পুরোনো পাতায়ঃ বরফের দেশের গল্প ৮

১৬ ফেব্রুয়ারী, ২০১৪ রবিবার বিকাল ৪টা
ভালোবাসার ফুড প্রসেসরে
যাচ্ছে ‘কেটে’ দিনরাত্রি।
ফিরে এসো গরু হয়ে।
খেয়ে নাও ঘাসটুকু,
জাবর কেটো পরে।
তবু দোহাই লাগে-
কেটোনা মোরে এই
ভালোবাসার ফুড প্রসেসরে।

প্রচারে – মাথা নষ্ট

পেছনের কথাঃ এই ছড়াটা লিখেছি যখন প্রেমিকার সাথে সোভিয়েত রাশিয়া সময়কার স্নায়ু-যুদ্ধের আদলে যুদ্ধ শুরু হলো। কথা বললে উত্তর মিলে না। জিজ্ঞাসা করলে বলে কিছু হয় নাই। ফেবু চ্যাটে নির্জলা উত্তর। জিজ্ঞাসা করলাম এই উদ্ভট আচরণের কারণ আমি কি না? উত্তর এল আমি জড়িত নই। বিরক্ত হয়ে আমিও আটঘাঁট বেধে কথা বলা বন্ধ করে দিলাম। দেড় বছরের সম্পূর্ণ স্বচ্ছ, আন্তর্জাতিক মানের দূরপাল্লার মন দেয়া নেয়ায় এই প্রথম অনিশ্চয়তার কালো মেঘ।আমার মত কর্কট রাশির জাতিকা বলেই কিনা জানি না সহজ কথা সহজে উত্তর দেয়ার অভ্যাস তারও নেই। শুধু ডানেবামে সরে আসবে। যাই হোক সমস্যার সমাধান হলো। জানতে পারলাম, আমি সরাসরি জড়িত নই আবার জড়িত। অর্থাৎ বর্মণ সাহেবের কথায় বললে দাঁড়ায়, “তুমি আর নেই সে তুমি।” অথবা স্টেলার ব্যান্ডের শাহীন আহসানের কন্ঠে, “তুমি কি আমায় আগের মত বাস ভালো?” বললাম এক কথায় উত্তর দাওঃ তুমি কি আমাকে পছন্দ কর? নম্বর ০১ উত্তর আসলো যেটা কখনো বলি নাই সেটা এখনো বলবো না। চিন্তা করে দেখলাম কথা সত্য। এখন পর্যন্ত মুখ ফুটে আমাকে সে একবারও ভাললাগা ও ভালবাসার কথা বলে নাই। বললাম, তাহলে বসে আছ কেন? ছেড়ে চলে যাও? উত্তর নেই! তখন বললাম, আচ্ছা ছেড়ে যাবার যদি একান্তই ইচ্ছা থাকে, দুটো মাস সময় দাও। ঠান্ডায় জমে যাওয়া লেকে ঝাঁপ দিলে হাঁড়গোড় ভাঙবে। কাজের কাজ কিছু হবে না। উত্তর আসে না। এদিকে আমার ভালবাসার রাজপ্রাসাদে নিশুতি রাত গুমরে কাঁদে

হারাবার কিছু নেই ভেবে পথ হেঁটেছি। পথে পথে কুড়িয়েছি হারাবার ভয়। প্রেয়সীর সাথে স্নায়ুযুদ্ধে হেরে গিয়ে আপাতত খুশী। কারণ হারতে চাই তবে হারাতে চাই না।

