ক্যাডেট জীবন


যেখানে শৈশব হারায় বেদনায়
সে ও কি জীবন ভ্রম হয়?
সেই যে বাছা মা’র কোলছাড়া
বুক ফাটা বেদনায়।

হল কি ফেরা এত লেথাপড়া
সেই কোলে কোনদিন ?
আজো কাঁদে মন বড় অনাদরে
মাকে খুঁজে সারাক্ষন।

নদী ঘাট পুকুর রয়ে গেল দুর
বন্দী হল যে ভুবন,
নেই সে খেলার সাথী ভাইবোন
হারিয় গেল আপন।

কি যে অসহায় ভিজে কান্নায়
রাত্রিতে মাথার বালিশ,
বুক ভেঙে যেত গভীর ব্যাথায়
করিনি কখন নালিশ।

আজো সেই ব্যাথা হুহু কাতরায়
বিজনে বিষন্ন মন,
সেই যে সাথীদের খুঁজে ফিরি যত
ফিরে কি হৃতধন?


নতুন দিন শুরু পরিপাটি ছিমছাম
বাধা ধরা শত নিয়ম,
ভোরে ওঠা দৌড় পাড়া লাফ ঝাপ
বুকডন ব্যায়াম।

ঘড়ি ধরে ভাত খাও রাত্রিতে ঘুম যাও
ঘন্টা বাজে দশটা হলে,
রুটিন খাবার খাও রুটি পরাটী পোলাও
সবই হত ঘন্টার তালে।

ঘুমে চোখ কচলাও তাড়াতাড়ি বদলাও
জামা জুতা বারবার,
বাশীর চিৎকার দৌড়াদৌড়ি হুংকার
সারি ধরে খাড়াবার।

চুন থেকে খসলে পান বড় ভাই ধমকান
মিলিটারি অশ্লীল খিস্তি,
বুকডন ব্যাঙ ঝাপ কান ধরে মার লাফ
কত ছিল অভিনব শাস্তি ।

বাম ডান কদম ফেলা সুকঠিন শৃংখলা
সৈনিক জীবন রেশ,
খাকি জামা ল্যানাডর্ এ্যাপুলেট পায়ে বুট
লাগত দারুন বেশ ।

টাই প্যান্ট সাহেবানা কাটাচামচ খানাপিনা
সিনেমায় সপ্তাহ শেষ,
সকলে মিলে খেলাধুলা দলবেধে পথচলা
মুছে দিত কষ্ট ক্লেশ।


টপকে চার দেয়াল ব্যাঘ্র মাসি টা বেড়াল
লড়াকু সামনে দিন,
মেডিকেল ভাসর্িটি খোজাখুজি ছোটাছুটি
বাজে ঘন্টা সুরে বীণ

খাঁচার পাখিটা দেখবে জীবনের বাকিটা
ডানা মেলে আকাশে চিল,
ঘরে ফিরে দেখে ফের গেছে বেকে বহু দুর
নেই কোন পথের মিল ।

আবার অসহায় ছিল যে খাঁচায় কেমনে উড়ি
মেঘেদের সীমানায়,
অকুল দরিয়া ভারি দিতে হবে একা পাড়ি
হারতে তো শেখানাই।

ঝড় তুফান আসে কেহ ডুবে কেহ ভাসে
ভিন্ন হল শ্রোতধারা,
অভিনন্দন মেডেলে মাঠে ফুটবল খেলে
বিজয়ী হয়েছে যারা।

আর যত কুলহারা ভেসে গেছে নদীর বানে
কোথায় কে বা জানে,
তাদের ঠিকানা কোথা খালি পড়ে স্মরণিকা
নামটাও আসেনা মনে।

কেউ শায়িত মাটির তলায় ফিরে একবার
সেই থেকে দেখা নাই,
মাতৃক্রোর হীন মরীচিকা মলিন বিহবল
ত্রিযামি জীবন দোলায় ।।

৮৫১ বার দেখা হয়েছে

৫ টি মন্তব্য : “ক্যাডেট জীবন”

  1. সাইদুল (৭৬-৮২)

    ক্যাডেট জীবনের তিনটি পর্যায় কি গোছালো ভাবেই না লেখা হয়েছে।
    শেষ তক অপরাহ্নের ছবিও বাদ পড়েনি।
    আমাদের গল্প আমাদের মত করে বলা।
    অনেক সুন্দর


    যে কথা কখনও বাজেনা হৃদয়ে গান হয়ে কোন, সে কথা ব্যর্থ , ম্লান

    জবাব দিন
  2. পারভেজ (৭৮-৮৪)

    বাহ! দারুন বর্ননা তো।
    হঠাত মনে করিয়ে দেয়া যে আমরা এক সময় শুধু না, এখনো কত কত কিছুর মধ্য দিয়েই না যাচ্ছি, যেতে হচ্ছে....


    Do not argue with an idiot they drag you down to their level and beat you with experience.

    জবাব দিন

মওন্তব্য করুন : খায়রুল আহসান (৬৭-৭৩)

জবাব দিতে না চাইলে এখানে ক্লিক করুন।

দয়া করে বাংলায় মন্তব্য করুন। ইংরেজীতে প্রদানকৃত মন্তব্য প্রকাশ অথবা প্রদর্শনের নিশ্চয়তা আপনাকে দেয়া হচ্ছেনা।