টিটোর গপ্পোঃ পিঠার গাছ

এক ছিল রাখাল। সে তার মামার গরু চরাত।একদিন মামী অনেক পিঠা তৈরী করল । রাখাল তো খুব খুশী। মজা করে পিঠা খাবে। কিন্তু মামী তাকে একটাও পিঠা দিল না। রাখালের খুব মন খারাপ হল। সে তখন একটা বুদ্ধি করল। মামার গরুটাকে মাঠে নিয়ে গেল। আচ্ছা রকম করে পাকা ধান খাওয়াল । এত্ত খাওয়ালো ,এত্ত খাওয়ালো যে গরুটা ধান লাদা শুরু করল। রাখাল তখন গরুর পাছায় পোয়ালের সিপি দিল। তারপর ধান খেয়ে তো গরুটার পেট ফুলে ঢোল হয়ে গেল। তখন সে বল্লো, এই গরু খবরদার জাবর কাটবিনা। জাবর কেটে ধান হজম করলে মামার চাকু দিয়ে তোকে কাটবো।

রাতের বেলা রাখাল সিপি খুলে সব ধান বের করলো। ভাল করে ধুয়ে শুকিয়ে ধান গুলো তার মাকে দিলো। বল্লো মা পিঠা বানাও। প্রথম পিঠাটা আমাকে দিও। রাখালের মা পিঠা তৈরী করলো। প্রথম পিঠা রাখালকে দিলো।রাখালের ছোট এক টুকরো জমি ছিল। সেখানে সে পিঠাটা লাগাল। আর বল্লো – এই পিঠা, কালকেই চারা বের হবি, যদি না হোস তা হলে মামা বাড়ি থেকে চাকু এনে তোকে কেটে সাত কুচি করব। পিঠাতো খুব ভয় পেল। পরদিনই গাছ বের হল। এবার রাখাল বল্ল- এই পিঠার চারা কালকেই বড় হবি। না হলে মামার চাকু দিয়ে তোকে কেটে সাত কুচি করব। পরদিন চারা গাছ বড় হয়ে গেল। এই বার রাখাল বল্লো- এই পিঠার গাছ কালকেই ফুল ধরবি। না হলে মামার কুড়াল দিয়ে তোকে কেটে সাত টুকরা করব। পর দিন সত্যি অনেক পিঠার ফুল ধরল। রাখাল খুব খুশী । এবার রাখাল বল্ল, কালই পিঠা ধরবি না হলে মামার কুড়াল দিয়ে তোকে কেটে সাতশ টুকরা করব। পরের দিন রাখাল দেখে তার গাছ পিঠার ফুল আর পিঠায় ভর্তি। তখন তার আনন্দ দেখে কে ? সাতবার বগল বাজিয়ে উঠে পড়ল পিঠার গাছে। এ ডাল থেকে ও ডালে যায় আর পিঠা খায় আর গান গায়। প্রতিদিন গামছায় করে মায়ের জন্য পিঠা নিয়ে যায়।

