মেয়েটিকে ভাল লাগে – ১ম পর্ব।

মেয়েটিকে দেখলেই ভাল লাগে। সারাক্ষণ হাসে। “মুখের মাংসপেশী অবশ হয়না?” জিজ্ঞাসা করতে ইচ্ছা হয়। ইদানিং বেশ কিছু পুরোন প্রিয় রোমান্টিক গান ভাল লাগছে। মেয়েটিকে ভাল লাগার সাথে সম্পর্ক আছে কিনা ধরতে পারছি না। লাস্যময়ী সুন্দরী যেকোন মেয়ে দেখেই তো ভাল লাগে। সেদিনের কমলাপুর রেলস্টেশানগামী ট্রেনে উঠার জন্য দৌড় দেয়া মেয়েটি। সেও তো ভাল লাগা তৈরী করেছিল। শাড়ি পরে এভাবে এর আগে কাউকে দৌড়াতে দেখিনি। বাতাসে ছড়িয়ে যাওয়া সুগন্ধী মিলিয়ে আসার আগ পর্যন্ত ভাল লাগা বজায় ছিল। এরপরে যাত্রীর ধাক্কায় বের হয়ে এসেছিলাম এয়ারপোর্ট রেলস্টেশান থেকে। কিন্তু এই মেয়েটির ব্যাপারটা কি ভিন্ন? ফেইসবুকে নামের পাশে সবুজ বাতি দেখলেই ইচ্ছা হচ্ছে কথা বলতে। কিন্তু কোথায় যেন বাধা পাই। এরমাঝে একদিন দেখা হয়ে গেল বুয়েটের আশেপাশে, বান্ধবী নিয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছিল। রিকশা ভাড়া চুকিয়ে ছেড়ে দিয়েছিলাম। ব্যাপারটা যাতে বেশী বেহায়াপনা না দেখায় তাই কিছুক্ষণ কথা বলেই আবার চলে এসেছিলাম। সেই হাসি, ঝলমলে চুল, সেই একই অনুভূতি। প্রচুর কথা বলে। সেদিন দেখা হবার পরে বুঝতে পারলাম। বেশী কথা বলা মানুষ আমি পছন্দ করি না। কিন্তু ওর এত কথা ভাল লাগছে। হুম লক্ষণ ভাল না।

ল্যাপটপে ইদানিং নতুন করে ভালো লাগা ব্যান্ড হোয়াইটস্নেকের গান ছাড়লাম, ‘ফরেভারমোর?’ অনুভূতিগুলোকে গানের কষ্টিপাথর দিয়ে ঘষা দেয়ার অভ্যাস আমার বহুদিনের। ঢিমে তালের সুরের সাথে মাথা দোলাচ্ছি। শব্দ পেয়ে ঘরে মা ঢুকল। “ভাত খাবে না নাস্তা?” ঘড়িতে তাকিয়ে দেখি বারোর সাথে ত্রিশ বসে আছে। “কিছু একটা তো অবশ্যই খেতে হবে।” কি বুঝল জানি না কিন্তু ঘর থেকে বের হয়ে গেল। আমি আবার সুরের ভেতরে হারিয়ে গেলাম। ৪র্থ বার একই গান শুনছি ও ভালো লাগছে, এরমাঝে মায়ের কন্ঠস্বর শুনতে পেলাম, “খাবার দিয়েছি আস।”

পরোটা ও গরুর মাংস — হুম ইদানিং পেটপুজো বেশ ভাল হচ্ছে। আর মাস দেড়েক পরেই ছেলেটা মায়ের হাতের রান্না খেতে পারবেনা। হয়তো এই কারণেই প্রিয় খাবার গুলো ঘুরে ফিরে আসছে প্রায় প্রতিদিন। বিশ্ববিদ্যালয় জীবনে ব্যাচের একটি মেয়েকে পছন্দ করতাম। গতানুগতিক কাহিনীর আর্কাইভে আরেকটি সংযোজন হিসেবে মেয়েটা হয়ে গেলো সবচাইতে কাছের বন্ধু। জীবনের প্রথম প্রেম নাকি সবচাইতে মধুর হয়। দুই বছর আগেও এই কথা কাউকে বলতে শুনলে মাথায় খুন চেপে যেত। বিভিন্ন ঘটনা পরক্রমায় জীবনের সবচাইতে তিক্ত সময় ছিল বিশ্ববিদ্যালয়ের ওই চার বছর। কলেজ জীবনের আড়ষ্টতাকে ঝেড়ে ফেলে যতটুকু মেলে ধরতে চেয়েছিলাম ঠিক ততটুকুই গুটিয়ে যেতে হয়েছিল আমাকে। হৃদয়ের চেরোনোবিলের বিকিরণ সরে যেতে লাগলো আরো বছর দুয়েক। নতুন করে কাউকে ভাল লাগা কি সম্ভব? নাকি আরো সময় নিতে হবে আমার? ‘এত কিসের চিন্তা কর?’ মুখ তুলে তাকাতেই দেখি মা কফির মগ রাখছে আমার সামনে। উত্তরের অপেক্ষায় না থেকে চলে গেল রান্নাঘরে।

