আমাদের ছেলেবেলা । (এপিসোড ৩)

সিনিওরদের কাছে শোনা কিছু গল্প।

১) ১৪তম ব্যাচ। স্টাডি ট্যুরে গেছে। রাস্তায় এক সময় শুরু হল বাস থামানো হোক। টয়লেট করব। আনোয়ার স্যার বলল একটু পর। খানিক পর শুরু হল চিৎকার। গাড়ি থামবে ক্যাডেট মুতবে। এক পর্যায়ে শুরু হল, ক্যাডেট থামবে গাড়ি মুতবে। স্যার অনঢ়। তারপর শুরু হল বিট। সাথে দাড়ি নিয়ে নানান কথা।আনোয়ার স্যারের দাড়ি ছিল। এক পর্যায়ে স্যার বলল “এই তোমরা ড্রাইভারকে গালাগালি করছ কেন? পেছন থেকে জবাব আসল “ড্রাইভারের কি দাড়ি আছে?”  স্যার চুপ।

২) ইমরান ভাই আর সালাউদ্দিন ভাই কলেজ থেকে পালাইয়া পাবনা গেছে। জিনিসপত্র আনছে। সালাউদ্দিন ভাই দেয়াল পার হইছে, মালপত্র পাড় করছে এমন সময় আশপাশের এলাকার লোকজন আইসা ইমরান ভাইরে ধইরা ফালাইছে। ভাইরে নিয়া বাইন্দা ফালাইলো গাছের লগে। ওদের কথা কাল সকালে নিয়া প্রিন্সিপালের কাছে জমা দিয়া আসবে।প্রিন্সিপাল পুরস্কার দিবে। ইমরান ভাই বলল কত টাকা পুরস্কার চান বলেন,আমি দিতেছি।আপনারা আমারে ছাইড়া দেন। ওদের দাবী ৫০০৳ । টাকা হইল সালাউদ্দিন ভায়ের কাছে। মালপত্রের সাথে পাড় হইয়া গেছে । সালাউদ্দিন ভাই দেয়ালের ওপাশ থেকে কাহিনি দেখতেছে। ইমরান ভাই বলল সালাউদ্দিন টাকা দাও। সালাউদ্দিন ভাই ওই লোকগুলারে বলল “এত টাকা দিতে পারব না। ২০০৳ নেন।” ইমরান ভাইয়ের তো গলা শুকাইয়া কাঠ বাদাম হইয়া গেছে সালাউদ্দিন ভায়ের কথা শুইন্যা। টাকা কিন্তু ইমরান ভাইয়ের। এদিকে ভোর হয়ে যাচ্ছে ইমরান ভাই বলল “কি কর সালাউদ্দিন ? দিয়ে দাও।” সালাউদ্দিন ভাই ঝাড়ি “তুমি চুপ কর।” অনেকক্ষন মূলামূলির পর ৪৫০টাকায় রফা হইছে। হাউসে আইসাই প্রতি প্যাকেট সিগারেট এর দাম ১০টাকা বাড়াইয়া দিল ইমরান ভাই।

৩) হঠাৎ হসপিটাল থেকে সালাউদ্দিন ভাই ইমরান ভাইরে খবর পাঠাইছে ৫টা সিগারেট দিয়া যাও জরুরী। কাহিনি কি? ইমরান ভাই গেছে। “কি হইছে?” সালাউদ্দিন ভাইয়ের উত্তর “গু কিনছি। ৫টা সিগারেট দাম দিতে হবে।” ইমরান ভাই তো জায়গায় লক। কাহিনি যেটা হইছে , সালাউদ্দিন ভাই কয়দিন ডজ মারার জন্য হসপিটালে ভর্তি হইছে। মেডিকেল অফিসারকে বলছে স্যার ডায়রিয়া। এডমিট করছে। ঔষধ দিছে। ৩য় দিন ডাক্তার স্যার জিজ্ঞেস করছে সালাউদ্দিন কি অবস্থা? সালাউদ্দিন ভাই বলছে “স্যার ভাল না ঘন্টায় ৮-১০বার যাচ্ছি।” স্যার তখন লিখে দিছে “টেস্ট করাতে হবে।” এখন স্যাম্পল কই পাবে ? ঐ সময় হসপিটালে জেনুইন ডাইরিয়া নিয়ে এডমিট উনাদের এক ব্যাচমেট। সালাউদ্দিন ভাই গেছে, দোস্ত সাহায্য কর। তো সব শুনে ডায়রিয়ায় আক্রান্ত বড় ভাই বলছে ঠিক আছে, তবে দাম দিতে হবে। মুলামুলির পর ৫টা সিগারেট এ এসে রফা হইছে।

