শিকির হাইকু ও লুটেরা

Evening Snow falling,
A pair of mandarin ducks
On an ancient lake.
-Masaoka Shiki

রাতে টিভিতে লুটেরা দেখছি।পশ্চিম বঙ্গের জমিদার বাড়িতে তুষারপাত হচ্ছে দেখে আমি অবাক।তবে শেষ পাতার ব্যাপারটা ভাল লাগলো।মনে পড়ল টিআইসি অর্থাৎ টোকিও ইন্টারন্যাশনাল সেন্টার এর লবি।জাইকা আয়োজিত যুব আমন্ত্রণ প্রশিক্ষণে বাংলাদেশীদের চায়ের কাপে ঝড়।আঁতেলেকচুয়াল রকিব শিকির কবিতা ডাউনোলোড করেছে।খুব খারাপ।এত খারাপ কথা দিয়েও কবিতা লেখে।সে আবার জাপানের একজন বিখ্যাত কবি।আসলে কবি সাহিত্যিকরা একটু হারামি টাইপের হয়।দেখি দোস্ত,কেমন কবিতা ? বর্ণনা খুব রগরগে ? হাতে পেলাম সেই আলোচিত পাতাটি।আদি রসাত্মক কথা কোথাও পেলাম না।তুমি এখনও মায়ের পেটেই আছ। এই সাঈদা দেখতো এটা , খুব খারাপ কথা না ? হ্যাঁ , খুব খারাপ।পাতাটা আমাকে দিয়ে দেয়া হল।গবেষনা করে যদি মর্মার্থ বুঝতে পারি।বাংলাদেশে এসে কয়েকজনকে দেখিয়েছি। কেউই মানে বলতে পারেনি।সম্ভাব্য আপত্তিকর কথাটা হল- A pair of mandarin ducks on an ancient lake.ঘুম আসছেনা।সেই পাতাটা খুজি।চোরের মত ট্রাংক হাতড়াই।হোম মিনিষ্টারের হাতে ধরা পড়লে খবর আছে।শেষ পর্যন্ত ধরাই পড়লাম।রাত জেগে সময় নষ্ট করার অপরাধে স্টার জলসার পচা গলা সিরিয়াল গিলতে হল। যা হোক ম্যান্ডারিন ডাকের জলকেলীর পরও ঘুম আসেনা।ল্যাপটপ সতীন।তাই রাত্রে স্পর্শ নিষেধ।অগত্যা লেপের  মধ্যে মোবাইল গুগল। হারিয়ে যাওয়া সেই পাতাটার মত কিছু পেলাম না।তবে  জানা গেল জাপানীরা ৫/৭/৫ ফর্মে ১৭ ধ্বনির (sound) হাইকু কবিতা লিখে।হাইকু প্রকৃতির উদাহরণ নিয়ে ধারণ করবে সরলতা,গভীরতা এবং ভাবের সরাসরি প্রকাশ।কাব্য ব্যাধের অন্তর্জাল থেকে শিকির কিছু হাইকু চুরি করেছি । আপনাদের জন্য  ব্যাঙ্গানুবাদ করলাম। এখনও ধৈর্য না হারালে পড়ে দেখুন-

হিম সন্ধ্যায় তুষার পড়ে,
জোড়া চীনা হাঁস খেলা করে
পুরোনো জলার উপরে।

রাত দুপুরে গাইলো কোকিল রক্তে ভেজা গান,
তার দুঃখে বাড়লো আমার
বাড়ি ফেরার টান।

কেঁদে চলে সারমেয়,
পায়ের আওয়াজ পাই
রাত্রিটা বড় লম্বারে ভাই।

শত মজুর
খুঁড়ছে মাটি
সারাদিন ভর।

খুবসুরত এক বন বেড়াল
ধরল বলে
কোয়েল।

এক গোছা ফুল গাছ লাগালাম
চেয়ে দেখ মোর
ছোট উদ্যান।

বজ্রপাতে কাঁপলো ধরা
বনের মাঝে দেখিনু
শ্রাবণ ধারা।

গোধূলি বেলায় হালকা বাতাসে
ফিরছে পাখি নীড়ে
চেয়ে দেখ আকাশে।

নয়া কুপি ধরালাম গুরু
ঝিরিঝিরি ইলশে গুড়িঁ
শীতের শুরু!

বেওয়ারিশ মার্জার
মিয়াও করে রাতভর
কে নেয় তার খবর ?

টিলার পরে ভিলার পাশে
বরফ জমা হল।
জল ঝরছে
কান পেতে
শুনছি কলকল।

ছাইরঙ্গা মাকড়সা
জানালায় বুনেছে জাল
ধরবে মশা।

রাগের মাথায় খুন করলাম
লেজখসা টিকটিকি।
নিশুতী শীতে আমি
একাই জেগে আছি !

