ধীরে বহে মেঘনা

সপ্তাহখানেক আগে খাবার টেবিলে অনেকটা আনমনেই বলছিলাম গ্রাম-বাঙলার মানুষের জীবনযাপনের কথা। তাদেরকে খুব কাছে থেকে দেখতে চাই। যেমনঃ পুকুরে জাল ফেলে মাছ ধরা কিংবা মৌসুমের প্রথম ধান লাগানোর দৃশ্য। কাকা এই কথাগুলো খেয়াল করছিলেন। এরপর দিন দুয়েক আগে হঠাৎ করেই মা বললো, ‘তোমার জাভেদ মামা কালকে মাছ ধরতে যাচ্ছে আমতলী। যাবা নাকি?’ জিজ্ঞাসায় জানতে পারলাম আমতলী হলো ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আশুগঞ্জ উপজেলার লালপুর ইউনিয়নের একটি গ্রাম এবং মামার শ্বশুড়বাড়ি।

পরদিন সকালে অর্থাৎ শুক্রবার সকালে উঠেই রওনা দিলাম আশুগঞ্জ, আমার নানাবাড়ির উদ্দেশ্যে। প্রায় তিন বছর পর যাচ্ছি সেখানে। ব্যাপারটা নিয়ে চিন্তায় ছিলাম। আমার নয়জন মামা সবাই একই কম্পাউন্ডে থাকে। আমি এসেছি এই তথ্য ছড়িয়ে গেলে আপ্যায়ন সন্ত্রাসের শিকার হতে হবে। বেশ সকালে পৌঁছে ইফতি মামার বাসায় গা ঢাকা দিলাম। বেলা বাড়ার সাথে সাথে যখন ঘর থেকে বের হয়ে এলাম তখন আমাকে দেখে সবাই হতহম্ভ। এই ছেলে এত সকালে এখানে কি করে? শুরু হলো মামা-মামী-ভাগ্নে কম্বিনেশানের বিচ্ছিন্ন আড্ডা।

আড্ডা ও মধ্যাহ্নভোজের পর ইসকান্দার মামার বাসায় টুকিটাকি কথা বলছি তখনই সুমন মামা ফোন করে জানালো ঘাটে আমাদের নৌকা এসে ভিড়েছে। তৈরী হয়ে নিতে। “নৌকায় যাওয়া হচ্ছে?” চিন্তা করলাম। বাহ! উপরি পাওনা! ক্যামেরা ও ছোট একটি ব্যাগ নিয়ে ঝটপট তৈরী হয়ে নিলাম। একটু পর জাভেদ মামা আমাকে নিয়ে রওনা দিলেন ঘাটের উদ্দেশ্যে। রওনা দেয়ার আসলে কিছু নাই। আমাদের নানাবাড়ি ঠিক মেঘনা নদীর পাড়ে। বৃটিশ শাসনামলের ডাকবাঙলো ও পাটগুদামগুলোর বেশীরভাগই ছিল নদীর তীরে বা নিকটবর্তী এলাকায়। সেরকম একটি ডাকবাঙলো আমার পাট ব্যবসায়ী নানা কিনেছিলেন ১৯৭৪ সালে।

ছোট একটি ইঞ্জিনের নৌকা অপেক্ষা করছিলো ঘাটে। নৌকায় উঠে জুতো খুলে নৌকার ছইয়ের উপর উঠে বসলাম। চায়না থেকে আমদানিকৃত সেচের এই টু-স্ট্রোক ইঞ্জিনগুলো ব্যবহারের ক্ষেত্রে বাঙলাদেশে যে এক বিপ্লব ঘটে গিয়েছে সেটা কি ওরা জানে? অন্তত আমাকে আবার মনে করিয়ে দিতেই একরাশ কালো ধোঁয়া ও ভটভট শব্দে জ্যান্ত হয়ে উঠলো আমাদের নৌকাটি। রওনা দিলাম আমতলী গ্রামের উদ্দেশ্যে। একটু সামনে গিয়েই তুলে নিতে হবে আজকের রাতের মাছ শিকারের ছয় অভিজ্ঞ জেলেকে।

মৎস্য শিকারী - ১

মৎস্য শিকারী – ১

জেলেদের তুলে নেবার সময় চোখে পড়লো এই মাছ শিকারী নৌকাটি। নৌকার মাঝে জুড়ে দেয়া হয়েছে একটি ত্রিকোণাকার জাল যেটাকে আমাদের এলাকায় “কুনি জাল” বলে (আকার থেকেই সম্ভবত নাম)। জালটি পানিতে নামানোর পরে নৌকার দুইপাশের দুই মাঝি নৌকাটিকে আড়াআড়ি এগিয়ে নিয়ে যায় এবং একটু পরে জাল তুলে দেখে নেয় এরমাঝে কোন মাছ আটকালো কিনা। সাধারণত ছোট আকারের মাছ ধরার উদ্দেশ্যেই এই পদ্ধতি ব্যবহার করা হয়। আবারো যাত্রা শুরু হলো।