আড্ডা জমেছে এক বড় ভাইয়ের অফিসে। মুড়ি মাখা, চা আর সাথে তুমুল আড্ডা। মাঝে চোখ চলে যাচ্ছিল মুঠোফোনের পর্দায়। ক্ষুদেবার্তা চালাচালি করে যাচ্ছি গত এক ঘন্টা ধরে। সতর্ক দৃষ্টি যাতে বাকিদের চোখে পড়ে না যাই। একজন ঠিকই খেয়াল করলেন। একসাথে বাড়ি যাচ্ছিলাম হেঁটে।
‘গত এক দিনে কয়টি এসএমএস চালাচালী করা হয়েছে?’
‘আন্দাজ পঞ্চাশের মত হবে।’
‘একটা কথা বলি শোন। কিছু পরিস্থিতি আছে যেখানে কোন কিছু না করে মাথা চাপড়ানোর চেয়ে কোন কিছু করে অনুশোচনা করা ভাল। বাকিটা তোর সিদ্ধান্ত।’ উনার বাসার দিকে হাটা দিলেন। পকেট হাতড়ে সিগারেট পেলাম না। উনার কাছ থেকে রেখে দিতে পারতাম।

সিলেটগামী পারাবত এক্সপ্রেস ঢাকা ছেড়ে যাচ্ছে। আমি তৃতীয় কাপ ও চতুর্থ শলাকা নিয়ে বসে আছি লাইনের ঠিক পাশের দোকানে। ঝাঁপি নামানোর আগে এরকম খদ্দের পেয়ে দোকানদার বেশ আনন্দিত। উনি বেশ আগ্রহের সাথে আমার পরবর্তী কাপ ও শলাকা পরিবেশনের জন্য বসে আছেন। ‘তাহলে কি বলেই অনুশোচনা করব? আরেকটি প্রত্যাখ্যান কি আমাকে আহত করতে পারবে? গত ৬ বছরে একটি ব্যাপার বুঝেছি, সময় এক চমৎকার ঔষধ। অনেক ধীরে সারিয়ে তোলে কিন্তু ঠিকই তোলে। আর যদি পথ চলতে রাজি হয়? দেড় মাসের মাথায় সাড়ে সাত হাজার মাইল দূরে চলে যাব একি আদৌ টেকানো যাবে। দূরালাপনে, দূরত্বের প্রণয় নিয়ে সবাই ভ্রু-কুঁচকায়। এই জুয়ায় কি বাজি রাখব? মেয়েটি নাকি আমি নিজেই?’

মুঠোফোনের সুড়সুড়িতে দার্শনিক চিন্তাভাবনা থেকে বাস্তবে নেমে এলাম। ‘বাসায় আসার চিন্তাভাবনা কি করেছ?’ সামনে তাকিয়ে দেখি সেনানিবাসের দরজা বন্ধ করছে মিলিটারী পুলিস। রাত এগারোটা বেজেছে যত্তসব খিচুড়ি চিন্তার মাঝে। বিল পরিশোধ করে দিলাম দৌড়। শুধু দারিদ্র্য নয়, যেকোন ধরনের বিপদে পড়লে ভালবাসার দার্শনিকতা জানালা দিয়ে পালায়।

আগামী পর্বে সমাপ্ত

১,৪০৯ বার দেখা হয়েছে

১৪ টি মন্তব্য : “মেয়েটিকে ভাল লাগে – ১ম পর্ব।”

  1. আহমেদ ১৫২৯ (২০০৭-২০১৩) প.ক.ক

    ভালই লাগলো মন্দ না। :clap:
    একটু বেশি কড়া শব্দ ব্যবহার করেছেন ভাইয়া। 😛


    বারে বারে অবাক হই, আর দেখি ফিরে ফিরে
    কতটা বদলে গেছি এই আমি প্রতিটি পদে পদে.....................

    জবাব দিন

মওন্তব্য করুন : রাজীব (১৯৯০-১৯৯৬)

জবাব দিতে না চাইলে এখানে ক্লিক করুন।

দয়া করে বাংলায় মন্তব্য করুন। ইংরেজীতে প্রদানকৃত মন্তব্য প্রকাশ অথবা প্রদর্শনের নিশ্চয়তা আপনাকে দেয়া হচ্ছেনা।