শিক্ষক VS ক্যাডেট এর ৬বছরের ম্যাচের কিছু ধারাবিবরনি। এপিসোড-২

আগের টায় এক ছোট ভাই আমাদের ছেরাজুজ্জামান স্যারের ঘটনা জানতে চাইছে।তাই উনারটা দিয়াই শুরু করি

১) ক্লাস সেভেনের সেকেন্ড টার্ম।ইসলামিয়াতের নতুন টিচার আসলেন। এসে বললেন “আমার নাম ছেরাজ্জুজামান।এটা সিরাজ বা সেরাজ না।” বলে বোর্ডে লিখে দিলেন ছেরাজ্জুজামান। “ফর্ম লিডার এভাবে লিখবে।” ক্যাডেট কলেজে নতুন হলেও তত দিনে আমরা এটুকু শিখে গেছি স্যার দের নাম যা স্যারেরা বলবেন তারপর ও কিছু না বলা নাম থাকবে।যেটা আকিকা ছাড়াই ক্যাডেটরা দিয়ে দিবে। স্যার ক্লাস থেকে বের হওয়া মাত্র আমরা তার নামের “জ্জুজামান” অংশ টুকু বাদ দিয়ে দিলাম।

২) ক্লাস টুয়েল্ভ।ছেরাজ্জুজামান স্যারের হাউস ফেয়ারঅয়েল শেষে গেলাম স্যারের কাছে।স্যারের দোয়া নিতে।”স্যার দোয়া করবেন”। স্যার কাধে হাত দিলেন। আমি ভাবলাম দোয়া আসছে।স্যার বললেন “মোর্শেদ,পাঞ্জাবির নিচে গেঞ্জি পর নাই কেন?” আমি অবাক হয়ে স্যারের দিকে তাকালাম।স্যার বললেন “ফেয়ারওয়েল দিছ তো কি হয়েছে? আমি ছেরাজ্জুজামান ই আছি”। :bash:

৩) ক্লাস টুয়েল্ভ।আমাদের কামরুল কে হাউসের কড়িডরে ছেরাজ্জুজামান স্যার ধরল, পারসোনাল ড্রেস এর জন্য। “কামরুল এটা কি পরেছ?” কামরুল বলল “স্যার পারসোনাল হাফ প্যান্ট।” স্যার “খোল এক্ষুনি খোল” কামরুল বলল “এখানেই খুলে ফেলব স্যার?” স্যারের চেহারা কাল হয়ে গেল।স্যার হাউস মাস্টারের রুমের দিকে আগাতে আগাতে বলল “রুমে গিয়ে চেঞ্জ করে হাউস মাস্টারের রুমে আস।”

ছেরাজ্জুজামান স্যার যতই কড়া হোক, স্যার একবার বিশাল ধরা থেকে বাঁচাইয়া দিছিল। ধন্যবাদ স্যার, এগুলার মত ওটাও মনে আছে স্যার,ভুলি নাই। অন্য কোনো সময় অন্য কোথাও লিখব।

৪) ক্লাস ইলেভেন।তসলিম উদ্দিন স্যার, Civics dpt. স্যার কলেজে আসার পর একটা কথাই বলতেন “আমার ২১বছরের অভিজ্ঞতায় এটা দেখি নাই, বা এটা শুনি নাই, বা এটা করি নাই।“ স্যার প্রথম পরীক্ষা নিলেন। খাতা দিতে এসে ব্যাপক গরম। “শাহরিয়ার কে? ক্যাডেট নাম্বার ১০৫৫? “ আমাদের ভদ্র ছেলেটা উঠে দাঁড়াল। স্যার শুরু করলেন “ আমার ২১ বছরের অভিজ্ঞতায় আমি এমন কাজ দেখি নাই।আমি তোমার নামে আদালতে মামলা করব, তুমি একজন দেশদ্রহী।তোমার জন সম্মুখে বিচার হওয়া দরকার।“ আমরা তো টাসকি। ভাল একটা পোলা করল ডা কি? শাহরিয়ার নিজেও আর থাকতে না পেরে বলল “স্যার আমি কি করছি?” স্যার “বেয়াদব ছেলে কি করছ মানে? তুমি আইন অমান্য করছ, সংবিধান লংঘন করছ।তুমি বানিয়ে বানিয়ে সংবিধান লিখেছ।তোমাকে আমি পুলিশে দেব।“  ততক্ষনে আমরা বুঝে গেছি শাহরিয়ার শুধু একা না, আমরা সবাই এক সাথে জেলে যাচ্ছি।

