযানের তুলনা করা যায়। এই দুই ভ্রমণের মধ্যে মিলটা আসলে কোথায়?

হ্যাঁ, আসলেই অভিযান দুটোর মধ্যে মিল আছে। আমার ভাগ্য ভাল, ঐ সিনেমা দুটি করার মাঝেই ডিজিটাল প্রযুক্তির সাথে পরিচয় হয়েছিল। দ্য উইন্ড উইল ক্যারি আসের প্রকৌশলীর মধ্যে যে ক্লান্তির ছাপ দেখা যায় আমার মধ্যেও সেটা কাজ করছিল; ঠিক তখনই এই নতুন ক্যামেরা দেবদূতের মত এসে আমার শিল্পী জীবন রক্ষা করে। সিনেমা বানানোর জন্য আমি যে ধরণের মানসিক প্রস্তুতি নেই তাতে হয়ত খুব বেশী পরিবর্তন আসেনি, কিন্তু ডিজিটাল ক্যামেরা নির্মাণ প্রক্রিয়া অনেক সহজ করে দিয়েছে।

এ.বি.সি. আফ্রিকা প্রকল্পের শুরুটা কিভাবে হয়েছিল?

আমি ছোটদের নিয়ে অনেক সিনেমা করেছি। এজন্যই জাতিসংঘ উগান্ডায় এইডসের কারণে এতিম হয়ে যাওয়া শিশুদের উপর সিনেমা বানানোর জন্য আমাকে আমন্ত্রণ জানিয়েছিল। তারা এমন একটি সিনেমা চেয়েছিল যা এই সমস্যাকে আক্রমণ করতে পারবে। আসলে এ.বি.সি আফ্রিকা এই এতিম শিশুদের সাহায্য করার জন্য সমগ্র বিশ্বের প্রতি উন্মুক্ত নিমন্ত্রণ হিসেবে কাজ করেছে।

উগান্ডায় আপনার অভিজ্ঞতা নিয়ে আরেকটু বিস্তারিত বলতে পারবেন? অন্যান্য আফ্রিকান দেশে না গিয়ে উগান্ডায়ই কেন গেলেন?


উগান্ডায় গিয়েছিলাম কারণ সেখানে অভ্যন্তরীন দাঙ্গা (সিভিল স্ট্রাইফ) তুলনামূলক কম। মাঝেমাঝে আমরা গাড়িতে করে ঘণ্টার পর ঘণ্টা ঘুরে বেড়াতাম, কোথাও এক চিলতে আলো থাকত না। সাদা পোশাক পরা মানুষেরা রাস্তার দুপাশে সারি বেঁধে দাঁড়িয়ে থাকতো। কোন আলোই ছিল না, বিদ্যুৎ, মোমবাতি, কিচ্ছু না। দিনের বেলায় সেখানকার দৃশ্য খুব সুন্দর লাগত, সবকিছু সবুজে ছাওয়া। এমন মানুষও দেখেছিলাম যারা দারিদ্র্যে জর্জরিত হলেও অন্তরের দিক দিয়ে খুব ধনী। তারা খুব সুখী- যা আমি অন্য কোথাও দেখিনি। এক বন্ধুকে জিজ্ঞেস করেছিলাম, তারা এত সুখী কেন। সে উত্তর দিয়েছিল, কারণ এদের তিনটি জিনিস নেই: দূষণ, দুশ্চিন্তা এবং প্রতিযোগিতা। তাদের অবশ্য একটি প্রতিযোগিতা আছে যা অনেক বড়: জীবন এবং মৃত্যুর মধ্যে প্রতিযোগিতা। এ কারণেই তাদের জীবন খুব অর্থবহ, এইডসের মধ্য দিয়ে আসা মরণ তাদের হাতের খুব কাছে থাকে। তারা কেবল বেঁচে থাকতে পারলেই খুশী।

এইডসের প্রতি কি ইরানী দর্শকদের কোন আগ্রহ আছে, এ নিয়ে কি তারা যথেষ্ট চিন্তিত?

