গল্প হলেও সত্যি

ছেলেটি পড়ত রংপুর ক্যাডেট কলেজে।নাম আসিফ।দুষ্ট ক্যাডেটডের লিডার ছিল সে।কিন্তু মনটা পানির মত পরিস্কার আর সরল।আমার বেস্ট ফ্রেন্ড।তাই বলে তাকে এই কমপ্লিমেন্ট দিচ্ছিনা।যে বা যারা তাকে চিনে সবাই একই কথাই বলবে।
মেয়েটি পড়ত জয়পুরহাট গার্লস ক্যাডেট কলেজে।নাম নিশাত।শান্ত শিষ্ট লেজ বিশিষ্ট মেয়ে।মনের দিক দিয়ে হয়তো সৃষ্টিকর্তা ই তাদের এক বিন্দুতে মিলিয়েছিলেন।তবে আশ্চর্যের ব্যাপার হচ্ছে গল্পের এই ২ চরিত্র কলেজ জীবনে একে অন্যকে সেভাবে চিনতই না।বলে রাখা ভাল যে ছেলেটার আগে আমি নিজে মেয়েটার বাসা ঘুরে এসেছি!!!:-p
চেনা বলতে ছেলেটার বাসা ছিল গাইবান্ধায় আর মেয়েটির কুড়িগ্রামে।তো মেয়েটির কিছু কলেজমেটের বাসা ছিলো গাইবান্ধায় আর ছেলেটির কিছু কলেজ মেটের বাসা ছিলো কুড়িগ্রামে।তো দেখা যেত যে ছুটির পরে কলেজে গিয়ে তারা সারাদিনই ছুটির গল্পই কেবল করত।এটুকুই তাদের একে অন্যকে চেনার পর্ব ছিল শুরুতে।
২ জনই ক্যাডেট লাইফ শেষ করে নেমে পড়ে ভর্তি যুদ্ধে।এখন ও তাদের চেনা হলনা সেভাবে।অবশেষে তাদের পরিচিত হওয়ার সেই দিন টি চলে এল।তাও তা নিছকই দুর্ঘটনা বশত।আসিফের একটা ফ্রেন্ড বি এম এ তে চলে যাবে,তো যাওয়ার আগে তার স্পেশাল মানুষ্ কে একটা গিফট পাঠাবে।।সে ছিল আসিফের ভালো বন্ধু।ওদিকে নিশাত ও ছিল ছেলেটার ভালো ফ্রেন্ড।তাই গিফট আর ডাইরিটা দেওয়া নেওয়ার দায়িত্ব পড়ল আসিফ আর নিশাতের উপর।তাদের প্রথম দেখা হল।।বসুন্ধরা সিটি কমপ্লেক্স এ।নিশাত একটু খুঁতখুঁতে টাইপের ছিল।।আর আসিফ ছিল বিন্দাস।আর মেয়েদের বোধয় আসিফ একটু ভয় ই পেত।তাই ডাইরিটা দিয়েই ঝটপট পালালো সে।।নিশাতের ভারি লাগলো ব্যাপারটা।।তাকে এভাবে অবহেলা!!যেনো চিনেই না!!ঠায় দাঁড়িয়ে রইল কিছুখন।।তারপর চলে গেল।।ফেসবুকে আসিফকে খুঁজে নিয়ে রিকয়েস্ট পাঠালো সে..।।আর ভাবল যে দেখে নিবে এই ছেলেকে।।তারপর………।
তারপর ফেসবুকে তাদের পরিচয় হল।।আসিফ যদিও খুব কমই কথা বলত।।তখন তাদের ভর্তি পরীক্ষা চলছিল বলে ২ জনই ঢাকার মোহাম্মাদপুরে থাকত।।এভাবে তাদের বন্ধুত্ব হল।।আস্তে আস্তে তাদের বন্ধুত্ব বেড়ে বেস্ট ফ্রেন্ড হল।।এবং একদিন তারা দেখা করল।।সেদিন ও আসিফ অনেক লজ্জা পাচ্ছিলো।।যেন কথা বেরোচ্ছিলো না।।নিশাতই ওর লজ্জা ভাঙ্গানোর দায়িত্ব নিল যেন।।
-তুই এত লাজুক কেন রে?
-জানিনা।।
চুপচাপ আসিফ গিয়ে নিশাতের জন্য ঝালমুড়ি নিয়ে এলো।।মাথা নিচু করে বসেই রইলো।।
-তুই বুঝলি কিকরে যে আমার ঝালমুড়ি খেতে ইচ্ছে করছে??
-আমি বুঝি।।
-আচ্ছা,আর কি বুঝিস।।
-তুই অনেক রাগী।
তারপর একটু মারামারি,খুনসুটি।।এই ছিল ওদের বন্ধুত্ব।।আসলে ওরাও বুঝে উঠতে পারছিলো না যে এর পরবর্তী স্টেজ টার নাম ভালোবাসা।।নিশাত আস্তে আস্তে আসিফের প্রতি দুর্বল হতে লাগলো।।আসিফ ও নয় কি!!হয়তো হ্যাঁ।।কিন্তু কেউ কাউকে প্রকাশ করলোনা।।চলছিল।।প্রায় প্রতিদিনই এরপর ওরা দেখা করতে লাগলো,অথচ আসিফ শয়তান টা আমাকেও কখনো জানায়নি।।এর বিচার পরে হবে।।চুরি করে দেখা করত,ঘুরত,আর ঝা্লমুড়ি খেত।।আর??একজন আরেকজন কে পড়াশুনার তাগাদা দিত।।ওদের ভর্তি পরীক্ষাও হয়ে গেল।।আল্লাহ্ র রহমতে নিশাত ঢাকা ভারসিটি আর আসিফ বাংলাদেশ কৃষি ভারসিটি তে চান্স ও পেয়ে গেল।।ইতোমধ্যে নিশাত ঠিক করে ফেলল যে সে তার মনের কথা আসিফ কে জানিয়ে দিবে।।জানালো ও সে তবে সরাসরি না।।ফেসবুকে……।।
nishat:তুই কাউকে ভালোবেসেছিস?
asif;নারে,তুই?
nishat:হুম।।কিন্তু সে বুঝেনা।।
asif:বুঝিয়ে বল।।বুঝবে।।তোর মত লক্ষী মেয়েকে কে না বুঝবে বল?
nishat:হইছে,তুই নিজেই তো বুঝিস না।।
asif:বুঝা না প্লিজ।।
nishat:সত্যিই তুই বুঝিস না আসিফ।।
asif:সত্যিই না রে পাগলি।।
ছাগলটা তা আসলেও বুঝেনাই।।তারপর তো নিশাত রাগ করে ফেসবুকই বন্ধ করে দিল।।গাধাটা তাও বোঝেনাই।।এদিকে গাধাটাও কিন্তু নিশাত কে ছাড়া কিছুই বুঝতোনা।।নিশাত ২-৩ দিন যোগাযোগ করছে না দেখে আসিফ বুঝলো যে কিছু একটা ঘটতে চলেছে।।তাও বোঝেনাই গাধাটা।।শেষ অব্দি সে নিশাতের ফোন পেয়ে বাঁচল।।শুনলো নিশাতের স্কলারশিপ কনফার্ম হয়ে গেছে,ও পড়তে রাশিয়া চলে যাচ্ছে।।ভালো লাগার থেকে খারাপ লাগলো বেশি আসিফের।।অবশেষে দেরিতে হলেও সে বুঝলো যে নিশাতের ভালো লাগার মানুষটি আর কেউ নয়,এতদিন ধরে যাকে বেস্ট ফ্রেন্ড জেনেছে,যার হাসি কান্নায় নিজের সবটাকে খুঁজে পেয়েছে,সেই আসিফ।।
ছলোছলো চোখে নিশাত কে বিদায় দিতে এয়ারপোরট এ এলো আসিফ।।i love u লেখা কার্ড শেষ মুহূর্তে হলেও ধরিয়ে দিয়েছিল অবশেষে সে।।দেরিতে হলেও ট্রেন টা সে ধরেছে।।মিশ্র একটা অভিজ্ঞতা নিয়ে রাশিয়ার উদ্দেশ্যে ঢাকা ছাড়লো নিশাত,না না একবারে নয়।।ভালোবাসাকে জয় করে ফেরার জন্য।।আসিফ ও তার পড়াশুনায় মন দিয়েছে।।শুধু রাতের এটুকু মেসেজ ই তার জন্য যথেস্ট,with love from russia…
আমরা অপেক্ষা করছি,আসছে জুলাইতে নিশাত দেশে ফিরছে,তখন বিচার হবে।।আমাকে কেন জানানো হলনা!!তবে আমি খুশি।।রাব নে বানা দি জোড়ি।।আশা করি আরেকটা ডিনার সেটের গল্প আমাদের সব্বাইকে খুশিই করে।।১ জুলাই কিন্তু আমরা বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের রাশিয়া ফেরত বিমানটার জন্য সবাই অপেক্ষা করব।।ফুল নিয়ে।।এবার আর ছাড়ছিনা।,…।!!!!

