ট্যালেন্ট শো

ট্যালেন্ট শো ………… ক্যাডট কলেজ জীবনে একটি অনন্য সাধারন ঘটনা।প্রতিভার সূর্য কিরনের উপযুক্ত লগ্ন………………সবার জন্য কি আসলেই তাই????!!!!

আমার মা এর খুব শখ ছিল তার ছেলে গান শিখবে………হলও তাই।খুব একটা মন্দ ও গাইতাম না।ক্যাডেট কলেজ আসার পর শুনলাম ট্যালেণ্ট শো এর কথা।নিজের প্রতিভা উপস্থাপনা করার জন্য এর থেকে ভাল সুযোগ আর নেই।আমার গাইডের কাছে শুনলাম তার ট্যালেন্ট শো এর গল্প।সেই শো তে তার ছিল সরব উপস্থিতি।তার গল্প শুনে ভাবলাম আমি ও কিছু করব……………গাইড বংশের একটা মান-ইজ্জতের বেপার আছেনা(ক্লাশ ৭ এর সেন্টীমেণ্ট)!!!!!যেই ভাবা সেই কাজ-গেলাম আমাদের বিখ্যাত ফর্মমাস্টার নানি(আনিস হাসিনা)এর কাছে।বল্লাম,ম্যাডাম আমি একটা প্যারোডি গান করব(কে জানত যে আমি আমার নিজের ই বিশাল প্যারোডি মঞ্চায়ণ করতে যাচ্ছি)।নানি বলল কি ধরনের প্যারোডি গান???আমি বললাম স্টাফরা ড্রিল করানোর জন্য যে প্যাঁদানি দেয় তা একটা ইংলিশ প্যারডী গানের মাধ্যমে উপস্থাপনা করব, আর গান টা মারব রিকি মার্টিন এর সেই বিখ্যাত “গোল গোল গোল” থেকে।এর সাথে স্টাফ আর ক্যাডেটদের ড্রিল গ্রাঊন্ডের দৃশ্য ও অভিনয় করে দেখানো হবে।আর এই গানের জন্য আমাদের দরকার হবে অবশ্যই একটা কী-বোর্ড এর,সাথে একটা ড্রাম আর গীটার হইলে খুব ই ভাল হয়।নানি বলল,বেশ তোমরা প্র্যাকটিস করতে থাক আমি বাকি সব ব্যাবস্থা করব।আমি ও আরেকজন সাথী জোগাড় করে ব্যাপক প্র্যাক্টিস শুরু করলাম কিন্তু কোন বাদ্যযন্র এর দেখা নাই!!!!!নানি রে বললেই আজ দিচ্ছি কাল দিচ্ছি বলে ঘুরাইতো।দেখতে দেখতে অবশেষে এল সেই মহেন্দ্রখন!!!!!!!-দিন তারিখ মনে নাই,করতে ও চাইনা।ওইদিন সকালে নানি ডেকে বলল কী-বোর্ড,ড্রামস,গীটারের কথা ভুলে যাও,তোমরা হারমোনিয়াম,তব্লা দিয়ে এই গান গাইবে!!!!!!!!!!!!!!হইতে পারি ক্লাশ সেভেন এর নাদান পোলা তাই বলে এই বোধ তো আছে যে ইংলিশ প্যারোডি গানের সাথে হারমোনিয়াম,তব্লা যোগ হইলে যে কক্টেল হইব তা বদহজমের ও অযোগ্য হবে-আমাজনের সবচেয়ে বর্বর জংলীর পেটে ও এটা হজম হইবনা।তাই নানি রে বললাম আমি গান গাইবনা।নানি বল্ল,”ছেলে এ এ এ এ এ কতবড় সাহস!!!!!!!শেষ বেলায় এসে বলে গান গাইবেনা!!!!ক্লাশ সেভেন এর ছেলে হারমোণীয়াম,তব্লা তে গান করবেনা তো কী-বোর্ড,গীটার এ গান করবে???!!!!!!হারমোনিয়াম,তব্লাতেই হবে তোমাদের গান”।

“shoot,shoot,shoot,100 meter shoot,

Touch&back 100 meter shoot.

If we cant do the drill well

Staff punish us as a bell…………….

………………………………………………..

…………………………………………………”

অবশেষে গাইলাম সেই গান,কি গাইলাম,কেমন হইল তা বলাই বাহুল্য।শূধু এতটূকূ বলতে পারি আমাদের অনেক সুন্দর সেই ট্যালেণ্ট শো কে নষ্ট করার জন্য এই গানের পর আর কিছু দরকার ছিলনা।এখনো বন্ধুরা আমাকে সেই গান নেয়া পঁচায়,বলে যে আমি ওইদিনের শো কে পন্ড করসি।আমি মেনে নেই।আগে খারাপ লাগত,এখন লাগেনা।কিন্তু আমি ওইদিন থেকে নানি কে ঘৃনা করি-আমি এই জাতীয় সকল মিথ্যাবাদী শিক্ষকদের ঘৃণা করি।ওইদিনের পর থেকে আর কখন ও ষ্টেজে গান গাইনি,কখন ও কাউকে বলতে যাইনি যে আমি গান পারি।জানিনা কখন ও হাউস ফাংশনে গাইতাম কিনা,কিংবা আন্তঃহাউস বা আন্তঃকলেজ প্রতিযোগীতায় অংশ নিতে পারতাম কিনা শুধু এটা জানি আমার ট্যালেন্ট শো এর রাতে একটি স্বপ্নের মৃত্যু হয়েছিল,একটি বীজ অঙ্কুরেই বিনষ্ট হয়েছিল…………………।

১,৩৬৮ বার দেখা হয়েছে

৮ টি মন্তব্য : “ট্যালেন্ট শো”

  1. আহসান আকাশ (৯৬-০২)

    আহা... এভাবে ট্যালেন্ট শোতে একটা ট্যালেন্টের অপমৃত্যু ঘটলো!!!

    হতাশ না হয়ে ক্লোজাআপ নং ওয়ান এর থিম সং কে নিজের থিম বানিয়ে আবার গাওয়া শুরু করো, যদি লক্ষ্য থাকে অটুট......


    আমি বাংলায় মাতি উল্লাসে, করি বাংলায় হাহাকার
    আমি সব দেখে শুনে, ক্ষেপে গিয়ে করি বাংলায় চিৎকার ৷

    জবাব দিন

মওন্তব্য করুন : সামিয়া (৯৯-০৫)

জবাব দিতে না চাইলে এখানে ক্লিক করুন।

দয়া করে বাংলায় মন্তব্য করুন। ইংরেজীতে প্রদানকৃত মন্তব্য প্রকাশ অথবা প্রদর্শনের নিশ্চয়তা আপনাকে দেয়া হচ্ছেনা।