১৮ ফেব্রুয়ারী, ২০১৪ মঙ্গলবার দুপুর ১২টা ২৩ মিনিট
বেশীরভাগ সময় আয়তাকার লেকচার হলের শেষেই বসে থাকি তাই ৯১ জন ছাত্রের চেহারা কখনো ঠিক মত দেখা হয়নি। আজকে প্রথম পরীক্ষা ছিল ওদের তাই গার্ড হিসেবে ৫৫ মিনিট ওদের দিকে তাকিয়ে থাকার সুযোগ পেয়েছি। বরাবরের মত সুন্দরীর ছড়াছড়ি অথবা বলা যেতে পারে ঈসৎ সোনালী কিংবা তামাটে চুল, খাড়া নাক, সাদা চামড়ার মোটামুটি সবাই উনিশ-বিশে সুন্দরী। চেহারায় ভিন্নতার অভাব বলে প্রতিবারই কাউকে না কাউকে কারো মত লাগেই দেখতে। পরীক্ষার প্রশ্ন দিতে গিয়ে আর,ও,টি,সির ছেলেটার দিকে তাকিয়ে চমকে উঠলাম। এতো ব্যান্ড অফ ব্রাদার্সের সার্জেন্ট ঊইলিয়াম ‘ওয়াইল্ড বিল’ গার্নিয়ারের মত দেখতে। কথাও ওর মতন চিবায় বলে কিনা শোনার সুযোগ হয় নাই। দুই সেট প্রশ্ন ১ ও ২ যেটা ওএমআর বা স্ক্যানট্রন ফর্মে লিখতে হয়। ডঃ কার্ল ব্লেয়ার সবসময় বলেন, ‘there is always a champion who will screw this simple thing up…every single time” কথাটা চরম সত্য। নাম্বার সেটের গোল্লা পূরণ না করা থেকে শুরু করে উলটপালট করা এরকম পাঁচ বিজয়ীকে পাওয়া গেল পরীক্ষা শেষে।

কোন কিছু খুটিয়ে দেখার ইচ্ছা একটি বড় বিষয়। প্রয়োজন না হলে ডানে বামে না তাকানোর অভ্যাস আমার বহু পুরোনো। ফিশার হলে ক্লাশ নেয়ার জন্য গত দুই বছরে প্রায় প্রতি সেমিস্টারেই আসা হয়েছে। কিন্তু কখনো ভাল ভাবে দেখা হয়নি এই বিশাল কিম্ভূতকিমাকার দালানের ক‌োথায় কি আছে। প্রয়োজন নেই। পদার্থবিজ্ঞান ও গণিত বিভাগ এখানে সেটা জানতাম কারণ আলবেনিয়ার বন্ধু ইয়েজেরসা গণিতের পিএইচডি প্রার্থী এবং তার অফিস এখানে। পদার্থবিজ্ঞান ও গণিতের সদরদপ্তরের ছোট কফিশপের নাম যে ‘Aftermath Cafe’ এটা আজকের আগে খেয়াল করি নাই। একই সাথে খেয়াল করি নাই, এখানের টয়লেটগুলোতে প্রবেশ ও বাহির হবার দরজা ভিন্ন। ক্লাশের ফাঁকে অতিরিক্ত চাপ সামাল দিতেই এই ব্যবস্থা। দুই ক্লাশের ফাঁকে সেদিন ভেড়ার পালের মত ঢুকে বুঝতে পেরেছি।

