আরশী নগরের পড়শী

আমি নিয়মিত ভারতীয় ক্যাডবেরি খাই, আর আমার ঐ যে, ওকেও কিনে দেই। আমি ভারতীয় টাইটানের ফাস্টট্র্যাকের ঘড়িও পড়ি, সুন্দরী মেয়েরা যাতে আমার দিকে ছুটে ছুটে আসে সে আশায় আমি ভারতীয় বডি স্প্রেও ব্যবহার করি। কিন্তু আমার সমস্যা অন্যখানে।

আমাদের বাড়ির পাশের আরশী নগরের পড়শী রাষ্ট্র অখাদ্য স্বাদহীন চাল, ডাল, পিয়াজ, রশুন, সুস্বাদু ফেন্সিডিল আর বর্ডারের বিএসেফ এর গুলি ছাড়াও আরো কিছু সংকৃতি পাঠাচ্ছে। যা আমাদের জন্য খুব বেশী ভয়ের বিষয় হয়ে দাড়াচ্ছে। সেটা হল ভারতীয় হিন্দি, বাংলা সিরিয়াল সাথে সাথে শুরু হইছে বাচ্চাদের কার্টুন গুলোর হিন্দি ডাবিং।

আমাদের দেশে এখন এমন টিভি খুজে পাওয়া যাবে কি না সন্দেহ আছে, যে টিভিতে ভারতীয় সিরিয়াল চলে না। আগে ছিল সিরিয়ালগুলো হিন্দিতে, তো যারা হিন্দি বুঝত না তারা দেখত না। কিন্তু এখন সিরিয়াল বাংলাতেও চলে এসেছে। আমাদের দেশের বেশীর ভাগ মেয়ে দর্শক এবং আশংকাজনক হারে বাড়তে থাকা পুরুষ দর্শকেরা (অনেক সময়ই বাসার শান্তি রক্ষার্থে দেখতে দেখতে অভ্যস্ত হয়ে যাওয়া) এটা খেয়াল করে দেখেছেন কিনা জানি না, যে সিরিয়াল তাদের আচরনে কি ধরনের পরিবর্তন আনছে। আমাদের দেশের সুন্দর পারিবারিক সম্পর্ক গুলো নষ্ট হয়ে যাচ্ছে আস্তে আস্তে, পারিবারিক পরিবেশ দুষিত হচ্ছে এই সিরিয়াল গুলার প্রভাবে। সারাক্ষন, সারাদিন যদি এসব কুটীল প্যাচ দেখতে থাকেন, পরনিন্দা আর পরচর্চা দেখতে থাকেন একটা পর্যায়ে এসে আপনার আচরনে কি তার প্রভাব পড়বে না? আমরা বড় হয়েছি। ভাল মন্দ বুঝতে শিখেছি। কিন্তু আমাদের বাচ্চারা? ছোট ভাই বোন? ওদের কাছে তো এটাই স্বাভাবিক জীবন মনে হওয়াটা আটকাতে পারব না। ওদের মানষিক বিকাশ এভাবেই হবে। আমাদের দেশের মেয়েরা এখন রান্নায় লবন দিতে ভুলে যায়, কিন্তু সিরিয়ালের সময়সূচি ভোলেন না। আর এগুলা দেখে যারা নিজের জীবনের সাথে মিল খুজতে থাকেন, আর পরনিন্দা, পরচর্চা কে যারা প্রিয় টাইমপাস হিসেবে নিয়ে নিয়েছেন। আপু/আম্মা/খালা/চাচা/ভাই এগুলা দেখলে দেখেন, কিন্তু দয়া করে প্র্যাকটিস কইরেন না। এতে স্মার্টনেস বাড়ে না। আর এগুলা থেকে অন্যের পেটের ভিতরের গুয়ের গন্ধ খোজা ছাড়া তেমন কিছু শেখারও নাই।

