যদিও সন্ধ্যা….

প্রথমেই একটা কাডেটজ্ঞান এর প্রশ্ন জিগ্গেস করি ।কাডেট কলেজ এ মেডেল পাওয়া সবচাইতে সহজ কোন খেলায়?
খেলার নাম টেবিল টেনিস(সিঙ্গেল);তিন জনের মধ্যে দুই জন মেডেল :tuski: কি মজা !!!!!
কাজটা করা অনেক সহজ।আমি আবার সহজ কাজ ছাড়া করি না।কারণ আমি নিজের যোগ্যতা সম্পর্কে
ভালোভাবেই জানি।কিন্তু তাই বলে কলেজ লাইফে কি একটা মেডেল ও পাওয়া হবে না?অবশেষে
একদিন এই সিদ্ধান্তে উপনীত হলাম যে,যে ভাবেই হোক আমাকে মেডেল পেতেই হবেই,উপায় একটাই,
টেবিল টেনিস ।ক্লাস eight থেকেই কমন রমে পরে থাকতাম ।টেবিল টেনিস খেলার জন্য তীর্থের
কাকের মত ভাইদের করুনার অপেক্ষায় থাকতাম :-B
কখন ভাই ডেকে বলবে যে,’খেলার পরে বলটা ** নাম্বার রুমে দিয়ে এসো’।তবে ভাইদের এই
করুনা খুব কম সময়ই হত,এভাবে কত যে ঈদের দিন বিসর্জন দিয়েছি তা বের করতে গেলে
পল্টুকে ডাকতে হবে ।এভাবেই শুরু হলো আমার পথ চলা ।আমার এই পথ চলাতেই আনন্দ । শুরু
করলাম আমি আর নাহিদ,যখনি মাঠ ফাকা পেতাম আমরা খেলতাম ।আমি নাহিদের সাথে কখনই
জিততে পারতাম না শুধুমাত্র যখন ও চালেঞ্জ করত তখন পারতাম ।
নাইনে উঠে গেলাম ।ভাইরা এখন কিছুটা বাধ্য হযে আমাদের সুযোগ দিত,কারণ আমাদের সুযোগ
না দিলে হাউসের ভবিষ্যত খারাপ ।অনেক খেললাম ।অনেকেই খেলা শুরু করে দিল,আমার প্রতিযোগীর
সংখ্যাও বেড়ে যেতে থাকলো ।আমি বেশি করে হারা শুরু করলাম ।সিঙ্গেল এ যেতে হলে আগে সবার
সাথে জিততে হবে,কারণ সবাই তো শর্টকাট চায় ।আমাদের সবার মধ্যে হিট হলো,সবাইকে অবাক করে
দিয়ে আমি সবাইকে হারালাম :gulli2: কিন্তু আমি তো অবাক হইনি,এ তো আমার প্রাপ্য । :frontroll:
আমি সিগেল এ যাচ্ছি ।আমার মত খেলওয়ারের এতেই খুশি হওয়া উচিত ছিল ।
কিন্তু আমি তো দমবারপাত্র নই ।আমি পল্টুর গালিরূপ নির্যাতনের বদলা নিতে চাই ।
এর মধ্যেই জেনে গেলাম যে কোন হাউস থেকে কে কে যাচ্ছে,শরিফ আর যুবাইর,
ওরা এতই ভালো খেলে যে আমি স্বপ্নভঙ্গের বেদনায় কাতর হযে গেলাম ।
আর ইতিহাস থেকে জানলাম খালিদ হাউস মানেই ঝুরির তলায় ।
তাই আগে থেকে কারো সাথে ট্রাইল ও দিলাম না ।হারবই যখন একটু দেরিতেই হারি । 🙁
শরীফের সাথে খেলা,যার সম্পর্কে কথিত আছে যে দাদশ মানের ভাইরাও নাকি অর সাথে খেলতে ভয় পায় :((
প্তথম সেট আমি ৮;শরিফ ২০+।আমি সত্যিই ভুল জায়গায় হাত দিয়েছিলাম ।সরি শরিফ ভাই :no:
দ্বিতীয় সেট আমি ২০+;শরিফ ১৪ ।
হে হে,সাবাশ মনির,হাউস প্রিফেক্ট মেহেদী ভাই জিল দিলেন না ঝারি মারলেন বুঝলাম না ।
তৃতীয় সেট,আমি আমার স্বপ্ন পূরণের দারপ্রান্তে ।কিন্তু তাই কি সম্ভব?আমি ১৪;সরিফ ২০+ :no:
মেহেদী ভাই এসে অনেক উলোবনে মুক্তা ঢাললেন ।এখনো তো চান্স আছে ।আমি যদি জুবাইর কে হারাতে
