জগতের সকল নারী সুখী হোক !!! এপিসোডঃ ২

আবার বসলাম লিখতে। যারা আগের লেখাটা পড়ছেন তারা নিচের প্যারাটা না পড়লেও হবে। ঠিক করছি ধারাবাহিক নাটকের শুরুর নাম দেখানোর মত এই সিরিজের প্রতি পর্বেই এটুকো দিয়ে দিব।

এটা আমার নিজের গল্প।[ অন্য কারো সাথে মিলে গেলে তা নিতান্তই কাকতালীয় !!]

আমার একটা গার্লফ্রেন্ড আছে। বিশ্বাস করেন একটাই। আমাদের অনেক দিনের রিলেশন। প্রায় ৭বছর হল আমরা প্রতিাদিন ঝগড়া করি। প্রতিদিনই প্রায়। এই ৭বছরে খুব বেশী হলে ৭দিন আমাদের মধ্যে কোন ঝগড়া হয় নাই। তাও সেটা এক টানা ৭ দিন হবে না। এক ঘন্টার মধ্যে কখনো কখনো ৩-৪বার ঝগড়া হয় ৩-৪টা ভিন্ন ইস্যু তে। আর আমাদের ৯৯ভাগ ঝগড়া হয় ফোনে। বাকি ১ভাগ সামনাসামনি। আমরা এক সাথে থাকলে ঝগড়া হয় না।এর মানে এটা ভাবার দরকার নাই যে আমাদের রিলেশন ভাল না। আমদের দুইজনের ভিতর প্রচুর পিরিতি আছে।

আমদের ঝগড়ার আরো কিছু নমুনা দেই;

 

১) অফিস এ কাজ করতেছি ফোন আস্ল।

-হ্যালো, কাজ করতেছি। শেষ করি, পরে ফোন দিচ্ছি।

-দুইমিনিট কথা বল্লে কি হয়?

-আচ্ছা বল।

-না কিছু বলব না।পরে ফোন দিব।

-শেষ করে ফোন দিলাম।ফোন ধরবে না। একটা মেসেজ পাঠাইয়া দিল। কাজ শেষ কর, রাতে কথা হবে।বুঝেন অবস্থাডা।

 

২) ফোন আস্ল;

-হ্যালো,

-কি করো?

-অফিসে, কাজ করতেছি।

-কি কাজ?

-অফিসের কাজ।

-অফিসের কি কাজ?

-আরে আমি অফিসে খ্যামটা নাচ দিতেছি। আর আমার কলিগেরা চার পাশ থেকে গান গাচ্ছে চিকনি চামেলী। অফিসের কি কাজ তাও এখন বুঝাইয়া কও তারে। আমি নিজেই বুঝি না যে সারাদিন কি করতেছি !!!!

ব্যাস হয়ে গেল এক পশলা।

 

৩)ফোনে কথা বলতেছি বলল,

-একটু রাখ।অমুক বান্ধবী ফোন করছে।

-আচ্ছা।

পরে ফোন দিল।

-কি হইছে?

-ওই ওর বয়ফ্রেন্ড ওকে না এইটা বলছে,বা কাল কোন জামা পড়ে ক্লাসে যাব জিজ্ঞেস করছে।

-ও।

একই কাজ আমার সময় হইলে,

-একটু ফোনটা রাখ। অফিস থেকে ফোন আসছে।

-না আমার সাথে কথা বল, ফোন রাখতে হবে না।

-দাড়া না শুনি কি হইছে।

-আচ্ছা[রাগ করে]।

তারপর ফোন দিলাম।জিজ্ঞেস করল কি হইছে।

-কালকের একটা কাজ।

-কালকের কাজ কাল বললে সমস্যা কি ছিল? এখন ফোন ধরলা কেন?

ব্যাস লাইগা গেল।

 

৪) ও কোথাও গেলে, আমি বার বার ফোন দেই। ঠিক আছে কিনা, কোন ঝামেলা হল কিনা, ব্লা ব্লা জানার জন্য।তখন বিরক্ত হয়।কয়বার ফোন দিতে হবে,বললাম তো আমার কোন বিপদ হয় নাই, অস্থির হইতে হবেনা ব্লা ব্লা। আর আমি কোথাও গেলে, ফোন আসে;

-হ্যালো,বল।

-কি বলব? সারাদিনে একবার ও ফোন দেয়ার টাইম হইল না?

-দিলাম তো।

-কখন?

-ও মা, কয়বার না কথা হইল।

[নরমাল সময় ও ঐ টুকুই কথা হয়। এমন কোন মধু কথা হয় না। কিন্তু আজকের দিনতো নরমাল দিন না।আমি বন্ধুদের সাথে ঘুরতে গেছি।আজকের প্রতিটা মুহুর্তই ও আমাকে মিস করবে।]

-ওইটা কোন কথা হইল?একটু হ্যালো বইলাই শেষ!!!

-আর তখন দুইবার কল দিলাম ধরলি না। তাই ভাবলাম ফ্রি হয়ে তুই ফোন দিবি। বাদ দে এখন ঠিক আছে। এখন কথা বলি।

-না তুমি বন্ধুদের সাথে আছ।থাকো পরে কথা বলব।[টের পাচ্ছি ওয়ার্নিং ওয়ার্নিং]

-না, না তুই বল, ওদের সাথেই তো আছি। তোর সাথে একটু কথা বলি।

[আর পোলাপাইন তো বিশ্বহারামি, সিচুয়েশন বুঝে ফেলা মাত্র শুরু করে দিবে, মোর্শেদ শোন এইডা, ঐ ডা ভাব খানা আমারে ছাড়া আর কিছু চলতেছেই না।]

-যাও ডাকে তোমাকে।

-না, না তুই বল।

-না রাখি।

সাথে সাথে একটা মেসেজ চলে আসবে এমন;

“thako frnder sathei thako, oder sathe thakle to r amake dorkar nai”

তাড়াতারি কল দিলাম। অন্য একটা মেয়ে খুব সুন্দর করে আমাকে বলবে “আপনার কাংখিত নাম্বারটিতে এই মুহুর্তে সংযোগ দেয়া সম্ভব হচ্ছে না…………..”