ইরানে এইডস বিষয়ক সব প্রশ্নই অন্ধকারে রেখে দেয়া হয়েছে; এটা যেন এক গোপন রোগ। ২০০১ সালে একবার বিষয়টা সবার সামনে নিয়ে আসার চেষ্টা করা হয়েছিল, কিন্তু প্রকল্পটা ভেস্তে যায়। আমি মনে করি, এইডস একটি আন্তর্জাতিক দুর্যোগ এবং যেকোন দেশই এর দ্বারা ভয়ানকভাবে আক্রান্ত হতে পারে। সুতরাং, এ নিয়ে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে আলোচনা হওয়া উচিত। দুর্ভাগ্যবশত, এইডসের কোন ভিসা লাগে না।

আপনি কি জাতিসংঘের প্রস্তাব আগ্রহভরে গ্রহণ করেছিলেন, আর শুরুতেই কি সিনেমাটা করার ব্যাপারে মনস্থির করে ফেলেছিলেন?

আমি আসলে আনুষ্ঠানিকভাবে প্রস্তাবটা গ্রহণ করিনি। কিন্তু এলাকাটা ঘুরে দেখতে রাজি হয়েছিলাম। সুতরাং উগান্ডা সফরকে আসলে এক ধরণের লোকেশন বাছাই বলা যায়। তবে আমাদের হাতে ক্যামেরা ছিল এবং আমরা শ্যুটিং শুরু করে দিয়েছিলাম- সিনেমার জন্য না, শুধু খসড়া হিসেবে। কিন্তু প্রাথমিক শ্যুটিং শেষ করার পর ফুটেজগুলোর দিকে তাকিয়ে দেখলাম, এগুলো দিয়েই একটা পূর্ণাঙ্গ সিনেমা বানানো সম্ভব।

এই পদ্ধতির সাথে তো আপনি বেশ পরিচিত, এর আগেও এ ধরণের তাৎক্ষণিক সিনেমা বানিয়েছেন। যেমন “হোমওয়ার্ক” এবং “ক্লোজ-আপ”। কিন্তু সাধারণ সিনেমার ক্ষেত্রে, নির্মাণের পূর্বেও একটা বিশাল প্রস্তুতির ব্যাপার থাকে। সিনেমার মধ্যে শুধু পরিচ্ছন্নতা ও উদ্দেশ্য-বোধ তৈরীর জন্যই এটা লাগে। অথচ আপনার উপস্থিত-সিনেমায় প্রি-প্রোডাকশনের ধারণাটাই লোপ পেয়েছে।

এ ধারার কাজ সম্পর্কে আপনার সাথে আমি একমত। ভাল সিনেমার জন্য একটা উপযুক্ত পূর্ব প্রস্তুতি আবশ্যক। কারণ এটা সিনেমার মানোন্নয়নে সাহায্য করে। অনেক তরুণ চলচ্চিত্রকারের সাথে কলা বলে বুঝেছি, তারা নিজেদের সিনেমা নিয়ে এত চিন্তিত থাকে যে, মূল সিনেমাতে সেই দুশ্চিন্তার ছাপ পড়ে। এই দুশ্চিন্তা সিনেমার জন্য সহায়ক। অপর দিকে যেসব সিনেমার পূর্ব প্রস্তুতি একেবারে নির্ভুল সেগুলোর মধ্যে এক ধরণের শূন্যতা লক্ষ্য করা যায়। কারণ সিনেমা বানানোর সময় নির্মাতাকে কোন দুশ্চিন্তাই করতে হয়নি।

চলচ্চিত্র শিল্পে অনেক দুর্নীতি আছে- সবকিছুই অর্থ নিয়ে। আর এ কারণেই সিনেমার শৈল্পিক ফলাফল ভাল হয় না। এটা থামানোর জন্য আমরা কি করতে পারি?

