বিশ্বকাপ দেখোয়াড়

হোসে মরিনহোর মত নিজেকে স্পেশাল ওয়ানই মনে করি।বিশ্বকাপের নিচে কোন খেলা দেখিনা।সেই হিসেবে আমাকে বিশ্বকাপের খেলোয়াড় থুড়ি দেখোয়াড় বলতে পারেন।আমার মিতা, প্রয়াত টিটো ভিলানোভা বেশ ভাল খেলতেন।আমি যে খুব খারাপ খেলতাম তা কিন্তু নয়।প্রাইমারীতে গোল্লাছুট আর বদন দুই খেলাতেই ছিলাম বাগুন লচপচি! সেইরাম খেলতাম।না হলে কি আর দুই দলেই খেলা যায় ? কালেভদ্রে ফুটবল খেলতাম বটে।সাদা রংয়ের বলটাকে লাথি মারে।বড্ড মায়া হত আমার।হঠাৎ বলে পা লাগলে মনে মনে ছালাম করতাম আর গুনে রাখতাম কয়বার পাপটা করা হলো।

ক্যাডেট কলেজে ভর্তি হলাম ১৯৮৩ সালে।ক্লাস সেভেনের সকার ফুটবল ভা্লই মনে আছে।গেঞ্জী আর চামড়া দুই দলে ভাগ হয়ে ৫০ জন খেলেছি ১টা বল নিয়ে। আহা কী স্মৃতি ! লেখোয়াড়ের ভূমিকায় এসে বড্ড স্মৃতিকাতর হয়ে যাচ্ছি।গোদা মামুনের কাছে নীল জার্সি পরা এক ফুটবলারের ভিউকার্ড দেখলাম।পাওলো রসি। সেই ব্যাটা নাকি ছয় গোল করে সোনার বুট পাইছে।ট্যালেন্ট না কিন্তু সুযোগ সন্ধানী। তার জন্যই ইতালী চ্যাম্পিয়ন হইসে। তা সুযোগ সন্ধানী বলে যতই খাট করি গোলপোষ্টে কয়জনই বা বল ঢুকাতে পারে ?

১৯৮৬ মেক্সিকো বিশ্বকাপ।সবাই ম্যারাডোনা বলতে পাগোল। রসায়নের মোখলেস স্যার বলতেন , “আমার মারাডোনা”।পেলে আর ম্যারাডোনা নিয়ে কতযে বাহাস হইছে।শেষটা হত এভাবে-
পেলে পেলেই….

ম্যারাডোনা ম্যারাডোনাই….

যুক্তিতে হারা দলের শেষ কথা হচ্ছে- “ কিন্তু তার পরও কথা থেকে যায় !”

যাই হোক ফকল্যান্ড নিয়ে আর্জেন্টিনার ওপর দুর্বলতা ছিলো।সাথে যোগ হল ম্যারাডোনা।মাঝমাঠ থেকে পাঁচ জনকে খেলিয়ে গোল আর ঈশ্বরের হাত যখন ফিরিঙ্গিদের সজোরে চপেটাঘাত করলো, আনন্দে বাক বাকুম করে নেচেছিলাম। বর্বর ব্রিগেল কিছু ঝামেলা করলেও সমর্থক হিসেবে জিতে নিই প্রথম বিশ্বকাপ ! টিভির পর্দায় দেশের নাম এসপানা, আলমেনিয়া আর.এফ এসব দেখে মজাই লাগতো।

তবে বিশ্বকাপ জয়ের চাইতে প্রেসিডেন্ট গোল্ডকাপ জয়কেই এগিয়ে রাখব। যদিও প্রথম পছন্দের দলটি চ্যাম্পিয়ন হতে পারেনি। আমার মত অনেক অর্বাচীনের প্রিয় দল ছিল বাংলাদেশ সবুজ দল।নকিব, রকিব, আয়াজ ( বড় চুল আলা) এরা হারিয়েছিল ভারতের জাতীয় দলকে।ওদের অধিনায়ক মনোরঞ্জন লাল কার্ড পেয়েছিল।গ্রুপ পর্বে বাংলাদেশ লাল দল ২য় হয়।মধুর সমস্যায় পড়েছিলাম।সবুজের পরাজয় দেখতে চাইনা আবার তারা জিতলে লাল সবুজ সেমিফাইনাল। আমরা চাই লাল সবুজ ফাইনাল।সবুজ দল জিতল আত্মঘাতী গোলে।মনে দুঃখ নিয়ে সেমিফাইনাল দেখলাম। কাঁচা সবুজেরা পারলো না।তারপর ফাইনালে প্রথমেই গোল খেল লাল দল।৮৮ মিনিটের দিকে একটা কর্নার পাওয়া গেলো।দুর্দান্ত এক কিক নিলেন সাব্বির।আসলামের লক্ষভেদী হেড।গোলরক্ষক পরাস্ত। এবং সমতা। টাইব্রেকারে ৪-৩ গোলে জিতে প্রথমবার কোন ফুটবল টুর্নামেন্টে চ্যাম্পিয়ন হয় বাংলাদেশ।সেই জয়ে কতটা উদ্বেলিত হয়েছিলাম তা বোঝাতে পারব না।অনুভূতি প্রকাশেও আমি আনাড়ী খেলোয়াড়।

