আমাদের ছেলেবেলা।

কলেজের কিছু ঘটনা বলি। এটাও মনে হচ্ছে বাজাজ টেলিফিল্ম এর সিরিয়াল গুলার মত হবে। এত ঘটনা। এর বেশ কিছু ঘটনা জায়গায় উপস্থিত ছিলাম না তাই ডায়লগ চেঞ্জ হতে পারে কিন্তু মূল ঘটনা অপরিবর্তিত।

 

১) ক্লাস সেভেন। প্রথম প্যারেন্টস ডে। আমার আর মুসফিকের প্যারেন্টস আসে নাই। মন খারাপ। আর এক জনের মন খারাপ।সে ক্লাস টুয়েলভের সারোয়ার ভাই। উনার ও কেউ আসে নাই। রুমে এসে বলল, কেন প্যারেন্টস আসে নাই তোদের? নিশ্চিত তোর বেয়াদপ। তাই রাগ করে কেউ আসে নাই। তোদের পানিশমেন্ট দিতে হবে। সারোয়ার ভায়ের মাথায় আইডিয়া আসল। পরের সিন আমরা দুই জন দুইজনের কান ধরে সারা হাউস চক্কর দিচ্ছি আর দুইজন দুইজনের চোখের দিকে তাকিয়ে জোরে জোরে গান গাচ্ছি , সেই সময়ের বাংলা সিনেমার হিট গান “পড়ে না চোখের পলক; কি তোমার রূপের ঝলক।” এর পর ছয় বছরে আর কোন প্যারেন্টস ডে আব্বু আম্মু মিস করে নাই। এক টার্ম এ দুইটা প্যারেন্টস ডে ছিল দুইটা তেই গেছিল।

২) ক্লাস এইট। মসজিদে মাগরিবের নামাজের ভিতর ধাক্কাধাক্কি করতে করতে হাসাহাসি করতেছি। মনেই নাই বাপের ও বাপ  আছে। আমরা সিজদা দিয়ে গুঁতোগুঁতি করতেছি আর পিছনে ক্লাস টুয়েলভের কয়েক জন বসে থেকে আমদের তামশা দেখতেছে। নামাজের পর ইমরান ভাই হাউসে গিয়ে ডাকল। তানজিল , আমি, রাজিব। তানজিল কে জিজ্ঞেস করল “নামাজের ভিতর হাসাহাসি করছ কেন?” তানজিল বলল “না ত ভাইয়া কিছু করি নাই।” সাথে সাথে ঠাস। ভাইয়া বলল “আমি নিজে দেখছি।” তানজিল বলল sorry. ভাইয়া বলল ”  :frontroll: start. এবার আমার সামনে ইমরান ভাই। বললাম “ভাইয়া ভুল হইসে। আর হবে না।” ”  :frontroll:   start. ” ইমরান ভাই রাজিবের সামনে আসা মাত্র কিছু বলার আগেই রাজিব :frontroll: start করে দিল।

৩) ক্লাস টুয়েলভ। কাঁঠাল চুরি করে আনা হইসে। কাঁঠাল খাওয়া হইল । সমস্যা হইল কাঁঠালের খোসা আর মাঝখানের ডাণ্ডাটা নিয়ে। কই ফেলি। হাউসে গ্রিল লাগানো। বের করা যাচ্ছে না। হঠাৎ  চোখে পড়ল হাউস বেয়ারা হাসমত ভাইয়ের ব্যাগ। সুন্দর করে সব কিছু ঐ ব্যাগে ভরে রেখে দিলাম। পরের দিন হাসমত ভাই সেকি কান্না কাটি। তার শার্ট প্যান্ট সব আঠা লেগে নষ্ট হয়ে গেছে। কি আর করা কাছে ঐ মুহূর্তে ৪০০ টাকা ছিল। দিয়ে বললাম একটা শার্ট কিনে নিয়েন। এক কাঁঠালের দাম পড়ল ৬৫০/- টাকা। খাওয়ার পর কাঁঠালের গন্ধ দূর করতে একটা পুরা বডি স্প্রে + ৪০০/- ।

৪) ক্লাস নাইন। ইসলামের কাবার্ড থেকে চানাচুর চুরি করলাম। চার জন। আমি, ইমতিয়াজ, সুলতান, শিহাব। খাওয়া শেষের দিকে।শিহাবের হাতে প্যাকেট ওকে বললাম প্যাকেট সুন্দর করে বাইরে ফেলে দিস। আমরা নিশ্চিন্তে ঘোরাঘুরি করতেছি। হঠাৎ ইসলামের চিৎকার। কাহিনী হইল কে যেন ওর চানাচুর খেয়ে প্যাকেট টা ওর বেড শিটের নিচে রেখে গেছে। আমরা তিন জন এক সাথে শিহাবের দিকে রক্তচক্ষুতে তাকিয়ে আছি, কিছু বলতে পারতেছি না।  এদিকে ইসলাম গালি দিয়েই যাচ্ছে। সাথে অভিশাপ। ইমতিয়াজ আর থাকতে পারল না। ইসলামকে বলল এভাবে বলিস না; ভুল করে তো তুই ও খেতে পারিস। আমি তখন কোন দিকে দৌড় দিব ভাবতেছি।

৫) ক্লাস নাইন। রাজিব আর রেজোয়ান। দুই জন ফাজলামি করতে করতে টিভি রুমে ঢুকছে। রাজিব কি যেন আইডিয়া দিছে। রেজোয়ান খুশির চোটে ওকে জড়াইয়া ধরে গালে চকাস করে চুম্মা মাইরা দিসে। সবাই হতভম্ব । কারণ কখন যেন রাজিব সরে গেছে, রেজোয়ান JP নোবেল ভায়ের গলা জড়াইয়া ধরে আছে। এর পর খালি মাইরের শব্দ। নোবেল ভায়ের যে শক্তি।

৩,৭৩২ বার দেখা হয়েছে

৩০ টি মন্তব্য : “আমাদের ছেলেবেলা।”

  1. মুহিব (৯৬-০২)

    ভাই হাসতে হাসতে পেটে খিল ধইরা গেল। এই দুর্দিনে আপনার কারণে হাসতে পারলাম, আপনার কাছে আমি কৃতজ্ঞ। বিশেষ স্থানগুলো-

    এভাবে বলিস না; ভুল করে তো তুই ও খেতে পারিস। আমি তখন কোন দিকে দৌড় দিব ভাবতেছি।
    কখন যেন রাজিব সরে গেছে, রেজোয়ান JP নোবেল ভায়ের গলা জড়াইয়া ধরে আছে। এর পর খালি মাইরের শব্দ। নোবেল ভায়ের যে শক্তি।
    জবাব দিন

মওন্তব্য করুন : Mohammad Sanaul Huq

জবাব দিতে না চাইলে এখানে ক্লিক করুন।

দয়া করে বাংলায় মন্তব্য করুন। ইংরেজীতে প্রদানকৃত মন্তব্য প্রকাশ অথবা প্রদর্শনের নিশ্চয়তা আপনাকে দেয়া হচ্ছেনা।