ডায়েরীর পাতা থেকে উদ্ধার করা জঞ্জাল – ৬

১২ অক্টোবর ২০০৩ রবিবার
আজকে শবে বরাত তাই ছুটি। সারাদিন ফাউল কাজ করে কাটিয়েছি। রুমে পোলাপান কার্ড খেলছে 29. ফয়সাল, মঞ্জুর, আনোয়ার, ওয়ালিউল্লাহ। হাসান বই পড়ছে জানি না কি। লাঞ্চ হচ্ছে আমি যাই নাই। বিরক্তিকর ডিম ভাজা। অলস দুপুর, গরম, বিদ্যুত নেই সকাল থেকে। ৬ ঘন্টা হতে চলেছে। এমনিতেই কলেজের জেনারেটার নষ্ট। শুরুতে ছিল দানব আকৃতির Rolls Royce এর। ওটা ফুরাতে নতুন একটা নিয়ে এসেছে যেটার ব্র্যান্ড কি জানি না। কিন্তু এসেই শুরু করে দিল যান্ত্রিক গোলযোগ। যাই হোক এখন মনে হচ্ছে কলেজ কর্তৃপক্ষ ইচ্ছা করে বিদ্যুত বন্ধ করে রেখেছে।
রুমে এখন ১২ জন অবস্থান করছে। আমরা ৪ জন বাদে বাকি সবাই অতিথি। এরা হচ্ছে ওয়ালিউল্লাহ, আনোয়ার, মাহমুদ, শফিকুল্লাহ, হাসান, রেজওয়ানুর, তাওহীদ, জাহিদ, পাঁচ জন সোহরাওয়ার্দি হাউসের আর বাকি তিন জন আমাদের মানে নজরুল হাউস। রুমে গরমটাও এই কারনে বেশী। ঘুমানোর চেষ্টা করা যেতে পারে। লাভ হবে না মনে হয়।
Tea বা ইফতারীর Rising bell দিয়েছে। গোসল করে এসেছি। ফ্রেশ লাগছে। দিনটা শেষ হয়ে গেল। ভাবছিলাম পড়াশুনা করব। বই খাতাও নিয়ে এসেছিলাম হয়নি। সামনে পাক্ষিক পরীক্ষা, আগামী টার্মে প্রি-টেষ্ট, টেষ্ট। কেমন জানি বিদায়ের গন্ধ পাওয়া যায়।

১৭ অক্টোবর ২০০৩ শুক্রবার
সকাল নয়টা বাজে। পড়াশুনা শুরু করার আগে কিছুটা লিখতে চাই। কিছুটা চিন্তিত আবার নিঃসন্দেহে গর্বিত। গত মঙ্গলবার আমাদের Immediate Senior দের HSC রেজাল্ট দিয়েছে। এককথায় রেকর্ড করেছে। সারা বাংলাদেশ থেকে ২০টি A+ এর মধ্যে MCC ৯টি, CCR ৩টি, RCC ১টি। ঢাকা বোর্ডে VNC আর NDC হাওয়া মে উড়তা যায়ে। খুব ভাল লাগছে কিন্তু চিন্তিত কেননা পরের ব্যাচটাই আমরা। তাই সবার দৃষ্টি এখন আমাদের দিকে। পোলাপান রেজাল্ট শোনার পর কেমন জানি ভড়কায়ে গেছে। প্রেপটাইমে চুপচাপ পড়াশুনা করে। এমনিতে physics এর সিলেবাস gear মারলেও শেষ হবে না। কেননা হাঁদা (জনাব হাসিম উদ্দিন – সহযোগী অধ্যাপক – পদার্থবিজ্ঞান) আছে এর পেছনে। এখন থেকেই পাগলের মত ছুটতে হবে শেষ করার জন্য। মনটা খুব খারাপ হয়ে গিয়েছিল পরেরদিনের খবরের কাগজ দেখে। প্রথম আলোতে দ্বিতীয় পৃষ্ঠায় সাদাকালো ৯টি ছবি আর ছোট একটু খবর আর Daily Star, The Independent এ ছবির কষ্ট করে নাই। এক লাইন করে লিখে দিয়েছে। আমরা কি বানের জলে ভেসে এসেছি নাকি Hollywood এর কোন ইংরেজী ছবির মত secret project এর গিনিপিগ। নাকি আমরা ঘৃণিত। পরে এক স্যার শান্তনা দেয়ার জন্য বোঝালেন যে ক্যাডেট কলেজ গুলোর সাথে media connection খুবই কম। এটা আর্মি হেড কোয়ার্টারের একটা পলিসি হলেও হতে পারে। যাই হোক কি আর করা।

