শিক্ষক VS ক্যাডেট এর ৬বছরের ম্যাচের কিছু ধারাবিবরনি। সিজন ২-এপিসোড-১

সবাই কয় ভদ্রলোকের এক কথা। তাই মেলা দিন হইল এই সিরিজের আর এক পর্ব লিখতে গিয়েও মনের ভিতর খচখচ করছিল। লাস্ট পর্বে কইছিলাম এইডা আর লিখুম না। কিন্তু একটু ঠাণ্ডা মাথায় ভাইবা দেখলাম হুদাই খচখচ করতেছে। ওই কথা তো আমার জন্য প্রজয্যই না । :goragori: :goragori: :goragori: তাই লিখতে বইসা গেলাম।

 

১) সৈয়দ নুরুল ইসলাম স্যার। বাংলা ডিপার্টমেন্ট। স্যার নতুন আসছেন কলেজে। এসে আমদের জানালেন তার একটা ব্যাকরণ বই পাওয়া যায়। সেটা ফলো করলে ভাল রেজাল্ট করা যাবে। জুনিওর ব্যাচের একটা ছেলে স্যারের বই কিনছে। পরীক্ষায় সারমর্ম আসল। স্যারের বই দেইখা হুবহু মাইরা দিল। স্যার নাম্বার দিল ১০ এ ২, মাল গেল স্যারের বই নিয়া স্যার আমি তো এই বই পইড়া লিখসি। তাইলে এত কম পাইলাম কেন?স্যার দেখল তার বই। বলল দেখি, আসলে খেয়াল করি নাই। ওইটা ৮ হবে।

 

২)মতিউর রহমান স্যার। ফিজিক্স ডিপার্টমেন্ট। ইমরান ভাই আর সালাউদ্দিন ভাই। তখন টুয়েল্ভ। তারা চুরি করল একাডেমী ব্লক এ বিল্ডিং রং করার জন্য ছাদ থেকে ঝুলানো দড়ি । তো নাইট প্রেপের পর দড়ি যাচ্ছে হাউসে। রাস্তায় স্যার ধরল। আলাদা করে প্রথমে ডাকছে ইমরান ভাই রে।

-কি করবা এটা দিয়ে?

-স্যার আমি তো ক্লাস লিডার। ছেলেরা মশারি টানানোর জন্য দড়ি পায় না। তাই নিয়ে যাচ্ছি।

স্যার তো সাত আসমানের উপর থাইকা পরছে।-এই দড়ি দিয়া মশারি?

-স্যার কেটে প্যাচ খুলে চিকন করে দিব।

-আচ্ছা।

ইমরান ভাইরে দূরে দাঁড় করাইয়া সালাউদ্দিন ভাইরে ডাকছে।

-ইমরান আমাকে সব বলছে।তুমি যদি সত্যি বল, তাইলে ছেড়ে দিব।

সালাউদ্দিন ভাই ভাবছে জুনিওর টিচার, তাই ইমরান সব বলে দিছে। সালাউদ্দিন ভাই শুরু করল-

-স্যার আমরা রাতে যখন ডাব পারতে যাই, তখন গাছের উপর থেকে ফেললে নিচে পরে ডাব ফেটে যায়।তাই এই দড়ি দিয়ে ডাব নিচে নামাব।

 

৩) মকবুল হোসেন স্যার। ভূগোল ডিপার্টমেন্ট।আমাদের হায়দার কে চড় মারল। পুরা ফর্ম কাপাইয়া। হায়দারের দিমাগকি বাত্তি নগদে জ্বলে উঠল। হায়দার দুই হাতে কান চেপে ধরে বসে পরল।স্যার আমি কানে কিছু শুনতে পাচ্ছি না।কথাটা কানে যাওয়া মাত্র স্যারের রাগ ঠান্ডা। হায়দার বলল স্যার আমাকে হসপিটালে যেতে হবে।কানে অনেক ব্যাথা করতেছে। স্যারের তো  **** কান্ধে।

