দি অ্যাক্সিডেন্টাল ওটার – ৩

আব্বাস কিয়ারোস্তামির সাক্ষাৎকার নিচ্ছেন Bert Cardullo:
১ম পর্ব | ২য় পর্ব

যারা আগে কখনও অভিনয় করেনি তাদের দিয়ে এত স্বাভাবিক অভিনয় কিভাবে করান? আর আপনার সিনেমাগুলোর জন্য চিত্রনাট্য কিভাবে লেখেন?

আগেই বলেছি, আমার সিনেমার পুরো চিত্রনাট্য আগে থেকে প্রস্তুত করা থাকে না। প্রথমে একটি সাধারণ ধারণা এবং একটি চরিত্র মাথায় থাকে। সেই চরিত্রটি বাস্তবে খুঁজে পাওয়ার আগে চিত্রনাট্য নিয়ে খুব বেশী এগোই না। চরিত্রটি বাস্তবে খুঁজে পাওয়ার পর তার সাথে বেশ কিছু সময় কাটাই, তাকে বোঝার চেষ্টা করি। প্রথমে মনে মনে যে চরিত্রটি ঠিক করেছিলাম তার উপর ভিত্তি করে নয়, বরং বাস্তবে যার সাথে পরিচিত হয়েছি তার উপর ভিত্তি করেই বিভিন্ন নোট লিখি। এটা অনেক দীর্ঘ প্রক্রিয়া, অনেক সময় ছয় মাসও লেগে যেতে পারে। আর শ্যুটিং শুরু করার আগে আমি শুধু নোটই লিখি, সম্পূর্ণ ডায়লগ লিখি না। বাস্তবের চরিত্র সম্পর্কে যা যা জানতে পেরেছি সে অনুযায়ীই নোটগুলো তৈরী করি। শ্যুটিং শুরু করার আগে চরিত্রের অভিনেতাকে নিয়ে কোন রিহার্সালও করি না। অর্থাৎ, তাদেরকে নিজের কাছে টেনে আনার পরিবর্তে আমি নিজেই তাদের খুব কাছে যাওয়ার চেষ্টা করি। তারা বাস্তবতার যত কাছে থাকে আমার পক্ষে কখনই সে পরিমাণ বাস্তবতা সৃষ্টি করা সম্ভব না। আমি অবশ্যই তাদেরকে কিছু দেই, কিন্তু তাদের কাছ থেকেও অনেক কিছু নেই।

রুমির একটি কবিতার সাহায্যে এই পরিস্থিতি ব্যাখ্যা করা যায়। কবিতাটি প্রায় ১,০০০ বছর আগে লেখা হয়েছিল। অনেকটা এরকম: You are like the ball subject to my polo stick; I set you in motion, but once you’re off and running, I am the one in pursuit. তুমিও আমাকে দৌঁড়াতে বাধ্য করছ। তাই সবশেষে ফলাফল দেখার পর ঠিক বোঝা যায় না, আমি পরিচালক না তারাই পরিচালক। প্রকৃতপক্ষে সবকিছুই অভিনেতাদের, আমার দায়িত্ব কেবল পরিস্থিতির সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনা। এ ধরণের পরিচালনা আমার মতে অনেকটা ফুটবল কোচের মত। কোচ তার খেলোয়াড়দের প্রস্তুত করে যার যার জায়গায় দাড় করিয়ে দেয়। কিন্তু খেলা শুরু হয়ে যাওয়ার পর তার তেমন কিছু করার থাকে না, সে সিগারেট ধরিয়ে সময় পার করতে পারে, মাঝেমধ্যে উদ্বিগ্নও হতে পারে, এর বেশী কিছু না। “টেন”-এ দশটি দৃশ্য আছে, সবগুলোই গাড়ির সামনে রাখা ক্যামেরায় ধারণ করা। এগুলো শ্যুট করার সময় আমি পেছনের সিটে বসে ছিলাম, কিন্তু একটুও হস্তক্ষেপ করিনি। মাঝেমাঝে আমি আরেকটি গাড়িতে করে অভিনেত্রীর গাড়িকে অনুসরণ করেছিলাম, অর্থাৎ শ্যুটিং এর সেটে উপস্থিতও ছিলাম না। কারণ, আমার মনে হয়েছিল অভিনেতারা আমার অনুপস্থিতিতেই ভাল কাজ করতে পারবে। পরিচালকরা সবসময় সৃষ্টি করে না, মাঝেমাঝে অভিনেতাদের কাছ থেকে অনেক কিছু চাইতে গিয়ে সিনেমাটা ধ্বংসও করে ফেলে। অপেশাদার অভিনেতাদের নিয়ে কাজ করার আলাদা নিয়ম আছে। আর এজন্য তাদেরকে অবশ্যই নিজের মত করে কাজ করতে দিতে হবে।

