সন্ত্রাসবিরোধী (সংশোধন) আইন ২০১৩ নিয়ে সম্পূর্ণ নিরাপদ(!!!) দূরত্বে থেকে কিছু কথা…

ফেইসবুক নোট থেকে কিছু সংযুক্ত-বিচ্চুতির পর তুলে দিচ্ছিঃ

সরকার ও সংবাদ মাধ্যমকে প্রস্তাবিত রামপাল বিদ্যুৎ কেন্দ্র নিয়ে শিরিষ কাগজ মোড়ানো বাঁশ দেয়ার জন্য একটি নোট লিখছিলাম। হঠাৎ চোখে পড়লো সম্প্রতি পাশ হওয়া সন্ত্রাসবিরোধী (সংশোধন) আইন, ২০১৩ এর সংবাদটি। রৌদ্রজ্জ্বল আকাশে বজ্রপাতের মত মজাদার দুটো নতুন সংযুক্তি হিসেবে রয়েছেঃ ক) জেলা ম্যাজিস্ট্রেট ও প্রশাসকের ক্ষমতা আরো খর্ব করা, এবং খ) ফেইসবুক, টুইটার, স্কাইপ, ইত্যাদি যেকোন যোগাযোগ মাধ্যমের তথ্য-উপাত্ত আদালতে সাক্ষ্যপ্রমাণ হিসাবে ব্যবহার করা। সূচনা লিখা নোটটি আস্তে করে মুছে দিলাম।

কথা বলবো মূলত দ্বিতীয় সংশোধনীটি নিয়ে। নতুন সংশোধনী নিয়ে আইনজ্ঞ ডঃ জহির স্যারের বরাবরের মত উপমা দিয়ে এই সংশোধনকে “শাঁখের করাত” এর সাথে তুলনা করে বলেছেন, “শাঁখের করাত যেতেও কাটে আসতেও কাটে।” স্যারের মতামত বরাবরের মত আমার মাথার অনেক উপর দিয়ে সীমানার বাইরে চলে গেলো। তবে স্যারের ইন্টারনেট বিষয়ে জ্ঞান এখনো কিছুটা অপরিপূর্ণ। ডঃ শাহদীন মালিক স্যার সন্ত্রাসী কার্যকলাপের সাক্ষ্যপ্রমান হিসেবে ফেইসবুক, স্কাইপ, টুইটারের তথ্য, ছবি, ও উপাত্ত আদালতে ব্যবহার করাকে ভালো চোখে দেখছেন। কিন্তু উনি বলছেন এই তথ্য-উপাত্ত প্রথমে কোন ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানকে সংগ্রহ করে রাখতে হবে যেটা সংবিধানের ৪৩ অনুচ্ছেদের লঙ্ঘন।

কথা সত্য তবে, মুঠোফোন, টেলিফোন, এবং স্কাইপে আড়িপাঁতা যন্ত্র স্থাপন করে আলাপচারিতা আগে থেকে রেকর্ড করা ছাড়া তথ্যউপাত্ত প্রমাণের আর কোন উপায় হয়তো নেই। অন্তত স্বল্প জ্ঞানে আমার জানা নেই। কিন্তু ফেইসবুকের Statement of Rights and Responsibility Page এ দ্বিতীয় বিষয় Sharing Your Content and Information সেকশানের দ্বিতীয় পয়েন্টে যে কথাটি বলা আছে সেটার মানে দাঁড়ায় “আপনি যখন ফেইসবুক থেকে কোন কিছু মুছে দিবেন সেটা অনেকটা কম্পিউটারের রিসাইকেল বিন খালি করার মত। আপনার জেনে রাখা ভালো এই ধরণের মুছে দেয়া তথ্য একটি নির্দিষ্ট সময়ের জন্য ব্যাক আপ হিসেবে থেকে যায়। তবে সেটা আর কারো কাছে উন্মুক্ত থাকে না।” আমি টুইটার এখনো দেখিনি তবে (আন্দাজ করা ঠিক না) ধারণা করা যেতে পারে তাদেরও প্রায় একই ধরনের Statement of Rights and Responsibilities আছে। ফেইসবুকের এই কথার পরিপ্রেক্ষিতে বলছি, স্যার চাইলেই কিন্তু বিচারকার্য শুরু হবার পর পরবর্তী তদন্তের সাথে আদালত থেকে অভিযুক্তের ফেইসবুক একাউন্টের তথ্য সংগ্রহের অনুমতি গ্রহণ করেই আগানো যেতে পারে। আগে থেকে তথ্য সংগ্রহ করা লাগছে না। তবে প্রাথমিক অভিযোগ প্রমাণের জন্য যদি এই ধরণের কোন তথ্য ব্যবহার করা হয়ে থাকে সেই ক্ষেত্রে সাংবিধানিক ব্যক্তিগত গোপনীয়তার অধিকার লঙ্ঘন হচ্ছে।

