বিশ্বকাপ ফুটবল, আমেরিকা, লাল সাদা ও নীল

“Can I have a brown ale?”
“Umm…sorry! We ran out of brown ale today!”
“What?! I thought only I drink that beer!”
“Unfortunately, that’s our second hit after November!”
“I’ll take a galaxy then!”
……………………………
“Good choice!”
ঘুরে তাকালাম। শশ্রুমন্ডিত আনুমানিক পঞ্চাশোর্ধ ভ্দ্রলোক। গেলাসে থাকা পানীয়ের রঙে আন্দাজ করলাম উনি গ্যালাক্সি নিয়েছেন। গ্রীষ্মকালীন ধাক্কা দেবার জন্য গ্যালাক্সী আই,পি,এ (ইন্ডিয়ান পেইল এইল) এই পানশালার বাৎসরিক বিখ্যাত সিগনেচার বিয়ার।
জিজ্ঞাসা করলাম, “you..having one?!”
“Oh yeah! I like the grapefruit note in it!”
“That’s Simcoe”
“Oh shoot! I’m having Simcoe then!”
বিদায় জানিয়ে, দাম মিটিয়ে পানশালার এইপাশের দুই টেলিভিশানওয়ালা অংশে এসে বসলাম। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের খেলার দিনে মার্কিনিরা অন্য খেলা নিয়ে মেতে আছে কিনা সেটা যাচাই করতেই এলাম। পরিকল্পনা ছিল খেলা না দেখতে থাকলে গিয়ে লজ্জা দিয়ে খেলা চালু করবো। নাহ! হতাশ করেনি। গ্রীষ্মকালীন অবকাশের মাঝে, এই বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীক শহরে সপ্তাহের শুরুর দিনের বিকেলে, যতজন আসা সম্ভব তারচেয়েও বেশী মানুষ টিভি পর্দায় দৃষ্টি সেঁটে বসে আছে। ইএসপিএনে খেলা চলছে। চেয়ার টেনে ওদের ঠিক পিছনেই বসলাম। খেলা শুরুর আধা মিনিটের মাথায় অতর্কিত আক্রমনে এক গোল দিয়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এগিয়ে। এদিকে সিসিবির প্রেডিকশান গেমে ঘানার পক্ষে ২-১ ধরে বসে আছি। সান্তনা পুরস্কার হিসেবে ২ পয়েন্ট পাওয়া যাবে যদি মার্কিনিরা এই গোল নিয়েই সন্তুষ্ট থাকে। ঘানার বান্ধবী সান্ড্রার সম্মানেই ঘানার পক্ষে বাজি ধরলাম। যষ্মিন দেশে যদাচার হিসেবে মার্কিনিদের সমর্থন দেয়া দরকার ছিল। আকাশদা বললেন, নেমকহারামি করেছি দেখে শুরুতেই গোল। হয়তো তাই। ঈশ্বর ক্ষেপে গিয়েছেন। চমৎকার একটা ক্রসকে গোলে রূপান্তরীত করতে ব্যর্থ হলো ঘানা। দীর্ঘশ্বাস নেমে যেতে যেতে চুমুক দিলাম।