এদিক দিয়ে আপনি বেশ ভাল একটা কাজ করছেন- কারণ আপনি আপনার সমালোচনায় স্বল্প বাজেটের দিকটা ধরিয়ে দেন এবং এমন সিনেমা সম্পর্কেও আলোচনা করেন যেগুলো কেবল নামেই ছোট। হঠাৎ করে এই পরিস্থিতির পরিবর্তন করা সম্ভব না, কারণ বর্তমানে সিনেমার চালিকাশক্তি হল ব্যবসা। এই ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানের মধ্যে অনেক মানুষ কাজ করে, এবং অনেক মানুষ সিনেমা দেখতে যায় কেবলই বিনোদনের জন্য। এ ধরণের সিনেমা অনেক আছে, এবং থাকাটাও বেশ স্বাভাবিক। আর ঠিক এ কারণেই আমাদের সিনেমা মুক্তি পেতে পারে। কারণ ব্যবসায়িক সিনেমা না থাকলে আমাদের সিনেমা প্রদর্শনের কোন প্রয়োজনই পড়তো না। এখন আসলে তেমন কিছু করার নেই। আমরা শুধু ব্যতিক্রমী সিনেমাগুলো ধরিয়ে দিতে পারি, যে কাজটা আপনি করছেন।

আপনি কি স্বপ্ন দেখেন যে, ভবিষ্যতে শিল্পীরা একটি বিকল্প প্রোডাকশন ও ডিস্ট্রিবিউশন ব্যবস্থা গড়ে তুলবে?

আমি মনে করি এটা ধীরে ধীরে তৈরী হবে। সিনেমাকে আরও অন্তর্মুখী, অন্তরঙ্গ ও গভীর হতেই হবে- এছাড়া তার কোন বিকল্প নেই। শুরুতে বলা যায়, ফিল্ম ইন্ড্রাস্ট্রি যে নির্মাণ কৌশল ও সুযোগ-সুবিধা তৈরী করেছে তা নিজে নিজেই ধ্বংস হতে বাধ্য। বম্বাস্টিক সিনেমা ধ্বংস হবেই, কারণ এসব সিনেমার মধ্যে সে ছাড়া আর কিছু নেই। এটা পূর্ণ হতে হতে একসময় ধ্বংস হবে। সুতরাং সেই বিন্দুতে গিয়ে মানুষ আবার অতীত সিনেমায় ফিরে আসবে।

গতকাল আমার হোটেল রুমে বসে এক চ্যানেল থেকে আরেক চ্যানেলে ঘুরছিলাম। মাঝে যে দুই বার চ্যানেল পাল্টানো বন্ধ করেছি সে দুই বারই সাদাকালো সিনেমা চলছিল। একটা ছিল জনি ওয়াইসমুলারের টারজান। এটা তাও দেখার মত, কারণ কেবল বিনোদনের জন্য তৈরী হলেও এটা অপেক্ষাকৃত স্বাস্থ্যকর। এ যুগের রঙিন বিনোদনমুখী সিনেমা তো আমি দেখতেই পারি না। গতকাল টিভিতে এমন একটা সিনেমা অনেক কষ্ট করেও দেখতে পারলাম না। কারণ সেখানে এত কিছু ঘটছিল এবং সবকিছু এত দ্রুত চলছিল যে আমি ভিশনই ঠিক রাখতে পারছিলাম না। বলা যায় খুব বিরক্ত হয়েছি। এজন্যই মনে করি, ভবিষ্যতে বানিজ্যিক সিনেমাতেও একটু শান্তি ও স্থৈর্য্যের প্রয়োজন পড়বে। আর এভাবেই স্বাধীন চলচ্চিত্রের চাহিদা বৃদ্ধি পাবে। আর আপনি বারবার যেসব হৃদয়হীন অ্যাকশন সিনেমার কথা বলছেন সেগুলোরও একই দশা হবে।

একালের অনেক শিল্পীর পক্ষেই ব্যক্তিগত মনস্তাত্ত্বিক সত্য, সমাজ-রাজনৈতিক বাস্তবতা এবং শৈল্পিক গড়নের প্রতি সমান একনিষ্ঠ থাকা কষ্টকর হয়ে পড়ে। এই কথাটা কি যৌক্তিক?

