আমার ক্যাডেট লাইফ- পর্ব ১

ঠিক তারিখ টা মনে নাই। ১৯৯৮ সালের জুন মাসে শুরুর দিকের ঘটনা মনে হয়। আমার প্রয়াত মেজ মামা আমাদের উল্লাপাড়ার বাসায় আসল। জিজ্ঞেস করল কি খবর ক্যাডেটে চান্স পাইসি কিনা? আমি বললাম রেজাল্ট দেয় নাই।মামা বলল দিসে তো, আমি পেপারে দেখলাম, তাও অনেক দিন আগে। মামা বাইরে গেল, সেই পেপার সংগ্রহ করে আনল। আমার তো #### শুকাইয়া কাঠবাদাম। কি হয়। কোথাও ভর্তিও হই নাই তখন পর্যন্ত। মাইর আজ আর মিস নাই। আব্বু সঙ্গে সঙ্গে মিলাইয়া দেখে আমার রোল নাম্বার ছাপা হইছে। নগদে আমি কেঁদে ফেললাম। মনে কিঞ্চিত আশা ছিল চান্স না পেলে ধোলাই হলেও বাসায় থাকতে পারব। এখন আর কোনো উপায় নাই। একাবারে ফাইনাল, আমার বাপ আমার লাশ নিয়ে আসবে তাও ক্যাডেট কলেজ থেকে আমাকে জীবিত ফেরত আনবে না। আমি আম্মুকে জড়িয়ে ধরে হাওমাও কাদছি, মামা আমাকে বুঝাচ্ছে, আর আমার বাপ রওনা হল মিষ্টি আনতে। কলনীর সবাইকে মিষ্টি খাওয়াবে, তার অফিসে মিষ্টি খাওয়াবে। ভাবলাম মামা আর কয়দিন পরে আসলে কি হত? ভর্তির ডেটটা পার হয়ে যেত। আমাকেও দোষ দিতে পারত না।  আল্লাহর অশেষ রহমতে মামা সেদিন এসেছিল বাসায়।

তো ১৭ই জুন আসল। নতুন স্কুলে যাচ্ছি, সব নতুন নতুন জিনিসপত্র নিয়ে। সব নিয়ম কানুনই সারপ্রাইজিং। পরিপাটি অবস্থা, টাই পড়ে সবাই সাহেব হয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছে। মোটামুটি সবাইকে একি লোক মনে হচ্ছে। তার ভিতর সব নাটক শেষ করে আমাকে নিয়ে গেল ৩০৪নাম্বার রুমে। রুমে গিয়ে দেখলাম আলীরেজা কে, ভাবলাম যাক একজন কে তো চিনি এখানে। পরে দেখি সুজা ভাই ২০ তম ব্যাচের(আমাকে প্রথম দিনই ওয়ার্ণ করেছিল, এখানে ভাইয়া বলে ডাকতে হবে সাথে সালামও দিতে হবে তাকে), জামান, মশিউর মোট এই চারজন পরিচিত মানুষ আছে আমার। প্রথম দিনের, প্রথম ধাক্কা পর্যন্ত ক্লাশমেটদের নিয়ে ভাবার সময়ই পাই নাই। তখনো এটা বুঝে উঠতেই পারি নি যে এরাই আমার জীবনের সবচেয়ে বড় পার্ট হতে যাচ্ছে। তখনো বাসার মায়া কাটাতে পারি নি। নতুন বৌদের মত, আগের স্কুল, বাসার খাওয়া এসবের সাথে সব কিছুর তুলনা করছিলাম। আর বাসার জন্য কাদছিলাম মনে মনে। যাই হোক আস্তে আস্তে বোঝা শুরু করলাম হাল-চাল। বুঝতে শিখলাম এদের সাথেই খাইতে, হাগতে, মুততে ও মাইর খাইতে হবে বাকি ৬বছর।

সেভেনে আমার রুমমেট দুইজন ছিল, মুসফিক আর আলীরেজা। দুজন কেই আমার পছন্দ হয়েছিল শুরুর দিন থেকেই। আলী কে তো কোচিং থেকেই চিনি। মুসফিকের মুখের গালি শুনে আমি প্রথম দিনই বুঝতে পেরেছিলাম এলেমদার পোলা। অনেক কিছু শেখার আছে ওর কাছ থেকে। আর ফর্মে গিয়ে প্রথম দর্শনেই জসিদুল কে পছন্দ হয়েছিল (ডোন্ট টেক ইট, আদার ওয়ে) দেখলাম ছেলেটা সুন্দর, স্মার্ট আর আমার পাশের সিটেই বসে। ভাবলাম এর সাথে খাতির জমিয়ে ফেলতে হবে। চেষ্টা নিলাম। কিন্তু দেখলাম হায়রে ভাব,তার। বুঝলাম এটার সাথে হবে না। আর প্রথম দিন থেকেই লেগে গেল রেজওয়ানের সাথে। আমার পেছনের সিটটা ওর। ডেস্ক দিয়ে ধাক্কা মারে চেয়ারে, পা দিয়ে গুতায়। বুঝলাম শালা খারাপ। প্রথম সাত দিনে যে পরীক্ষাটা হয় সেটার রেজাল্ট দেয়া মাত্র নিজের সমস্ত আত্মবিশ্বাষ ধ্বসে গেল নাইন ইলেভেনের টুইন-টাওয়ারের মত। বুঝে গেলাম “কই আইসা পড়ছি !!!” বোধ জাগ্রত হল, সারাজীবন সামনের সাড়ির ভাল ছাত্রের তকমা যেটা ছিল সেটা এখানে টিকবে না। এরা এক একটা বিশাল মেধাবী।

১,০৯২ বার দেখা হয়েছে

৪ টি মন্তব্য : “আমার ক্যাডেট লাইফ- পর্ব ১”

মওন্তব্য করুন : শাহীন (৯৬-০২)

জবাব দিতে না চাইলে এখানে ক্লিক করুন।

দয়া করে বাংলায় মন্তব্য করুন। ইংরেজীতে প্রদানকৃত মন্তব্য প্রকাশ অথবা প্রদর্শনের নিশ্চয়তা আপনাকে দেয়া হচ্ছেনা।