ডায়েরীর পাতা থেকে উদ্ধার করা কিছু জঞ্জাল – ৫

৭ অক্টোবর ২০০৩, বৃহস্পতিবার
আজ বৃহস্পতিবার। আমরা বলি সাপ্তাহিক ঈদ। এখন যদিও আগের মত মজা হয়না। আগে প্রায় প্রতি সপ্তাহে ভিসিডি শো হত (যদিও আমি খুব কম দেখি বা দেখি না), ডিশ চ্যানেল থাকত। MTV, CMM, B4U কোনটা ছেড়ে কোনটা দেখব এই নিয়ে মারামারি লাগবার জোগাড়। এখন এসবের কিছু নেই। থাকে শুধু BBC, DD Metro, Channel-i, ATN Bangla। আমি মাঝে মাঝে BBC দেখে পন্ডিত সাজার চেষ্টা করি কিন্তু কতক্ষণ? VCD Show হয় মাসে একটা। আর প্রতি বৃহস্পতিবার কিছু একটা নিয়ে ব্যস্ত থাকতেই হয়। এই যেমন আজকে হাউস মাস্টার ইন্সপেক্‌শান। প্রয়োজনের বাইরে আমাদের আরেকটু বিরক্ত করা।

গত সাতদিন ধরে বৃষ্টি হচ্ছে। আমাদের আঞ্চলিক ভাষায় বলে গাদ্‌লা অর্থাৎ একটানা গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি। এখন অবশ্য বৃষ্টি নেই, থেমে গিয়েছে বেশ আগেই। আমাদের রুমটা দোতালায় তাই প্রচুর বাতাস। হঠাৎ দক্ষিন দিক হতে পানি পড়ার একটা ভোঁতা শব্দ শুনতে পেলাম। প্রথমে পাত্তা দেই নি। কিছুক্ষণ পরে বুঝলাম যে এটা আমাদের ক্যাডেট কলেজের অন্যতম মজার ও উপভৌগ্য প্রাকৃতিক দৃশ্য। ফাঁকা জায়গার প্রাচুর্যের কারনে এটা দেখা যায়। কলেজের বিশাল বর্গাকৃতির খেলার মাঠটি তার অন্যতম একটি উদাহরণ। বৃষ্টি যখন মাঠের উপর দিয়ে ধেয়ে আসে তখন পুরো ব্যাপারটা বোঝা যায় যে এই যে আসছে বড় বড় বৃষ্টির ফোঁটা। তারপর আস্তে করে মাথার উপর দিয়ে চলে যায় মানে পুরো বৃষ্টি শুরু হয়ে গেল। বাতাস এবং বৃষ্টি – চমৎকার। কলেজের আবহাওয়া এত tune করা বিশ্বাস করা যায় না।

গতকাল শুনলাম আমাদের ভাইস প্রিন্সিপাল স্যার আবু সাঈদ বিশ্বাস RCC তে বদলি হচ্ছেন। যমের মত ভয় পাই এই ভদ্রলোক, অনেকটাই psychotic কিন্তু তারপরেও কেন জানি মনটা খারাপ হয়ে গেল। ক্লাস XII এর যত সুযোগ সুবিধা, সাহায্য যতটুকু পারা যায় উনি করতেন (যদিও উনার বেতের কষা বাড়ি খাবার সময় আমাদের কারোই এটা মনে থাকে না।) উনার কারনে ফর্মের সবচেয়ে শয়তান ছেলেগুলোও প্রেপ্ট টাইমে পড়ায় মন দেয়। আমার যেটা ভয় যে নতুন ভাইস প্রিন্সিপাল এসে সবকিছু বুঝে নেবার আগেই আমাদের সময় ফুরিয়ে যাবে। HSC পরীক্ষার সময় সুযোগ সুবিধা কতটুকু পাওয়া যাবে তা নিয়ে আশঙ্কায় আছি। যাই হোক ক্যাডেট কলেজের system এটা। শিক্ষক বদলি হবেন, নতুন শিক্ষক আসবেন।

আজকে রাতে Special Dinner। খেয়াল হতেই মনটা বেশ ভালো হয়ে উঠল। ডিনার সেই রাত ৮ টায় কিন্তু মানসিক ও শারিরীকভাবে এখনই প্রস্তুত হচ্ছি। মাগরীবের prayer টা dodge মারা যায় কিনা ভাবছি। টি ব্রেকেও যাব না কেননা খাবার মত তেমন কিছুনা। শুকনা পানসে নুড্‌লস।

১,৪০০ বার দেখা হয়েছে

১৯ টি মন্তব্য : “ডায়েরীর পাতা থেকে উদ্ধার করা কিছু জঞ্জাল – ৫”

  1. আহ্সান (৮৮-৯৪)

    ২য়...
    কলেজের সে পোলাও, কাবাব, কিংবা চিকেন কারীর স্বাদ এখনো কেউ আমাকে দিতে পারেনি... আশ্চর্য্য ব্যাপার হলো, প্রায় ১৫ বছর হতে চললো, কিন্তু এখনো সে স্বাদ ভুলতে পারিনি...

    জবাব দিন
  2. আহসান আকাশ (৯৬-০২)

    লেখা ভাল ছিল মোকাব্বির... বৃহঃস্পতিবারের নামাজ নিয়মিত নাদ দেয়া শুরু করি ক্লাস ইলেভেন থেকে, তবে টি-ব্রেকটা মিস করতাম না, ঐ দিন পেটিস দিত, সপ্তাহের সেরা টি-ব্রেক।


    আমি বাংলায় মাতি উল্লাসে, করি বাংলায় হাহাকার
    আমি সব দেখে শুনে, ক্ষেপে গিয়ে করি বাংলায় চিৎকার ৷

    জবাব দিন
  3. মুসতাকীম (২০০২-২০০৮)

    মোকাব্বির ভাই পুরান কথা মনে করাইয়া দিলটা খান খান কইরা দিলেন 🙁 🙁 🙁
    চমৎকার লেখা :clap: :clap: :clap:
    আরো লিখেন আরো লিখেন :boss: :boss: :boss:


    "আমি খুব ভাল করে জানি, ব্যক্তিগত জীবনে আমার অহংকার করার মত কিছু নেই। কিন্তু আমার ভাষাটা নিয়ে তো আমি অহংকার করতেই পারি।"

    জবাব দিন
  4. সেই বিশ্বাস স্যারকে নিয়া আমার রোমহর্ষক কাহিনী আছে...
    সেইটা আসিতেছে আগামী মাসে 😛

    বিশ্বাস স্যারের জুতার তলায় পড়ছিলাম পর্যন্ত !!
    কী আজিব এই দুইন্না 🙁

    জবাব দিন

মওন্তব্য করুন : মোকাব্বির (১৯৯৮-২০০৪)

জবাব দিতে না চাইলে এখানে ক্লিক করুন।

দয়া করে বাংলায় মন্তব্য করুন। ইংরেজীতে প্রদানকৃত মন্তব্য প্রকাশ অথবা প্রদর্শনের নিশ্চয়তা আপনাকে দেয়া হচ্ছেনা।