আমাদের ছেলেবেলা (এপিসোড-৫)

আবার কলেজের কয়েকটা ঘটনা।

১) শাফিন ভাই, রাতের বেলা। স্লিপিং স্যূট পড়ে ডাব পাড়তে গাছে উঠছে। কিছু দূর গাছে ওঠার পর নাইট ড্রেসের পাজামার ফিতা ছিড়া গেছে। ভাইয়ার দুই হাতে গাছ জড়াইয়া ধরে আছে। ফলাফল শাফিন ভাই গাছের মাথায় আর পায়জামাটা গাছের তলায়।

২) আমরা তখন ক্লাস এইটে। হঠাৎ লিডিং ব্যাচ কলেজ অথরিটির বিরুদ্ধে আন্দলোন শুরু করল। তার একটা ওয়ে হিসেবে কলেজের এরিয়ায় কয়েকটা কুকুর ধরে তাদের গলায় বিভিন্ন জনের নাম লিখে ঝুলিয়ে দেয়া হল। কুকুর ধরতে গিয়া জনৈক ভাইয়া কামড় খাইয়া বিশাল বিখ্যাত হইয়া গেল। তো সেটা অনেক অনেক দিন আগের কথা। গত বছর ২০১০এ রিইউনিওন। সেই ভাইয়ার জনৈক স্যারের সাথে দেখা। স্যার জিগাইলো “তোমার কি অবস্থা? কুকুর কামড় দিছিলো ভাল হইছে?” ভাইয়া তাড়াতাড়ি কথা ঘুরানোর জন্য বলল “স্যার আমার তো স্কলারশীপ হইছে। লাসভেগাস যাচ্ছি আগামী মাসে।” স্যার স্কলারশীপের কথাটা কোন কারনে শুনতে পান নাই। স্যার বললেন “কেন চিকিৎসা করাইতে?” [সংগত কারনে ব্যাচ, ভাইয়া আর স্যারের নাম টা দিলাম না।]

৩)  ক্লাস টুয়েল্ভ। হাউস বেয়ারা হাসমত ভাই। নামাজে যাওয়ার জন্য ডাকতেছে রেজওয়ান কে। রেজওয়ান প্রতিদিনের মত সেদিনও বাং মারার তালে আছে। হাসমত ভাই দরজায় দাঁড়ানো। বলতেছে যাও যাও। রেজওয়ান ড্রেস চেঞ্জ করার জায়গায় দাঁড়াইয়া আছে তো আছেই। আর বের হয় না। হাসমত ভাই ও যায় না। বলতেছে যাও যাও। প্রায় মিনিট দশেক পর রেজওয়ানের ধৈর্যের সীমা পার হয়ে গেল। শরীরে এক ফোটা সুতা না থাকা অবস্থায় রেজওয়ান বের হইয়া হাসমত ভাইরে বলল “এ ভাবেই যাই???”  হাসমত ভাই একটা দৌড় মারল।

৪) কামাল ভাই। আম পাড়তে গিয়ে পড়ে গেল তিন তলার রেলিং থেকে। স্পটে দ্রুত সাহায্যের জন্য পৌছাইয়া গেল কামাল ভাইয়ের এক বছরের সিনিওর ইমরান ভাই আর শহিদুল্লাহ ভাই। গিয়ে দেখল আড়াইতলা থেকে পড়ে কামাল ভাই আর কোন নড়চড়া করতেছে না। দুই জনই খুবই আতংকিত এবং কিংকর্তব্যবিমূঢ়। হঠাৎ শহীদুল্লাহ ভাই বলল তিন দিন ছুটি, ব্যাপক ক্রিকেট খেলা যাবে। ইমরান ভাইতো অবাক। ভাবছে অধিক শোকে মাথা খারাপ হইয়া গেছে শহিদুল্লাহার। বলল “ধর আগে হসপিটালে নিয়ে যাই।” দুইজন তাড়াতাড়ি লাশ  ধরাধরি করে নিয়ে হসপিটালের দিকে দৌড় দিল। অর্ধেক রাস্তা যাওয়ার পরই লাশ নড়েচড়ে উঠল। শহীদুল্লাহ ভাই সঙ্গে সঙ্গে ছেড়ে দিছে, ব্যাটা তো মরে নাই। তিন দিন ছুটি? রুম ক্রিকেট সিরিজের কি হবে? ইমরান ভাই আর শহীদুল্লাহ ভাই ছুটি পাইল। তিন দিন না, প্রায় সাত দিন। সাত দিনে কলেজের বিখ্যাত ইনকোয়ারী বোর্ডের ঠেলায় তদের ক্লাশ, প্রেপ কিছুই করতে হয় নাই। আর কামাল ভাই? কয়েক টা জায়গায় ছিলে যাওয়া ছাড়া তার কিছু হয় নাই। সুপারম্যান কামাল ভাই।