সন্ধ্যা ৭টা ৩০ মিনিট
জর্জ পারকিন্স মার্শঃ আঠারোশ শতকের এই কূটনীতিককে যুক্তরাষ্ট্রের প্রথম পরিবেশবাদী ধরা হয়। পরিবেশ সংরক্ষণ আন্দোলনের ইতিহাসে আমেরিকার রাজা রামমোহন রায় বলা যেতে পারে। যেই সময় যেই চিন্তা করেছেন ও যেই বিষয়ে বই লিখেছেন সেইসব বিষয় গবেষক, বিজ্ঞানী, কিংবা প্রকৃতিবাদীদের মাথায় এসেছে আরো অর্ধশত বছর পরে। ১৮৬৪ সালে লেখা বইতে আটলান্টিক ও প্যাসিফিক মহাসাগর সংযোগ করার চেষ্টা করার ব্যাপারে সতর্ক করেছেন। বলেছেন বিশ্বের পরিবেশ নিয়ে এভাবে খেলাধুলা যাতে মানব সম্প্রদায় ভেবেচিন্তে করে। উনি এ কথা বলার প্রায় ২০ বছর পরেই পানামা খাল খনন শুরু হয়। পরিবেশের কাঠামোগত পরিবর্তন করে পৃথিবীর তাপমাত্রাসহ, জলপ্রবাহ ইত্যাদি বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ বিষয় নিয়ন্ত্রণ করার চেষ্টা করার ব্যপারে সতর্কতা অবলম্বন করতে বলেছেন যা বর্তমান যুগে এনভায়রনমেন্টাল ইঞ্জিনিয়ারিং নামক বিখ্যাত একটি বিষয়ের অন্যতম পাঠ্য বিষয়। স্বভাবতই এত আগে এরকম দূরদর্শী কথা চিন্তা করায় তার কথা কেউ আমলে নেয় নাই। ১৮০০ শতকের শেষের দিকে মানুষ কর্তৃক প্রকৃতির কাঠামোগত পরিবর্তন, বিরূপ প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি ইত্যাদি নিয়ে চিন্তা করার মত সামাজিক ও মানসিক বিকাশ মানুষের হয় নাই। এতগুলো কথা বললাম উনার লেখা বই Nature and Human এর প্রথম অধ্যায় থেকে কিছু উদ্ধৃতি তুলে দেয়ার পরিবেশ তৈরী করার জন্য। অধ্যায়ের Observation of Nature অনুচ্ছেদে উনি বলেছেন উনি এই বই লিখছেন পাঠকের জানার আগ্রহ পূরণ করতে নয় বরং জানার আগ্রহকে উদ্দীপিত করতে। কারণ, “[L]abor is life. Death lives, where power lives unused.” উনার যেই কথাটা সবচাইতে ভালো লেগেছে সেটা হলো, “Sight is a faculty; seeing, an art. The eye is a physical, but not a self-acting apparatus, and in general it sees only what it seeks.” গ্লোবাল এনভায়রনমেন্টাল হিস্টরী নামক বিষয়ের আগামী সপ্তাহের জন্য দেয়া হোমওয়ার্ক রিডিং এর একটি হলো এই ভদ্রলোকের লেখা বইয়ের প্রথম অধ্যায়টি। ভাবলাম কিছু কথা লিখে রাখি নাহলে পরে ভুলে যাব।

২০ ফেব্রুয়ারী, ২০১৪ বৃহস্পতিবার, সন্ধ্যা ৭টা ২৫ মিনিট
লিফট ব্রিজ ব্রাউন এইলঃ গাঢ বাদামী রঙের হালকা স্বাদের চুমুক দেয়ার মত চমৎকার একটি বিয়ার। সময় ব্যয় করতে সবসময় এটা নিয়েই বসি। স্থানীয় পানশালা কেবিসিতে ওয়াইফাই আছে সেটা আরো আগেই খেয়াল করা উচিৎ ছিল। সেই সুযোগ নিয়ে ভাবলাম দুচার কথা লিখে ফেলি। আজকে রাত নাগাদ তুষার ঝড় নাকি আঘাত হানার কথা। কিন্তু বরফ নিয়ে এত বেশী কথা বলেছি যে আর বলতে ইচ্ছা করছে না। আসুক গিয়ে। আজকে ক্লাশে ১৫ মিনিটের একটা প্রেজেন্টেশান ছিল। ক্লাশের ছাত্রদের জলবায়ু পরিবর্তন ও বাঙলাদেশ বিষয়ে বললাম। ৯০ জন ছাত্রের সামনে এভাবে এই প্রথম কথা বলা। খুব কম মানুষের সাথেই চোখাচোখি হয়েছে। এই বিষয়ে আরো উন্নতি করতে হবে। তবে যেটা খেয়াল করলাম, সামগ্রিক ভাবে সাবলীল ছিলাম। ইংরেজী শব্দ খুঁজতে মাঝে মাঝে একটু হাতড়ে বেড়াতে হয়েছে কিন্তু সেটা তোতলানো ছিল না। সাইক্লোন ও বন্যার ব্যাপারগুলো তুলে ধরেছিলাম। মুখস্তও করি নাই। একদিক দিয়ে স্লাইড বানানো শেষ হয়েছে অপরদিক দিয়ে ক্লাশের সময় হয়ে এসেছিল। সেই তুলনায় ভালই বলেছি। তবে অনুশীলনে আরো গোছানো হতো ব্যাপার গুলো। কথা শেষে বিপুল করতালিতে লেকচার হল ফেটে পড়লো। ধন্যবাদ ও করতালি দিয়ে সমাদর করার অভ্যাসটা এদের পারিবারিক ও পুরোনো। বের হয়ে যাবার সময় এক ছাত্র ব্যক্তিগত ভাবে অভিনন্দন জানাতে এলো তখন আরো ভালো লাগলো।

