গণবিদ্রোহঃ এখন থেকে অণুব্লগ হবে (তারপরেও বেশখানিকটা লিখে ফেললাম)

প্রারম্ভিকাঃ এই সরকার ক্ষমতায় আসার আগে বলেছিল, “আমরা ক্ষমতায় গেলে সিসিবিতে অণুব্লগের জন্য নতুন শাখা খোলা হবে। অণুব্লগকে শিল্পের পর্যায়ে নিয়ে যাওয়া হবে, সহজ শর্তে ঋণ দেয়া হবে।” কিন্তু তার কোনটাই এরা পূরণ করে নাই। দিনের পর দিন মন্ত্রনালয়ের দারে দারে ঘুরেছি। আভাসে ইঙ্গিতে বুঝিয়ে দিয়েছে টেকাটুকা ছাড়া গতি নাই। আমি আবহমান গ্রাম-বাঙলার দুস্থ ছাত্র। অর্ধাহারে থাকি। মিশুক ট্যাক্সি চালিয়ে চিকিৎসার টাকা জোগার করতে হয় নাই তবে ভোজনালয় ও প্রাক্ষলন রক্ষনাবেক্ষণ করে দুই-চারটি ডলার কামাই করি। আমার পক্ষে কি টেকাটুকা দেয়া সম্ভব? তাই ভাবলাম আইন রাস্তায় পড়ে আছে কুড়িয়ে নিজের হাতে তুলে নেই।

সহজ কথা কইতে আমায় কহ যে, সহজ কথা যায়না বলা সহজে (এটা রবি ঠাকুরের কবিতা জানতাম না, গুগল করে বের করলাম)

(ক) রক্ত-মাংসের জীবনে ভার্চুয়াল জগতের উপস্থিতি নিয়ে ইদানিং খুব বিড়ম্বনায় থাকি। অস্বস্তি ও আকর্ষণ একই সাথে কাজ করে। সমূদ্রের ঢেউয়ের মত–পুশ এ্যান্ড পুল। সবচাইতে বেশী অস্বস্তিতে পড়ি যখন রক্ত-মাংসের মানুষটি চলে যায় কিন্তু রেখে যায় তার ভার্চুয়াল জগতকে। সদ্য প্রয়াত মানুষটিকে ফেইসবুকে ট্যাগ করে যখন কেউ স্ট্যাটাস আপডেট করে তখন নিজেকে ভর শূণ্য মনে হয়। পেটের ভেতরের কারখানা এক লাফে গলায় উঠে আসতে চায়। তড়িৎ গতিতে চোখ নামিয়ে ফেলি কিংবা অন্য পেইজে চলে যাই। ট্যাগ করা নামটি যেন মেডুসা। মাথায় কিলবিল করছে “বিষধর কালো-ফণী।” সেই পোস্টে সবাই দুঃখ প্রকাশ করে, আত্মার শান্তি কামনা করে কিন্তু আমার মনে ঝড় শুরু হয়ে যায়। হাইপার লিংক করা নামটির দিকে তাকিয়ে থাকতে থাকতে আবার পেট গুলানো শুরু করলে টেবিল থেকে উঠে পড়ি। শোক, শ্রাদ্ধের কাজ শ্রদ্ধাভরে মানুষটিকে স্মরণ করা ও সামনে এগিয়ে যাওয়ার জন্য, মানসিক নির্যাতনের জন্য নয়।

রেখেছ বাঙালী করে মানুষ করনি (এইটা ঠাকুর সাহেবের এইটা না জানাটা পাপ তাই জানি)

