পারিবারিক বকর বকর

ক্ষুদে বার্তায় পদ্য বিনিময়

আমার গিন্নী বাংলার ছাত্রী। এক দিন ওর এক বান্ধবীকে আমার লেখা কিছু কবিতা শুনালাম।পরের দিন বেশ ভালই ঝাড়ি খেতে হলো।রোবট আবার কবিতা লেখে । কবিতার কিছু বুঝ তুমি ? কবিতার মধ্যে থাকতে হবে প্রেম ভালোবাসা ।ও বস্তু তোমার মধ্যে আছে ? মনের আক্ষেপ প্রকাশ করা ওসব ছাইপাশ কোনও কবিতা নয়। সেটা আবার পেপারে ছাপার জন্য উদগ্রীব হয়ে আছো। আরে সাধনা লাগে সাধনা । শুধু দুঃখ আর আবেগ দিয়ে কবিতাও হয় না, সাহিত্যও হয় না। তুমি তো ভীষন অলস। সেই জন্য হাইকু লেখ। আমি বাজি ধরে বলতে পারি তোমার লেখা কোন পত্রিকায় ছাপা হবে না। নিজে পত্রিকা ছাপালে আলাদা কথা। একবার পত্রিকা ছাপায় বুঝছো তো ও কম্ম আর করা যাবে না।নিরুপায় হয়ে বলি আমার লেখা ছাপার একটা জায়গা আছে, ক্যাডেট কলেজ ব্লগ। সেখানে আমার কিছু ভক্তও আছে। উনি বল্লেন, ভক্ত না ছাই। উনারা ভদ্রলোক ভালোমানুষ তাই বুঝতে পারো না।কষ্ট পাবে তাই ভালো কমেন্ট দেয়। তা দিক, কিন্তু ব্লগ লিখে কি হয় বলতো ? ইন্টারনেটে কাজ করে অনেকে অনেক আয় করে তুমি কি কর ? পেট মেরে বাণিজ্য করার দরকার কি ? এবার আমি একটু ভাব নিয়ে বলি, দেখ আমি কিন্তু ইংরেজীতেও কবিতা লেখছি ।রবি ঠাকুর কয়েক খানা কবিতা অনুবাদ করে নোবেল পেলো। কোন কোন কবি মাত্র চার লাইন লিখেও বিরাট স্বীকৃতি পেয়েছে । ভাগ্যে থাকলে আমিও পেতে পারি।এ সব শুনে বউটি তো হেঁসে গড়াগড়ি দিতে শুরু করলো । থামতেই চায় না।আমি খুব চিন্তায় পড়ে গেলাম।  এত হাসিতে শেষ পর্যন্ত কোন বিপদ হয়ে না যায়।এমন সময় ছোট ছেলেটা কাঁদতে কাঁদতে বল্লো , “আব্বু , ভাইয়া একাই গেম খেলছে । আমাকে ল্যাপটপ নাড়তে দিচ্ছে না”। আমি তো অবাক , প্যারেন্টাল কন্ট্রোল আর পাসওয়ার্ড দিয়ে রাখছি। পোলাপান সব ডিজিটাল হয়ে গেলো না কি ? যাই হোক ছোটর কান্নায় গিন্নীর হাসি থামলো। বসের অফিসে যাচ্ছিলাম। বউ একটু সদয় হয়ে বল্লো-আমাদের নিয়ে হাইকু লিখো তো, দেখবো কেমন হয়।বাসে বউ আর দুই ছেলের নামে হাইকু লিখে ক্ষুদে বার্তা পাঠালাম।

টুকুন পৃথুলা

দীঘলকেশী নবাবজাদী টুকুন পৃথুলা।
হাঁসিতে মুক্তো ঝরে
বাচাল প্রিয়ংবদা।

অর্ক পণ্ডিত

চিন্তায় বড্ড আধুনিক।
বায়োস দিয়ে বদলায় পাসওয়ার্ড
আর ইচ্ছে মত চাইল্ডলক ।

আকিব সোনা

মায়াবী চোখ সবার প্রিয়।
অতিশয় শান্ত বটে
রাগলে ভীষন মারকুটে।

কিছুক্ষনের মধ্যেই জবাব আসলো-

হাঁদারাম বোকা গাধা
উল্টো কেনো বুঝিস ?
বাচ্চা গুলো বোবা হত
সেটা কি জানিস ?
বাচাল আমি ছিলাম ঘরে
তাই চললো তোমার এক যুগ ধরে ।