আবারো যাত্রা শুরু হলো আর আমিও ক্যামেরা হাতে নিয়ে আলোকচিত্র শিকারীর ভূমিকায় অবতীর্ণ হলাম। মেঘনার মত নদীতে নৌকায় বসে আছি, বাতাস বইবে এটাই স্বাভাবিক। তবে কচুরীপানা, ডিজেলের মিশ্রণের এই ভ্যাপসা গন্ধ খুব একটা ভালো লাগা সৃষ্টি করবে না। তারপরেও এর মাঝেই কেমন যেন চিন্তায় ডুবে গেলাম।…বিশ্ববিদ্যালয়ের বন্ধুদের দেখেছি নদী ও নৌকার অভিজ্ঞতা পেতে নৌকা ভাড়া করে ঘুরে বেড়াচ্ছে। অথচ আমার সুযোগ থাকার পরেও এই নিয়ে আগ্রহ দেখাইনি। বিদেশ থেকে ফিরে আসার পরে হঠাৎ করেই যেন অতীতে ফিরে যাবার জন্য হন্যে হয়ে উঠলাম আমি। আমার গাজীপুর সেনানিবাসের খামারবাড়ির অতীত, নৌকায় করে দাদাবাড়ির সামনের খালে ঘুরে শালুক তুলবার অতীত, নানীর প্রতিশ্রুত ৫ টাকার লোভে ঘুইটা (জ্বালানী শুকনা গোবর) তুলে বস্তায় ভরে নিয়ে আসার অতীত, পরিত্যক্ত পাটগুদামে লুকোচুরি খেলবার অতীত। ‘বাড়ির গরু ঘাটার ঘাস খায় না’ এই কথাটি আমাদের এলাকায় বহুল প্রচলিত (আমরা ‘মক্কার মানুষ হজ্জ পায় না’ বলি না)।

বাস্তবে ফিরে এসে ছবি তোলার চেষ্টা করলাম। ল্যান্ডস্কেপে খুবই কাঁচা, তার উপরে ক্যামেরা হাতে অনুশীলনে ছেদ পড়ে যাচ্ছে ইদানিং। অস্তগামী সূর্যের সৌন্দর্য হা করে গিলতে থাকার পাশাপাশি চেষ্টা করলাম পরবর্তী বেশ কয়েকটি তুলতে।

সূর্যাস্ত - ১

সূর্যাস্ত – ১


সূর্যাস্ত - ২

সূর্যাস্ত – ২


সূর্যাস্ত - ৩

সূর্যাস্ত – ৩


নৌকা - ১

নৌকা – ১


নৌকা - ২

নৌকা – ২


নৌকা - ৩

নৌকা – ৩

মাছ দে হারামজাদা নইলে...

মাছ দে হারামজাদা নইলে…


ফিরে যায় বকপক্ষী

ফিরে যায় বকপক্ষী

মেঘনা নদীর জেলে

মেঘনা নদীর জেলে

এরপর হঠাৎ করেই মামা বলে উঠলেন, ‘সুসমিত ঐ দেখো।’ তাকিয়ে দেখি মজার দৃশ্য। এক ঝাঁক বক জালের লাইনারের উপর অধীর আগ্রহে বসে আছে। কেউ উড়ে যাচ্ছে, কেউ এসে বসছে। কেউ জায়গা পাবার জন্য ঝগড়া করছে। ক্যাডেট কলেজের টার্ম এন্ড ডিনারে এরকম প্রতীক্ষা পরীক্ষায় অবতীর্ণ হতে হয়েছে বহুবার!

সবকিছুর মাঝেই যেন এক ঘোর লাগা লুকিয়ে ছিল। ছবি গোটা দুয়েক তুলে বকগুলোর দিকে তাকিয়ে রইলাম। দিনের আলো ফুরিয়ে আসছে। খুব শীঘ্রই ওদের বাড়ি ফিরতে হবে। শেষ মূহুর্তের এক-দুইটি মাছ তাদের কাছে অনেক গুরুত্বপূর্ণ। হয়তো বাসায় রয়েছে ক্ষুধার্ত সন্তান। সামনের দিকে তাকিয়ে দেখি ছয় সদস্যের একটি দল ইতমধ্যেই রওনা দিয়েছে বাড়ির উদ্দেশ্যে। ক্যামেরার শাটারের শব্দের মাঝে এক অদ্ভুত মাদকতা আছে বলে আমার মনে হয়। অন্তত ক্যাননের আমার যেই ক্যামেরাটি সেটি বেশ নাটকীয় শব্দ করে।

বলতে বলতে আশুগঞ্জ সার কারখানার সামনে এসে পড়লাম। যন্ত্রকৌশলের ছাত্ররা এই সার কারখানায় প্রতি বছরই ইন্ডাস্ট্রিয়াল ট্যুরে আসে শুনেছি। নদীর এই অংশ থেকে সার কারখানাটিকে কখনো দেখার সুযোগ হয়নি। অথবা বলা যায় ছোটবেলায় যেই সময় দেখেছি সেটা মনে থাকার সম্ভাবনা নেই। কারখানার পিছনে প্রায় সমতল এই অংশে অত্র এলাকার কৃষকেরা চাষাবাদ করতেন। আমার দাদা তাদের একজন। বালি মাটির এই জমিগুলোতে তরমুজ, বাদাম, মিষ্টি আলুর চাষ করা হতো। সার কারখানা তৈরীর সময় দাদার প্রচুর চাষযোগ্য জমি সরকারি অধিঃগ্রহণের কবলে পরে হাতছাড়া হয়ে যায়। বোকাসোকা মানুষটিকে সরকারের ধার্য করা জমি বাবদ টাকাতেও কম দিয়ে ঠকায় স্থানীয় প্রশাসন। সেখানেই শেষ নয়। শুনেছি বিভিন্ন মিষ্টি কথায় ভুলিয়ে তার কথিত শুভাকাঙ্খিরাও এই নগদ টাকায় ভাগ বসায়। এরপর চর চারতলা গ্রামের সরকার বাড়ির ফায়েজুল ইসলাম আর্থিক ভাবে আর সোজা হয়ে দাঁড়াতে পারেন নি। সেই অভিশাপ যেন আজ অব্দি বয়ে চলেছি আমরা। সেই গল্প যদি উপলক্ষ্য তৈরী হয় তো আরেকদিন।