১,৮০৪ বার দেখা হয়েছে

২১ টি মন্তব্য : “ডায়েরীর পাতা থেকে উদ্ধার করা জঞ্জাল – ৬”

  1. তৌফিক (৯৬-০২)

    কলেজের দিনগুলায় ফিরে গেলাম যেন।

    মোকাব্বির, ট্যাগে কলেজের নাম লাগাও। আন্তঃকলেজ প্রতিযোগিতা চলতেছে কোন কলেজের পোস্ট বেশি। পুরান পোস্টগুলাতেও লাগাইও।

    আর ব্লগে স্বাগতম, দেরী হইলেও। 🙂

    জবাব দিন
    • মোকাব্বির (৯৮-০৪)

      ফয়েজ ভাই এগুলো অনেক আগের লেখা। দিনলিপির মত তাই কিছুটা একঘেয়ে। বেশ কিছুদিন লেখার পর স্পৃহা হারিয়ে ফেলেছি। 🙁
      এগুলো শেষ করে আশা করি মৌলিক কিছু লিখতে পারব। 🙂


      \\\তুমি আসবে বলে, হে স্বাধীনতা
      অবুঝ শিশু হামাগুড়ি দিল পিতামাতার লাশের ওপর।\\\

      জবাব দিন
      • মোকাব্বির (৯৮-০৪)

        ফয়েজ ভাই আপনার কমেন্টের লাইন ধরতে পারি নাই। আমার আগের কমেন্টটা কে গ্রাহ্য করবেন না 😀
        আমি ঢাকা থাকি না। নরসিংদী কোর্টে ছাত্রত্ব করছি (উকিলদের ইন্টার্ন)
        সপ্তাহান্তে ঢাকায় এসে লেখে আবার চলে যাই। যেখানে থাকি সেখানে ইন্টারনেটের সুব্যবস্থা আছে ঠিক কিন্তু বাংলা লেখার প্রয়োজনীয় সফটওয়্যার নামাতে গেলে ভাল ঝামেলা পোহাতে হবে তাই কি আর করা। 🙁


        \\\তুমি আসবে বলে, হে স্বাধীনতা
        অবুঝ শিশু হামাগুড়ি দিল পিতামাতার লাশের ওপর।\\\

        জবাব দিন
  2. আহ্সান (৮৮-৯৪)

    মোকাব্বির,
    তোমার এই ডায়েরীর লেখাগুলো কারো কাছে একঘেয়ে লাগে কিনা জানিনা... তবে আমি এর প্রতিটি শব্দকে এনজয় করি... আমার ভেতরের অন্তরাত্মা দিয়ে... অনেক দিন আগের ফেলে আসা সেই দিনগুলোর জন্য মনটা হুহু করে ওঠে...

    অনেক ধন্যবাদ সে অনুভূতিগুলোকে জাগিয়ে তোলার জন্য... :hatsoff:

    জবাব দিন
  3. মোকাব্বির (৯৮-০৪)

    অসংখ্য ধন্যবাদ। আমি আসলে ফয়েজ ভাই এর কমেন্ট টা বুঝি নাই। যাই হোক যেমন এই এখন সকাল সাড়ে সাতটার বাসে চলে যাব নরসিংদী দেখা হবে আগামী বৃহস্পতিবার এবং আরেকটি লেখা। 🙂


    \\\তুমি আসবে বলে, হে স্বাধীনতা
    অবুঝ শিশু হামাগুড়ি দিল পিতামাতার লাশের ওপর।\\\

    জবাব দিন

মওন্তব্য করুন : তানভীর (৯৪-০০)

জবাব দিতে না চাইলে এখানে ক্লিক করুন।

দয়া করে বাংলায় মন্তব্য করুন। ইংরেজীতে প্রদানকৃত মন্তব্য প্রকাশ অথবা প্রদর্শনের নিশ্চয়তা আপনাকে দেয়া হচ্ছেনা।