ইয়াহু চরিতঃ দৈত্যরাজের অজ্ঞতা

ব্রডডিংনাগ দেশের মানুষ গুলো দৈত্যাকৃতির। মানুষ যত লম্বা হয় তার বিচারশক্তিও সেই অনুপোতে কমতে থাকে। তাদের শিক্ষানীতি ত্রুটিযুক্ত।ওদের শুধু শেখানো হয় নীতিজ্ঞান, ইতিহাস কাব্য ও গণিত। দৈত্যদের রাজা একদিকে যেমন জ্ঞানী আবার তার অজ্ঞানতাও সীমাহীন। রাজার উত্তম কুটনীতিক হওয়া উচিত তা তিনি মানতে রাজী নন। রাষ্ট্রকে অনেক বিষয় গোপন রাখতে হয় তাও তিনি মানতে নারাজ। তাঁর ধারণা- রাষ্ট্রের কোন গোপনতা রক্ষার দরকার নাই, সবকিছু তাৎক্ষনিক সমাধান করে ফেলাই ভাল । তার জন্য কিছু সাধারণ জ্ঞান, কিছু বিচার বুদ্ধি, কিছু উদারতা থাকাই যথেষ্ট। তবে বিচারবুদ্ধি ও বিবেচনা অবশ্যই থাকারদরকার। আর দরকার সাহস। এসব গুণ থাকেলই সুশাসক হওয়া যায়, এই হল দৈত্যরাজের ধারণা। মানব চরিত্র বুঝার জন্য কোনো রাজনৈতিক জ্ঞানের প্রয়োজন হয়না । এ হেন অজ্ঞ মহারাজা ইংল্যান্ডের সুশাসন পদ্ধতি ও বিচার ব্যবস্থা সম্পর্কে একগাদা অর্বাচীন প্রশ্ন রাখলেন ছোট্ট গ্রিলড্রিগ অর্থাৎ গালিভারের কাছে। তাঁর প্রশ্ন এবং মূল্যায়ন পাঠকদের সামনে তুলে ধরছি।

হাউস অব লর্ডসঃ

অভিজাত পরিবারের যুবকদের দেহমনের বিকাশের জন্য কি করা হয় ? যদি কোন অভিজাত পরিবার নির্বংশ হয়ে যায় তবে উচ্চ সভায় তার স্থান কিভাবে পূরণ করা হয় ? যাদের লর্ড উপাধি দেয়া হয় তাদের কি কি গুণ থাকা দরকার? কখনও কোনও রাজা বা রাজবংশের কারও মন জয় করার জন্য কিংবা বিশেষ কোন উদ্দেশ্যে কোনও মহিলাকে বা কোনও মন্ত্রী বা বিরুদ্ধ দলের নেতাকে কিংবা নিজ দলের সংগঠন মজবুত করার জন্য অর্থ ব্যবহার করা হয় কি না ? লর্ড বংশের সন্তান বা স্বয়ং লর্ড দেশের আইন বা সম্পত্তি ও সম্পদ বিলি ব্যবস্থা সম্পর্কে কতটা অভিজ্ঞ বা সচেতন? তাঁরা নীচ প্রবৃত্তি বা হিংষা ঘুষ ইত্যাদি দ্বারা কতটা প্রভাবিত ?

হাউস অব কমন্সঃ

নির্বাচিত হবার জন্য কি যোগ্যতা থাকা দরকার বা বিশেষ কৌশল অবলম্বন করা হয় কি না ? কোন নীতিহীন অথচ অর্থশালী প্রার্থী প্রচুর অর্থ ছড়িয়ে ভোটদাতাদের প্রভাবিত করতে পারে কি না ? এবং এর দ্বারা যোগ্য ও সৎ প্রার্থীকে পরাজিত করতে পারে কি না ? সংগতিপন্ন না হয়েও প্রচুর অর্থ ব্যায় করে ( যে জন্য একটা পরিবার ধ্বংস হয়ে যেতে পারে।) অথবা অন্য কোন উপায়ে মানুষ সংসদ সদস্য হবার জন্য এত ব্যগ্র কেন ? কি উদ্দেশ্য ? অথচ নির্বাচিত হলে তারা বেতন বা পেনশন পায় না!

বিচার ব্যবস্থাঃ একটা মামলা চলতে কতদিন লাগে ? কি রকম খরচ হয় ? সুবিচার সম্পর্কে সন্দেহ থেকে যায় কি না ? মিথ্যা মামলা সাজানো হলে আইনজীবিদের ভূমিকা কি ? রাজনীতি ও ধর্ম সংক্রান্ত মামলার নিষ্পত্তি কি ভাবে হয় ? এ ধরণের মামলায় নিয়োজিত আইনজীবিদের রাষ্ট্রবিজ্ঞান ও ধর্ম সম্পর্কে যথেষ্ট জ্ঞান আছে কি না ? বিচারকদের ভূমিকা কি ? যদি ধরে নেয়া যায় তারা যথেষ্ট জ্ঞানী তথাপি তাঁরা প্রভাবিত হন কি না ? বিচারকরা কি সচ্ছল না অভাবী? তাঁরা তাদের সুচিন্তিত রায়দানের জন্য বা অন্য কোন কারণে কি পুরস্কৃত হন ? কর্মত্যাগ করে বা অবসর নিয়ে তারা জন প্রতিনিধি নির্বাচিত হন কি না ?

দৈত্য মহারাজের মূল্যায়নঃ অজ্ঞতা, চরিত্রহীনতা ও আনুসঙ্গিক নির্গূণ না থাকলে বিধায়ক হওয়া যায় না। চতুর ব্যক্তিরা আইনের অপব্যাখ্যা করে সৎ ব্যক্তিদের ঠকায়। আইন ও বিধান এমন ভাষায় লিখা যে তার অনেক রকম ব্যাখ্যা করে সাধারণ মানুষকে বিভ্রান্ত করা যায়।ফলে দুনীতি ঘটার যথেষ্ট সুযোগ রয়েছে। ধার্মিক ব্যক্তিরা সৎপথে থেকে আদর্শ জীবন যাপনের জন্য, পণ্ডিতেরা তাঁদের জ্ঞান ও বিদ্যার জন্য , সৈনিকেরা সাহস ও শৌর্যের জন্য, বিচারকরা তাঁদের নিষ্ঠার জন্য, বিধায়করা দেশপ্রেম ও তাঁদের সৎকাজের জন্য সরকারের কাছ থেকে কতখানি উৎসাহ পায় বা তাদের নিজ নিজ বৃত্তিতে উন্নতির জন্য তারা কি করেন?

[ এ তো গেল ইংল্যাণ্ড সম্পর্কে দৈত্যরাজের অবমূল্যায়ন। আমাদের সম্পর্কে মহারাজের প্রশ্ন বা মূল্যায়ন কেমন হতে পারে ? আসুন পাঠক, মনে করি আমি নিজেই গালিভার।চোখ বন্ধ করে প্রশ্ন করি নিজেকে ।]

১,০৭৬ বার দেখা হয়েছে

৪ টি মন্তব্য : “ইয়াহু চরিতঃ দৈত্যরাজের অজ্ঞতা”

মওন্তব্য করুন : মোস্তাফিজ (১৯৮৩-১৯৮৯)

জবাব দিতে না চাইলে এখানে ক্লিক করুন।

দয়া করে বাংলায় মন্তব্য করুন। ইংরেজীতে প্রদানকৃত মন্তব্য প্রকাশ অথবা প্রদর্শনের নিশ্চয়তা আপনাকে দেয়া হচ্ছেনা।