যে ছবি দেখে হঠাৎ কাব্য চর্চার সাধ জাগলো তা বাদ যাবে কেন ? সেটিও  জবাই করলাম। একেবারে অখাদ্য হয়নি বোধ হয় !

লুটেরা

ফিরিঙ্গিদের উচ্ছিষ্টে কেটে যাচ্ছিল বেশ
আযাদীর ঝান্ডা বুলিয়ে সব করলি শেষ।
রাধা কৃষ্ণ, বাবার প্রাণ
তনু, মন, মান।

শ্বাস কষ্ট, আরও অনেক কষ্ট
কষ্টে কষ্টে জীবন নষ্ট
ঐ গাছটার মত।

ঝরছে তুষার
ঝরছে পাতাও
ঝরে যাব আমিও
শেষ পাতাটার সাথে।

একটি পাতা ঝরতে কেন
লাগছে এতদিন ?
ধন্য চোরা, শোধ হল
তোর কিছু ঋণ !

[ লুটেরা দেখার পর ২৪/১১/২০১৩]

অবশেষে গতকাল ০৫/১২/২০১৩ তারিখে হাইকুর পাতাটা খুজে পেয়েছি। আপনাদের সাথে শেয়ার করছি-

Haiku

২৭ টি মন্তব্য : “শিকির হাইকু ও লুটেরা”

  1. সামিউল(২০০৪-১০)

    অদ্ভুত সুন্দর লাগলো ভাই হাইকু গুলো। বিশেষ করে এইটা-

    "রাত দুপুরে গাইলো কোকিল রক্তে ভেজা গান,
    তার দুঃখে বাড়লো আমার
    বাড়ি ফেরার টান।"

    এবং এইটা-

    "টিলার পরে ভিলার পাশে
    বরফ জমা হল।
    জল ঝরছে
    কান পেতে
    শুনছি কলকল"

    :boss: ::salute::


    ... কে হায় হৃদয় খুঁড়ে বেদনা জাগাতে ভালবাসে!

    জবাব দিন
  2. দিবস (২০০২-২০০৮)
    রাত দুপুরে গাইলো কোকিল রক্তে ভেজা গান,
    তার দুঃখে বাড়লো আমার
    বাড়ি ফেরার টান।

    বাড়ি ফেরার টান, কথাটা কেমন যেনু বুকে লাগল। শীতকাল চলে আসছে। কেমন যেন বুকটা মায়ায় ভরে থাকে সবসময়। দিন দিন ইমোশনাল হয়ে যাচ্ছি।


    হেরে যাব বলে তো স্বপ্ন দেখি নি

    জবাব দিন
    • টিটো মোস্তাফিজ

      Under the moonlight, cuckoo cried as if it coughed up blood.
      The sad voice kept me waking up,
      the cry reminded me of my old home town far away.
      চীনা ভাষায় এই কবিতাটা রচনা করেন ৫ম গ্রেডের ছাত্র Tsunenori. বলা হয়ে থাকে জাপানি কোকিল হতোতোগিসু বা শিকি বিষন্ন গান করতে করতে রক্ত উঠে আসে। পরে কবির কাশির সাথে রক্ত উঠা শুরু হলে তিনি শিকি নাম ধারণ করেন।


      পুরাদস্তুর বাঙ্গাল

      জবাব দিন
  3. নাফিস (২০০৪-১০)

    লুটেরা দেখেছিলাম সেপ্টেম্বরের দিকে। বলিউডি মুভি দেখা ছেড়ে দিয়েছিলাম। অনেক রিকমেন্ডেশন পেয়ে মুভিটা দেখছিলাম। অসাধারণ ! পুরো মুভিটা যেন ক্যানভাসে আঁকা একটা পেইন্টিং। শেষ দৃশ্য টা :boss: ! মুভিটা দেখে ও' হেনরির "দি লাস্ট লিফ" নামের ছোট গল্প টা ও পড়েছিলাম। মুভিটা ওই ছোটগল্পের ছায়া অবলম্বনে বানানো। কবিতা একটু কম বুঝি, তবুও আপনার কবিতা টা মনে হয় একদম ফিল করতে পারলাম। শেষের দৃশ্যটার সাথে একটা অদ্ভুত সম্পর্ক।
    "ঝরছে তুষার
    ঝরছে পাতাও
    ঝরে যাব আমিও
    শেষ পাতাটার সাথে।"
    কি হবে যদি শেষ পাতা টা কখনোই না ঝরে পরে ? 🙁

    জবাব দিন
  4. নূপুর কান্তি দাশ (৮৪-৯০)

    হাইকু নিয়ে কোন পড়ালেখা নেই, গ্রামার জানা নেই অতএব। কয়েকটি পদ্য বেশ ভালো লাগলো।
    যেমনঃ
    ''হিম সন্ধ্যায় তুষার পড়ে,
    জোড়া চীনা হাঁস খেলা করে
    পুরোনো জলার উপরে।''

    আমি হলে জলার উপরে না দিয়ে 'পরে লিখতাম।
    তবে ছন্দের মিল রক্ষা করতে গিয়ে হাইকুর আবেদন হারিয়ে গেলো যেনোবা।

    দুর্দান্ত লেগেছে এই দুটোঃ

    '' রাত দুপুরে গাইলো কোকিল রক্তে ভেজা গান,
    তার দুঃখে বাড়লো আমার
    বাড়ি ফেরার টান।''

    '' নয়া কুপি ধরালাম গুরু
    ঝিরিঝিরি ইলশে গুড়িঁ
    শীতের শুরু!''