পারি তাহলেই আমি মেডেল পাব ।পরের দিন বিকেলে আমার খেলা ।আমার খেলাই শেষ খেলা এই ইনডোর
গেমেসের ।অনেক অঙ্ক কষে গেমেস প্রিফেক্ট আহাদ ভাই এসে বললেন,
‘মনির যদি এই গেমে জেতে তাহলে আমরা দীর্ঘ চার বছর পর সেকেন্ড হব ‘ :chup:
সুতরাং আমি এখন হাউসের কান্ডারী ।আজীবন যে সব ভাইদের কাছে ভিলেন ছিলাম তারাও
এসে জ্ঞান দিচ্ছেন,যে যেভাবে পারছে জ্ঞান দিচ্ছে আর আমি নিরুপায় হয়ে ভক্ষণ করছি ।
আর আমাদের হাউস মাস্টার মুরগির কথা নাই বা বললাম ।
আমি মনে বুঝিলাম,ইহা অন্য জাতের মানুষ ।
শুরু হলো খেলা ।আমি আর জুবাইর,কথিত আছে একবার জুবাইর এমন চাপ মেরেছিল যে একাদশ মানের
এক ভাই তাকে ফ্রন্টরোল :frontroll: দিতে বলেছিল ।
কারণ জুবাইর এর ব্রম্মাস্ত্র ভাইয়ের গালে চপেটাঘাত করে । :duel:
প্রথম সেট ।আমি ২০+;জুবাইর ৫ :awesome:
কেউ অবাক হলে কিছু করার নেই,আমি নিজেই তো অবাক হযে গেলাম !আমার মনোবল বাড়ল না কমল বুঝলাম না ।
দ্বিতীয় সেট ।আমি ১৪ ;জুবাইর ২০+ :((
সবাই মনোযোগ দিয়ে খেলা দেখছে,প্রিন্সিপাল,আডজুটেন্ট সবাই।
তৃতীয় সেট ।আমি ১৮ ;যুবাইর ৯/আমি ২০;জুবাইর ১৭
আমার আর মাত্র এক পইন্ট দরকার,তাহলেই আমি আমার কলেজ লাইফ এর প্রথম ও শেষ স্বপ্ন
পূরণের খুব কাছাকাছি দাড়িয়ে,মনে মনে একবার মেডেলটা ধরেও দেখলাম,বাস্তবতায় ফিরে এলাম
যখন হাউস প্রিফেক্ট মেহেদী ভাই বললেন,’তোর ওই পাওয়ার সার্ভ টা কর’,আমি এই সার্ভটাকে খুব
ভয় পাই,কারণ মিস না হলে শিয়র পইন্ট,কিন্তু মাঝে মাঝেই মিস হয় ।কিন্তু ভাইয়ের কথা শুনে না
নিজে থেকেই বুঝলাম না,আমি আমার পাওয়ার সার্ভটা করলাম এবং মিস করলাম ।
মিস করে আমার কি যে হলো বুঝলাম না,আমি আর খেলতে পারলাম না ।
ফলস্বরূপ আমি ২০ ;জুবাইর ২০ ।মানে ডিউস।আর ডিউস মানেই আবার ১৫ থেকে খেলা শুরু ।
ভাগ্য যে এত বড় খেলোয়ার আমার জানা ছিল না ।আবার শুরু হলো খেলা ।
এদিকে উপস্থিত জনতার নাভিশ্বাস ।
আমি ১৭ ;জুবাইর ১৫
আমি ১৭ ;জুবাইর ১৭
আমি ১৯ ;জুবাইর ১৮
আমি ১৯ ;জুবাইর ১৯
আমি ১৯;জুবাইর ২০
আমি ১৯;জুবাইর ২০+
আমি হেরে গেলাম সাথে হারালাম ।বাস্তবের খুব কাছে পাওয়া সেই মেডেল হারালাম ।
জুবাইর এসে বলল,’ইসস কি মিস’,এই কথাটা জুবাইরের মুখ থেকে এখনো মাঝে মাঝে শুনতে হয়,
হাউসকে তৃতীয় করে সবার মিথ্যে সান্তনা পেলাম,আডযুটেন্ট এসে স্বান্তনা দিল,সবাই আমার দিকে
করুনার দৃষ্টিতে তাকিয়ে ছিল,কেউ হয়তো মনের অজান্তেই বলে উঠেছিল,’বেচারা’!
এই বেচারা ক্যাডেট আর কখনো স্বপ্ন দেখেনি……….
আমার জন্ম হযেছিল শনিবার ।
উত্সর্গ:সেই সব অযোগ্য কাডেটদের যারা ছয় বছরেও একটা মেডেলের সাথে নিজের আলিঙ্গন ঘটাতে পারে নি

