দুইটি কাহিনি…

কালকে পাওয়ার সিস্টেম কুইজ। পড়তে ইচ্ছা করছে না। অবশ্য এই কাজটা কখনই আমার করতে ইচ্ছা করে না। এশার নামাজ পড়তে গেছি। কিন্তু হুজুর একদিকে আর আমি চিন্তা করি আরেক জিনিস। নামাজের মধ্যেই এই লেখাটা খালি মাথার মধ্যে ভনভন করতেছে। তাই কোন রকম নামাজ পড়েই দৌড়…

আমি কিছু ঘটনা বলবো এবং এইগুলা সত্যি। ক্যাডেট কলেজে ক্যাডেদের পিছনে সবচেয়ে কষ্ট যারা করে তাদের নিয়ে এই কাহিনি।

ঘটনা একঃ

এই বছরে রিইউনিয়নের ঘটনা ডাইনিং হলের সামনের চত্ত্বর। ডাইনিং হলের সব কর্মচারীরা দাঁড়ানো। তাদের চোখে মুখে অন্যরকম উজ্জ্বলতা ছড়াচ্ছিল। একেকজন এক্স-ক্যাডেটকে দেখছে আর চোখ যেন আরো উজ্জ্বলতা ছড়াচ্ছে। তারা আজ তৃপ্ত এই কারণে তাদের পরিশ্রমের ফসল আজ তারা নিজ চোখে দেখতে পাচ্ছে। দিন রাত কষ্ট করে যাদের খাইয়েছে আজ তারা সমাজে প্রতিষ্ঠিত। কিন্তু তাদের আচরণ এমনভাবে কষ্ট দেয় যে ভাষায় প্রকাশ করার মতো না।

একদল ভাইয়া ডাইনিং হলের সামনে আসছে। তাদের দেখে হেডকুক হারুন ভাই দৌড়ায়া আসলেন। হারুন ভাই কোলাকুলির জন্য দুই হাত বাড়ালেন আর ভাইয়ারা শুধু হ্যান্ডশেক করলেন। তখন হরুন ভাইয়ের উত্তর, কি? ঘাম লাগবে দেইখা কোলাকুলি করলেন না?? কথাটা বলে হারুন ভাই বিমর্ষ মনে ডাইনিং হলে চলে গেলেন।

ঘটনা দুইঃ

কলেজ পিকনিকের সময়। বিকেল বেলা কলেজ বনাম ACOC ফুটবল খেলা। গ্রাউন্ডসম্যান আক্কাস ভাইয়ের সাথে গ্রাউন্ডে গিয়ে দেখা। কেমন আছেন জিজ্ঞেস করতেই, আক্কাস ভাই বললেন, “যাক! সারাদিনে এতো এক্স-ক্যাডেদের মধ্যে অন্তত তোমরা তো জিজ্ঞেস করছ যা কেমন আছি?”

আজ আর কোন ঘটনা বলব না। আমি এই ঘটনা দুইটি দিয়ে ক্যাডেট দের আঘাত দিতে চাইনি। ভাইয়ারা হয়তো এইটা নিয়ে অনেক কিছুই বলবেন। কিন্তু সত্যিই এমন ক্যাডেট আছে যারা বিশাল মহীরূহ হবার পরে শিকলকেই ভুলে যায়। ক্যাডেট কলেজের চতুর্থ শ্রেণীর কর্মচারীগণ ক্যাডেটদের জন্য কি পরিমাণ কষ্ট করেন প্রত্যেক ক্যাডেট মাত্রই তা জানে। । আমি এখনও সত্যি কোন প্রতিষ্ঠান পাইনি যেখানে ক্যাডেট কলেজের চতুর্থ শ্রেণীর কর্মচারীদের মতো অমানুষিক পরিশ্রম কোন মানুষকে দিয়ে করানো হয়।

এক্স-ক্যাডেটদের প্রতি তাই তারা অভিমান করতেই পারে। এই অধিকার তাদের আছে। কারণ আমাদের আজকে যে অবস্থান সেখানে রয়েছে তাদের হাড়-ভাংগা পরিশ্রমের কাহিনি। তাই আমরা যেন আর কোনদিন তাদের সুখকে মলীন করে না দেই। আমাদের একটুখানি ভালো ভালোবাসা, এক চিলতে হাসিই তাদের কাছে অনেক কিছু।

১,৭২৯ বার দেখা হয়েছে

২০ টি মন্তব্য : “দুইটি কাহিনি…”

  1. আরিফ (৯৫-০১)

    ভাই..এতে কষ্ট পাবার কিছু নেই.......তোমার ব্যবহার কেমন আছে এটাই বড় কথা........অনেক সিনিয়র আছে যারা জুনিয়রদের সাথে তাই
    ঠিক মত কথা কয়না, আবার ৪র্থ শ্রেনী?...যাহোক এই কথা ভুলে যাও এটাই ভালো।

    জবাব দিন
  2. তৌফিক (৯৬-০২)

    ১...
    মঞ্জুর, ধইরা ধাতানি লাগানো দরকার তোমারে। আমি যে থিমের উপর লেখমু পরের পোস্ট, ওইটা ঠিকই দিয়া দিলা। এখন ভাবতাছি, চুরিটা কেমনে করলা? 🙂

    ২...

    লেখা ভালো লাগছে। তাঁদেরকে জানাই :salute:

    জবাব দিন
  3. মাসরুফ (১৯৯৭-২০০৩)

    আমাদের ডাইনিং হল বেয়ারা নজরুল ভাইয়ের ছোট ভাই এক্স ক্যাডেট।অমানুষিক পরিশ্রম করে তিনি ভাইকে ক্যাডেট কলেজে পড়িয়েছেন।বর্তমানে আর্মিতে মেজর সেই ভাইটি যতদুর জানি সেই বড় ভাইকে সমাজে নিতে লজ্জা পায়...

    হায়রে ক্যাডেট!!!

    জবাব দিন
  4. মান্নান (১৯৯৩-১৯৯৯)

    মন্জুরের কাহিনীগুলো সত্যিকারে মনকে নাড়া দেয়ার মতো। আমি এতদিন ভেবেছিলাম একমাত্র ক্যাডেটরাই পারে সমাজিক স্তরের বাঁধা ভেন্গে মিশতে, এক অফিসারকে দেখেছিলাম স্টাফকে জড়িয়ে ধরতে। বাইরে আসার পরেই আরো বুঝতে শিখেছি ক্যাডেট কলেজের প্রতিটা স্টাফ, কর্মচারী, স্যার রা কি পরিমান ত্যাগ স্বীকার করে আমাদের মানুষ করেছেন। অথচ তারা আমাদের কাছে একটু ভাল ব্যবহার ছাড়া আর কিছুই আসা করে না।

    আমরা কি এতই অধম যে একটু ভাল ব্যবহারও তাদের ফেরত দিতে পারিনা ?

    জবাব দিন

মওন্তব্য করুন : সামিয়া

জবাব দিতে না চাইলে এখানে ক্লিক করুন।

দয়া করে বাংলায় মন্তব্য করুন। ইংরেজীতে প্রদানকৃত মন্তব্য প্রকাশ অথবা প্রদর্শনের নিশ্চয়তা আপনাকে দেয়া হচ্ছেনা।