গতকাল জর্জ পারকিন্স মার্শের কথা বলছিলাম। আজকেই অনেকটা কাকতালীয় ভাবে উনার কথাটার সাথে বর্তমান প্রেক্ষাপটের মিল খুঁজে পেলাম। বাঙলাদেশে বর্তমান সময়ে অনেকদিন ধরে চলতে থাকা দুটো বড় হুজুগের একটি হলো বাইসাইকেল অপরটি ফটোগ্রাফি (অনেকে যেটাকে খুব উৎসাহের সাথে “লোক দেখানো” ডিএসএলআর ক্যামেরা কেনার ঝোঁক বলতে পছন্দ করে।) এই দুটো আমার দেখা বাঙালীর হুজুগের মাঝে চমৎকার দুটো ভাল হুজুগ। কামরুল হাসান ভাইয়ের ফেবু শেয়ারে একটা লেখা পড়ছিলাম এই ডিএসএলআর ক্যামেরা কেনা ও এই নিয়ে আমজনতার আবোলতাবোল বকার কাহিনী। খুব ভাল লেগেছে লেখিকা ভবিষ্যত সখের ফটোগ্রাফারদের এইসব আবোলতাবোল কথায়র কান না দিয়ে উৎসাহ দিয়েছেন একটি ডিএসএলআর কিনে ছবি তোলা চালিয়ে যাবার জন্য। সবসময় খারাপটা তুলে আনা, সবসময় খারাপটাই দেখা, বা যেকোন প্রেক্ষিতেই দ্বিমত পোষণ করা বর্তমান প্রজন্মের অভ্যাস কিনা সেটা ভেবে দেখার বিষয়। আগেও হয়তো ছিল। কথাটা বললাম কারণ বন্ধুবান্ধব, পরিচিত মিলিয়ে পেশাদার, সখের ফটোগ্রাফার একবারে কম চিনি না। নিয়মিত বিরতিতে কাউকে না কাউকে দেখছি একটা ভাল ক্যামেরা কিনছে। অথবা সত্য বলতে বেশীরভাগই এই ব্যাপারে নিশ্চুপ থাকছে। ছবির মান হঠাৎ করে উন্নত হওয়ায় ব্যাপারটা জিজ্ঞাসা করাতে জানাচ্ছে যে ক্যামেরা কিনেছে সম্প্রতি। এই দিক দিয়ে আমি নিজেকে কি সৌভাগ্যবান বলবো যে চেনা পরিচিতের মাঝে এরকম কাউকে খুঁজে পাইনি যে একটা ডিএসএলআর কিনেছে ছবি তুলতে নয় ক্যামেরা কিনেছে সেটা দেখাতে? তারমানে এই নয় যে এরকম মানুষ নেই। অবশ্যই আছে। কিন্তু গুটিকয়েক ব্যাতিক্রমের জন্য পুরোটাকে প্রশ্নবিদ্ধ করার চেষ্টা মানসিক অপরিপক্কতার প্রকাশ। ডিএসএলআর কিংবা একটি পয়েন্ট এ্যান্ড শুট কিংবা মুঠোফোনের ক্যামেরা। ফ্রেমে বন্দি সময় চলুক তবে সারাক্ষণ।

২২ ফেব্রুয়ারী, ২০১৪ শনিবার দুপুর ১টা ৪১ মিনিট
এই কথাগুলো যখন লিখছি তখন দুটো ঘটনা নিয়ে হইচই ঘটে গিয়েছে। প্রথমটি, ভারতের চলচিত্র গুন্ডেতে বাঙলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস বিকৃতির অভিযোগ এবং পরবর্তীতে ক্রোধের বহিঃপ্রকাশ হিসেবে ইন্টারনেট মুভি ডেটাবেজ আই,এম,ডি,বিতে গুন্ডের রেটিং নামিয়ে ১.২/১০ করে দিয়ে আসা। দ্বিতীয়টি, সাকিব আবারো আলোচনার শীর্ষে। এবার ড্রেসিং রুমে বসে অন্ডকোষ ধরে নাড়াচাড়া ও ক্যামেরার দিকে অশ্লীল ইঙ্গিতের অভিযোগ। শাস্তি হিসাবে জরিমানা ও তিন ম্যাচ নিষিদ্ধ। গুন্ডে ছবির তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়া বেশ ভালো রকমের উপভোগ করেছি এবং নিজেও রেটিং কমিয়ে এসেছি। ওদের পেইজগুলোতে আমাদের গালাগালিও করা হচ্ছে এই নিয়ে। অবশ্য আমি মোটেও উত্তেজিত নই। বরং এই ঘটনা থেকে বিনোদন নেয়া উচিৎ। যাই হোক।