“Messi would have scored that one!”
ভরাট গলার পরিচিত কন্ঠস্বরের মালিক নিশ্চিত করতে তাকিয়ে দেখি নকি বসে আছে এক কোণায়। জন্মঃ আর্জেন্টিনা। পড়ছে মিশিগান টেকের সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং তৃতীয় বর্ষে। চমৎকার ব্লুজ গীটার বাজায়। তারচেয়েও অসম্ভব সুন্দর ছবি তোলে বাচ্চা এই ছেলেটি। ভীড়ের ভেতর থেকে ধীরে ধীরে গোমড়ামুখো ইরানীরা বের হয়ে আসতে লাগলো একে একে। ঠিক আগের ম্যাচটি একসাথে দেখতে এরা সবাই এসেছিল বোধ হয়। গোল শূণ্য ড্রয়ে খুশী হয়নি। সদা হাস্যোজ্জ্বল মেয়ে গুলোও মুখ ঠান্ডা সিঙারার মত করে রেখেছে। খুব একটা পরিচিত নই ওদের সাথে তাই আর সহানুভূতি দেখাবার চেষ্টা করলাম না। বলতে বলতে মার্কিন কাপ্তানকে বেশ শক্ত এক ফাউল করে বসলো ঘানা। অসন্তোষ প্রকাশের মাঝে দেখি এক ছেলে পাশের বন্ধুকে জিজ্ঞাসা করছে, “Is that a foul? Looks okay to me!” রেফারী হলুদ কার্ড দেখানোর পরে ছেলে বোকার মত হাসি দিল। দুই ফুটবল তালগোল পাকিয়ে ফেলছে চিন্তা করে হেসে দিলাম। কর্ণার পেলো আমেরিকা। দেখি U S A বলে রব তুলেছে্ সামনে বসা সবাই। গোল হলো না। প্রথমার্ধে অতিরিক্ত ৫ মিনিট খেলা দেখালো রেফারী। “That’s a lot of time!” মন্তব্যটি করলো একজন। আবারো হাসছি। একে একে পিৎজা ডেলিভারী এসে ঢুকছে। পিৎজা, চিকেন উইংস (আমেরিকান ফুটবলের অপরিহার্য নাস্তা) ইত্যাদির গন্ধে পেটে বাইশ ছুঁচো বল নিয়ে দৌড় দিলো। ক্লিন্সম্যানের ছোঁয়ায় মার্কিন রক্ষণভাগে জার্মান ছায়া দেখতে পেলাম। ওদের খেলা চলনসই তবে ঘানার পায়ে বল। প্রথমার্ধের খেলা শেষের বাঁশি পড়লো।

মার্কিন পানশালায় বিশ্বকাপ

প্রথমার্ধের খেলার মাঝে মার্কিন ইএসপিএনে আলোচনা চলছে। বিভিন্ন মার্কিন শহরের অবস্থা দেখালো। বিশেষ করে লস এঞ্জেলস শহর। বড় পর্দায় কোন চত্বরে একদম দেশী কায়দায় খেলা দেখার আয়‌োজন করা হয়েছে। হেলিকপ্টারে নেয়া ভিডিও দেখে বোঝা যাচ্ছে লোকে লোকারণ্য। প্রথম গোলের পর খন্ড ভিডিওতে আফগানিস্তানের একটি ক্যাম্প, একটি রেস্তোরাশহ বিভিন্ন জায়গা দেখালো। গোটা মুখে পতাকা আঁকা সমর্থক, রেস্তোরার কর্মী, কিংবা ভারী অস্ত্রসস্ত্রে সজ্জিত মার্কিন সৈন্য–বাঁধভাঙ্গা জোয়ারের মত আনন্দ ভাসছে সবার চোখে মুখে। ক’দিন আগে শেষ হলো স্ট্যানলি কাপ (হকি); গত পরশু শেষ হলো এনবিএ চতুর্থ ও শেষ ফাইনাল স্যান এ্যান্টোনিও স্পারস ও মায়ামি হিটের মাঝে; চলছে মেজর লীগ (বেইজবল); ওদিকে কপাল ভাল (আমেরিকান) ফুটবলের কিছু চলছে না। ভেবেছিলাম এই পানশালায় এসে সবাইকে লজ্জা দিয়ে টিভির চ্যানেল পরিবর্তন করাবো। সেটা করতে হয়নি। হয়তো একটি কারণে। সেটি হলো লাল, সাদা, ও নীলের প্রতি অগাধ ভালোবাসা। আনাড়ী মন্তব্য করতে পারে, দীর্ঘ খেলায় বিরক্ত হতে পারে কিন্তু GO USA বলে চিৎকার ওরা দিবেই। বেশখানিকটা ঈর্ষা নিয়ে দুটো বড় চুমুকে গ্যালাক্সির শেষটুকু গলা দিয়ে নামিয়ে দিয়ে বের হয়ে দেখি চমৎকার একটি পোর্শ ৯৪৪ এস২ পার্ক করা। ছবিটা তুলেই ফেললাম। গুগল ইমেজের হালকা ঘষামাজায় বেশ একটা ভিন্টেজ ভাব এসেছে ছবিটিতে। পুরোনো শহরের ছবিতে স্যাচুরেশান কমাও, কন্ট্রাস্ট্ বাড়াও, আর ছবির তাপমাত্রা একটু উস্কে দাও। হয়ে গেল ভিন্টেজ।