কানুন-এ (ইরানের Institute for the Intellectual Development of Children and Young Adults) কাজ করেছেন বলেই কি আপনি সিনেমা বানানোর এই পদ্ধতি পছন্দ করেন? কানুনে বাচ্চাদের নিয়ে অনেক কাজ করেছেন, তখন তো এই পদ্ধতিই ব্যবহার করতেন।


এই পদ্ধতির মূল খুঁজতে হলে অবশ্যই আমার কানুন (Kanoon) জীবনে ফিরে যেতে হবে। ছোটদের নিয়ে কাজ না করলে কখনই সিনেমা বানানোর এই স্টাইল তৈরী করতে পারতাম না। বাচ্চারা খুব শক্তিশালী ও স্বাধীন চরিত্র, তারা মাঝেমাঝে এমন কিছু করে বসে যা এমনকি মার্লন ব্র্যান্ডোর কাছ থেকেও পাওয়া সম্ভব না। অনেক সময় নির্দিষ্ট কিছু পাওয়ার জন্য তাদেরকে পরিচালনা করা খুব কষ্টকর হয়ে পড়ে। জাপানে যখন আকিরা কুরোসাওয়ার সাথে দেখা হয়েছিল, তখন তিনি আমাকে প্রশ্ন করেছিলেন: “আপনি ছোটদের দিয়ে এমন অভিনয় করান কিভাবে? আমার সিনেমায়ও মাঝেমাঝে ছোটদের ব্যবহার করার চেষ্টা করেছি। কিন্তু আমার অভিজ্ঞতা হচ্ছে, যত শ্যুটিং হতে থাকে ততই তাদের উপস্থিতি কমাতে হয়। কমাতে কমাতে একসময় বাদই দিয়ে দিতে হয়, কারণ তাদেরকে পরিচালনা করার কোন উপায়ই খুঁজে পাই না।” আমার কথা হচ্ছে, কেউ যদি ঘোড়ায় বসা মহারাজার মত থাকে তাহলে ছোটরা তার সাথে যোগাযোগ স্থাপন করতে পারে না। তাদের সাথে যোগাযোগ করতে হলে আপনাকে অবশ্যই নিচে নেমে এসে তাদের পাশে বসতে হবে। অভিনেতারাও আসলে বাচ্চাদের মত।

গাড়ির সাথে আপনার সম্পর্ক নিয়ে কি কিছু বলবেন? আপনার সিনেমায় গাড়ির বহুল ব্যবহার দেখা যায়।