আর হিন্দি কার্টুন নিয়ে কি বলব? আপনার বাচ্চা ইংরেজী মিডিয়াম স্কুলে যায়। ওখানে সব ইংরেজীতে শেখে। বাসায়ও বাইরে আপনি যতটুকো পারেন ওর সাথে ইংরেজীতে কথা বলেন, ওর ইংরেজী স্কিল ডেভলপ করার জন্য। ভাল, আন্তর্জাতিক ভাষা শিখাচ্ছেন ভবিষ্যৎ ক্যারীয়ার উজ্জ্বল করার জন্য। যেটুকো অবসর ও পাচ্ছে,  টিভিতে কার্টুন দেখছে। কোন ভাষায়? হিন্দিতে। আমরা আগে ছোটদের দেখেছি কার্টুন দেখতে দেখতে CAT, MOUSE এগুলার অর্থ শিখে, বিড়াল ইঁদুর ওরা চিনে ফেলতো। এখন বাচ্চারা শিখছে বিল্লি আর ছাম্মাকচাল্লো। কার্টুন গুলা হিন্দিতে করা হইছে ভারতীয় বাচ্চাদের ভাষা শিখানোর জন্য। ওদের চ্যানেল, ওদের দেশের বাচ্চারা ওদের মাতৃভাষা শিখছে, খুবি ভাল উদ্যোগ ওদের জন্য। আপনি আপনার বাচ্চাকে হিন্দি শিখাচ্ছেন কেন? আমাদের দেশে অনেক শিক্ষামুলক কার্টুন বাংলায় পাওয়া যায় সিডি, ডিভিডি তে ওগুলো দেখান বাচ্চাদের। বাংলা পছন্দ না হলে ইংরেজী ভাষার কার্টুন দেখান তাও ভাল। নিজেরা ভারতীয় সিরিয়াল দেখে মানুষের নামে গীবত করা, পরিবারে কুটীল চাল চালা শিখবেন না, বাচ্চাদেরও এমন একটা বাজে ভাষা শিখাবেন না যে ভাষায় অশ্লীল গান আর বাজে কিছু সিরিয়াল, বিজাতীয় সংস্কৃতির কিছু সিনেমা ছাড়া তেমন কোন সমৃদ্ধতাই নাই।

২,৩৬০ বার দেখা হয়েছে

২২ টি মন্তব্য : “আরশী নগরের পড়শী”

  1. আহসান আকাশ (৯৬-০২)

    মুখে মুখে আমরা ভারতের বিভিন্ন কর্মকান্ডের কারনে তাদের তুলোধুনো করে দেই কিন্তু ঘরে ফিরেই তাদের চ্যানেল না দেখলে, তাদের নকল করে তাদের দেশি পোষাক না পরলে আমরা আবার জাতে উঠতে পারি না। বাচ্চাদের ক্ষেত্রে হিন্দি কার্টুনের প্রভাব তো ভয়াবহ। একটা কথা আমি চিন্তা করে পারি না, বর্তমান সময়ের বলিউডি নাচ গান কিভাবে পরিবারের সবাই মিলে ড্রয়িংরুমে বসে দেখা সম্ভব?

    তবে এর সাথে সাথে আমাদের চিন্তা করা দরকার এর বিকল্প হিসেবে তাদের সামনে কি আছে? আমাদের ঘরের মহিলাদের দুপুর বা সন্ধ্যার পরের বিনোদন বলতে এক টিভি। ওই সময় ভারতীয় চ্যানেলগুলো বাদ দিলে থাকে আমাদের দেশের চ্যানেল, যেখানে বিজ্ঞাপন, সংবাদ আর টক শোর ভিড়ে অন্য অনুষ্ঠান খুঁজে পাওয়া দুঃষ্কর। তারা স্পোর্টস চ্যানেল দেখবে এই আশা করাও ঠিক হবে না। বাকি থাকে ইংরেজি সিরিয়াল বা ডকুমেন্টরি, এগুলোও বা কতজন বুঝবে?আর সেগুলোও আসলে সব ভারতীয় ভার্সনের ইংরেজি চ্যানেল। তাই যতদিন না আমরা কোন বিকল্প বিনোদন মাধ্যম তৈরী করতে পারছি ততদিন পর্যন্ত শুধু দেশপ্রেম, সংস্কৃতি প্রেম বা সচেতনতার কথা বলে সবাইকে হিন্দি চ্যানেল থেকে ফিরিয়ে আনা যাবে বলে আমি মনে করি না।


    আমি বাংলায় মাতি উল্লাসে, করি বাংলায় হাহাকার
    আমি সব দেখে শুনে, ক্ষেপে গিয়ে করি বাংলায় চিৎকার ৷

    জবাব দিন
    • আহসান আকাশ (৯৬-০২)

      আর হ্যাঁ, ভারতীয় কিটক্যাট, ফাস্টট্রাক ঘড়ি বা ভারতীয় বডি স্প্রে এসবের কিন্তু বিকল্প আছে। কিন্তু তার পরেও কিন্তু আমরা ব্যহার করছি না। আর এই ফাস্ট ট্রাক ঘড়ি বা বডি স্প্রের খোঁজও কিন্তু আমরা পেয়েছি ঐ সব ভারতীয় চ্যানেল দেখেই। ঐ সব চ্যানেলের প্রভাব শুধু আমাদের সংস্কৃতিতে নয়, আমাদের অর্থনীতিতেও সরাসরি পড়ছে এই ঘড়ি, পারফিউম, পোষাক থেকে শুরু করে ঔষধের জমজমাট ব্যবসা কিন্তু ঐ চ্যানেলের গুলোর কারনেই প্রসারিত হচ্ছে। আমাদের জন্য এটা বন্ধ করা আরো অনেক সহজ।