    জবাব দিন
  5. টিটো মোস্তাফিজ

    ধন্যবাদ নূপুর :hatsoff: ভাবানুবাদ প্রচেষ্টাকে হাইকু বলে দাবি করছিনা। "পুরোনো জলার উপরে" না বলে " আদিম দিঘীর পরে" বলা যায় কি না :-/ ভাবছিলাম :grr:


    পুরাদস্তুর বাঙ্গাল

    জবাব দিন
  6. হারুন (৮৫-৯১)

    নদী ডোবা ঝিল বিল শূণ্য ভূমি
    সব ফাঁকা, ফাঁকা সব
    আঁকাবাঁকা যত গলি কলরব মিছে সব
    ঘাসফড়িং প্রজাপতি খাঁ খাঁ মরুভূমি।
    এই তাপে কারে ফেলে কারে চুমি বলো তুমি!
    ঘাসফুল দূর্বাফুল জার্মানি ফুল যেন আমি।


    শুধু যাওয়া আসা শুধু স্রোতে ভাসা..

    জবাব দিন
  7. রাজীব (১৯৯০-১৯৯৬)

    জাপানিরা শুনছিলাম এক লাইনেও চলে গেছে।
    সৈয়দ হকের প্রবন্ধে পড়েছিলাম।

    ঠিক মনে নেই, এরকম হবে হয়তো,

    " পুকুরে একটা ব্যাঙ লাফ দিলো। "

    এখন যা হবে তা হলো আমি দেখতে পাবো শান্ত একটা পুকুর। আর তাতে একটআ ব্যাঙ লাফিয়ে পড়লো। পুকুরে ঢেউ উঠবে। ব্লা ব্লা ব্লা


    এখনো বিষের পেয়ালা ঠোঁটের সামনে তুলে ধরা হয় নি, তুমি কথা বলো। (১২০) - হুমায়ুন আজাদ

    জবাব দিন
  8. রাজীব (১৯৯০-১৯৯৬)

    আর মান্ডারিন ডাকের ক্ষেত্রে আপত্তি???

    কবুতর কখনো কখনো নারীর বুকের কল্পনা হিসাবে এসেছে, উষ্ণতা বোঝাতেও।
    হাসের পালক আসে, জলকেলি আসে।
    হাসের মন্থর গতিতে চলা আসে।

    এখন কথা হচ্ছে তুষার পড়ার সময় হাস পানিতে নামে কিনা?
    আর যদি নামে তবে কেনো?
    আবার কথা হচ্ছে হাস কি পানিতে মিলিত হয়?

    তুষার না পড়লে নারীর দুই স্তন ভাবা যেতো।
    পুরানো জলা সেখানে আদিমতম প্রেম্ম হিসাবে ধরা দিতে পারত, ইভ।

    না, দিনে দিনে অশ্লীল হয়ে যাচ্ছি।
    😛


    এখনো বিষের পেয়ালা ঠোঁটের সামনে তুলে ধরা হয় নি, তুমি কথা বলো। (১২০) - হুমায়ুন আজাদ

    জবাব দিন
  9. মাহমুদ (১৯৯০-৯৬)

    আমি সাধারণতঃ কবিতা ভয় পাই, তবে আকারে ছোট এবং সহজ ভাষায় হলে পড়ি, যেমন হাইকু। আগে সিসিবিতে আলীম ভাই হাইকু লিখতেন। আপনার কয়েকটা হাইকু মনে থাকবে বেশ।

    ভাইয়া, কবে ছিলেন টোকিওতে? আমি ছিলাম ২০০৬-০৮, আবার এখন এক বছরের জন্য। 🙂


    There is no royal road to science, and only those who do not dread the fatiguing climb of its steep paths have a chance of gaining its luminous summits.- Karl Marx

    জবাব দিন

মওন্তব্য করুন : মোস্তাফিজ (১৯৮৩-১৯৮৯)

জবাব দিতে না চাইলে এখানে ক্লিক করুন।

দয়া করে বাংলায় মন্তব্য করুন। ইংরেজীতে প্রদানকৃত মন্তব্য প্রকাশ অথবা প্রদর্শনের নিশ্চয়তা আপনাকে দেয়া হচ্ছেনা।