আমার গাড়িই আমার সবচেয়ে প্রিয় বন্ধু। সে-ই আমার অফিস, আমার বাড়ি, আমার লোকেশন। যখন গাড়িতে বসে থাকি আর আমার পাশের সিটেও কেউ থাকে, তখন খুব অন্তরঙ্গ একটা অনুভূতি চেপে বসে। আমরা দুজন সবচেয়ে সুবিধাজনক অবস্থানে আছি, মুখোমুখি নয়, পাশাপাশি। আমাদেরকে সবসময় পরষ্পরের দিকে তাকাতে হচ্ছে না, যখন চাচ্ছি কেবল তখনই তাকাচ্ছি। চারপাশটাও দেখতে পাচ্ছি, পাশে কাউকে বসিয়ে রেখে আশপাশে তাকানোটা সাধারণত অসভ্যতা হলেও, এক্ষেত্রে তেমন কোন সম্ভাবনা থাকছে না। আমাদের সামনে একটা বড় স্ক্রিন আছে, পাশের স্ক্রিনে সাইড ভিউও পাওয়া যাচ্ছে। নিরবতাও এখানে ভারী বা কষ্টকর মনে হয় না। একে অপরকে সার্ভ করারও প্রয়োজন পড়ে না। আসলে এই অভিজ্ঞতার আরও অনেক দিক আছে। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ একটি দিক হচ্ছে, গাড়ি আমাদেরকে এক স্থান থেকে অন্য স্থানে বয়ে নিয়ে যায়।

আমি অ্যামেরিকান, অ্যামেরিকান মিডিয়ায় ইরান-বিরোধী প্রচারণা দেখে অনেক সময় খুব ভয় হয়। আমার মনে হয়, আপনার সিনেমা অ্যামেরিকান ও ইরানীদের সম্পর্কোন্নয়নে বিশেষ ভূমিকা রাখতে পারে। বিশেষত অটোমোবাইলের সাথে আপনার যে সিনেমাটিক প্রেম তার সাথে অ্যামেরিকানদের গাড়ি-প্রীতির খুব একটা পার্থক্য নেই। কিন্তু মিডিয়ার কারণে ভীতিটা থেকেই যায়। কারণ অ্যামেরিকান মিডিয়া দেশের মানুষকে ইরান সম্পর্কে এক ধরণের সাধারণীকৃত ধারণা দিয়ে রাখে এবং তাদেরকে সেভাবেই সবকিছু চিন্তা করতে বলে। এ ব্যাপারে আপনার চিন্তা কেমন?

এই ইস্যুতে আপনার ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গির জন্য ধন্যবাদ। দুর্ভাগ্যবশত, আপনার মত চলচ্চিত্র সমালোচক অ্যামেরিকায় খুব কম, কিন্তু সেখানে ইরান সমালোচকের কোন অভাব নেই। আমাদের, অর্থাৎ চলচ্চিত্রের লোকদের জন্য বিভিন্ন সংস্কৃতির মিলগুলো খুঁজে বের করা খুব গুরুত্বপূর্ণ। আমরা ভিন্ন সংস্কৃতির মধ্যে অভিন্ন ভিত্তির সন্ধান করি। কিন্তু রাজনীতিবিদরা সম্ভবত উল্টোটা করে। কারণ বিভিন্ন মানুষের মধ্যে পার্থক্য ও দ্বন্দ্বের মাধ্যমেই তারা লাভবান হয়। আপনি হয়ত জেনে থাকবেন, আর্ট সিনেমার অন্যতম উদ্দেশ্য হচ্ছে, প্রাত্যহিক যে ঘটনাগুলো পত্রিকার প্রধান শিরোনামে উঠে আসে সেগুলোর পেছনে লুকিয়ে থাকা সর্বজনীন বাস্তবতা তুলে ধরা।

অ্যামেরিকায় ইরান ও ইরানী সিনেমার গ্রহণযোগ্যতা নিয়ে আরও কিছু কথা বলি। অ্যামেরিকার প্রধান শহরগুলোতে আপনার সিনেমা বানিজ্যকভাবে মুক্তি পাওয়ার পর চোখের নিমিষেই চলে যায়। এটা আমাদের ধাঁধায় ফেলে দেয়। কারণ একটা সময় ছিল যখন বারিমান, ফেলিনি, গোদার-র মত মহান চলচ্চিত্রকারদের সিনেমা এখানে বেশ চলত, তাদের সিনেমার আন্তর্জাতিক ডিস্ট্রিবিউশন খুব ভাল ছিল। এসব সিনেমা দেখার জন্য হলগুলোতে মানুষের লম্বা লাইনও হয়ে যেতো। আপনি বোধহয় তাদের সমান মেধাবী চলচ্চিত্রকারদের একটি সম্পূর্ণ প্রজন্মের প্রথম সদস্য যার সিনেমা চলচ্চিত্র উৎসবের সীমাবদ্ধ গণ্ডিতেই রয়ে যাবে।