আশুগঞ্জ সার কারখানা

আশুগঞ্জ সার কারখানা


আশুগঞ্জ সার কারখানার লোডিং ডক

আশুগঞ্জ সার কারখানার লোডিং ডক

প্রায় ঘন্টাখানেক পর গন্তব্যে পৌঁছলাম। মেঠো পথ ধরে হেঁটে যেতে যেতে মামা বললেন বিভিন্ন গল্প। শুটকী মাছের জন্য বিখ্যাত এই অঞ্চলটি। মাঝে একটি পাড়াই আছে নাম জাইল্যা পাড়া (জেলে পাড়া)। কিছুক্ষণ পরে একটা খোলা ময়দানের মধ্য দিয়ে হেঁটে যাবার সময় গোমূত্রের বাসি গন্ধ নাকে এলো। ঘটনা বর্ণনার ধারাবাহিকতায় মামা তখনই বললেন, প্রতি মঙলবার হাটবার। অত্র এলাকার বৃহত্তম গরু মহিষের হাট বসে এই জায়গাটিতে। ব্রাহ্মণবাড়িয়াসহ পার্শ্ববর্তী জেলা থেকেও লোক আসে এখানে বিকিকিনি করতে। অথচ সড়ক পথে যাতায়াতের ব্যবস্থা অতটা ভালো নয়। প্রতি মঙলবার হাসিলের টাকাই নাকি উঠে নূন্যতম ছয় লাখ। হিসেব করলাম মাসে কম করে ৩০ লাখ। একটি গ্রাম কিংবা ইউনিয়নের জন্য বেশ ভালই বলতে হবে।

অবশেষে পুকুরের সামনে এসে দাঁড়ালাম। দৈর্ঘ্যে ৩০০০ ফিট এবং প্রস্থে ১৫০-১৮০ ফিট এই পুকুরের ছবি তোলার চেষ্টা করিনি। হয়তো শুধু প্রমাণের খাতিরে হলেও একটি তোলা উচিৎ ছিল। যাক গে। পুরো পুকুরটা ঘুরে দেখলাম। মাঝামাঝি একটি বেড়া দেয়া ঘরে দুইজন কেয়ারটেকার/প্রহরী থাকে। তারাও বের হয়ে এলো। রাত ১২টায় শুরু হবে পুকুরে জাল ফেলা। আপাতত তাই চলে এলাম মামার শ্বশুড় বাড়িতে।

চারটি পৃথক ঘরের সমন্বয়ে এই বাড়িটি। এর মাঝে সবচাইতে পুরোনো ঘরে গিয়ে বসলাম। কতদিন পর মাটিতে লেপা ঘরে বসলাম তা মনে পড়ছেনা। বাড়িটি খুবই পুরোনো। জানালা ও দরজার নকশা, মাথার উপর মাচা আসবাবপত্র দেখলে বোঝা যায়। টিভি ছেড়ে দিতে বাঙলাদেশ-পাকিস্তান প্রথম ওডিআই দেখতে শুরু করলাম। সেটাও দেখি এন্টেনা দিয়ে ধরা বিটিভি। অথচ বাজারে আসার সময় এক দোকানে রেড বুল পানীয় দেখেছি। হিসেব মিলছে না। সম্ভবত মামা বুঝতে পারলেন কি ভাবছি। জানালেন উনার শ্বশুড়ের পাঁচ ছেলে আজ নিজ কর্মে প্রতিষ্ঠিত। বাবা মারা যাবার পরে তাই আর কেউ ভিটেবাড়ি নিয়ে আগ্রহ প্রকাশ করেনি। আলাদা হয়ে গিয়েছে তিন জন। এদিকে দুইজন আছেন যাদের ঘর আলাদা। মামার শ্বশুড়-শ্বাশুড়ির এই ঘরটিকে উনাদের মৃত্যুর পর কেউ উন্নয়নের চেষ্টা করে নাই।

রাতের খাবারের অত্যাচার সামলে দশটার দিকে মামা বললেন চাইলে একটু বিশ্রাম নিয়ে নিতে। যেহেতু সারা রাত জেগে থাকা হবে। জানালার পাশে হঠাৎ শুনি কে জানি ডাকছে, “ভাইসাব, ও ভাইসাব উডেন। এনো হেউ দিতাসি। আফনের ভাইগনা দেখবোনি?” সাড়ে বারোটা বাজে। আড়াই ঘন্টা গেল কোথায়? চোখ ডলতে ডলতে টর্চ নিয়ে কেয়ারটেকারের পিছু নিলাম। বাড়ির পিছেই প্রথম ধরার চেষ্টা করা হবে। সন্ধার সময় কিছু সম্ভাব্য অংশে খাবার ফেলে দেখা হয়েছে মাছের আনাগোনা। সেই হিসেব করে একটি অর্ধচন্দ্র কল্পনা করে পুকুরে জাল ফেলা হয়। তারপরে সেই জাল দুই পাশে চারজন জেলে ধীরে ধীরে টেনে কাছে আনতে থাকে। নৌকাতে বসে অর্ধচন্দ্রের যেকোন এক পাশে থাকে জেলেদের দলনেতা। সবাই উনাকে ‘কাহা’ (কাকা) ডাকে। এই প্রক্রিয়াটিকে বলা হয়, ‘হেউ দেয়া।’ এই সময় সাধারণত জোরে কথা বলতে নিরুৎসাহিত করা হয় এবং পুকুরে টর্চের লাইট ফেলা বারণ। মাছেরা উত্তেজিত হয়ে উঠে। আমাদের এলাকায় কচুরীপানাকে ‘হেউ’ নামে ডাকা হয়। জিজ্ঞাসা করা উচিৎ ছিল সেই হেউয়ের সাথে এই হেউ দেয়ার কোন সম্পর্ক আছে কিনা।