প্রশ্ন আসতে পারে, এই ধরনের মুছে দেয়া তথ্য কতদিন পর্যন্ত ব্যাক আপ হিসেবে থাকে? সেটা ফেইসবুক জানে। তবে সেটা যে একেবারে কম সময় নয় সেটা তাদের বলার ভঙ্গি দেখে কিছুটা আঁচ করা যায় (আবারো ধারণা করা একদম ঠিক নয়)

নতুন সংশোধনের গঠনমূলক সমালোচনা হিসেবে স্যারদের কাছ থেকে এই ব্যাপার গুলো বাদে আরো যেটা আশা করেছিলাম সেটা হলো অবকাঠামোগত দুর্বলতা তুলে ধরা। ডিজিটাল ফরেন্সিক একটি সূক্ষ্ম বিজ্ঞান। বাইরের দেশে স্পেশালাইজেশান থেকে শুরু করে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর পর্যায়ে মূল বিষয় হিসেবে ডিজিটাল ফরেন্সিক পড়ানো হয়ে থাকে। ডিজিটাল এভিডেন্স সংগ্রহ, সংরক্ষণ, বিশ্লেষণ করার মত অবকাঠামো আগে তৈরী করতে বলুন আপনারা। বাংলাদেশের আইন ও বিচার ব্যবস্থাকে ডিজিটাল ফরেন্সিক নিয়ে নাড়াচাড়া করতে বলা অনেকটা প্রথম বিশ্বযুদ্ধের বৈমানিকের হাতে এফ-১৮ হরনেট বা সুখোই তুলে দেয়ার মত অবস্থা।

“এই আইনের অপপ্রয়োগ। আরেকটি কালো আইনের সূচনা।” ইত্যাদি নৈরাশ্যবাদী চিন্তা এখন বাদ দিব। আজকে করব আশাবাদী চিন্তা। হয়তো বাস্তবায়ন হবে না। কিন্তু চিন্তা করতে দোষ কি? বড় ভাইয়ের বন্ধু সামিন ভাই একবার বলেছিলেন, “স্বপ্ন দেখতে তো পয়সা লাগে না। কেনো নিজেকে স্বপ্ন দেখা থেকে বঞ্চিত করবো?” প্রতিবছর পাশ করা কম্পিউটার সফটওয়্যার ও হার্ডওয়্যার ইঞ্জিনিয়ারের সংখ্যা নেয়ায়েত কম না। হয়তো তাদেরকে নতুন করে বিশেষ ডিগ্রী এখনি নেওয়ানো যাবেনা কিন্তু অতি-উৎসাহী মার্কিনিদের বললে নিজ গরজে এসে এই ছেলে-মেয়ে গুলোকে ডিজিটাল ফরেন্সিকে দক্ষ বানিয়ে দিয়ে যাবে এই ব্যাপারে আমি নিশ্চিত। সেই সুযোগ কাজে লাগিয়ে এই তরুণ সদ্য পাশ করা ছাত্রদের নিয়ে গড়ে তুলুন শক্ত সাইবার ক্রাইম ও ডিজিটাল ফরেন্সিক বিভাগ। যা বললাম তার অনেক কিছুই (সৎ) ইচ্ছার উপর। ইচ্ছা থাকলেই তখন বন্ধ হয়ে যাবে রামুর মত দুর্ঘটনা। বন্ধ হয়ে যাবে ইন্টারনেটে মুক্তি পাওয়া কোন গোপন ভিডিও। সাঈদিকে চাঁদে দেখার বুদ্ধি কে দিয়েছে সেটাও বের করে আনা যাবে। এবার আসি অপপ্রয়োগে। অপপ্রয়োগ করুন অসুবিধা নেই। কিন্তু অবকাঠামো গড়ুন তারপরে অপপ্রয়োগ করুন।

পুনশ্চঃ কারো মৃত্যু চাইনি। কারো ক্ষতি চাইনি। কিঞ্চিত কটাক্ষ ও উষ্কানিমূলক কথা থাকতে পারে কিন্তু এই লেখার জন্য নতুন সংশোধনীবলে জেলে যেতে হবে না আশা করি। 😀

দৃষ্টি আকর্ষনঃ ব্লগ এডমিন।

লেখার ক্যাটাগরীতে “আইন ও বিচার” বা এই ধরণের কোন কিছু যোগ করবার জন্য বিনীত অনুরোধ জানাচ্ছি।

৯৩৯ বার দেখা হয়েছে

৫ টি মন্তব্য : “সন্ত্রাসবিরোধী (সংশোধন) আইন ২০১৩ নিয়ে সম্পূর্ণ নিরাপদ(!!!) দূরত্বে থেকে কিছু কথা…”

মওন্তব্য করুন : দিবস (২০০২-২০০৮)

জবাব দিতে না চাইলে এখানে ক্লিক করুন।

দয়া করে বাংলায় মন্তব্য করুন। ইংরেজীতে প্রদানকৃত মন্তব্য প্রকাশ অথবা প্রদর্শনের নিশ্চয়তা আপনাকে দেয়া হচ্ছেনা।