দ্বিতীয় কাহিনীটিও আমার দৃষ্টিতে একটি বৃহৎ বিনোদনের উৎস! কেন? কারণ, ঘটনার নায়ক (কিংবা খলনায়ক) পুরোনোঃ- বাঙলাদেশের প্রাণ সাকিব আল হাসান। সাকিব বিয়ে করলো শিশিরকে। যুক্তরাষ্ট্রে পড়াশোনা করা ও বড় হওয়া বাঙলাদেশী মেয়ে। আমরা ফেইসবুকে প্রমাণ করলাম চিন্তাভাবনায় আমরা কতটা যৌনতান্ত্রিক। Sexist এর বাঙলা কি হতে পারে? ‘যৌনতান্ত্রিক’ বলে কোন শব্দ কি আছে? না থাকলে বানিয়ে নিলাম। এরপরে থেমে থেমে নিয়মিত বিরতিতে সাকিব-শিশির খবরে থেকেছে। এরপরে ঈদ করতে ভাড়া করা হেলিকপ্টারে চড়ে মাদারীপুর গেলেন দম্পতী। সেটা খবরে এলো, ফেইসবুকজীবি আমরা আবার প্রমাণ করলাম জাতি হিসেবে হিংসাপরায়ণ ও যৌনতান্ত্রিক। সবার বক্তব্য বড়দাগে ঘুরপাক খেতে লাগলো এমন এক জায়গায় যেখান থেকে আমার মনে হয়েছে যত নষ্টের মূল শিশির। বিয়েটা আজকে না হলে এরকম হতো না। এরপর আসি সাম্প্রতিক অশ্লীল ইঙ্গিত বিষয়ক ঘটনায়। দুটো দল দাঁড়িয়ে গেল। দুটো দলই রোমান্টিক। প্রথমটি দলের নাম “শৃঙ্খলাই সব” ও দ্বিতীয়টির নাম “সাকিব যা করেছে বেশ করেছে।” কিছু কন্সিপিরেসি থিওরী পাওয়া গেল নিষিদ্ধকৃত ম্যাচের সংখ্যার প্রেক্ষিতে। যেগুলোর কোনটিই আমলে না নিলেও আমার মনে কিছুটা নাড়া দিয়েছে। প্রথম রোমান্টিক দলের অনেকের কথাবার্তায় যৌনতান্ত্রিক মূল্যবোধ কিছুটা গা-ঝাড়া দেয়ার চেষ্টা করলো দেখলাম। ধ্যান ধারণায় আমি দ্বিতীয় দল ঘেঁষা সেটা স্বীকার করেই বলছি আমার কাছে মনে হয়েছে এই দুটো রোমান্টিক দলকেই আমার এখানে এনে দশ ফিট বরফের স্তুপের মাঝে ঠেসে ধরে রাখতে পারতাম তাহলে ভাল লাগতো।