১,২৬৭ বার দেখা হয়েছে

২৮ টি মন্তব্য : “যদিও সন্ধ্যা….”

  1. রকিব (০১-০৭)

    হায়রে মেডেল; কাইন্দো না মিয়া। তোমারে একটা মেডেল কিইন্যা দিমু।
    একটা কথা কও, পোষ্টটার নাম এখনো সন্ধ্যা কেন দিলা?? :grr: :grr:


    আমি তবু বলি:
    এখনো যে কটা দিন বেঁচে আছি সূর্যে সূর্যে চলি ..

    জবাব দিন
  2. আহমদ (৮৮-৯৪)

    মুনিরুজ্জামান ... তোমার সাহস তো দেখি কম না ... সিনিয়রেরা তোমার লেখায় মন্তব্য করে আর তুমি চুপচাপ বইসা আসো ... জলদি ১০টা :frontroll: ... স্টার্ট কুইক ... হারি আপ


    চ্যারিটি বিগিনস এট হোম

    জবাব দিন
  3. আহারে.... 🙁 🙁 🙁

    আমি আছি এই দলে যারা ছয় বছরে একটা মেডেল ও পাই নাই। :tuski: :tuski: :tuski:

    তয়, কম্পিটিশনে নিয়মিত যাইতাম, যেমনঃ হাউস ইন্সপেকশন, প্রিন্সিপাল প্যারেড, ক্রস কানট্রি ইত্যাদি। :grr:

    জবাব দিন
  4. খেলাধুলায় আমরা নজরুল হাউজ (আমাদের ব্যাচ) বরাবর ছিলাম তৃতীয়, সবচেয়ে করুণ অবস্থা ছিলো ক্লাশ সেভেন এ থাকতে, একাডেমিক্স এ ফেইল না করেও আমরা এত্ত ব্যাক লীড দিতাম যে পুরো হাউজ প্রায় সময়ই আমাদের নিয়ে মিটিং এ বসে যেত!
    কিন্তু এখনো ভালো লাগে যখন মনে পড়ে, এই আমরাই ক্লাশ টেন থেকে বের হবার আগ পরযন্ত কি পরিমাণ লীড নিতাম একাডেমিক্স এ আর এই তুহিন কিন্তু তাতে থাকত আগে আগে..........

    জবাব দিন

মওন্তব্য করুন : মাহবুবা সোনিয়া (৯৭-০৩)

জবাব দিতে না চাইলে এখানে ক্লিক করুন।

দয়া করে বাংলায় মন্তব্য করুন। ইংরেজীতে প্রদানকৃত মন্তব্য প্রকাশ অথবা প্রদর্শনের নিশ্চয়তা আপনাকে দেয়া হচ্ছেনা।