এই তিন চলচ্চিত্রকারের সাথে আমাকে তুলনা করার জন্য ধন্যবাদ। আমিও মনে করি, তারা অসাধারণ সিনেমা বানাতেন। কিন্তু সে সময় হলিউডের সিনেমার এত প্রভাব ছিল না। এখন হলিউডের প্রভাব অনেক বেশী, আর এ কারণেই আমাদের সিনেমার দর্শক নেই। বিষয়টা হল, সিনেমা দর্শকদের চোখকে প্রশিক্ষণ দেয়। হলিউড দর্শকদেরকে তাদের সিনেমার জন্য প্রশিক্ষণ দেয়, সেই দর্শকদেরকে আমাদের সিনেমায় কনভার্ট করা তাই খুব কষ্টকর হয়ে পড়ে। কিন্তু নিজের অজান্তেই হলিউড এমন দিকে এগোচ্ছে যে একসময় সেটা আমাদের জন্যই সুফল বয়ে আনবে। এক দিক দিয়ে তারা আমাদের সিনেমাকেই সাহায্য করছে। হলিউডের সিনেমা দেখে দর্শকরা এখন আর পুরো সন্তুষ্ট হতে পারছে না। হল থেকে তারা ক্ষুধা, অতৃপ্তি ও অনিশ্চয়তা নিয়ে বের হয়। এতক্ষণ ধরে কি দেখানো হল বুঝে উঠতে পারে না। এই জায়গাতেই প্রকৃত পরিচালকদের সম্ভাবনা লুকিয়ে আছে। এর মাধ্যমেই তারা দর্শকদের নিয়ন্ত্রণ করতে পারে এবং একসময় তাদের মন জয় করে নিতে পারে।

আমার অনুভূতি হচ্ছে, দর্শকরা এখন আর বেশী কিছু আশা করে না। তারা চূড়ান্ত সুখ চায় না বরং অ্যাকশন এবং এ ধরণের অন্যান্য বিষয়গুলোই পছন্দ করে।

এর কারণ, সিনেমাগুলোই তাদেরকে অ্যাকশনের প্রতি অভ্যস্ত করে ফেলে এবং সুখের সন্ধান করতে দেয় না। চলচ্চিত্রকার নয় বরং টেকনিশিয়ানরা সিনেমা বানানোর কারণেই এমনটি হচ্ছে। এমন একটা সময় আসবে যখন দর্শকরা এটা বুঝে যাবে এবং পরিস্থিতির পরিবর্তন অবশ্যম্ভাবী হয়ে পড়বে।

সিরিয়াস শিল্প কি সবসময়ই দর্শকদের মাঝে একটি ভিন্ন অস্তিত্বের আকাঙ্ক্ষা জাগিয়ে তুলে?

হ্যাঁ, আমি তা-ই বিশ্বাস করি। কারণ, অন্যথা হলে শিল্পের কোন উদ্দেশ্যই থাকে না। এই উদ্দেশ্য সাধনে যদি ধর্মের ব্যর্থতা প্রমাণিত হয় তাহলে শিল্প চেষ্টা করে দেখতে পারে। ধর্ম ও শিল্প- তারা মানুষকে একই দিকে চালিত করে। ধর্ম অন্য এক জগৎকে নির্দেশ করে, যেখানে শিল্প নির্দেশ করে একটি উন্নততর অস্তিত্বকে। ধর্ম অনেক দূরে অবস্থিত একটি জায়গায় যাওয়ার নিমন্ত্রণ করে, আর শিল্প এমন একটি স্থানের কথা বলে যার দূরত্ব কম হলেও সেখানে পৌঁছানো কঠিন।

অন্য কোন চলচ্চিত্রকারের স্টাইলের সাথে আপনার স্টাইলের মিল আছে বলে মনে করেন?