৫,০২৬ বার দেখা হয়েছে

১৩ টি মন্তব্য : “গল্প হলেও সত্যি”

  1. রাজিব ভাইয়া সিয়ামকে বানানের বিষয়টা ধরিয়ে দেওয়ায় অনেক ভাল হয়েছে। আসলে অনেকেই ভুল শুধরে দেয়না বলেই অন্যদের ভুলগুলো আজীবন থেকে যায়। সাদামাটা বর্ননায় গল্প হলেও সত্যিটা ভাল লাগলো। এটাই আরেকটু ঘুরিয়ে লিখলে আরো চমৎকার হতো। শুভেচ্ছা রইলো।

    জবাব দিন
  2. কিবরিয়া (২০০৩-২০০৯)

    এই অবস্থা?

    #ভালো লাগছে।


    যেমন রক্তের মধ্যে জন্ম নেয় সোনালি অসুখ-তারপর ফুটে ওঠে ত্বকে মাংসে বীভৎস ক্ষরতা।
    জাতির শরীরে আজ তেম্নি দ্যাখো দুরারোগ্য ব্যাধি - ধর্মান্ধ পিশাচ আর পরকাল ব্যবসায়ি রূপে
    - রুদ্র মুহম্মদ শহীদুল্লাহ

    জবাব দিন

মওন্তব্য করুন : খায়রুল আহসান (৬৭-৭৩)

জবাব দিতে না চাইলে এখানে ক্লিক করুন।

দয়া করে বাংলায় মন্তব্য করুন। ইংরেজীতে প্রদানকৃত মন্তব্য প্রকাশ অথবা প্রদর্শনের নিশ্চয়তা আপনাকে দেয়া হচ্ছেনা।