      আমি বাংলায় মাতি উল্লাসে, করি বাংলায় হাহাকার
      আমি সব দেখে শুনে, ক্ষেপে গিয়ে করি বাংলায় চিৎকার ৷

      জবাব দিন
    • মোর্শেদ (৯৮-০৪প.ক.ক)

      ভাইয়া এখানে একটা ভুল বোঝাবুঝি হচ্ছে। আমি ভারতীয় পণ্য বা চ্যানেলের বিপক্ষে কিছু বলতেছি না। কিটক্যাট বা ফাস্টট্র্যাকের কথা এটা বুঝাতেই লিখেছিলাম। আমার নিজেরও ভারতীয় চ্যানেলে বডি-স্প্রের বিজ্ঞাপনে উন্মুক্ত ভারতীয় মেয়েদের দেখতে ভালই লাগে 😀 । কথাটা হল সিরিয়াল নিয়ে। যারা দেখতেছে, অন্যান্য শো দেখুক(তাই বলে বিগবস বা স্প্লিটভিলা না আবার) বিনোদন নিক। সিরিয়ালের চেয়ে সিনেমাও ভাল। বছরের পর বছর সেটা মাথায় চাপ সৃষ্টি করে না। দেশি ভাল না লাগলে ভারতীয়ই সই। আর আপনি আপনার সময় আর টাকা খরচ করতেছেন অবশ্যই আপনি ভালটাই নিবেন। কিন্তু তাই বলে এই সিরিয়াল গুলো? যেগুলোতে যুগ যুগ ধরে, প্রতিদিন দেখানো হচ্ছে পারিবারিক অশান্তি, সমস্যা, অন্যের নামে কুৎসা, সারাক্ষন একজন আরেক জনের বিরুদ্ধে কাজ করা, চারিত্রিক অবক্ষয়? একদিনের এপিসোড দেখে পরের দিনের এপিসসোড পর্যন্ত অপেক্ষা এবং সারাক্ষন সেই বাজে বিষয়গুলো মাথায় ঘুরপাক খাওয়ানো। এটা কি আমাদের মানষিক ভাবে অসুস্থ করে ফেলতেছে না? কিছু দেশি চ্যানেলেও এ ধরনের বাজে সিরিয়াল দেখাচ্ছে শুনেছি। দেশি বলে আমি সেগুলা দেখার পক্ষেও না।
      আর বড় ভয়টাই তো ঐখানে যে প্রতিদিন নিয়মিত অবসরের এতখানি সময় এসব দেখলে তার প্রভাব ব্যক্তি আচরনে পরবেই। মানুষের আচরনের প্রায় ৮০ভাগ পরিবর্তনই হয় মানুষ যা দেখে, সেটা থেকে শিখে। (সম্পাদিত)


      মোর্শেদ_(৯৮-০৪)পাবনা ক্যাডেট কলেজ

      জবাব দিন
      • আহসান আকাশ (৯৬-০২)

        মোর্শেদ, ভারতীয় পন্য বা চ্যানেলের বিপক্ষে তুমি বলোনি, আমি বলেছি। শুধুমাত্র সিরিয়ালগুলোকে সিঙ্গেল আউট না করে পুরো বলিউডি সংস্কৃতি (ভারতীয় না কিন্তু) থেকেই আমাদের বেরিয়ে আসা দরকার। সিরিয়ালে যে অসুস্থতার কথা বললে অনেক সিনেমাতে তার থেকেও বেশি অসুস্থতা আরো দৃষ্টিকটু ভাবে দেখানো হয়। আর পন্যের ক্ষেত্রে যেগুলোর বিকল্প আছে যেগুলো অবশ্যই আমাদের পরিহার করা উচিৎ।


        আমি বাংলায় মাতি উল্লাসে, করি বাংলায় হাহাকার
        আমি সব দেখে শুনে, ক্ষেপে গিয়ে করি বাংলায় চিৎকার ৷

        জবাব দিন
    • মোর্শেদ (৯৮-০৪প.ক.ক)

