বাংলাদেশে সামাজিক নিরাপত্তা কার্যক্রমঃ বিধবা ভাতা

বাংলাদেশের গ্রাম অঞ্চলের দরিদ্র, অসহায় ও অবহেলিত  মহিলা  জনগোষ্ঠীর মধ্যে  বিধবা ও স্বামী পরিত্যক্তা দুঃস্থ মহিলাদের অবস্থা অত্যন্ত শোচনীয় ও করুণ। তাদের বিপন্ন  দশা এবং নিরাপত্তাহীনতা  লাঘব করার জন্য সরকার ১৯৯৮ সালে ভাতা দেয়ার বিষয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহন করে। প্রাথমিকভাবে ১৯৯৮ সালে সমাজসেবা অধিদফতরের মাধ্যমে ৪,০৩,১১০ জন বিধবা ও স্বামী পরিত্যক্তা দুঃস্থ মহিলাদের প্রত্যেককে এককালীন ১০০ টাকা হারে ভাতা বিতরণ করা হয়। ১৯৯৯ সালে সমসংখ্যক বিধবা ও স্বামী পরিত্যক্তা দুঃস্থ মহিলাদের মধ্যে চার কোটি তিন লক্ষ এগার হাজার টাকা বিতরণ করা হয়। ২০০০ সালের জুলাই মাস থেকে বিধবা ও স্বামী পরিত্যক্তা দুঃস্থ মহিলা ভাতা প্রদান কার্যক্রম নিয়মিত পরিচালনা শুরু হয়। ২০০৩-২০০৪ অর্থ বছরে এ কার্যক্রম মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়ে ন্যম্ত করা হয়। ২০১০-২০১১অর্থ বছর হতে এ কার্যক্রম পুনরায় সমাজসেবা অধিদফতরের মাধ্যমে বাস্তবায়িত হচ্ছে।

ভাতা প্রদানের জন্য ওয়ার্ড পর্যায়ে মহিলা মেম্বার/কাউন্সিলর (সংরক্ষিত আসনের ইউনিয়ন পরিষদ সদস্য/কাউন্সিলর)-এর   নেতৃত্বে ওয়ার্ড কমিটির মাধ্যমে প্রাথমিক ভাবে বিধবা ও স্বামী পরিত্যক্তা (স্বামী কর্তৃক তালাক প্রাপ্তা বা অন্য কোন কারণে অন্ততঃ ২ বছর যাবৎ স্বামীর সংগে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন বা একত্রে বসবাস করেন না) দুঃস্থ মহিলাদের  বাছাই করা হয়। বাছাইকৃত তালিকা উপজেলা/পৌরসভা কমিটি কর্তৃক চুড়ান্তভাবে অনুমোদিত হয়। উপজেলা হিসাব রক্ষণ অফিস হতে তালিকাভুক্তদের নামে ভাতা বহি পাশ হবার পরে সংশ্লিষ্ট ব্যাংক শাখায় প্রত্যেক ভাতাভোগীর একাউন্ট খুলতে হয়।  ব্যাংক কর্তৃপক্ষ উক্ত একাউন্টের মাধ্যমে ভাতা পরিশোধ করেন। মাত্র ১০ টাকা দিয়ে  খোলা এসব একাউন্ট হতে কোন প্রকার ভ্যাট, ট্যাক্স, লেভী  কর্তন করা হয় না। বর্তমানে ঢাকা বিভাগ হতে ২ লক্ষ ১৯ হাজার ৯০৬ জন, চট্টগ্রাম বিভাগ হতে ১ লক্ষ ৫৪ হাজার ৩৮২ জন, রাজশাহী বিভাগ হতে ১ লক্ষ ৪৪ হাজার ৪৮৭ জন, রংপুর বিভাগ হতে  ১ লক্ষ ৩২ হাজার ৮১১ জন, খুলনা বিভাগ হতে ১ লক্ষ ৩৪ হাজার ২৮ জন, বরিশাল বিভাগ হতে ৮১ হাজার ১৯৫ জন এবং সিলেট বিভাগ হতে ৫৩ হাজার ১৯১ জন অর্থাৎ বাংলাদেশে  সর্বমোট ৯ লক্ষ ২০ হাজার দুঃস্থ মহিলা মাসে ৩০০/-টাকা হারে বিধবা/স্বামী পরিত্যক্তা ভাতা পাচ্ছেন। বাজেট বক্তৃতায় জানা যায় ২০১৩-২০১৪ অর্থ বছরে বিধবা ভাতা ভোগীর সংখ্যা ১০% বৃদ্ধি করা হবে।