Hou Hsiao-hsien একজন। তারকভ্‌স্কির সিনেমা আমাকে ভৌত জগৎ থেকে সম্পূর্ণ বিচ্ছিন্ন করে ফেলে, এগুলোই আমার দেখা সবচেয়ে আধ্যাত্মিক সিনেমা। ফেলিনি কিছু কিছু জায়গায় স্বপ্নের জীবনকে সিনেমায় নিয়ে এসেছিলেন, তারকভ্‌স্কিও এমনটি করেছেন। থেও আগ্গেলোপৌলোসের সিনেমাও কিছু কিছু মূহুর্তে এরকম আধ্যাত্মিকতা অর্জন করে।

আপনি অতীতেও এক ধরণের “কাব্যিক চলচ্চিত্র” নির্মাণের উদ্দেশ্য ব্যক্ত করেছেন- যে সিনেমাগুলো উপন্যাস বা মঞ্চনাটকের চেয়ে কবিতার প্রতি বেশী কৃতজ্ঞ থাকবে। আর “দ্য উইন্ড উইল ক্যারি আস” নামটি তো Forough Farrokhzad নামক একজন মহিলা কবির কবিতা থেকে নেয়া। সিনেমার একটি দৃশ্যে প্রকৌশলী কবিতাটি আবৃত্তিও করেন। এতে ওমর খৈয়ামের রুবাইয়াত-ও আছে।

সিনেমাকে বলা হয়েছে “সপ্তম শিল্প”। এই কথাটি দুইভাবে ব্যাখ্যা করা যায়: এটা অন্যান্য শিল্পকে অন্তর্ভুক্ত করে, সে হিসেবে একে অন্যান্য সব শিল্পের যোগফল বলা যায়। অথবা বলা যায়, সবচেয়ে পরিপূর্ণ শিল্প মাধ্যম। আর সিনেমা যদি সপ্তম শিল্পও হয়, তারপরও এটা বেশ আয়রনিক যে, চিত্রকলা, সঙ্গীত ইত্যাদি সব শিল্পেরই বিবর্তন ঘটেছে অর্থাৎ তারা পরিবর্তিত হয়েছে, কিন্তু সিনেমার ক্ষেত্রে এমন কিছু হয়নি। সিনেমা আগে যেমন ছিল এখনও ঠিক তেমন আছে: এটা এখনও গল্প বলার উপর খুব বেশী নির্ভর করে। “কাব্যিক চলচ্চিত্র” বলার মাধ্যমে আমি কোন মানবিক মেসেজ দিতে চাচ্ছি না। আমি বলছি, সিনেমা কবিতার মত হয়ে উঠতে পারে, কবিতার জটিল গুণগুলো অর্জন করতে পারে, এবং এমনকি কবিতার বিশাল বিত্ত-বৈভবের অংশীদার হতে পারে। কবিতার মত সিনেমাও প্রিজমের ক্ষমতা অর্জন করতে পারে।


এ ধরণের অর্থাৎ প্রিজমের মত সিনেমার ক্ষমতা চিরন্তন- নির্দিষ্ট কোন পরিস্থিতি এবং সময়ে আপনি এর সাথে বিভিন্ন উপায়ে সম্পর্ক স্থাপন করতে পারবেন এবং মানুষ নিজেকেও এর মধ্যে খুঁজে পাবে। আমি মনে করি, সিনেমারও অন্যান্য শিল্পের পথ অনুসরণ করা উচিত, একই ধরণের উন্নয়ন প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে যাওয়া উচিত, এবং একই ধরণের আউটলুক অর্জন করা উচিত। কিন্তু সেক্ষেত্রে দর্শকদেরকে একটু ছাড় দিতে হবে, চলচ্চিত্রের কাছ থেকে শুধু বিনোদন আশা করলে হবে না। কবিতা না বুঝলে কেউ সেটাকে বাজে কবিতা বলে সাব্যস্ত করে না। বরং সেটার সাথেই বাস করতে শুরু করে। যখন কেউ গান শুনতে যায় তখন তার কাছ থেকে কোন গল্প শোনার আশা করে না। বিমূর্ত চিত্রের দিকে তাকালে কোন ন্যারেটিভ মনে আসে না। তাৎক্ষণিক বা সরল বাস্তবতা নয়, ছবির কারুকার্য ও সংগঠনের মাধ্যমেই সেটার অর্থ বুঝতে চেষ্টা করে। আমি আশাকরি সিনেমা স্ক্রিনের সামনে বসে তারা সে কাজটাই করবে।