 

৫)আর এক টা কমন বিষয় হল, সময়। ফোন দিল,

-হ্যালো আমি দশ মিনিট পর ফোন দিচ্ছি।

ফোন দিলাম,

-তোমার দশ মিনিট শেষ হইছে?

সাথে সাথে ঝগড়া।

আধা ঘন্টা হয়ে গেছে। আরে বাবা কার্ড খেলতেছিলাম। গেম হইতে ২০মিনিট না হয় বেশীই হইয়া গেছে তাই এত রাগ করতে হবে?

 

৬) ইদানিং যেটা হইছে, সেটা একটু অদ্ভুত। ঝগড়া শুরু হচ্ছে এভাবে,

-দেখ আমি আর তোমার সাথে ঝগড়া করতে চাই না।

-তাই নাকি।

-হুম।

-কেমন?

-ঐ দিন এটা বলছিলা কিছু বলি নাই, অমুক দিন ঐটা করছিলা কিছু বলি নাই।

তারপর আর কি, পুরানো বিষয় নিয়া পুনঃরায় ঝগড়া।

 

এভাবেই আমার প্রেম চলতেছে। এক দিন দুই দিন না। সাত বছর হল চলতেছে। আমরা নিজেরা ঝগড়া করি, নিজেরাই আবার মিলমিশ করি। এ পর্যন্ত আমাদের একবারই শুধু এক টানা দুই দিন রাগ করে কথা (ঝগড়া) হয় নাই ।

তাইতো দোয়া করি,

“জগতের সকল নারী সুখী হোক,

সকল পুরুষ মঙ্গল লাভ করুক।”

 

৩,০৬৯ বার দেখা হয়েছে

৩৩ টি মন্তব্য : “জগতের সকল নারী সুখী হোক !!! এপিসোডঃ ২”

  1. মইনুল (১৯৯২-১৯৯৮)

    অফিসের ঝামেলা টের পাইনি কখনো। কারন প্রায় ৫ বছরের মতন একসাথে অফিস করছি।
    তবে ভালো এক্সপেরিয়েন্সের জন্যে "অধিক শোকে পাথর" বানানোর চেষ্টা করে দেখতে পারো। স্টুডেন্ট অবস্থাতে একবার ওকে ৫ মিনিট বসতে বলে রুমে গিয়ে দেখি এজ অফ এ্যাম্পায়রের সেই রকম জটিল গেম চলতেসে ৪ জনের মধ্যে। মিত্রতা, বন্ধুত্ব, বিশ্বাসঘাতকতা, মাইরপিট ---- কি ছিলোনা ওই গেমটাতে। যাই হোক ২ মিনিট গেম দেখি চিন্তা করার ১ ঘন্টা পরে হলের গার্ড দেখি রুমে আইসা বলে, আপায় তো আপ্নের জন্যে বইসা আছে। তখন আবার মোবাইলের এত প্রচলন ছিলো না। কি কারন দেখাবো ভাবতে ভাবতে ওর সামনে এসে সত্যটাই বলে ফেললাম। তো এইটাই আমার অধিক শোকে পাথর মানুষ দেখার প্রথম এক্সপেরিয়েন্স।

    জবাব দিন
  2. ইফতেখার (৯৫-০১)

    তোমার সংসার এখনো টিকে আছে কেমনে বুঝলানা ... এই সিরিজ পড়লে তো পুরা ম্যারাথন লেগে যাওয়ার কথা 😉

    তয় এইটাও শিওর যে এ লট অফ আস ক্যান রিলেট (আমি 'আসের' মধ্যে নাই 😉 )

    জবাব দিন
  3. নাফিজ (০৩-০৯)

    মেয়েদের ঝগড়া করার জন্য কোন কারন, সত্য মিথ্যা কিছুই লাগে না :thumbup: :thumbup:

    কঠিনভাবে সহমত...এক একদিন কোন্দিক দিয়ে যে কেয়ামত নাজিল হয়ে যাবে, টেরই পাওয়া যায় না... :brick: :brick:


    আলোর দিকে তাকাও, ভোগ করো এর রূপ। চক্ষু বোজো এবং আবার দ্যাখো। প্রথমেই তুমি যা দেখেছিলে তা আর নেই,এর পর তুমি যা দেখবে, তা এখনও হয়ে ওঠেনি।

    জবাব দিন
  4. শাহিন (২০০৪-২০১০)

    :(( :(( :(( :(( :(( :((
    ভাই বাপারটা একদম সত্যি। আপনার তো ভাই ম্যালাদিন হইলো .........আমাগো কেবল শুরু।
    তাই আপনার দুখঃ এ একটু কানলাম।
    আমাগো লেইগা ইট্টু দোয়া কইরেন। :(( :((
    :boss:


    shawn

    জবাব দিন

মওন্তব্য করুন : মোর্শেদ (৯৮-০৪প.ক.ক)

জবাব দিতে না চাইলে এখানে ক্লিক করুন।

দয়া করে বাংলায় মন্তব্য করুন। ইংরেজীতে প্রদানকৃত মন্তব্য প্রকাশ অথবা প্রদর্শনের নিশ্চয়তা আপনাকে দেয়া হচ্ছেনা।