৫) ১৭তম ব্যাচের ইমরান ভাই আর সালাউদ্দিন ভাই গেছে হসপিটালের পাশের জাম গাছ থেকে জাম পাড়তে। সালাহউদ্দিন ভাই চিকন চিকন ডালের মাথায় চলে যাচ্ছে। তাই দেখে ইমরান ভাই দেখে বলল, “ডাল ভেঙ্গে নিচে পড়বা, অত মাথায় যাইও না।” সালাউদ্দিন ভাই বলল “জাম গাছের ডাল খুব শক্ত হয়। তুমি জান না।”  সালাউদ্দিন ভাইয়ের ডাল ভেঙ্গে নিচে পড়তে থাকা এবং এ কথাটা বলা একই সাথে সংগঠিত হচ্ছিল। ১৪তম ব্যাচের সাঈদ ভাই হসপিটাল থেকে ধপাস শুনে বাইরে গিয়ে দেখল জাম গাছের নিচে ভাইয়ারা। ভাইয়াদের হাতে ব্যাগ ভর্তি জাম। ডাক দিল। সাঈদ ভাই- “কলেজের সম্পদ চুরি করছ। কি পানিশমেণ্ট চাও শারীরিক না মানষিক?” ভাইয়ারা বলল মানষিক। সাঈদ ভাই হসপিটালে যারা ছিল সবাইকে ডাক দিল। দুইটা জাম সালাউদ্দিন ভাই আর ইমরান ভাইয়ের হাতে দিল।  বাকি জাম বানানো হল লবন মরিচ দিয়ে। সবাই ওইটা খাচ্ছে আর সালাউদ্দিন ভাই হাতে পায়ে ব্যাথা নিয়া একটা জাম হাতে ধরে দাড়াইয়া আছে।

৬) আবার সালাউদ্দিন ভাই ইমরান ভাই। রাতের বেলা গেছে ডাব পাড়তে। সালাউদ্দিন ভাই গাছে ওঠার পর বলতেছে।

-ইমরান একটা সিগারেট খাইতে ইচ্ছা করতেছে।

-নিচে আস তারপর খাও।

-না এখানেই উপরে।

-কেমনে?

-তুমি উঠে দিয়ে যাও।

ইমরান ভাই ডাব গাছে উঠে সিগারেট দিয়ে নিচে নামা মাত্র সালাউদ্দিন ভাই বলতেছে,

– ইমরান সিগারেট নিভে গেছে আবার ম্যাচটা দিয়া যাও।

৭) ১৪তম ব্যাচ। একাডেমী ব্লক। বাংলা ক্লাস। কলেজ কাঁপানো সুন্দরী ম্যাডামের ক্লাস। কোন একটা কারনে ম্যাডাম রাগ করে ক্লাস থেকে বের হয়ে যাচ্ছেন। ভাইয়ারা সবাই চেচামেচি করছেন ম্যাডাম স্যরি, যাইয়েন না। ক্লাসে চিল্লাপাল্লা শুরু হইছে। সামনের দিকের ভাইয়ারা উঠে দাড়াইয়া পড়ছে। ম্যাডাম বের হয়ে যাবেনই। যাওয়ার সময় ডায়াসের সাথে ম্যাডামের শাড়ীর আঁচল আটকে গেছে। করিডোর দিয়ে জনৈক শিক্ষক শুধু মাত্র এ দৃশ্যটুকু দেখেছেন। ইয়াং এবং সুন্দরী ম্যাডাম কে রক্ষার জন্য নায়ক লাফ দিয়ে ক্লাসে ঢুকেই যারে পাচ্ছে তারেই মাইর। ম্যাডাম তাকে থামায়ে জিজ্ঞেস করলেন কি হইছে? স্যার রেগে মেগে বললেন “কি হইছে মানে? ম্যাডামের শাড়ী ধরে টান দেয়। কত্ত বড় বেয়াদব এরা।” ম্যাডাম তো অবাক।

২,১২৯ বার দেখা হয়েছে

২৮ টি মন্তব্য : “আমাদের ছেলেবেলা (এপিসোড-৫)”

  1. আহসান আকাশ (৯৬-০২)

    বেশ কিছু টাইপোর কারনে পড়ে পুরো মজাটা পেলাম না, বিশেষ করে অনেকগুলো 'ড়' এর জায়গায় 'র' হয়ে গিয়েছে। আর দাড়ি(যতি চিহ্ন) এর পরে একটা স্পেস হয়, সেটা না দিলে পড়তে বেশ কষ্ট হয়।

    সাইদ ভাইয়ের মানসিক শাস্তি সেই রকম ছিলো :))


    আমি বাংলায় মাতি উল্লাসে, করি বাংলায় হাহাকার
    আমি সব দেখে শুনে, ক্ষেপে গিয়ে করি বাংলায় চিৎকার ৷

    জবাব দিন
  2. মুসতাকীম (২০০২-২০০৮)

    সিরাম হইছে হাসতে হাসতে পিরা গেলাম =)) =)) =))


    "আমি খুব ভাল করে জানি, ব্যক্তিগত জীবনে আমার অহংকার করার মত কিছু নেই। কিন্তু আমার ভাষাটা নিয়ে তো আমি অহংকার করতেই পারি।"

    জবাব দিন

মওন্তব্য করুন : রুবায়েত

জবাব দিতে না চাইলে এখানে ক্লিক করুন।

দয়া করে বাংলায় মন্তব্য করুন। ইংরেজীতে প্রদানকৃত মন্তব্য প্রকাশ অথবা প্রদর্শনের নিশ্চয়তা আপনাকে দেয়া হচ্ছেনা।