প্রথম প্রচেষ্টায় মাছের সংখ্যা খুবই কম। অন্তত উনাদের হিসেবে। তারপরেও রাতের পরিকল্পনা বসে থাকবে না। দ্রুত জাল গুটিয়ে মাছ বেছে পরবর্তী হেউয়ের জন্য প্রস্তুতি নিল ওরা। আমি চলে এলাম ঘরে। রাতের তৃতীয় ও শেষ হেউয়ের সময় আবার ফেরত আসবো। আরো ঘন্টাখানেক ঝিমানোর পর আবারো কেয়ারটেকারের ডাকে আবারো উঠে বসলাম। এবার তৈরী হয়ে নিয়ে আমি ও মামা হাঁটা দিলাম যেখানে শেষবারের মত জাল ফেলা হয়েছে সেখানে। রাত বাজে তখন আড়াইটা। মাত্র জাল ফেলা হয়েছে। ধীর লয়ে টেনে অর্ধচন্দ্রটি ছোট করে নিয়ে আসছে চার জেলে। এদের মাঝে আছ মধু ও মদন নামের দুই জেলে। একদম সাপে-নেউলে সম্পর্ক। কিছুক্ষণ পরপর অশ্রাব্য গালিগালাজ ও একজন আরেকজনের নামে অপমানজনক মন্তব্য ছুড়ে দিচ্ছে। নিচু স্বরে হাসছে বাকিরা। কাজে ঢিলে পড়লে নৌকা থেকে কাকা চাপা স্বরে ধমকে দিচ্ছেন চারজনকে। চেয়ার নিয়ে বসে আছি আমি ও মামা। ঘুম জড়ানো চোখে দূরের বাতিগুলো ও তার চারপাশে গাছের পাতার কারণে সবুজ হয়ে থাকা, হঠাৎ জালের ওপারে মুক্তির স্বাদ নিতে কোন মাছের হাইজাম্প, পানির আলোড়ন এসব মিলিয়ে উদ্ভট এক অনুভূতি হচ্ছিলো। ভাবছিলাম, ‘তবে কি আসলেই এটা ঘটছে?’ “মীন ক্ষোভাকুল কুবলয়” দশম শ্রেণীর ব্যাকরণ বইয়ের এই কথাটি মনে পড়ে যেতে আপন মনে হাসলাম কিছুক্ষণ। পাশের গাছটিতে প্রচুর বাদুর ঝুলে আছে এবং তারা সারারাত ধরে ঝগড়া করেই যাচ্ছে। সবচাইতে অবাক হলাম আড়াইটার সময় কোকিলের ডাকে। রাত আড়াইটায় ডেকে কোন কাকের চোখে ধুলো দিবে বোঝা গেলো না।

আরো আধা ঘন্টার প্রচেষ্টায় জাল গুটিয়ে পাড়ে নিয়ে আসা হলো। শুরু হলো বাছাই প্রক্রিয়া। একদম ছোট আকারের মাছের পোনা বাদে তেলাপিয়া, ভাঙলা/বাঙলা, ভাটকী (রুই মাছের কৈশোর), গইন্যা। এছাড়া মামার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী কার্প জাতের সব ছেড়ে দেয়া হচ্ছিলো যদি না বড় কিছু ধরা পড়ে। আঞ্চলিকতার টানে কার্প জাতের মাছগুলোর নামগুলো মজার রূপ নিয়েছে। যেমনঃ কার্পের র-ফলা উচ্চারণ হবে না। উপরন্তু আমাদের এলাকায় র-অক্ষর দিয়ে শুরু শব্দের উচ্চারণে হিমশিম খায় (এবং র-কে ল-উচ্চারণ করা যেমনঃ লেলগাড়ি-রেলগাড়ি, রুই-লুই, লাইত(লাত)-রাইত(রাত) ইত্যাদি)। গ্রাস কার্পঃ গাস কাপ, সিলভার কার্পঃ সিলভার, মিরর কার্পঃ মিরকাপ, মিরহা, মিরা, মৃগেলঃ মিরগেল। যাই হোক, মাছ ধরার ছবি গুলো একেবারে দিয়ে দিচ্ছি নিচে।