আমি পুরোপুরি একমত। আগেই বলেছি, চলচ্চিত্রকাররা দর্শকদের উত্তেজনা ও চাহিদার প্রতি বেশী নজর দিতে বাধ্য হচ্ছে। তাদের মূল উদ্দেশ্য হয়ে পড়ছে দর্শকদের এমনভাবে চালিত করা যাতে নিজেদের লাভ হয়। দর্শকরা আসলেই এভাবে চালিত হতে চায় কি-না, সে প্রশ্নের উত্তর আমার জানা নেই। আমি কাউকে এখন পর্যন্ত বলতে শুনিনি, “বাস্তবতা দেখানোর পরিবর্তে আমাকে তোমার ইচ্ছা মত ঘোরাও, আমি এটাই পছন্দ করি।” এটা এক ধরণের রোগ যা সমাজের কোন এক জায়গা থেকে আসে, হয়তোবা escapist সিনেমাগুলো থেকেই।

আপনি সাধারণ মানুষ ও দরিদ্রদের নিয়ে সিনেমা বানাতে পছন্দ করেন যা এ যুগে বেশ দুর্লভ।

আমি আমার চারপাশ থেকেই সব উপাদান পাই। সকালে বাড়ি ছেড়ে বেড়োনর পর আমার সাথে যেসব সাধারণ মানুষের দেখা হয় তারাই আমার উপাদান। এখন পর্যন্ত আমার সাথে কোন তারকার দেখা হয়নি, সিনেমার স্ক্রিনে দেখেছি এমন কারও সাথেই না। আমি বিশ্বাস করি সব শিল্পীই তার প্রতিবেশ থেকে শিল্পের উপকরণ পায়। মানুষ এবং তাদের সমস্যাই সিনেমার জন্য সবচেয়ে উপযোগী কাঁচামাল।

চলচ্চিত্র শিল্প কিভাবে সাধারণ মানুষের জীবনে অবদান রাখতে পারে?


দর্শকদের উপর সিনেমার সবচেয়ে বড় প্রভাব হচ্ছে, এটা তাদের কল্পনার লাগাম খুলে দেয়। সিনেমা দেখলে মানুষ ইচ্ছামত কল্পনা করতে শেখে। এর সম্ভাব্য দুটি পরিণতি হতে পারে: হয়ত এটা তার সাধারণ দৈনন্দিন জীবনকে আরও সহনীয় করে তুলবে। অথবা হয়ত এটা দেখার পর সে নিজের দৈনন্দিন জীবনকে খারাপ ভাবতে শুরু করবে, আর এই নতুন সচেতনতা থেকেই নিজের জীবন পরিবর্তনের সিদ্ধান্ত নেবে।

এর সাথে সম্পর্কিত আরেকটি প্রশ্ন করি। মানবতাকে অতীতে অনেক দুর্ভোগ পোহাতে হয়েছে এবং ভবিষ্যতেও হবে। অদৃষ্টবাদী বা নৈরাশ্যবাদী না হয়েও শিল্পীরা কিভাবে সততার সাথে এই পরিস্থিতির মোকাবেলা করে?

প্রশ্নটি খুব কঠিন। শিল্পীরা কিভাবে এটা করে আমি বলতে পারব না। তবে যারা করতে পারে তারাই শিল্পী, এ ব্যাপারে কোন সন্দেহ নেই। তারাই মানবতার এই বেদনাদায়ক অভিজ্ঞতাকে শিল্পে পরিণত করতে পারে। তারা সবাইকে বেদনা থেকে আনন্দ লাভের সুযোগ করে দেয়, বীভৎসতা থেকে সৌন্দর্য্য তৈরী করে। আর ইরান, আফ্রিকা, যুক্তরাষ্ট্র- যে স্থানই বলি কোথাও মানবতার দুর্ভোগ অদূর ভবিষ্যতে দূর হবে না। এই ছোট্ট জীবনে কোথাও অবিচার কমতে দেখিনি, আমার দেশ তো দূরের কথা। আর অবিচার কমানোর জন্য যে সমাধানগুলো দেয়া হচ্ছে সেগুলোও খুব একটা কার্যকর না। ইদানিং “গ্লোবাল ভিলেজ” কথাটি খুব শোনা যায়। কিন্তু আফ্রিকায়, বিশেষ করে উগান্ডায় আমি দেখেছি, বাবা-মা তাদের সন্তানের লাশ বাক্সে ভরে সাইকেলের পিছনে বাঁধছে, খালি পায়ে প্যাডেল মেরে চলেছে গোরস্থানের উদ্দেশ্যে। একজন লেখকের উক্তি শোনাই, লেখকটি কে তা ঠিক করে বলতে পারব না। তবে উক্তিটা এরকম: একবিংশ শতকে মানবতার বয়স হবে মাত্র চার বছর। আমি এটা বিশ্বাস করি। ২০০৫ সালের মানবতাকে চার বছর বয়সের বাচ্চার সাথে তুলনা করা যায়। সুতরাং মানবতার যৌবন দেখার জন্যও আমাদের অনেক অপেক্ষা করতে হবে।