বিধবা ও স্বামী পরিত্যক্তা দুঃস্থ মহিলা ভাতা বিতরণের বছর ভিত্তিক হিসাব জাতীয় সমাজসেবা দিবস ২০১৩ উপলক্ষে প্রকাশিত স্মরণিকা হতে তুলে দেয়া হল।

Widows

 

 

 

 

 

 

বয়স্ক ভাতার মত বিধবা ও স্বামী পরিত্যক্তা দুঃস্থ মহিলা ভাতাও একটি যুগান্তকারী সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচি।

 

৮ টি মন্তব্য : “বাংলাদেশে সামাজিক নিরাপত্তা কার্যক্রমঃ বিধবা ভাতা”

  1. মোকাব্বির (৯৮-০৪)

    অনেকে প্রশ্ন তুলতে পারেন ১০০টাকা দিয়ে ১৯৯৮ সালে কি হতো বা ৩০০ টাকা দিয়ে ২০১৩ সালেই কি হবে? এখানে সর্বাধিক সংখ্যক বিধবাকে প্রোগ্রামের আওতায় আনাটাই মূল লক্ষ্য মনে হচ্ছে। ১৫ বছরে উপকারভোগীদের সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছে প্রায় ২২৮% এর মত। কিন্তু টাকার পরিমাণ ১০০ টাকা থেকে বেড়ে ৩০০ টাকা হয়েছে। যতটুকু বুঝি সামাজিক নিরাপত্তা বলয় শুধু টাকার অঙ্কে বিচার করলে চলবে না। এখানে আস্থার ব্যাপার জড়িত। তবে বাংলাদেশের মত দেশ যেখানে এই ব্যবস্থাটি অপেক্ষাকৃত নতুন সেখানে টাকার অঙ্কের চিন্তাটি মাথায় শুরুতেই আসতে পারে। ভবিষ্যতে প্রচলিত পুনর্বাসন ও এস,এম,ই এর প্রোগ্রাম গুলোকেও এই সামাজিক নিরাপত্তা বলয়ের সাথে জুড়ে দিলে মনে হয় ভালই হবে।


    \\\তুমি আসবে বলে, হে স্বাধীনতা
    অবুঝ শিশু হামাগুড়ি দিল পিতামাতার লাশের ওপর।\\\

    জবাব দিন
  2. মুশফিকুর রহমান তুষার (২০০২-২০০৮)

    টাকার অংক যাই হোক সমস্যা না! শুরু তো হয়েছে। অনেকেই এর আওতায় আসছে। ভবিষ্যতে একদিন অবশ্যই 'হ্যান্ডসাম এমাউন্ট' দেয়া হবে।
    এই উদ্যোগকে স্বাগত জানাই! :boss:


    ছোট হাতি

    জবাব দিন

মওন্তব্য করুন : মুশফিকুর রহমান তুষার (২০০২-২০০৮)

জবাব দিতে না চাইলে এখানে ক্লিক করুন।

দয়া করে বাংলায় মন্তব্য করুন। ইংরেজীতে প্রদানকৃত মন্তব্য প্রকাশ অথবা প্রদর্শনের নিশ্চয়তা আপনাকে দেয়া হচ্ছেনা।