সভয়ে জবাব দিলাম-

এক যুগে কি মনটা ভরে ?
চলুক শত বর্ষ ধরে !
তোমায় আমি ভালোবাসি
তুমিই আমার জান
প্রথম দেখা নিয়ে লেখলাম
নতুন পদ্য খান-

এটুকু পাঠিয়েছি। জবাব পাইনি। বাসায় ফিরে সাহসও পাইনি। ওর সাথে প্রথম সাক্ষাৎ একটু ছন্দে প্রকাশ করেছি।কবিতা দাবী করার সাহসটিও হারিয়ে ফেলেছি।

পৃথুলা

এলোকেশী রাজকন্যা হলুদ বসন গায়,
দীঘলকালো মেঘমালা কটি ছুঁয়ে যায়।
সোনার বরণ চাদেঁর হাঁসি
মুক্তোর ঝলকানি।
দূরালাপনে মায়াবীকণ্ঠ
স্বপ্ন নয়, সত্য জানি !

২,২১৩ বার দেখা হয়েছে

২৮ টি মন্তব্য : “পারিবারিক বকর বকর”

  1. শাহরিয়ার (০৬-১২)

    ওয়াও ওয়াও। বড়ই সৌন্দর্য। ভাবীরে বলবেন কষ্ট পাবেন দেখে ভাল কমেন্ট দেই নাই, বেশী ভাল হইছে বলে দিছি। :clap: :clap: :clap:


    • জ্ঞান যেখানে সীমাবদ্ধ, বুদ্ধি সেখানে আড়ষ্ট, মুক্তি সেখানে অসম্ভব - শিখা (মুসলিম সাহিত্য সমাজ) •

    জবাব দিন
  2. মাহমুদুল (২০০০-০৬)

    মোস্তাফিজ ভাই, ভালো হইছে। পারিবারিক প্যাচাল আরেকটু লিখেন। আমরা আপনাদের হাসি ঠাট্টার কথা গুলো একটু শুনি। 😀


    মানুষ* হতে চাই। *শর্ত প্রযোজ্য

    জবাব দিন
  3. আহসান আকাশ (৯৬-০২)

    এবার কিন্তু সব বুঝছি মোস্তাফিজ ভাই, একে বারে পানির মত পরিষ্কার। আপনাদের খুনসুটি দারুন লাগলো, চালিয়ে যান। (ভাবীকে বলেন ওনারটাই সবচেয়ে ভাল লাগছে 😀 )


    আমি বাংলায় মাতি উল্লাসে, করি বাংলায় হাহাকার
    আমি সব দেখে শুনে, ক্ষেপে গিয়ে করি বাংলায় চিৎকার ৷

    জবাব দিন
  4. নাফিস (২০০৪-১০)

    চলতে থাকুক ভাই.. ব্লগে কিছদিন অনিয়মিত ছিলাম। ইউএস এর বাইরে ছিলাম কয়েকদিন। এরপর ফিরে এসে আলসেমি করে লগ ইন ই করা হয়নি আর.. অনেক কিছু মিস হয়ে গেছে।

    জবাব দিন
  5. টিটো মোস্তাফিজ
    আমি বাজি ধরে বলতে পারি তোমার লেখা কোন পত্রিকায় ছাপা হবে না। নিজে পত্রিকা ছাপালে আলাদা কথা।

    আমি কি বাজিতে হেরে যাব :(( 😕 :-/ 🙁


    পুরাদস্তুর বাঙ্গাল

    জবাব দিন

মওন্তব্য করুন : মোস্তাফিজ (১৯৮৩-১৯৮৯)

জবাব দিতে না চাইলে এখানে ক্লিক করুন।

দয়া করে বাংলায় মন্তব্য করুন। ইংরেজীতে প্রদানকৃত মন্তব্য প্রকাশ অথবা প্রদর্শনের নিশ্চয়তা আপনাকে দেয়া হচ্ছেনা।