৪) কলেজ থেকে বের হওয়ার পর।বছর দুই আগে হবে।আমরা কয়েকজন কুমিল্লা ক্যাডেট কলেজে বেড়াইতে গেছি।পরিসংখ্যানের সাইফুল আলম স্যার আর বাংলার নাদিরা ইয়াসমিন ম্যাডামের বাসায়। ব্যাপক আদর যত্ন পাইলাম। সাটাইয়া খাইলাম। বের হওয়ার সময় স্যার বলল এখানে তসলিম উদ্দিন স্যার ও আছেন। ওনার সাথে দেখা করে যাও।উনি অসুস্থ। হার্টের সমস্যা।আমি ভুল করে বলে ফেললাম,”থাক স্যার তাইলে আর আমরা না যাই।আমাদের দেখে স্যার বেশী উত্তেজিত হয়ে যেতে পারে।শেষে স্যার আরো অসুস্থ হয়ে যেতে পারেন।” বলার সাথে সাথে দেখলাম ম্যাডাম মুচকি হাসি দিল আর স্যার তার সেই পুরানো চাওনি টা দিল। যেটা বলতেছিল জীবনেও ভাল হবা না। কিন্তু আমার বন্ধুরা ঠিকই বুঝল যে আমি ভালর জন্যই বলছি কথাটা।

স্যারদের নামে অনেক খারাপ কথা কইলাম।কয়ডা ভাল কথা কই।

১)আমরা টয়লেট এর মেইন গেটটা চাপাইয়া সিগারেট খাচ্ছি।হঠাৎ হাউস বেয়ারা কে সাথে নিয়া হাউস মাস্টার স্যার চলে আসল, টয়লেট ঠিক মত পরিস্কার করছে কিনা দেখতে।ভর্তি ধোয়া।আর গন্ধ।আমরা তিন জন ফট করে একটা টয়লেট এ ঢুকে পরলাম।স্যার মেইন দরজা টা খুলল সব বুঝল।চলে গেল।নয়ত আমাদের তিন জনের সেটাই কলেজে শেষ দিন হতে পারত।[সংগত কারনে সময় আর স্যারের নাম টা উল্লেখ করলাম না।]

২)HSC পরীক্ষার সময়, পরিসংখ্যান পরীক্ষার আগের রাতে সাইফুল আলম স্যার সারা রাত হাউসে ছিলেন।ওনার ডিউটি ছিল না সেদিন।সারা রাত জেগে উনি আমাদের কাছে এসে জিজ্ঞেস করেছেন কিছু আটকে যাচ্ছে কিনা?কিছু বুঝিয়ে দিতে হবে কিনা? তখন বিরক্ত লাগছে।মনে হইছে, যায় না কেন।একটু ঘোরা ফেরা করতে পারতেছি না,বিড়ি খাইতে পারতেছি না। কিন্তু এখন মনে হয় যে আমার বাপও কোন দিন আমার পরীক্ষার আগে সারা রাত জাগে নাই আমার সাথে।

 

 

 

২,৪২১ বার দেখা হয়েছে

৩১ টি মন্তব্য : “শিক্ষক VS ক্যাডেট এর ৬বছরের ম্যাচের কিছু ধারাবিবরনি। সিজন ২-এপিসোড-১”

  1. মাহমুদ (১৯৯০-৯৬)
    আমার বাপও কোন দিন আমার পরীক্ষার আগে সারা রাত জাগে নাই আমার সাথে

    এইজন্যই কিছু কিছু স্যারকে বাবার পাশেই স্মরণ করি, এখনো......


    There is no royal road to science, and only those who do not dread the fatiguing climb of its steep paths have a chance of gaining its luminous summits.- Karl Marx

    জবাব দিন
  2. ইকবাল (০৪-'১০)

    সাইফুল স্যার আমার ফর্ম মাষ্টার ছিলেন... আদর করে আমাকে ডাকতেন ইকবে......ল( নোয়াখালীর মানুষ তো)... বড়ই চমৎকার মানুষ... 😀

    লেখাটা ভাই কিন্তু একের হইছে... ::salute::

    জবাব দিন
  3. রাজীব (১৯৯০-১৯৯৬)

    লেখা যথারীতি ভালো হইছে।
    খালি পসিতিভ লেখার সময় কি একটা যায় না বলেছিস না; অইটা চেঞ্জ করে দে।


    এখনো বিষের পেয়ালা ঠোঁটের সামনে তুলে ধরা হয় নি, তুমি কথা বলো। (১২০) - হুমায়ুন আজাদ

    জবাব দিন

মওন্তব্য করুন : রাজীব (১৯৯০-১৯৯৬)

জবাব দিতে না চাইলে এখানে ক্লিক করুন।

দয়া করে বাংলায় মন্তব্য করুন। ইংরেজীতে প্রদানকৃত মন্তব্য প্রকাশ অথবা প্রদর্শনের নিশ্চয়তা আপনাকে দেয়া হচ্ছেনা।