মণ্ডল থেকে সরকারঃ ৪র্থ পর্ব

IMG_20150602_085252_1

নূরনগর। নদীয়া জেলার একটি গ্রাম। চুয়াডাঙ্গা রেলষ্টেশনের উত্তর দিকে অবস্থিত। সেই গ্রামের জরিপ উদ্দীন বিশ্বাসের পুত্র সুন্দর আলী বিশ্বাস। ব্রিটিশ আমলের লাখোপতি।খুব সৌখিন ছিলেন তিনি। জামাকাপড়ে সোনার বোতাম ব্যবহার করতেন। লম্বা চওড়া ভয়ংকর সুন্দর এক লোক। ভুসিমালের ব্যবসা, আড়তদারী, তেলের ব্যবসায় বেশ পসার ছিলো। প্রথম স্ত্রী সুরমা বেগম দুটি কন্যার জন্ম দিয়ে মারা যান। দুইটি কন্যা জাহানারা আর আশানারা। জাহানারা বড়। আশানারা ছোট। আশানারার বয়স যখন ৩/৪ বছর তখন মাকে হারান। দুই বোনই খুব সুন্দর আর ফর্সা ছিলেন।বড়টাই বেশি । কিন্তু ছোটটার উপনাম হল পুঁটি। পুঁটিমাছের মত ফর্সা তাই। পুঁটির আরেকটা নাম ছিল– খাদিজা। সুন্দর আলীর ২য় স্ত্রীর নামও খাদিজা। তাই খাদিজা নাম মুছে গিয়ে পুঁটি স্থায়ী হয়ে গেল। প্রাইমারীতে পড়ার সময় এই পুঁটি নামটির জন্য কম দুর্ভোগ পোহাতে হয়নি। ফাজিল পোলাপান আমাকে দেখলেই চিৎকারজুড়ে দিত-

“পুঁটির ব্যাটা দানকিনি হয়া পাঁথারে মারে ঝাঁপ

মায়ের এই ডাকনামটি নিয়ে আমার খুব কষ্ট ছিল। খুবই রাগ হত। ওদের মারতে ইচ্ছা হত। রাগে ফুঁসতাম। তখন আমি একটি নতুন নাম পেলাম। ট্যাংরা। ট্যাংরা মাছের মত নাকি কাঁটা ফুটাতে চাইতাম। এবার একটু পেছন ফিরে যাই। সুন্দর আলী বিশ্বাসের একজন অল্পবয়সী বিধবা বোন ছিলেন। হুরেজান। এই নানী কোন বাচ্চা হবার আগেই স্বামীকে হারান। আর কোন বিয়ে না করে বাবার বাড়ি ছিলেন। তিনি আমার মাকে মাতৃস্নেহে লালন পালন করেছেন। এই নানীর মৃত্যু সংবাদে আমরা সবাই নূরনগর গিয়েছিলাম।খুব অল্প্ মনে আছে। অনেক জন সাদা কাপড় পরা বয়স্ক মেয়ে মানুষ গলাগলি ধরে কাঁদছিলো। সেই ছোট্ট বেলায় মাঝে মাঝে পান খেতাম।মা মুখ থেকে চিবানো পান বের করে দিতেন। সেটাই মজা। যাই হোক নানী বাড়ি আস্ত পান খাবার সুযোগ মিলে গেলো। আমার চাইতে একটু বড় সুন্দর একটা মেয়ের সাথে অনেক ক্ষন ছিলাম। আমাকে পান বানিয়ে দিয়েছিলো। চুন বেশি দেয়ায় আমার জিহ্বা পুড়ে গেছিলো। কিন্তু মেয়েটাকে আমার খুব ভাল লেগেছিল। নাম জিজ্ঞাস করা হয়নি। তাম্বুল ভক্ষনের পর আর দেখাও হয়নি। আহা রে । সেই প্রথম রাজহাঁসের মাংশ খেয়েছিলাম।স্বাদ মনে করতে পারি না।টাল হয়ে গেছি না কি ? পূর্বসূরীদের কথা বলতে গিয়ে নিজের কথা বলছি। আবারও চলে যাচ্ছি আরও অতীতে-

একবারে ডানে সাদা পায়জামা পরা মতি সরকার, চেয়ারে উপবিষ্ট, তার ডান পাশে বন্ধু মান্নান সরকার।