রাতের তৃতীয় ও শেষ জাল ফেলা। এখনো বাছাই শুরু হয়নি

রাতের তৃতীয় ও শেষ জাল ফেলা। এখনো বাছাই শুরু হয়নি

বাছাই চলছে - ১

বাছাই চলছে – ১

বাছাই চলছে - ২

বাছাই চলছে – ২

বাছাই চলছে - ৩

বাছাই চলছে – ৩

বাছাই চলছে - ৪

বাছাই চলছে – ৪

মাছ ধরা শেষে গোটানো জাল নিয়ে ঝুলিয়ে দেয়া হবে শুকানোর জন্য।

মাছ ধরা শেষে গোটানো জাল নিয়ে ঝুলিয়ে দেয়া হবে শুকানোর জন্য।

সময়টা তখন ভোর ৪টা। খুব দ্রুত মাছগুলোকে নিয়ে রওনা দিতে হবে। পানির মাঝে রাখা সত্বেও বেশীরভাগ মাছ মরতে শুরু করেছে। নরম হয়ে গেলে বিক্রি করে ভাল দাম পাওয়া যাবে না। ড্রাম নিয়ে আমরা রওনা হলাম। টর্চ দিয়ে পথ দেখাচ্ছিলাম মাছ বহন করতে থাকা একজন জেলেকে। উনি বললেন, ‘তাগদা পাও চালাইন আমার লগে।’ ৩০ কেজি মাছ কাঁধে নিয়ে যাচ্ছেন এদিকে আমি টর্চ হাতে উনার হাঁটার গতির সাথে তাল মেলাতে পারছি না। লজ্জা পেয়ে প্রায় দৌড়াতে শুরু করলাম উনার পাশে। ঘাটে লাগানো নৌকায় মাছগুলো তুলে নিয়ে ঘুটঘুটে অন্ধকারে রওনা দিলাম নিকটবর্তী লালপুর বাজার মাছের আড়তের উদ্দেশ্যে।

প্রায় সারারাত জেগে থাকার ক্লান্তি একটু একটু করে গ্রাস করতে শুরু করলো আমায়। এই অদ্ভূতুরে অন্ধকারে কিভাবে নৌকা চালাচ্ছে মাঝি ব্যাপারটা চিন্তা করে শিহরিত হলাম। তারপরে ভাবলাম, এটা উনার পেশা। গুঁড়ি বৃষ্টির মাঝে তাজা মাছের আঁশটে গন্ধ, কচুরীপানা ও ডিজেল পোড়া গন্ধের মিশ্রণ সব মিলিয়ে আবারো অতিবাস্তব লাগা শুরু হলো সব কিছু। প্রায় ঝিমুনি ধরে আসছিলে তখনই নৌকার ইঞ্জিনের শব্দ মিহি হয়ে এলো। বুঝলাম গন্তব্যের নিকটে। মিনিট দশেকের মধ্যে মাঝের বোঝা নিয়ে আবারো ছুট লাগালাম আমি মামা ও তিন জেলে। তখন বাজে ভোর পাঁচটা।

আয়তাকার পাকা মেঝেতে বাঁশ রেখে তিনটে ভাগ করা হয়েছে। যা বুঝলাম তিন আড়তদারের। প্রথমটাতেই মামা মাছ বিক্রি করেন। প্রথম চালান ছড়িয়ে দেয়া হলো মেঝেতে। দুইজন কর্মচারী বাছাই করতে শুরু করলেন। তেলাপিয়া, গইন্যা, ভাটকী, নলা প্রত্যেকের আলাদা স্তুপ। সাড়ে পাঁচটার মাঝেই খুচরো বিক্রেতারা ভীড় জমাতে শুরু করলেন ভাল কিছু মাছের আশায়। আরো কিছুক্ষণের মাঝেই বাকি দুই আড়তদারের জায়গাও মাছে ভরে যেতে শুরু করলো। তাদের গুলো বেশীরভাগ বড় মাছ। পাঙাস, কার্প কিংবা রুই। খুচরো বিক্রেতা যার যা চাহিদা সে সেদিকে নজর।

বিক্রি শুরু হবে দেখে ক্যামেরা বের করে বসলাম। প্রথমে আগ্রহী ক্রেতারা একটু উঁকিঝুঁকি মারেন। একটু দাম জিজ্ঞাসা, বাজারের আন্দাজ বুঝে নেয়া। এরপরে কোন প্রজাতির মাছ কিনতে যদি একাধিক ক্রেতা হাজির হয় তখন বিক্রেতার চাওয়া দাম থেকে একটি দ্রুত নিলামের আয়োজন করা হয়। এক-দুই টাকার ব্যবধানে সেই নিলাম সমাপ্ত হয়। বিজয়ী ক্রেতা ক্রয়কৃত মাছটুকু ওজন দিয়ে নিয়ে যায়। ওজন দেয়ার জন্য একজন কর্মচারী এবং নিলাম-বিক্রয়ের জন্য আরেকজন। ঠিক ওজন দেয়ার নিক্তির পাশে টুল পেতে টানা খাতা নিয়ে বসে থাকেন আড়তদার। বিক্রির বিবরণ লিখে যেতে থাকেন। খুব দ্রুত বাড়তে থাকে কোলাহল, নিলামের গতি ও বিক্রি। মেঝে ভর্তি মাছ প্রায় এক নিমেষে স্থান পায় ক্রেতার টুকরীতে। গতি যেন না থামে তা নিশ্চিত করতেই নতুন নৌকার নতুন চালানে সয়লাব হয় মেঝে। খুব স্বল্প আলোতে ফ্ল্যাশ দিলেই সমস্যার সমাধান হয়ে যায়। কিন্তু দৈনন্দিন এই ব্যস্ততার ছন্দপতন ঘটাতে চাইছিলাম না। আইএসও খুব বাড়িয়ে দিয়ে গ্রেইনের তোয়াক্কা না করে কিছু ছবি তুলে নিলাম। মূহুর্তগুলো ফ্রেমে বন্দী করাটাই মূল লক্ষ্য।

