বৃষ্টি ,আমি ও অন্যান্য

বৃষ্টি শব্দ টা লিখতে খুব বেশি কষ্ট হবার কথা না। অন্তত বাংলা ভাষার যুক্তাক্ষর ইতিহাস এত ভয়াবহ রকমের ভাল যে “বৃষ্টি” লিখাটা অতি নস্যি ব্যাপার। কিন্তু অনুভুতির ব্যাপারটা পুরাই উল্টা। পথে যেতে যেতেই কোনদিন যেন ঝুম বৃষ্টি নামলো, পাশে বসা এক ষাটঊর্ধ্ব বৃদ্ধ আপন মনে বলে উঠলেন “বৃষ্টি হলে মনটা ‘কেমন’ যেন হয়ে যায়।” কথাটা শুনে চমৎকৃত হই। আর স্থান কাল পাত্র ও বয়স ভেদে এই ‘কেমন’ টা যে কি তা বোঝার জন্য খুব বেশি কিছু জানার দরকার হয় না।

মনে রাখার মত প্রথম টা ছিলো ২০০৯ সালের কোন এক দুপুর. কি একটা কাজের জন্য যেন স্টেডিয়াম পাড়ায় গিয়েছিলাম. আসার পথে বৃষ্টি নামলো. বাসায় যাওয়ার জন্য কিছুই খুজে পাচ্ছি না. না একটা রিকশা, না ইজি বাইক (যশোরে এটার অনেক প্রচলন). এদিকে বৃষ্টির গতি যেন পাল্লা দিয়ে বেড়ে যাচ্ছে. আমি নিরুপায়, আশে পাশে কোনো মাথা গুজার ঠাই পাচ্ছি না, অগত্যা কবি গুরুর আদেশ মেনে “একলা চলা” শুরু করলাম. রাস্তায় ভিজতে মন্দ লাগছিল না। হঠাত করেই কোথা থেকে যেন একটা ভ্যান এর উদয় হল. চড়ে বসলাম. হালকা বৃষ্টির বাতাসে “একটি ভ্যান গাড়ি ভ্রমন” আমার ভঙ্গুর স্মৃতিতে স্থান করে নিল. বাসায় আসার পর কড়া ধমক খাওয়ার পর ও কেন যেন মনে হচ্ছিল, “ইসস আরেকবার যদি পেতাম ______”. সেই দিন রাতেই একটা ব্যাপার খুব জানতে ইচ্ছা করছিল বৃষ্টি নিয়ে কবি ‘সুকান্ত’ কি কিছু লিখেছিলেন? (কেউ জেনে থাকলে আমাকে জানাবেন, আমার এই বিষয়ে জ্ঞান প্রায় শূন্যের কাছাকাছি … (অনধিকার চর্চা করে থাকলে ক্ষমা করবেন আশা করি ….)

পরের টা ছিলো ২০১০ সালের ১৯ আগস্ট. পুরোপুরি কেতাদুরস্ত পোশাক। রাজধানীর অন্যতম ব্যস্ত একটি সড়কে দাড়িয়ে। হাতে ব্যান্ডেজ। প্রথম বারের মত একটি উক্তির সার্থকতা প্রমানে বাস্ত হলাম…” “I love to walk in rain bcoz nobody can see my tears””…কিছু কিছু স্মৃতি থাকে যেগুলা ভুলে যেতে ইচ্ছা করে কিন্তু ভোলা যায় না।পরে যখন মনে পড়ে তখন বেশ মজায় লাগে। মানুষ হয়ত বেঁচে থাকে এই কারনে “two moments in the life is never same”। তীরে এসে আমার ছোট তরী ডুবলেও আমি তাতে খুশী । এর পরবর্তীতে অনেক দিন আমি খালি “বৃষ্টি” দেখতাম। মনে মনে হয়ত বেসুরো গায়তাম “বৃষ্টি দেখে অনেক কেঁদেছি,করেছি কতো আর্তনাদ(আসলেই আর্তনাদ করেছিলাম,ব্যান্ডেজ খুলতে গিয়ে :D)”

হতে পারে সর্বশেষ টা হচ্ছে ২০১১ সালের ৭ মে. বর্ষাকালে ছাতি না নিয়ে বেরুনোর ফলাফল টা মধুর ই ছিল বলা যায়. “বৃষ্টি টা আকাশ ভেঙ্গে না নামলেও আমি ঠিকই কাদামাটির পথ পার হয়ে যাচ্ছিলাম.” আশে পাশের সব মানুষেরা যখন একটু মাথা গুজবার মতন জায়গা খুজায় মহা ব্যস্ত আমি তখন নির্বিকার ভাবে হেঁটে যাচ্ছি. খালি পা, ভাবলেশহীন মুখাবয়ব, নির্লিপ্ত চাহনি সব গুলো এক সাথে মিলে যান্ত্রিক মানুষগুলোকে খানিকটা বিভ্রান্তিতে ফেলে দেয়।
রাস্তা পুরো ফাঁকা. খালি বেরসিক কিছু ভারী যানবাহন বৃষ্টির একক আধিপত্য কে ক্ষুণ্ণ করার চেষ্টা করছিলো. আমার মনে হচ্ছিল ইসস গায়ে যদি একটা হলুদ পাঞ্জাবি থাকতো তাইলে আজকে নির্ঘাতভাবে কোন হিমু প্রেমিকের মনে এই কথাটার জন্ম দিতাম … আরে হিমু নাকি? ​​এই কথা টাও হয়ত শুনতাম … আরে হালায় করে কি … বলদা নাকি … হলুদ পাঞ্জাবি পইরা ভাব লইতাসে …

আসলে বৃষ্টির অনেক রঙ। কেউ যখন কনক্রিটের ঘরে বসে বৃষ্টির নানাবিধ সুখ(অথবা দুঃখের) স্মৃতি চরণে ব্যস্ত তখন কেউ হয়তো ঘরের ফুটো দিয়ে বৃষ্টির পানি যাতে না আসে সেই কাজে ব্যস্ত।

শুধু কি বৃষ্টি ? আসলে অনেক কিছুর ই অনেক রং।কারও কাছে রঙিন কারও কাছে সাদাকালো আবার অনেকের কাছে রঙহীন।

(২২ আগস্ট , ২০১১)

১,৪৮২ বার দেখা হয়েছে

৮ টি মন্তব্য : “বৃষ্টি ,আমি ও অন্যান্য”

মওন্তব্য করুন : সাজেদ (২০০৪-২০১০)

জবাব দিতে না চাইলে এখানে ক্লিক করুন।

দয়া করে বাংলায় মন্তব্য করুন। ইংরেজীতে প্রদানকৃত মন্তব্য প্রকাশ অথবা প্রদর্শনের নিশ্চয়তা আপনাকে দেয়া হচ্ছেনা।