(খ) খুচরো কিছু কাজ শেষ করে বিশ্ববিদ্যালয়ের বাসস্ট্যান্ডে গেলাম। যাত্রী ছাউনিতে ঢুকতেই বাঙলাদেশের বাঙলা কথা (এখানে কোলকাতার অনেকেই আছেন) কানে আসলো। এক দম্পতি সদাইপাতির তালিকা নিয়ে আলোচনা করছে। নতুন আমদানি। খুব স্বাভাবিক যে কাজটি করার কথা সেটি করলামঃ পাশ কাটিয়ে আরো দুই বিদেশী ছাড়িয়ে বেঞ্চের কোণায় গিয়ে বসলাম। ওহ ছি ছি এটা কি বললাম? আবার বলিঃ খুব অভদ্রের মত পাশ কাটি দূরে গিয়ে বসলাম। বাস আসতেই বাসে উঠে আবারো একই অভদ্র ও স্বাভাবিক কাজটি করলাম। বসে আছি হঠাৎ দেখি প্রায় দৌড়ে মিজান ভাই বাসে উঠলেন। তাদের সাথে কুশলাদী বিনিময় করে আমাকে দেখে উচ্ছ্বাস প্রকাশ করলেন। “এখনো যাও নি? এই জায়গার প্রেমে পড়ে গিয়েছ নাকি?” মিজান ভাই আমার ডিপার্টমেন্টের পিএইচডি করছেন। সদ্য দেশ থেকে রিসার্চ করে ফেরত এসেছেন। আমি জোরে হেসে বললাম, “কবে আসলেন?” বাঙলা কথা শুনে স্বামী-স্ত্রী ঘাড় ঘুড়িয়ে আমাকে দেখলো আর আমি তখন বাসের ছাদ, বাইরের মিষ্টি রোদ দেখতে ব্যস্ত।

ধর্ম-কর্মে আগ্রহ কম, বিশ্বাস কম, কিন্তু জাহির করে বেড়াই না। লুকিয়ে রাখি কারণ আমি জানি এই ক্ষেত্রে আমি পৃথিবীর যেকোন প্রান্তে সংখ্যালঘু। আমি কি করি, কোথায় যাই, কি পান করি এসবের ভিত্তিতে আমার স্বদেশী আন্দোলনের কমরেড ও কমরেড-পত্নীরা যেভাবে চুলচেরা বিশ্লেষণ করে অভ্যস্ত তাতে নতুন আমদানি এড়িয়ে যাওয়া ছাড়া আমার উপায়ও থাকে না।

৩,১৭৪ বার দেখা হয়েছে

৩৭ টি মন্তব্য : “গণবিদ্রোহঃ এখন থেকে অণুব্লগ হবে (তারপরেও বেশখানিকটা লিখে ফেললাম)”

  1. জুনায়েদ কবীর (৯৫-০১)

    অণুব্লগ বলে তো মহাব্লগ দিয়ে দিলি... 😛
    তোর শেখার অনেক বাকি আছে দেখছি। এ ব্যাপারে গরীবের শত্রু, বড়লোকের বন্ধু, লায়ন হার্টেড... সত্যি কথা বলতে শুধু হার্টেড না- লায়ন কিডনী'ড, লায়ন লাঙ্ড, লায়ন ব্রেন্‌ড- ফজু মল্লিক ওরফে ফয়েজ ভাই এর লেখা দেখতে পারিস। দুই তিন লাইনে তিনি এমন কিছু অণুব্লগ লিখে গেছেন যা তাঁকে প্রাতঃস্মরণীয় করে রেখেছে। সাধারনত সাধারণ ব্লগারদের লেখা স্টিকি করা হয়, তবে ফয়েজ ভাই এর ব্লগ পড়ার পর ওনাকেই স্টিকি করার দাবী উঠত... এমন প্রবাদে পুরুষ তিনি!! O:-)


    ঐ দেখা যায় তালগাছ, তালগাছটি কিন্তু আমার...হুঁ

    জবাব দিন

মওন্তব্য করুন : মোকাব্বির (১৯৯৮-২০০৪)

জবাব দিতে না চাইলে এখানে ক্লিক করুন।

দয়া করে বাংলায় মন্তব্য করুন। ইংরেজীতে প্রদানকৃত মন্তব্য প্রকাশ অথবা প্রদর্শনের নিশ্চয়তা আপনাকে দেয়া হচ্ছেনা।