অনেকে দ্বিমত প‌োষণ করতে পারেন কিন্তু নিজেকে সাকিব কিংবা মুশফিকের জায়গায় বসানোর পরে মনে হলো, খেলাটুকুর চেয়ে দুশ্চিন্তা সেখানে বেশী। বাঙলাদেশের উপরের সারির এই খেলোয়ারেরা হয়তো আউট হবার পরপরই হতাশার আগে দুশ্চিন্তা এসে ভয় করে। সংবাদ সম্মেলনে উদ্ভট প্রশ্নের উত্তর দিতে হবে। কোন দর্শক ও ক্রিকেটপ্রেমির মৌখিক আক্রমনের শিকার হবার সম্ভাবনা। খবরে উল্টাপাল্টা ছাপা হবে। যুক্তি দেখাতে পারেন, ওরা কখনোই এসব চিন্তা করে না। ওরা এসব ব্যাপারের তোয়াক্কাই করে না। সত্য হলো আপনি জানেন না, আমিও জানি না। যদিও ফেবুতে অনেককে দেখেছি খুব বড় গলায় বলতে তিনি “ব্যাক্তিগত” ভাবে জানেন যে বাঙলাদেশের ক্রিকেটাররা কত অসভ্য ও দাম্ভিক। আমার হাতেও যথেষ্ট প্রমান নেই পক্ষে কথা বলবার কিন্তু নিজেকে একজন ক্রিকেটারের জায়গায় বসান। অবশ্যই অর্থ-বিত্তের অভাব নেই। কিন্তু মানসিক শান্তি কি নিশ্চিত করা হচ্ছে তাদের? স্পোর্টস সাইকোলজী আলাদা একটা বিষয় যেটার উপর ডিগ্রী দেয়া হয়। খেলোয়ারদের মানসিক অবস্থা সাবলীল ও আদর্শ অবস্থায় রাখার ব্যাপারে শক্তপোক্ত নীতিমালা আছে বিভিন্ন খেলায়। সেটা নিশ্চিত করার জন্য বিশেষজ্ঞও নিয়োগ করা হয়। না জেনে বলছি, ধরে নিচ্ছি বাঙলাদেশের ক্রিকেট দলেও সেরকম কেউ আছেন। কিন্তু তারপরেও বাঙলাদেশে সেটা কতটুকু নিশ্চিত করছি আমরা? নিজেকে প্রশ্ন করে দেখুন। হয়তো এখনো বলবেন নাহ ওদের সকল ধরনের মানসিক সহায়তা আমরা করি কিন্তু আশানুরূপ ফল পাই না। আমি অগ্রিম দ্বিমত পোষণ করলাম। হ্যা আবেগপ্রবণ জাতি হিসাবে আমরা একটু বেশীই চাই ওদের কাছ থেকে। হ্যা, সাকিব অনেকে ক্ষুদে ক্রিকেটারদের অনুসরণীয় ব্যক্তিত্ব তাই তার এই ধরনের আশালীন ইঙ্গিত মানায় না। কিন্তু কথাগুলো একপেশে কিনা কখনো কেউ চিন্তা করে দেখেছেন? আমি মনে করি বাঙলাদেশের ক্রিকেট খেলোয়ারদের দৃঢ-প্রতিজ্ঞ খেলা উপহার দেয়ার মত পরিবেশ আমরা দিচ্ছিনা কিন্তু খেলাটা ঠিকই চাইছি। এই নিয়ে গবেষণা হতে পারে। সেখানেই আমার সন্দেহের সত্যতা বের হয়ে আসবে।

১,৬৬৭ বার দেখা হয়েছে

১৯ টি মন্তব্য : “পুরোনো পাতায়ঃ বরফের দেশের গল্প ৮”

  1. মাহমুদ (১৯৯০-৯৬)

    তোমার দিনপঞ্জিগুলো সব সময় ভালো লাগে। এটাও আগেরগুলার মতোই :thumbup:

    পরিবেশ সংরক্ষণ বিষয়ক ইস্যুগুলো আইনের দৃষ্টিভঙ্গি দিয়ে আরো বেশি বেশি করে নিয়ে আসা দরকার ডিসকোর্সে। আশা করি, এক্ষেত্রে তোমার অংশগ্রহন দেখবো সিসিবি'র মাধ্যমে।

    সাকিবের ইস্যুর প্রেক্ষিতে বাংলাদেশের কৃকেটারদের বিষয়ে তোমার অবস্থান খুবই যুক্তিযুক্ত (যদিও বেশিরগার ফ্যান সেটা মানতে চাইবে না)।


    There is no royal road to science, and only those who do not dread the fatiguing climb of its steep paths have a chance of gaining its luminous summits.- Karl Marx

    জবাব দিন
    • মোকাব্বির (৯৮-০৪)