এক দিন রাখাল তার পিঠার গাছে বসে গান গাচ্ছে আর পিঠা খাচ্ছে। এক ডাইনী বুড়ি ঐ পথ দিয়ে যাচ্ছিল । রাখালের পিঠা খাওয়া দেখে তার লোভ হল। সে রাখালকে বল্ল ও বাবা একটা পিঠা দে বাবা । তিনদিন কিছু খাইনি। রাখাল তাকে একটা পিঠা দিল। পিঠা খেয়ে তো বুড়ির খিদা আরও বেড়ে গেল। সে বল্ল – আরও দে বাবা। জবর তোর পিঠা। রাখাল আরও পিঠা দিল।বুড়ি আরও খেল। তার মনে হল এই পিঠা তো খুব মজা। তা হলে এই রাখালটাও খেতে খুব মজা হবে। সে তখন একটা বুদ্ধি করল। রাখালকে বল্ল- হাতে হাতে দে বাবারো পাতে পাতে খাই। রাখাল যখন বুড়িকে হাতে হাতে পিঠা দিতে গেল বুড়ি তখন তাকে খপাং করে ধরে ঝপাং করে তার বস্তায় ভরে ফেললো।তার পর বস্তা মাখায় নিয়ে গুন গুনিয়ে গান ধরলো- পিঠা খাইচি মজা করে, রাখাল খাব গুষ্টি ধরে।শুনে তো রাখাল ভয় পেল। কিন্তু সাহস হারাল না।সুযোগের অপেক্ষায় রইলো। ডাইনীর বাড়ি ছিল অনেক দূরে।হাঁটতে হাঁটতে তার খুব ইয়ে পেয়ে গেল। তখন বস্তাটাকে রাস্তায় রেখে জঙ্গলে ঢুকলো সে। রাখালের জন্য মায়ের দোয়া ছিলো। সেই পথ দিয়ে তখন এক কাঠুরিয়া বাড়ি ফিরছিলো। তাদের পায়ের শব্দ পেয়ে রাখাল বল্ল- বাঁচাও বাঁচাও ডাইনী আমাকে বস্তায় পুরেছে।খেয়ে ফেলবে । কাঠুরিয়া বস্তার মুখ খুলে দিল। প্রাণে বাঁচলো রাখাল।

ঠকে গিয়ে রাখালের যেন বুদ্ধি খুললো। সে বস্তার মধ্যে পাথর, কাঁটা আর এক বদনা পানি ঢুকিয়ে বেঁধে রাখল। ডাইনী ফিরে এসে আনন্দে বস্তাটা কাঁধে তুলে নিল। উঁচু নিচু রাস্তায় ডাইনীর গায়ে পাথরের ঘা লাগলো। ডাইনী খেপে গিয়ে বললো হারামী তুই আমাকে লাত্থি দিচ্ছিস ? তোর ঠ্যাঙ কেটে শিক কাবাব বানায় খাব । একটু পর ডাইনীর গায়ে কাঁটা ফুটে। ডাইনী বলে এত্ত সাহস , চিমটি মারিস ? কচমচ করে তোর নখ চিবিয়ে খাব। বলে দিল এক ঝাঁকি। বদনার পানিতে ডাইনীর গা ভিজে গেল। রাখ-খা –আ- আ- আ- আল । তুই আমাকে মুতে দিলি ? তোর নুনু কেটে ভেজে খাবো-ও-ও-ও। বলতে বলতে ডাইনী মরে গেল। বলতে ভুলে গেছিলাম- এই ডাইনী পানিতে মরে যায়।

[ ছোটবেলায় শোনা গল্পটা একটু পরিবর্তন করে এভাবেই আমার বাচ্চাদের শোনাই। গল্পটি যাতে হারিয়ে না যায় তাই সিসিবিতে দিলাম।]

১,৪২৫ বার দেখা হয়েছে

৪ টি মন্তব্য : “টিটোর গপ্পোঃ পিঠার গাছ”

  1. আহসান আকাশ (৯৬-০২)

    ছোটবেলায় এরকম একটা গল্প শুনেছিলাম বলে মনে আছে কিন্তু পুরোপুরি মনে নেই। পড়ে ভাল লাগলো।


    আমি বাংলায় মাতি উল্লাসে, করি বাংলায় হাহাকার
    আমি সব দেখে শুনে, ক্ষেপে গিয়ে করি বাংলায় চিৎকার ৷

    জবাব দিন

মওন্তব্য করুন : মোস্তাফিজ (১৯৮৩-১৯৮৯)

জবাব দিতে না চাইলে এখানে ক্লিক করুন।

দয়া করে বাংলায় মন্তব্য করুন। ইংরেজীতে প্রদানকৃত মন্তব্য প্রকাশ অথবা প্রদর্শনের নিশ্চয়তা আপনাকে দেয়া হচ্ছেনা।