এবার রাজশাহী জেলায়। রিয়াছত সরকারের রক্ষিতা কিংবা ২য় স্ত্রী নূরজাহান ওরফে সরকারনী ছিলো খুব বজ্জাত। ডাইনী টাইপ। সতীনের মেয়েকে কাছে টেনে দূরে ঠেলেছে ছেলেটাকে। পরোপকার করতে গিয়ে এদিকে নজর ছিলনা রিয়াছতের। ৬/৭ বছর বয়সেও ন্যাংটা হয়ে ঘুরে বেড়াত মতি। কেউ কেউ ভয় দেখাত নুনু কাটার দল নুনু দেখতে পেলে নুনু কেটে দিবে। সেই ভয়ে মতি একহাত দিয়ে নুনু ঢেকে ঘুরে বেড়াতো। আর একটু বড় হয়ে সাথে চাকু নিয়ে ঘুরতো। তার বাবাতো দেহরক্ষী নিয়ে ঘুরতো। সাতে থাকতো ধারালো ভোজালি। গালিমপুর মাইনর স্কুলে পড়ার সময় রাবেয়াকে সাথে করে নিয়ে যেত। মাতৃস্নেহ বঞ্চিত মতি অন্য কোন মেয়ের সাথে মেশেনি বলে সহজেই রাবেয়ার প্রতি দুর্বল হয়ে পড়ে। রাবেয়া জফর সরকারের মেয়ে তা তা আগেই বলেছি। মাইনর স্কুলে ক্লাশ সিক্স পর্যন্ত পড়া যেত। তার পর আড়ানী স্কুলে ভর্তি। সম্ভবত মনোমহিনী স্কুলে। কিছুদিন পড়ার পর আর স্কুলে যাওয়া হয়নি। অনেক দূর, বাঘের ভয়, বাউন্ডুলে মন। এভাবে গেল কয়েক বছর। রাবেয়াকে না পেয়ে মনটা ভেঙ্গে গেল মতির। যোগ দিল বঙ্গীয় গৃহরক্ষী দলে (Bengal Home Guard)। সেটা ছিল ১৯৪৩ সাল। বন্ধুর মেয়েকে ছেলে পেলনা তাই বলে বিয়ে হবে না ? তা কি করে হয়। খোজ খোজ খোজ। অবশেষে সুন্দর আলী বিশ্বাসের ২য় কন্যা আহসানার বেগমের সাথে বিয়ে ঠিক হল মতি সরকারের।আশানারা ক্লাশ ফোর পর্যন্ত পড়েছেন। বাড়ি থেকে স্কুল অনেক দূরে বলে আর পড়া হয়নি। বিয়ের তারিখঃ ইংরেজী- ১৯ জুলাই ১৯৪৭ , বাংলা- ২ শ্রাবণ ১৩৫৪ , শনিবার দিবাগত রাত্র। সেটা ছিল ১লা রমজান। মোহরানা ১৫০১ টাকা মাত্র। সুন্দর আলী বিশ্বাস জামাইকে মোটর সাইকেল উপহার দিলেন।

আমাদের ছোট নানী কিন্তু সরকারনীর মত বজ্জাত ছিলেন না। সৎনানী কথাটা কখনও মনে আসেনি আমাদের। এই নানীর চার ছেলে মোঃ আকবর আলী, মোঃ হায়দার আলী, মোঃ সোলায়মান আলী এবং মোঃ ইসমাইল আলী। তিন মেয়ে- আনোয়ারা মনোয়ারা এবং ছানোয়ারা। খালাদের আনু খালা মানু খালা এবং ছানু খালা ডাকি। বড় মামা আকবর আলী বুয়েট থেকে পাকিস্তান আমলে মেকানিকাল ইঞ্জিনিয়ার । তিনি অস্ট্রেলিয়া অভিবাসী। মেজ মামা ও সেজ মামা মারা গেছেন। ছোট মামা ইসমাইল আলী গামের্ন্টস এর ব্যবসা করেন।

Kabin nama

২,৬৬০ বার দেখা হয়েছে

১৪ টি মন্তব্য : “মণ্ডল থেকে সরকারঃ ৪র্থ পর্ব”

  1. রাজীব (১৯৯০-১৯৯৬)

    পড়ি ভাই।
    পড়েই লাইক দিছি।
    আগে যেকোন মাধ্যম থেকে সিসিবিতে বাংলায় কমেন্ট করা যেতো।
    এখন সে সুযোগ নেই।
    আবার সিসিবি বাংলা ছাড়া অন্য কোন কমেন্ট সহজ করে দেখে না।
    তাই ট্যাবলেট বা মোবাইলে লেখা পড়লে শুধু ইমো দিই।
    আর লাইক দিই।
    😀


    এখনো বিষের পেয়ালা ঠোঁটের সামনে তুলে ধরা হয় নি, তুমি কথা বলো। (১২০) - হুমায়ুন আজাদ

    জবাব দিন
  2. মোকাব্বির (৯৮-০৪)

    অনেকদিন পরে দিলেন। চরম। একদিন এক সাথে পড়তে হবে। আগেরটা রিভাইস না দিলে কাহিনী বুঝতে কষ্ট হয়।


    \\\তুমি আসবে বলে, হে স্বাধীনতা
    অবুঝ শিশু হামাগুড়ি দিল পিতামাতার লাশের ওপর।\\\

    জবাব দিন
  3. নূপুর কান্তি দাশ (৮৪-৯০)

    সাধুবাদ জানাতে হয় মোস্তাফিজ ভাই।
    শেকড়ের কথা বলা, সংরক্ষণ করা সোজা কাজ না।
    বেশ কিছু ছবি, নিদর্শনও দেখতে পাচ্ছি।
    আরেকটু বিস্তারে যেতে পারেন --- পাঠকের খারাপ লাগবেনা।

    জবাব দিন
  4. টিটো মোস্তাফিজ

    আরেক খান সমস্যা 🙁 চুরিচামারি করে লেখি। বেশি বড় করতে গেলে হয়তো লেখাই শেষ করতে পারব না :no: সময় সুযোগ খুব কম। তবু এক ধরণের আসক্তি থেকে লেখে যাচ্ছি ।


    পুরাদস্তুর বাঙ্গাল

    জবাব দিন

মওন্তব্য করুন : মোস্তাফিজ (১৯৮৩-১৯৮৯)

জবাব দিতে না চাইলে এখানে ক্লিক করুন।

দয়া করে বাংলায় মন্তব্য করুন। ইংরেজীতে প্রদানকৃত মন্তব্য প্রকাশ অথবা প্রদর্শনের নিশ্চয়তা আপনাকে দেয়া হচ্ছেনা।