৫) লাইটসঅফের পর তসলিম উদ্দিন স্যার গেছেন তিতুমির হাউসে।জানালায় পর্দা লাগানো।ভিতরে কার্ড খেলা হচ্ছে।স্যার ফুটা দিয়ে দেখেছেন ভেতরে ৫টা মাথা দেখা যাচ্ছে।নক করেছেন।আমাদের কাওসার দরজা খুলে দরজার আড়ালে দাঁড়িয়ে ছিল,স্যার ভিতরে ঢুকেছেন আর ক্রিমিনাল কাওসার স্যারের পিছন দিয়ে বের হয়ে রুমে চলে গেছে।এদিকে স্যারের তো পাগল হওয়ার মত অবস্থা।স্যার বেডের নিচে, কাবার্ডের পিছে খুজলেন, না পেয়ে জানালার গ্রীল টেনে চেক করলেন; সেটাও ভাঙ্গা না পেয়ে; কাবার্ড সরিয়ে নিচে ফুটা করে নিচ তলায় চলে গেছে কিনা দেখলেন,তার পর শুরু করলেন “আমার একুশ বছরের অভিজ্ঞতায় এমন জিনিস দেখি নাই,আমি বার বার গুনেছি ৫টা মাথা আর এক জন গেল কই? আমাকে সত্যি কথা বল নইলে ঝামেলা হবে ব্লা ব্লা ব্লা” পরিস্থিতি খারাপ হয়ে যাওয়ায় কাওসার আবার আসল ক্রাইম সিনে।বলল ঘটনা।স্যার মানতে নারাজ।কাওসার পুরা ব্যাপারটা স্যার কে আবার ডেমো দিল।স্যার তাও মানবেন না।স্যারের কথা “আমার ২১বছরের অভিজ্ঞতায় আমাকে কেউ এত বড় বোকা বানায় নাই।কাওসার নিশ্চিত তুমি জাদু জান।আর জাদু বিদ্যার মাধ্যমে তুমি এখান থেকে বের হয়ে গেছ।“ কাওসার আর না পেরে স্যার কে বলেই ফেলল “স্যার লাইফে অনেক কিছুই প্রথম বার হয়।“

পরের এপিসোডের বিশেষ আকর্ষন। আসছেন (ইনশাল্লাহ) মকবুল হোসেন স্যার আরকি,জহিরুল হক স্যার।একবারে লিখে ফেলতে পারলে ভাল হইত কিন্তু টাইম করে উঠতে পারতেছিনা।কি আর করা অল্প অল্প করেই যাক।আমার ব্লগে পোস্টও বাড়ুক। 😉 😉 😉

২,৩৫৭ বার দেখা হয়েছে

২০ টি মন্তব্য : “শিক্ষক VS ক্যাডেট এর ৬বছরের ম্যাচের কিছু ধারাবিবরনি। এপিসোড-২”

  1. রেজা শাওন (০১-০৭)

    চূড়ান্ত মজা পাইলাম ভাই। আমরা মোটামুটিভাবে কপাল নিয়ে কলেজে গেছিলাম। শুরুতে ছেরাজুজ্জামান, মকবুল সব শেষে নাদিরা ম্যাডাম ফর্ম মাষ্টার।

    লেখা খুব ভালো হচ্ছে। পরেরটার অপেক্ষায় থাকলাম... 😀 😀

    জবাব দিন
  2. আমিন (১৯৯৬-২০০২)

    আবুল হাসান মোহাম্মদ ছেরাজুজ্জামান স্যাররে আমরা পাইছিলাম নাইন পর্যন্ত। উনার একটা বিখ্যাত ডায়লগ ছিলো স্যারদের মুখে মুখে ফিরতো।
    "ফাফিরা ফরকালে ফাফের ফানিসমেন্ট ফাভে"। উল্লেখ্য স্যারের 'প' উচ্চারণে সমস্যা ছিলো অনেক সময়ই 'ফ' শোনা যেত।

    জবাব দিন
  3. শিবলী

    তসলিম স্যার কুমিল্লায় আসার পর মেঘনা হাউসের হাউস মাস্টার ছিলেন। একরাতে গোমতি হাউসের ৮ নম্বর রুমে এসে তিনি বললেন, "কি ব্যাপার গতকাল এই রুমে চারটা বিছানা ছিল, এখন দেখি তিনটা। আরেকটা বিছানা গেল কই?" আমরা তো প্রথমে কিছুই বুঝতে পারি নাই, পরে বুঝলাম স্যার ভুল করে আমাদের হাউসে চলে আসছে। পরে স্যারকে বললাম এটা মেঘনা হাউস না, এটা গোমতি হাউস। তারপর স্যার বললেন, "আমি তো ভাবছিলাম এটা মেঘনা হাউস।" এই ছিল স্যারের অবস্থা......... যাই হোক স্যার এখন বরিশালের ভি পি। স্যার ভালো থাকুক এই দোয়াই করি......... আর ছেরাজুজ্জামান স্যার এর কথা কি বলব, স্যার তো আমাদের কলেজে এসে ইসলামিয়াতের শিক্ষক থেকে মিউজিকের ও আই সি :guitar: হয়ে গেলেন !!!!!!!!!!!! :boss:

    জবাব দিন
  4. ফরিদ (৯৫-০১)

    তসলিম উদ্দিন স্যার ক্লাসে ঢুকেই বলতেন "অথেলো দাড়াও"। অথেলোকে দাড় করিয়ে রেখে তিনি আমাদের ক্লাস শুরু করতেন। অনেক গবেষণা করেও আমরা বের করতে পারি নি, অথেলো'র অপরাধটা কি ছিল। ~x(

    জবাব দিন
  5. তানভীর (০২-০৮)

    হা হা হা =)) =)) =))
    ছেরা নাম টার সাথে পরিচিত ছিলাম। ঘটনা শুইনা মজা পাইলাম।আর তসলিম স্যার তো ইদানিং ফেসবুক এ মাইয়ার জন্য পাত্র খোঁজে 😛
    মোর্শেদ ভাই কয়েকদিন পরে আয়তেছি 😀 আপনার বাসার ছাদে আরেকটা পার্টির আয়োজন কইরা রাইখেন 🙂

    জবাব দিন

মওন্তব্য করুন : সৌমিত্র (৯৮-০৪)

জবাব দিতে না চাইলে এখানে ক্লিক করুন।

দয়া করে বাংলায় মন্তব্য করুন। ইংরেজীতে প্রদানকৃত মন্তব্য প্রকাশ অথবা প্রদর্শনের নিশ্চয়তা আপনাকে দেয়া হচ্ছেনা।