      মাহমুদ ভাই পড়ার জন্য ধন্যবাদ। দ্বিতীয় ধন্যবাদ মনে করানোর জন্য। পরিবেশ বিষয়ে পড়াশোনা করছি, এই ব্যাপারে লেখা ও আলোচনার সুযোগ করে দেয়াটা আমার দায়িত্বের মাঝে পড়ে! চিন্তা ভাবনা শুরু করলাম। 🙂 :teacup:


      \\\তুমি আসবে বলে, হে স্বাধীনতা
      অবুঝ শিশু হামাগুড়ি দিল পিতামাতার লাশের ওপর।\\\

      জবাব দিন
  2. আহসান আকাশ (৯৬-০২)

    ভালবাসা দিবসে কোন ঘাপলা করছো নাকি? 😕

    হোমওয়ার্ক শেষ করে এ বিষয়ে একটা লেখা দিও, এ বিষয়ে জানতে আগ্রহী।

    সাকিবের ঘটনার সময় কার্ড খেলতে খেলতে খেলা দেখছিলাম, যখন প্রথম দেখালো সাকিব উদোম গায়ে টাওয়েল জড়িয়ে বসে আছে এটা দেখাচ্ছে তখনই ক্যামেরাম্যান আর প্রোডাকশনের কান্ডজ্ঞান নিয়ে প্রশ্ন তুলেছিলাম, পরে মূল ঘটনা কার্ডের দিকে মনযোগ দেয়ায় দেখা হয়নি। সাকিব যা করেছে তা কোন ভাবেই গ্রহনযোগ্য নয় তবে সেটাকে যখন পত্রিকায় বড় বড় ছবি ছাপিয়ে প্রকাশ করা হয় তখন সেটা কোন ভদ্রতা আর সুআচরনের মাঝে পড়ে বুঝি না।
    আর সমালোচনাকারীদের প্যাটার্ন নতুন কিছু না। আমাদের ক্রিকেট দলের ভিতরের গ্রুপিং এর খবর জানি না তবে ফ্যানদের ভিতরে কিছু পরিষ্কার গ্রুপিং আছে, আশরাফুল গ্রুপ, মাশরাফি গ্রুপ, মুশফিক গ্রুপ আর সাকিব-তামিম গ্রুপ। এরা পুরোপুরি ফ্যানাটিক, এতটাই ফ্যানাটিক যে এক গ্রুপ অন্য গ্রুপের মাঠে আর মাঠের বাইরের খারাপ পারফর্মেন্সের জন্য মুখিয়ে থাকে, কিছু একটা পেলেই ঝাপিয়ে পড়বে, আমি নিশ্চিত এরা মাঝে মাঝে অন্য গ্রুপের খেলোয়ারদের খারাপ খেলার কামনাও করে, বিশেষ করে এন্টি আশরাফুল গ্রুপ আর এন্টি সাকিব-তামিম গ্রুপ।

    সাইকোলোজিকাল দিকটা সব সময়ই উপেক্ষিত থেকে গিয়েছে অথচ এটা খেলাধূলায় এখন অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। আমি মনে করি প্রথম টি২০ তে শেষ বলে নো বল এর এর ডিশিসনটা পক্ষে গেলে পুরো সিরিজের রেজাল্ট বদলে যেত, নিজের স্বল্প অভিজ্ঞতায় যা দেখেছি, কোন খেলায় নিজেদের এভাবে ডেপ্রাইপভড (বাংলা?) হলে পরের খেলাগুলোতে তার নেতিবাচক প্রভাব পড়া বাধ্য। পরের ম্যাচের শেষ বলে হারও দলকে মানষিক ভাবে আরো দূর্বল করে দিয়েছিল।


    আমি বাংলায় মাতি উল্লাসে, করি বাংলায় হাহাকার
    আমি সব দেখে শুনে, ক্ষেপে গিয়ে করি বাংলায় চিৎকার ৷

    জবাব দিন
    • মোকাব্বির (৯৮-০৪)

      সুপ্রিম কোর্টের বিচারকদের রুল জারি করার ক্ষমতার মাঝে একটা হলো suo motu রুল জারি করার ক্ষমতা। ল্যাটিন এই শব্দের আক্ষরিক অর্থ হলো, on it's own motion বা স্বপ্রোণদিত রুল জারি। কোন স্পর্শকাতর বিষয় বা গুরুতর বিষয় সম্পর্কে নিশ্চিতভাবে অবহিত হবার পর বিচারকদের বেঞ্চ স্বপ্রণোদিত হয়ে উক্ত ঘটনার বিষয় রুল জারি করতে পারেন। উপমাটা খুব একটা যুতসই নয় কিন্তু ঐদিন আমি ক্যাচাল করি নাই! 🙁 ম্যাডাম স্বপ্রণোদিত হয়ে ভালোবাসার নীল আকাশে কালো মেঘ টেনে আনলো। 🙁

      এনভায়রনমেন্টাল হিস্টরী একটা মজার বিষয়। দেখি লেখা দাঁড়া করানো শুরু করতে হবে!