৪) ১৪তম ব্যাচের ভাইয়াদের ফর্ম মাস্টার জিজ্ঞেস করতেছেন কার বাবা কি করেন। খালিদ ভাই অথবা সাহিদ ভাই কে তা মনে নাই। ভাইয়াকে জিজ্ঞেস করছে “তোমার বাবা কি করে?” ভাইয়ার হাসি মুখে উত্তর “স্যার আব্বা কুষ্টিয়া জেলে আছেন।” স্যার শকড। বললেন “বাবা এতে তুমি মন খারাপ করবা না। ” ক্লাসের সবাইকে বললেন “এটা নিয়ে তোমরা কেউ ওকে কিছু বলবা না।” তখন ভাইয়া বলছে “স্যার আপনি ভুল বুঝছেন। আব্বা কুষ্টিয়া জেলখানার জেলার।” স্যার ঝাড়ি “বেয়াদব ছেলে সেটা আগে বলবা না।”

৫) ১৪তম ব্যাচের ইমরান ভাই। একবার হাউস মাস্টার ভাইয়াকে জোর করে বিতর্ক প্রতিযোগিতায় পাঠালো। বিষয় “নারী স্বাধীনতা” বা “নারীর অগ্রাধিকার” এই টাইপের কিছু একটা। ইমরান ভাই অডিটরিয়ামে উঠেই শুরু করল  এভাবে “যে দেশে তিন লাখ নারী নয় মাসে ধর্ষিতা হয়, যে দেশে মা-মেয়েকে এক সাথে ধর্ষণ করা হয়, সে দেশের মেয়েরা আর কিছু শিখুক আর না শিখুক পায়জামার ফিতাটা শক্ত করে বাঁধতে ঠিকই শেখে। মাননীয় প্রিন্সিপাল, সম্মানীত শিক্ষক এবং উপস্থিত সুধী……………………।।” ক্যাডেটরা অডিটরিয়াম কাঁপিয়ে হাত তালি মাইরা দিল। হাউস মাস্টারের মুখটা শুকাইয়া ছোট হইয়া গেল।

৫,২৩৩ বার দেখা হয়েছে

৫৫ টি মন্তব্য : “আমাদের ছেলেবেলা । (এপিসোড ৩)”

  1. শাওন (৯৫-০১)

    =)) =)) =)) দারুন.....


    ধন্যবাদান্তে,
    মোহাম্মদ আসাদুজ্জামান শাওন
    প্রাক্তন ক্যাডেট , সিলেট ক্যাডেট কলেজ, ১৯৯৫-২০০১

    ["যে আমারে দেখিবারে পায় অসীম ক্ষমায় ভালো মন্দ মিলায়ে সকলি"]

    জবাব দিন
  2. রাজীব (১৯৯০-১৯৯৬)

    তোরা পি সি সি র পোলাপান আসলেই পি সি সি।
    আমরা হাউস বেয়ারারে এক্সট্রা ১০/১৫ টাকা ধরাইয়া দিলেই বিড়ি চলে আসতো; ম্যাগাজিন ও। একজনরে দিয়া আনাইলে আরেকজন মাইন্ড করতো তারে দিয়া আনাইনা বইলা।


    এখনো বিষের পেয়ালা ঠোঁটের সামনে তুলে ধরা হয় নি, তুমি কথা বলো। (১২০) - হুমায়ুন আজাদ

    জবাব দিন
  3. নাফিজ (০৩-০৯)

    ক্লাস নাইনে থাকতে ডায়রিয়া নিয়ে একটা কাহিনী শুনছিলাম।

    কোন এক সিনিয়র (কে ছিলো ঠিক মনে নাই) একবার ডায়রিয়া নিয়ে হাসপাতালে অ্যাডমিট। তো সপ্তাখানেক আরামসে থাকার পর একদিন মেডুস (মেডিকাল অফিসার) বললেন, "তোমার কি অবস্থা এখন? যাও প্যাথলজিস্টের কাছে (যাকে কলেজে ডাকতাম প্যাত খালেক...তার ছিলো বিশাআআআআল এক "প্যাত") স্যাম্পল নিয়ে।

    ভাইতো পড়লো মহাফাঁপরে। বহুত ভাবনা চিন্তা করে (বাথরুমে বসে) সে "স্যাম্পলের" মধ্যে ট্যাপ খুলে খানিকটা পানি মিশায়া দিলো।

    ফলাফল, পরের দিনই প্যাত আঙ্কেল তাকে সিএমএইচে রেফার করে দিলো। 😀 😀 😀


    আলোর দিকে তাকাও, ভোগ করো এর রূপ। চক্ষু বোজো এবং আবার দ্যাখো। প্রথমেই তুমি যা দেখেছিলে তা আর নেই,এর পর তুমি যা দেখবে, তা এখনও হয়ে ওঠেনি।

    জবাব দিন

মওন্তব্য করুন : ফরিদ (৯৫-০১)

জবাব দিতে না চাইলে এখানে ক্লিক করুন।

দয়া করে বাংলায় মন্তব্য করুন। ইংরেজীতে প্রদানকৃত মন্তব্য প্রকাশ অথবা প্রদর্শনের নিশ্চয়তা আপনাকে দেয়া হচ্ছেনা।