১৯৮৮ সালে ইউরোপিয়ান কাপে ডাচদের খেলায় মুগ্ধ হয়ে কমলা ভক্ত হয়ে গেলাম।মার্কোভ্যান বাস্টেন, রুড গুলিট, ফ্রাংক রাইকার্ড, কোয়েম্যানদের জয় জয়কার।এদের নিয়ে এসি মিলান স্বর্ণযুগে।স্বপ্নের মত ডাচ টোটাল ফুটবল। কেউ কেউ হল্যান্ডকে ইউরোপের ব্রাজিল বলে।সমর্থকদের ব্রাজিল যেমন পুড়িয়েছে

হল্যান্ডও তার চাইতে তেমন কম নয়।যে সব দেশ বিশ্বকাপ জেতেনি তাদের মধ্যে হল্যান্ড সেরা।বার বার হতাশ হয়ে খেলা দেখা ছেড়ে দিব ভাবলেও বার্গক্যাম্প, স্টাম, ডি বোর, রোবেন, নিস্টলরয় এদের জন্য খেলা দেখেছি।মাঠময় দৃষ্টিনন্দন ফুটবল আর গোলপোষ্টের কাছে দিকভ্রান্ত এই দলটায় পাওলো রসির দরকার ছিলো।গত বিশ্বকাপ ফাইনাল খেলে দেশে বীরের সংবর্ধনা পেয়েছে ডাচ ফুটবল দল।কিন্তু একজন সমর্থক হিসেবে ওদের কুৎসিত খেলায় সন্তুষ্ট হতে পারিনি মোটেই।ফুটবলের সৌন্দর্য্য ট্যাকটিক্সের কাছে শ্লীলতা হারিয়েছে অনেক আগেই।

৩০ টি মন্তব্য : “বিশ্বকাপ দেখোয়াড়”

  1. শাহরিয়ার (০৬-১২)

    এইবার হল্যান্ডের কপালে খারাপই আছে। রাউন্ড অফ সিক্সটিনেই ব্রাজিল পরবে। সুন্দর লেখা :clap:


    • জ্ঞান যেখানে সীমাবদ্ধ, বুদ্ধি সেখানে আড়ষ্ট, মুক্তি সেখানে অসম্ভব - শিখা (মুসলিম সাহিত্য সমাজ) •

    জবাব দিন
  2. আহসান আকাশ (৯৬-০২)

    প্রেসিডেন্ট গোল্ড কাপের কথা মনে আছে, আমার স্মৃতির প্রথম ফুটবল প্রতিযোগিতা, ফাইনালে মনে হয় কোরিয়ার কোন দল ছিল।

    বাপের ইনফ্লুয়েন্সে ৯০ থেকে হল্যান্ডের সাপোর্টার। গত ফাইনালে হেরে যতটা না কষ্ট পেয়েছিলাম, তার থেকে বেশি পেয়েছিলাম ওদের বিছ্রি ট্যাকটিক্স দেখে। আশা করছি আবার ওরা ওদের চির পরিচিত সুন্দর ফুটবল দেখাবে।


    আমি বাংলায় মাতি উল্লাসে, করি বাংলায় হাহাকার
    আমি সব দেখে শুনে, ক্ষেপে গিয়ে করি বাংলায় চিৎকার ৷

    জবাব দিন
  3. মোকাব্বির (৯৮-০৪)

    প্রতিযোগিতায় স্বাগতম। পাঠক ভোটের ব্যবস্থা করা যায় না আহসান ভাই!?


    \\\তুমি আসবে বলে, হে স্বাধীনতা
    অবুঝ শিশু হামাগুড়ি দিল পিতামাতার লাশের ওপর।\\\

    জবাব দিন
  4. নূপুর কান্তি দাশ (৮৪-৯০)

    '৯০ এ ইতালীর আরেকজন সুযোগসন্ধানী প্লেয়ারের বিস্ময়কর উত্থান দেখেছিলাম -- Schillaci । দুর্দান্ত সব গোল করে গোল্ডেন বুট জিতে নিয়েছিলো রথী-মহারথীদের ডিঙিয়ে। আশর্যের ব্যাপার হলো, স্বপ্নের বিশ্বকাপ শেষে Schillaci -র নাম আর তেমন শোনা যায়নি।

    জবাব দিন
  5. নূপুর কান্তি দাশ (৮৪-৯০)

    আর প্রেসিডেন্ট গোল্ডকাপ টুর্নামেন্টে বাংলাদেশ লাল দলকে সাপোর্ট করতাম। বাংলাদেশ দল বেশ লড়াই করতো চীন, কোরিয়া, ইরান এসব দলের সঙ্গে। নেপাল, পাকিস্তান এবং বোধ করি ভারতের থেকেও বেশ এগিয়ে ছিলো বাংলাদেশের ফুটবল। সেসব দিন এখন কোথায়? বাংলাদেশের ফুটবলের দিনগুলোর জন্যে মাঝেমাঝে খারাপ লাগে বেশ। আমার মনে হয়, একটা স্থির লক্ষ্যের দিকে অল্প অল্প করে এগুতে থাকলে দক্ষিণ কোরিয়া, জাপান, ইরানের মতো বাংলাদেশও কি একবার অন্তত জায়গা করে নিতে পারতোনা বিশ্বকাপ ফুটবলের মূল আসরে?

    জবাব দিন

মওন্তব্য করুন : মোকাব্বির (১৯৯৮-২০০৪)

জবাব দিতে না চাইলে এখানে ক্লিক করুন।

দয়া করে বাংলায় মন্তব্য করুন। ইংরেজীতে প্রদানকৃত মন্তব্য প্রকাশ অথবা প্রদর্শনের নিশ্চয়তা আপনাকে দেয়া হচ্ছেনা।