নিলাম চলছে। বামপাশের জন নিলাম পরিচালক।

নিলাম চলছে। বামপাশের জন নিলাম পরিচালক।

নিলামে অংশ নেবার আগে কিছুটা দেখে নিচ্ছেন এক আগ্রহী ক্রেতা

নিলামে অংশ নেবার আগে কিছুটা দেখে নিচ্ছেন এক আগ্রহী ক্রেতা

মুখ দেখা বন্ধ।

মুখ দেখা বন্ধ।

কেনা মাছগুলো ডালায় সাজিয়ে নিচ্ছেন এক ক্রেতা

কেনা মাছগুলো ডালায় সাজিয়ে নিচ্ছেন এক ক্রেতা

IMG_9515

সকাল সাতটা বাজে। ঠিক দেড় ঘন্টায় থিতু হয়ে এসেছে কোলাহল। বিকিকিনি সমাপ্ত। আড়তদাররা তাদের গদিতে ফেরত চলে গিয়েছেন। চলছে দেনা-পাওনার হিসেব। সাথে চা-বিস্কুট। নিয়ম-অনিয়মের থোরাই কেয়ার গতকাল থেকেই করে আসছি। আমিও খালি পেটে দিলাম চায়ে চুমুক। দাঁতের নিচে কুড়মুড় শব্দে গুঁড়ো হতে থাকলো মুশফিকুর রহিমের চিনি মাখা পপ বিস্কুট। দাম মাত্র পাঁচ টাকা। ১২৭ কেজি মাছ ছিলো মামার চালানে। টাকা-পয়সার বিষয় চুকিয়ে বিদায় নিয়ে ঘাটে ফেরত গেলাম। গুঁড়িগুঁড়ি বৃষ্টি তখন কিছুটা ঘন হয়ে আসছে। নৌকার গলুইয়ের নিচে গিয়ে বসলাম। চাদর মুড়ি দিয়ে গভীর ঘুমে অচেতন সারারাত পরিশ্রম করা চার জেলে। যাত্রা শুরু করলাম নানাবাড়ির ঘাটের উদ্দেশ্যে।
IMG_9521IMG_9530
এরমাঝে কখন কিংবা কতক্ষণ ঘুমিয়েছি বলতেও পারবো না। মেঘের চাদরে একটু ফুটো পেয়ে সেই ফুটো দিয়ে সূর্যের আলো ঠিক মুখের উপর এসে পড়লো। ঘুম ভেঙ্গে তাকিয়ে দেখি মেঘনা ব্রীজের কাছে। তারমানে আর বড়জোর ২০ মিনিট। ঘাটে নামার আগে শেষ দুটো ছবি তুলে রাখলাম। গত ‍১২-১৪ ঘন্টায় যেই অভিজ্ঞতার মুখোমুখি হলাম সেটা আমার কপালে ছিল চিন্তা করতেই ভালো লাগছিলো। ভাগ্যিস রাজি হয়েছিলাম। আলসেমি করিনি। তবে আর বসে থাকবো না। এরকম সুযোগ তৈরী হলেই বের হয়ে যাব। দেখে নিবো গোটা বাঙলাদেশ। রবি ঠাকুরকে মিথ্যে প্রমাণ আমার করতেই হবে।

৩,৬৪৬ বার দেখা হয়েছে

২৪ টি মন্তব্য : “ধীরে বহে মেঘনা”

  1. লুৎফুল (৭৮-৮৪)

    মেঘনার মতো বহমান হোক জীবন আমাদের ।
    ঘর হতে শুধু দুই পা ফেলিয়া জীবনের গান সব গেয়ে ওঠা হোক আহলাদ ও আমোদে ।

    ধন্যবাদ লেখককে । সাধুবাদ তার বিষয় বৈচিত্রকে ।

    জবাব দিন
  2. মাহমুদ (১৯৯০-৯৬)

    দারুন লিখেছো মোকাব্বির।

    একইসাথে স্মৃতিকাতর ও ঈর্ষান্বিত করার জন্য তোমার ব্যান চাই। (সম্পাদিত)


    There is no royal road to science, and only those who do not dread the fatiguing climb of its steep paths have a chance of gaining its luminous summits.- Karl Marx

    জবাব দিন
  3. আহসান আকাশ (৯৬-০২)

    তোমাকে রীতিমত হিংসে হচ্ছে মোকা, কী দারুন অভিজ্ঞতা!

    লেখা আর ছবি মিলিয়ে দূর্দান্ত হয়েছে।


    আমি বাংলায় মাতি উল্লাসে, করি বাংলায় হাহাকার
    আমি সব দেখে শুনে, ক্ষেপে গিয়ে করি বাংলায় চিৎকার ৷

    জবাব দিন
    • মোকাব্বির (৯৮-০৪)

      হাহাহা আহসান ভাই, কথা প্রসঙ্গে জানতে পারলাম আমার মামাদের যেসব ব্যবসা বানিজ্য আছে তার সাথে বেশ খানিকটা অ্যাডভেঞ্চার রয়েছে। চেষ্টা করবো তাদের কারো না কারো সাথে সামনে ঝুলে পড়তে! পড়ার জন্য ধন্যবাদ! :teacup:


      \\\তুমি আসবে বলে, হে স্বাধীনতা
      অবুঝ শিশু হামাগুড়ি দিল পিতামাতার লাশের ওপর।\\\