      ব্র্যান্ডিং এ পিছাই আছি তাই আমরা সিরিয়াল দেখি? x-( x-( x-( x-( দেশি নাটক সিনেমা আর কিভাবে ব্র্যান্ডিং করবে? এক চ্যানেলের পোগ্রাম সব চ্যানেলে এড দিচ্ছে, পেপারে দিচ্ছে, বিলবোর্ডে দিচ্ছে। আমরা দেশী নাটক দেখার টাইমে ভারতীয় সিরিয়াল দেখি আর দেশী নাটক দেখি ডাউনলোড করে, ডিভিডি কিনে। যদি এগুলা এত খারাপ ই হবে তাইলে ডাউনলোড করে কেন? পয়সা দিয়া ডিভিডি কেনে কেন? ভাইরে আসলে অভ্যাস হয়ে গেছে। প্রতিদিন সকালে নীলখেতের পরটা খাইতে খাইতে। পেটে পচা তেল না পরলে মনেই হয় না নাস্তা করছি।


      মোর্শেদ_(৯৮-০৪)পাবনা ক্যাডেট কলেজ

      জবাব দিন
      • রেজা শাওন (০১-০৭)

        ভাই কথা ঠিক।

        কিন্তু আমাদের দেশে যেসব সিরিয়াল হচ্ছে সেটা দেখে কিন্তু বুঝার উপায় নাই, সেটা দেশী না মেড ইন ইন্ডিয়া...গুলশান এভিনিউ নামে একটা আবর্জনা হইত কোন জানি টিভিতে, পুরাই স্টার প্লাসের ফিল দিত। এমন কিন্তু আরও অনেক আছে। এই মুহূর্তে নাম মনে নাই। 😀 😀

        ব্র্যান্ডিং এর ব্যাপারটা সে জন্য বলা।

        জবাব দিন
    • মোর্শেদ (৯৮-০৪প.ক.ক)

      আপু বাচ্চাদের জন্য বাংলা ডাবিং করা কার্টুন পাওয়া যায়। তবে ডাবিং এর মান অতটা ভাল না। চাহিদাই নাই, তাই যেনতেন দুই একটা রেকর্ডিং কোম্পানি কোন রকমে কিছু একটা করে দিতেছে। তবে ইদানিং বাচ্চাদের জন্য শিক্ষামুলক কিছু ভাল কার্টুন আমাদের দেশে বাংলাতেই তৈরি হচ্ছে। তেমনি একটা হল "সিসিম পুর"।


      মোর্শেদ_(৯৮-০৪)পাবনা ক্যাডেট কলেজ

      জবাব দিন
  2. মুস্তাকিম (৯৪-০০)

    বর্তমান সময়ের সবচেয়ে ফেভারিট কার্টুন ডোরেমন চালু হয় ১৯৬৯ এ, জাপানে। সেই ডোরেমন একে একে ছড়িয়ে পড়ে এশিয়ার বিভিন্ন দেশে। ভারতে কিন্তু খুব বেশিদিন হয়নি ডোরেমন প্রচারিত হচ্ছে। আমরা কি পারি না এই ডোরেমন বাংলায় ডাব করতে?

    দোষ কাদের? আমাদেরই তো, উপায় থাকা সত্বেও আমরা সুযোগ করে দিচ্ছি আমাদের বাচ্চাদেরকে ভিন্ন সংস্কৃতি থেকে বিনোদন আহরন করার।

    জবাব দিন
  3. আপনার লেখাটা দারুণ । চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছেন আমাদের ভুল গুলো । আমি নিজেও এরকম একটা লিখেছিলাম । পড়ে দেখতে পারেন

    আপনাদের জন্য আরেকটা সুখবর হচ্ছে আমরা ডোরেমন কে বাংলায় ডাবিং করতে যাচ্ছি । বাজারের প্রচলিত উদ্ভট সস্তা বাংলা না । যে বাংলা হবে শ্রুতিমধুর এবং যে বাংলা শুনে বাচ্চারা আসলেই আবার বাংলা ভাষায় কার্টুন দেখা শুরু করবে তেমনভাবেই ডাবিং হচ্ছে । এখন শুধু অপেক্ষা করার পালা 🙂

    জবাব দিন
  4. নাছিম জামান লিমন

    ভাই কি দেশের মাইয়ালোক মাইরা সাফা করবার চান? সিরিয়ালগুলা না থাকলে তারা করব ডা কি !!!
    যে পুলাপানগুলা ইন্ডিয়ান কার্টুন না দেইখা খাবার পর্যন্ত খায় না ওরা তো সব না খাইয়া মরবো !!!!!
    😉

    জবাব দিন

মওন্তব্য করুন : রেজা শাওন (২০০১-২০০৭)

জবাব দিতে না চাইলে এখানে ক্লিক করুন।

দয়া করে বাংলায় মন্তব্য করুন। ইংরেজীতে প্রদানকৃত মন্তব্য প্রকাশ অথবা প্রদর্শনের নিশ্চয়তা আপনাকে দেয়া হচ্ছেনা।