গ্রীষ্মকালেই এলেই সবাই সবার গ্যারেজ খুলে ঝাড়পোঁছ শুরু করে।

চলুক বিশ্বকাপ। ভাবছি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বাকি খেলাগুলো এখানে এসে দেখবো। মানুষের উচ্ছ্বাস দেখার মাঝেও আনন্দ আছে। যদিও গ্রুপ অফ ডেথের গর্বিত সদস্য হিসাবে মার্কিনিদের বাকি খেলা গুলো পড়ছে জার্মানি ও পর্তুগালের সাথে। জয়ের ধারা অব্যহত রাখতে জার্মানি ও ৪-০ পরাজয়ের ঝাল মেটাতে মরিয়া পর্তুগালের সাথে এই দলটি কেমন করে তা না হয় ওদের দিশি ভাইবোনদের সাথে বসেই দেখলাম।

২,৩৬৪ বার দেখা হয়েছে

১৮ টি মন্তব্য : “বিশ্বকাপ ফুটবল, আমেরিকা, লাল সাদা ও নীল”

  1. রায়হান (১৯৯৮-২০০৪)

    তাইলে তো ভালই
    তুই যতটা হতাশ ছিলি অতটা হতাশ তোকে করেনি মার্কিন দর্শকেরা
    আর কালকের ম্যাচ জেতার পরে পরের ম্যাচগুলায় দেখবি আরো দর্শক বাড়বে
    BTW আমার প্রেডিকশন ও ঘানার পক্ষে ছিল ৩-২
    কালকে পুরাই একটা কুফা দিন গেল রে


    একটি বাংলাদেশ তুমি জাগ্রত জনতার,সারা বিশ্বের বিস্ময় তুমি আমার অহংকার

    জবাব দিন
  2. জিহাদ (৯৯-০৫)

    বিজয় স্মরণীর জ্যামে বসে বসে লেখাটা পড়ছিলাম। চমৎকার লিখসেন ভাই। আপনার লেখা নি:সন্দেহে শুরুর দিকের চেয়ে ইমপ্রুভ করসে। আপনি আম্রিকা ও আম্রিকাবাসীর ফুটবল অভিজ্ঞতা নিয়ে সুন্দর সিরিজ নামায়ে ফেলতে পারেন একটা।


    সাতেও নাই, পাঁচেও নাই

    জবাব দিন
  3. পারভেজ (৭৮-৮৪)

    ফুটবলের ওপর মার্কিনিদের খুবই সাম্প্রতিক মনোভাব জেনে ভাল লাগলো।
    এইটা দেখার পরেতো ওদের ফুটবল ধারনা সম্পর্কে টাসকি খাওয়ার যোগাড় হয়েছিল।
    বাই দ্যা ওয়ে, আমাদের প্রেডিকশনে কোন ভুল নাই। ওরা মানে প্লেয়াররা ভুল খেললে আমাদের কি দোষ?


    Do not argue with an idiot they drag you down to their level and beat you with experience.

    জবাব দিন
  4. আহসান আকাশ (৯৬-০২)

    লন্ডনে পাবে বসে আর্সেনালের খেলা দেখা অনেক পুরোনো একটা শখ, মনে হয়না সেটা পূরন হবে। তোমার অভিজ্ঞতা পড়ে ভাল লাগলো, বর্ণনা দারুন হয়েছে। দেশে স্পোর্টস ক্যাফে/রেস্টুরেন্ট কনসেপ্টটা চালু হলে ভাল হতো।

    ইউএসএ অনেক দূরে যাক, তোমার খেলা দেখার অভিজ্ঞতাও সমৃদ্ধ হোক আর সকারের দেশে বিশ্বকাপের অভিজ্ঞতা নিয়ে আমরা আরো লেখা পড়ি এই আশা থাকলো 😀


    আমি বাংলায় মাতি উল্লাসে, করি বাংলায় হাহাকার
    আমি সব দেখে শুনে, ক্ষেপে গিয়ে করি বাংলায় চিৎকার ৷

    জবাব দিন

মওন্তব্য করুন : মোকাব্বির (১৯৯৮-২০০৪)

জবাব দিতে না চাইলে এখানে ক্লিক করুন।

দয়া করে বাংলায় মন্তব্য করুন। ইংরেজীতে প্রদানকৃত মন্তব্য প্রকাশ অথবা প্রদর্শনের নিশ্চয়তা আপনাকে দেয়া হচ্ছেনা।