      জবাব দিন
  4. নূপুর কান্তি দাশ (৮৪-৯০)

    মাছের কথা যখন -- মাছ দিয়েই বোঝাই এ লেখায় এত দেরিতে আসার গল্পটা।
    দিল্লীতে দেশি ছেলেপেলের সাথে ছিলাম বেশ কিছুদিন। বয়সে বেশ ছোট হওয়ায় নানান ধরনের ছেলেমানুষির মধ্যে খাবার নিয়ে একধরনের কামড়াকামড়ি লেগে থাকতোই। যেদিন মাছ হত, সেদিন কেউ কেউ নিজের ভাগটাকে লুকিয়ে রাখতো পরের বেলায় খাবে বলে (যখন মেনু আবার সেই ডাল-সবজিতে ফেরত যাবে)। এসবের মধ্যে কোন কোন বান্দা আবার ভুলেও যেত যে তার মাছ রাখা ছিল অথবা সেই মাছ চুরি যেত --- ফলাফল শূন্য এবং চরম হতাশা। 😀

    আমিও বেশ রসিয়ে রসিয়ে এ লেখাটা পড়বো বলে রেখে দিয়ে প্রায় ভুলতে বসেছিলাম দৈনন্দিনতার চাপে।

    মাছ ওজন করার ছবিটা দেখে কতকিছু মাথায় আসে। একটা কবিতাই যেন ছবিটা। ঘুরে এলাম জায়গাটা তোমার সাথে। এতটা এডভেঞ্চার না হলে কক্সবাজারে উত্তাল সমুদ্রপাড়ে জনবিচ্ছিন্ন চিংড়ির ঘেরেও বেশ অভিজ্ঞতা হয়েছিল। লেখাটা ফিরে ফিরে পড়ার মতো -- তোমার আর সব লেখার মতই।

    :boss: :boss: :boss: :boss:

    জবাব দিন
    • মোকাব্বির (৯৮-০৪)

      হাহাহাহাহাহা। খাবার সময় কিন্তু মাছ, মাংস এখনো শেষে রেখে দেই আরাম করে খাবো বলে। 😀 পরে পড়বো বলে কত লিখা যে আর পড়া হয়ে উঠেনি। সেগুলো মাঝেমাঝে তল্লাশি করে বের করি। পড়ে নেই। পড়ার জন্য ধন্যবাদ। আসলে আমি এটেনশান ফ্রিক। আপনাদের প্রশংসা শোনার জন্য অধীর আগ্রহে বসে থাকি। চিন্তা করছিলাম নূপুরদা কোথায়? 😛 😛

      ভার্সিটি থার্ড ইয়ারে থাকতে মাথায় একটা ভয়াবহ ভুত চেপেছিল। কোথায় নাকি শুনেছিলাম ঠিক মত রিকোয়েস্ট করলে ও তদবীর করলে সমূদ্রের মাছ ধরার অপেক্ষাকৃত ছোট ভয়েজগুলাতে যাওয়া যায়। ভেবেছিলাম সেই চেষ্টা করবো। যাই হোক সেই পাগলামি করিনি। কিন্তু অন্তত এই অভিজ্ঞতাটি চমৎকার ছিল। প্রতিটি মূহুর্ত উপভোগ করেছি। সামনে ইচ্ছা আছে মামাদের বিভিন্ন কাজকর্মে সাথে গিয়ে দেখা উনারা কি করেন। যেমন এক মামা ধান আনতে নেত্রকোণা যায়। দেখি কোন দিন ঝুলে পড়তেও পারি! 😀


      \\\তুমি আসবে বলে, হে স্বাধীনতা
      অবুঝ শিশু হামাগুড়ি দিল পিতামাতার লাশের ওপর।\\\

      জবাব দিন
  5. কাজী সাদিক (৮৪-৯০)

    প্রথমেই এসে ছবি দেখে গিয়েছিলাম, এখন সময় নিয়ে পড়ে ফেললাম। খুব ভাল লাগল তোমার মেছো অভিযানের গল্প। ছবিগুলো যুতসই হয়েছে। বিশেষ করে রাতের আঁধারে মাছ ধরা আর আড়তে মাছ বিক্রীর পরিবেশটা ছবি ছাড়া ঠিক ধরতে পারতাম না।

    (তোমার মামা ভাগ্য তো দারুন!)

    জবাব দিন
  6. মাহবুব (৭৮-৮৪)

    ভৈরব বাজারে আমার নানা বাড়ী- কাছে ধারে ছিল জেলে পাড়া। মেঘনা-ব্রহ্মপূত্র-আড়িয়াল খাঁ- তিতাস-গোমতি থেকে কিশোরগঞ্জ-সুনামগঞ্জের বিস্তীর্ন হাওড়ে ছিল তাদের অবাধ বিচরন। এদের কথা পরম মমতায় তুলে এনেছিলেন অদ্বৈত মল্লবর্মণ। তোমার লেখা ও ছবি দেখে এই পরবাসে বসেও স্পষ্ট পাচ্ছি জেলে পাড়ায় সান্ধ্য আরতির সময়কার ধুপের গন্ধ!

