ডায়েরীর পাতা থেকে উদ্ধার করা জঞ্জাল – ১০ (ক্যাডেট কলেজ – শেষ পর্ব)

২১ জুন ২০০৪
৬ আষাঢ় ১৪১১
মাঝে অনেকদিন ডায়েরী লেখা হয়নি বা হয়েছে সেটা আমার আপাদত মাথাব্যথা নয়। কিন্তু আজকে এই মুহুর্তে কিছু না লিখলে ব্যাপারটাকে স্মৃতির খাতায় নাম লিখাতে পারব না। আর মাত্র কয়েকটি ঘন্টা বাকি আছে। সমাপনী দিবস বলা চলে। যেই সমাপ্তি অনেকের কাছেই কাম্য নয়, যেই সমাপ্তির কথা চিন্তা করে বিষন্ন রাত কাটিয়েছি আমি, আমার মত অনেকে, যেই সমাপ্তি আবার অনেকের কাছেই প্রাণের চেয়ে বেশী কাম্য। যাই হোক ব্যাপারটা কিছুই না, আর কয়েক ঘন্টা পরেই কলেজ ছেড়ে চলে যাব আমরা। মির্জাপুর ক্যাডেট কলেজের ৩৬তম ব্যাচের কলাকুশলীরা।

ব্যাগ গুছানো, কলেজ থেকে দেয়া জিনিসপত্র, টাকা পয়সার আদান প্রদান শেষ করে দোতলার রুমে বসে আছি আমি, ফয়সাল, মঞ্জুর আর শাকেরীন। বাইরে ইতস্তত জুনিয়রদের আনাগোনা টের পাওয়া যাচ্ছে। মনের সুখে অথবা দুঃখে একটা সিগারেট ধরিয়েই ফেললাম রুমে বসে। এখন আর কিছু যায় আসে না। আর হলেও আমি এখন লেখা ব্যস্ত। অনুভূতিগুলো ঠিক ঠাওরে উঠতে পারছিনা। খারাপ লাগছে কি ভালো লাগছে। আমার আবার আরেক বিপদ। ব্যাচের এক ফ্রেন্ড নূরুল্লাহ (১৯১৬) এর সাথে বাজি ধরেছি যে বিদায় নেবার সময় আমি কান্নাকাটি করব না। যে হারবে ৩০০ টাকা। সেটাও মাথায় ঘুরপাক খাচ্ছে। একদিকে দুঃখ ভারাক্রান্ত মন নিয়ে ছোটভাইদের জড়িয়ে ধরে হাউমাউ করে মরা কান্না তথাপি আরো বিসন্নতা, ক্লান্তি এবং সম্ভবত মাথা ব্যথা শুরু হওয়া অন্যদিকে একটু সংযমের বিনিময়ে ৩০০ টাকার লোভনীয় হাতছানি। দেখা যাক। সময় বলে দিবে। এর পরের জীবনটা কি হতে যাচ্ছে সেটা নিয়ে একটু কল্পনা করার চেষ্টা করছি ঠিকই কিন্তু এই মুহুর্তে সেটা নিয়ে গুরু-গম্ভীর আলোচনায় না নামাই শ্রেয়। থাক শেষ করে দেই।

আজকের দিনটা মনে রাখার জন্যই লেখা এবং মনে রাখার মত পরিমানে লেখা হয়ে গিয়েছে আশা করি। আর কিছু লেখার খুঁজে পাচ্ছি না। একদম নিঃস্পৃহ লাগছে কোন একটা কারণে। শেষ করি আজকের মত। শুধু একটি ব্যাপারই ভিন্ন থাকবে। আবার কোনদিন লেখা শুরু করলে সেটা আজকের মত না অন্য কোন দিনের মত এইখানে, এই রুমে বা অন্য কোথাও যেখানে এতদিন লিখেছি, সেইসব জায়গায় আর লেখা হবে না তা নিশ্চিত করে বলতে পারছি। মির্জাপুর ক্যাডেট কলেজ, ক্যাডেট হিসাবে বিদায় নেবার সময় হয়ে গিয়েছে। দেখা হবে আবার কোন একসময় অন্য পরিচয়ে…

১,৬৬৬ বার দেখা হয়েছে

২১ টি মন্তব্য : “ডায়েরীর পাতা থেকে উদ্ধার করা জঞ্জাল – ১০ (ক্যাডেট কলেজ – শেষ পর্ব)”

  1. সেই দিন মনে হয় বুদ্ধি হওনের পরে সেকেন্ড টাইম কানছিলাম আমি। :((
    ইমিডিয়েট সিনিয়র যে কতখানি ইমিডিয়েট ছিলেন, সেইটা সেইদিন আপনারা চলে যাবার পরে ফিল করতে পারছিলাম। :((

    কলেজ থিকা আসার পরে আপনাদের ব্যাচের কয়েকজনের সাথে এখনো দেখা হয় নাই :((

    জবাব দিন
  2. মোকাব্বির (৯৮-০৪)

    নিজের ব্যাচের কয়েকটার সাথে আমার নিজেরই দেখা হয় নাই আর তুই কি দেখবি...!!!?? ওইগুলার সাথে এই জীবনে দেখা হইব কিনা সেটাও একটা চিন্তার বিষয়... :-B (সম্পাদিত)


    \\\তুমি আসবে বলে, হে স্বাধীনতা
    অবুঝ শিশু হামাগুড়ি দিল পিতামাতার লাশের ওপর।\\\

    জবাব দিন
    • ঈমানে কই ভাই, সাব্বির ভাইরে আমি দেইখা ডরাইছিলাম। হলি ফ্যামিলিতে একদিন চোখ খুইলা দেখি সামনে খাড়ায়া হাসতাছে।
      ধুরো, স্বপ্ন দেখতাছি মনে কইরা আমি আবার ঘুমাইতে লইছি, এমন সময় হ্যায় কতা কইয়া উঠছে। :))

      জবাব দিন
    • মোকাব্বির (৯৮-০৪)

      আমাদের তিনটারে একসাথে আড্ডা তে আবার বসানো মোটামুটি একটা অসম্ভব ব্যাপার...আর যদি সম্ভব হয় সেটা আগামী ৫/৬ বছরে হবে কিনা নিশ্চিত বলতে পারতেসিনা... :no:


      \\\তুমি আসবে বলে, হে স্বাধীনতা
      অবুঝ শিশু হামাগুড়ি দিল পিতামাতার লাশের ওপর।\\\

      জবাব দিন
  3. আশহাব (২০০২-০৮)

    ভাই, বাজিটা নাকি নূরুল্লাহ ভাই জিতছিলো??? 😀
    অনটপিক : কলেজের শেষ মুহূর্তটা কখনোই ভুলব না। কি করে ভুলি, এটা যে ভূলে যাওয়ার নয় |


    "Never think that you’re not supposed to be there. Cause you wouldn’t be there if you wasn’t supposed to be there."
    - A Concerto Is a Conversation

    জবাব দিন

মওন্তব্য করুন : মোকাব্বির (১৯৯৮-২০০৪)

জবাব দিতে না চাইলে এখানে ক্লিক করুন।

দয়া করে বাংলায় মন্তব্য করুন। ইংরেজীতে প্রদানকৃত মন্তব্য প্রকাশ অথবা প্রদর্শনের নিশ্চয়তা আপনাকে দেয়া হচ্ছেনা।