[চলবে…]

১৯ টি মন্তব্য : “দি অ্যাক্সিডেন্টাল ওটার – ৪”

  1. কামরুল হাসান (৯৪-০০)
    দর্শকদের উপর সিনেমার সবচেয়ে বড় প্রভাব হচ্ছে, এটা তাদের কল্পনার লাগাম খুলে দেয়। সিনেমা দেখলে মানুষ ইচ্ছামত কল্পনা করতে শেখে। এর সম্ভাব্য দুটি পরিণতি হতে পারে: হয়ত এটা তার সাধারণ দৈনন্দিন জীবনকে আরও সহনীয় করে তুলবে। অথবা হয়ত এটা দেখার পর সে নিজের দৈনন্দিন জীবনকে খারাপ ভাবতে শুরু করবে, আর এই নতুন সচেতনতা থেকেই নিজের জীবন পরিবর্তনের সিদ্ধান্ত নেবে।

    এই এক উত্তরেই মুগ্ধ।


    ---------------------------------------------------------------------------
    বালক জানে না তো কতোটা হেঁটে এলে
    ফেরার পথ নেই, থাকে না কোনো কালে।।

    জবাব দিন
  2. শার্লী (১৯৯৯-২০০৫)

    ধুর আমি যে অংশ কপি করছিলাম, কামরুল ভাই সেটা দিয়ে দিছে। মুল সাক্ষাৎকারটা পড়া হয় নি, এবং অন্য অনুবাদটাও পড়া হয় নি, তাই অনুবাদের মান নিয়ে মন্তব্য করতে পারবো না। কিন্তু অনুবাদ সুখপাঠ্য হচ্ছে।

    জবাব দিন
    • মুহাম্মদ (৯৯-০৫)

      আমার কাছেই এখন এই অনুবাদটা খুব একটা মানসম্পন্ন মনে হচ্ছে না। মূল ইংরেজিটার লিংক দিলাম। মিলিয়ে দেখতে পারিস:
      http://brightlightsfilm.com/55/kiarostamitv.htm

      সাক্ষাৎকার অনুবাদ করা বেশ কঠিন। কারণ এগুলো মুখের ভাষা। ইংরেজি মুখের ভাষাকে বাংলা মুখের ভাষায় ট্রান্সলেট করা আসলেই খুব কঠিন। তার চেয়ে লেখার ভাষা অনুবাদ সহজ।

      জবাব দিন
  3. সানাউল্লাহ (৭৪ - ৮০)

    মুহাম্মদ, কিছু সমস্যা থাকলেও অনুবাদটা চালিয়ে যাও। অনুবাদের বিষয়টা এমন যে করতে করতে হাত আসে, দক্ষতা আসে। শেষ করে আবার ঘষামাজা করো। এ নিয়ে বেশি দুশ্চিন্তা করো না।


    "মানুষে বিশ্বাস হারানো পাপ"

    জবাব দিন

মওন্তব্য করুন : কুচ্ছিত হাঁসের ছানা (৯৯-০৫)

জবাব দিতে না চাইলে এখানে ক্লিক করুন।

দয়া করে বাংলায় মন্তব্য করুন। ইংরেজীতে প্রদানকৃত মন্তব্য প্রকাশ অথবা প্রদর্শনের নিশ্চয়তা আপনাকে দেয়া হচ্ছেনা।