    জবাব দিন
    • মোকাব্বির (৯৮-০৪)

      আমি তাও গিয়েছি মাছ চাষীদের জীবন দেখতে। খুব ইচ্ছা আছে জেলেদের জীবন, কৃষকের জীবন কাছে থেকে দেখার শেখার। আইনের ছাত্রের নৃতত্ববিদ হবার সখ আরকি! 😛


      \\\তুমি আসবে বলে, হে স্বাধীনতা
      অবুঝ শিশু হামাগুড়ি দিল পিতামাতার লাশের ওপর।\\\

      জবাব দিন
  7. খায়রুল আহসান (৬৭-৭৩)

    প্রথমে ছবিগুলো এক পলক দেখে নিয়ে ভেবেছিলাম, পুরো লেখাটা পড়ে মন্তব্য পরে করবো। এভাবেই লেখাটা প্রায় হাতছাড়া হয়ে যাচ্ছিল। যাক, এখন প্রায় এক নিঃশ্বাসেই পড়ে ফেললাম। মাছ ধরা কিংবা মাছ ধরা দেখার অভিজ্ঞতা আমার ঝুলিতে খুব বেশী নেই। তাই খুব আগ্রহভরে পড়লাম। খুব ভালো লাগলো। ছবিগুলো বেশ চমৎকার সহায়ক হয়েছে। "ফিরে যায় বকপক্ষী" ছবিটা মনে গেঁথে রইলো। তবে সেখানে পক্ষীর সংখ্যা ছয়টি, পাঁচটি নয়।

    জবাব দিন
  8. পারভেজ (৭৮-৮৪)

    পড়তে বসে অবাক হয়ে ভাবলাম, "এটা মিস করলাম কিভাবে?"
    পরে মনে পড়লো, ঐসময়ে জিতু-মাজেদের আর্ট এগজিবিশন নিয়ে এতটাই মেতে ছিলাম, যে এধরনের বেশ কিছু বড় লিখা চোখ গলে বেরিয়ে গেছে।
    দেরীতে হলেও পড়া যে হলো, সেটাই বড় কথা।

    শুধু বর্ননার গুনেই না, বিষয়ের বৈচিত্রতায়ও অসাধারন একটা প্রযোজনা।
    প্রযোজনা বললাম, কারন লিখা শুধু না, লিখা + ছবি সবটা মিলিয়ে - তাই।

    দারুন এনার্জাইজিং একটা অভিজ্ঞতা হলো.........


    Do not argue with an idiot they drag you down to their level and beat you with experience.

    জবাব দিন
    • মোকাব্বির (৯৮-০৪)

      অসংখ্য ধন্যবাদ পারভেজ ভাই। তখন আসলে খুব ব্যস্ত ছিলাম। কোর্টে নিয়মিত দৌড়ঝাঁপ করা লাগছিল একটি পারিবারিক ঝামেলায়। তারপরেও শেষ দিন যাব ঠিক করে ঐদিনও সারাটা বিকেল কোর্টের বারান্দায় শেষ করে ক্লান্ত দেহে আর ওমুখো হই নাই। এত কিছুর মাঝে যে যেতে পেরেছিলাম সেটাই ভাগ্যের বিষয়। নানাবাড়িতে নিয়মিত যাওয়া হয় থাকা হয় কিন্তু চোখ মেলে দেখা হয় না।


      \\\তুমি আসবে বলে, হে স্বাধীনতা
      অবুঝ শিশু হামাগুড়ি দিল পিতামাতার লাশের ওপর।\\\

      জবাব দিন
      • পারভেজ (৭৮-৮৪)

        জিতু-মাজেদের আর্ট এগজিবিশনে যেতে না পারার জন্য তুমি কি আমার কাছে অপরাধি নাকি যে এই ভাবে আমার কাছে কারনদর্শাচ্ছো?
        ঐ ইভেন্টের তো আমি কেউই ছিলাম না।
        "শিল্পের পরিচর্যা হচ্ছে" - কেবল এই কারনটা পছন্দ হওয়ায় এবং সাধ্যের মধ্যে থাকায় আমি এত বার যেতে পেরেছিলাম।
        তুমি আসলে দেখা হতো, এই আর কি।
        আসো নাই বলে খুব যে মিস করেছি, তাও কিন্তু না।

        মিস যদি কেউ করে থাকে তো ওরা। আর ওরা যদি তোমার এই না আসা জনিত দায় থেকে অবমুক্তি দিয়ে থাকে, আমি কোন ছাড় তা নিয়ে কথা বলবার?

        সান্তনা জানাতে বললাম। বুঝতে পারছি, ইভেন্টটা মিস করার জন্য এখনও কিছুটা হলেও খারাপ লাগা রয়ে গেছে তোমার মধ্যে।
        সেটা জানানোর সৎসাহস যে তোমার আছে, সেইজন্য অভিনন্দন......

        "নানাবাড়িতে নিয়মিত যাওয়া হয় থাকা হয় কিন্তু চোখ মেলে দেখা হয় না" - চিরকালিন ডাইলেমা।
        বেড়াতে গেছিতো আরাম করতে, সেখানে কষ্ট করা ধাতে সইবে কেন???
        😀 😀 😀 😀 😀 😀


        Do not argue with an idiot they drag you down to their level and beat you with experience.

        জবাব দিন

মওন্তব্য করুন : মোকাব্বির (১৯৯৮-২০০৪)

জবাব দিতে না চাইলে এখানে ক্লিক করুন।

দয়া করে বাংলায় মন্তব্য করুন। ইংরেজীতে প্রদানকৃত মন্তব্য প্রকাশ অথবা প্রদর্শনের নিশ্চয়তা আপনাকে দেয়া হচ্ছেনা।