      মতপ্রকাশের স্বাধীনতা নামক হাওয়াই মিঠাই নিয়ে বড় কথা বলা হয়ে যাবে কিন্তু আমার সবসময় মনে হয় বাঙলাদেশের গণমাধ্যম গুলো রাজনৈতিক অঙ্গনে নোংরামী করে অভ্যস্ত। সেই নোংরামীর আমেজটা খেলায় পায় না দেখে তাদের লক্ষ্যই থাকে খেলোয়ারদের বিপর্যস্ত করা। একই সাথে অপরিপক্ক, আনাড়ি সাংবাদিক দিয়ে খেলার পাতা লেখানো কিংবা সম্মেলনে পাঠানো হচ্ছে কিনা সেটাও খুঁজে দেখা দরকার।

      ড্রেসিং রুমে ক্যামেরা ওভাবে ৩০ সেকেন্ড ধরে না রাখলে পুরো ঘটনাটিই এড়ানো যেতো এটা কেউ মানতে চাইছেন না। ঘুরেফিরে এটা খেলোয়ারদের মানসিক অবস্থা জানার ও আমলে নেবার ব্যাপারে আমাদের অবজ্ঞার বহিঃপ্রকাশ।


      \\\তুমি আসবে বলে, হে স্বাধীনতা
      অবুঝ শিশু হামাগুড়ি দিল পিতামাতার লাশের ওপর।\\\

      জবাব দিন
    • মোকাব্বির (৯৮-০৪)

      হাহাহাহাহাহা! বরফ গলেছে সাথে চোখের পানি বরফ হয়েছে! 😀 বিরহের স্বাদ থাকাটা ভাল। নির্জলা প্রেম করছিলাম! :shy:

      আর লজ্জা দিয়েন না। 😛 মজার ব্যাপার হলো মুজতবা আলীর লেখা সেই রসগোল্লার পরে আর কিছু পড়িনি। কিছু ইবুক সংগ্রহ করেছিলাম। নাজমুলের কপিরাইট বিষয়ক লেখাটি পড়ার পরে ডিলিট করে দিয়েছি। দেশে গিয়ে বই কিনে পড়বো।


      \\\তুমি আসবে বলে, হে স্বাধীনতা
      অবুঝ শিশু হামাগুড়ি দিল পিতামাতার লাশের ওপর।\\\

      জবাব দিন
  3. নাফিস (২০০৪-১০)

    মানুষ জন গড্ডালিকা প্রবাহে খুব সহজেই গা ভাসিয়ে দেয়। আমি পার্সোনালি রিয়াল মাদ্রিদের প্লেয়ার দের যেকোন সিচুএশোনে সাপোর্ট দেই.. কত কথা কাটাকাটি হইছে ফ্রেন্ড দের সাথে এ নিয়ে। আর সাকিব সেখানে নিজের দেশের প্লেয়ার। আর কোন কারন খুজতে যাইনি। আর আপনার কথার সাথে একমত। সাকিব এক সুন্দরী প্রবাসী মেয়ে কে বিয়ে করার পর থেকে ওর বিপক্ষে অনেক মানুষের রাগ অনেক বেড়ে গিয়েছে।

    জবাব দিন

মওন্তব্য করুন : মোকাব্বির (১৯৯৮-২০০৪)

জবাব দিতে না চাইলে এখানে ক্লিক করুন।

দয়া করে বাংলায় মন্তব্য করুন। ইংরেজীতে প্রদানকৃত মন্তব্য প্রকাশ অথবা প্রদর্শনের নিশ্চয়তা আপনাকে দেয়া হচ্ছেনা।