“ফাইভ” এর মাধ্যমে আপনি দর্শকদেরকে সে সুযোগটাই দিয়েছেন। গল্প বলার পরিবর্তে কাস্পিয়ান সাগরের তীরে নেয়া পাঁচটি সিংগল-টেক দৃশ্য তুলে ধরেছেন।

হ্যাঁ, “ফাইভ” এর অবস্থান কবিতা, আলোকচিত্র ও চলচ্চিত্রের রাস্তাগুলোর ছেদবিন্দুতে। এটা পরীক্ষণমূলক শিল্প। পরীক্ষণমূলক হতেই হবে, কারণ এখানে একের পর এক দেখানো হয়েছে: ঢেউ ভেঙে পড়ছে, হাঁস হেলে-দুলে সাঁতরে চলছে, পথচারী ব্যয়াম করছে, কতগুলো কুকুর, এবং সবশেষে ঢেউয়ের উপর চাঁদের আলো।

[চলবে…]

২৭ টি মন্তব্য : “দি অ্যাক্সিডেন্টাল ওটার – ৩”

  1. কামরুল হাসান (৯৪-০০)

    এই জায়গাটা দেখ.........

    তোর অনুবাদঃ

    আমার অনুভূতি হচ্ছে, দর্শকরা এখন আর বেশী কিছু আশা করে না। তারা চূড়ান্ত সুখ চায় না বরং অ্যাকশন এবং এ ধরণের অন্যান্য বিষয়গুলোই পছন্দ করে।

    মনিস রফিকের অনুবাদঃ

    আমার অভিজ্ঞতা বলে আজকাল দশর্করা সিনেমা থেকে খুব বেশি কিছু প্রত্যাশা করে না। তারা সত্যিকারের আনন্দ পেতে চায় না বরং দেখতে চায় অ্যাকশন অথবা এ ধরনের কিছু।

    পড়তে কোনটা বেশি ভালো লাগছে?

    আমি মূল ইংরেজি সাক্ষাৎকারটা এখন আর দেখলাম না আবার, কিন্তু এই দুইটার মধ্যে আমার কিন্তু মনিসের ভাষাটা বেশি প্রাঞ্জল মনে হচ্ছে। 😀


    ---------------------------------------------------------------------------
    বালক জানে না তো কতোটা হেঁটে এলে
    ফেরার পথ নেই, থাকে না কোনো কালে।।

    জবাব দিন
  2. শার্লী (১৯৯৯-২০০৫)
    ধর্ম ও শিল্প- তারা মানুষকে একই দিকে চালিত করে। ধর্ম অন্য এক জগৎকে নির্দেশ করে, যেখানে শিল্প নির্দেশ করে একটি উন্নততর অস্তিত্বকে। ধর্ম অনেক দূরে অবস্থিত একটি জায়গায় যাওয়ার নিমন্ত্রণ করে, আর শিল্প এমন একটি স্থানের কথা বলে যার দূরত্ব কম হলেও সেখানে পৌঁছানো কঠিন।

    খুবই সুন্দর লাগল কথাগুলো।

    জবাব দিন

মওন্তব্য করুন : মুহাম্মদ (৯৯-০৫)

জবাব দিতে না চাইলে এখানে ক্লিক করুন।

দয়া করে বাংলায় মন্তব্য করুন। ইংরেজীতে প্রদানকৃত মন্তব্য প্রকাশ অথবা প্রদর্শনের নিশ্চয়তা আপনাকে দেয়া হচ্ছেনা।