একটি অবাস্তব স্বপ্নের বাস্তবগাথা

অদেখা স্বপ্নজগতে ঘুরবার স্বপ্ন দেখেছিলাম আমি। স্বপ্ন নতুন করে দেখা শিখিয়েছিলি তুই। জীবন নিয়ে সন্দিহান আমি কার্ড খেলাকেই সঙ্গী করে চালিয়ে নিচ্ছিলাম জীবন। তারপর একদিন হঠাৎ তোর ফোন। নারী প্রজাতির সাথে কথা বলায় পারদর্শিতার অভাব আমাকে সেদিন তোতলা বানিয়ে দিয়েছিল কয়েক মুহূর্তের জন্য। এরপরের কাহিনী যেন স্বপ্নের মতো। দেখলাম তোকে সিঁড়ি দিয়ে নামছিস। ইন্দ্রপুরীর পরীর রাজ্য থেকে যেন একটা পরী দিকভ্রান্ত হয়ে এসে পড়ল আমার রাজ্যে। ঐদিন কোন কথা বলতে পারি নি। শুধু তোর চোখের ভেতর হারিয়ে খুঁজছিলাম আমার সর্বনাশ।

‘‘ অ্যাই তুমি কথায় কথায় ইয়ে ইয়ে করো কেন ? ঠিকমতো কথা বল। এরপর আর একবার ইয়ে ইয়ে করবা তো কথাই বলব না আর। ’’

‘‘ সরি সরি আর হবে না। আসলে অভ্যাস নাই তো তাই এরকম হয়ে যায় আরকি। ’’

কথা বলা শিখলাম নতুন করে। সদা সাবধান থাকার অন্তহীন প্রচেষ্টা যেন ইয়ে শব্দটি মুখ দিয়ে বের না হয়। হ্যাঁ ভালবেসে ফেলেছিলাম তোকে ভীষণভাবে। কিছুই ইচ্ছে করতো না শুধু তোর সাথে বসে থাকা ছাড়া। মনে আছে এখনও সেই বৃষ্টিস্নাত দিনটি। বৃষ্টিভেজা স্নিগ্ধ মুখটির দিকে হা করে তাকিয়ে থাকা সেই মুহূর্তগুলো বিশ্বব্রহ্মাণ্ডের কোনও একখানে আজও হয়ত রক্ষিত আছে সযতনে। তোর সাথে থাকলেই কোথা হতে যেন এক তীব্র চন্দনের গন্ধ আচ্ছন্ন করতো আমায়। আজও যার রহস্য বের করা সম্ভব হয়নি আমার পক্ষে।

স্বপ্নডিঙাটা আমার ভাসতে লাগলো অনুকূল বাতাসে মুক্ত বিহঙ্গের মতো। মনে হতো আরে আমার জীবনের জন্যও সৃষ্টিকর্তা এতো আনন্দ মুঠো মুঠো হাতে ছড়িয়ে দিচ্ছেন কেন ? মৃত্তিকা নামটি খুব পছন্দ আমার। নামটি তাই মৃত্তিকাই দিলাম তোকে। একটা সমস্যা ছিল আমার। তোর সামনে আসলে কথা বলতে পারতাম না। তোর সামনে বোকা সেজে থাকতে ভালো লাগতো। মনে করতাম পৃথিবীটা এতো পঙ্কিল, অন্তত আমাকে যেন তুই নিস্তরঙ্গ পানির মতো অনুভব করিস। তোর সব কষ্টগুলো শুষে নিয়ে অনাবিল আনন্দে তোর জীবনটা ভরিয়ে দেবার অক্লান্ত পরিশ্রম আমার বিফলে যায়নি। ঠিকই তুই আবার হাসতে শিখলি, নাচতে শিখলি। তোর চঞ্চলতা আমার চারপাশে সুখের যে বলয় তৈরি করে আচ্ছন্ন করে রেখেছিল তার ঘোরে আজও দিশেহারা আমি। ছোট অবুঝ বাচ্চা সেজে থাকতাম যেন তোর উচ্ছলতায় বাঁধা হিসেবে আমার গম্ভীরতা উপস্থিত না হয়। আস্তে আস্তে বুঝতে পারলাম পৃথিবীটা তুই দখল করে নিচ্ছিস। ভাবতাম নিক না, তোরই তো সম্পত্তি সব। তোর গভীর চোখে কতো মহাবিশ্ব আবিষ্কার করেছি তার খবর কি তুই রাখিস ? একটা মুহূর্ত কথা না বলতে পারলে দম বন্ধ হয়ে আসতো। সেই দম বন্ধ হবার ভেতরেও সুখ লুকিয়ে ছিল।

হঠাৎ এসে পড়ল দুঃস্বপ্নের ছায়া। আমার পৃথিবী গুঁড়িয়ে দেবার আয়োজনে মত্ত চারপাশ। আমাকে একলা ফেলে চলে গেলি তুই। কোথায় আছিস কেমন আছিস কিছুই জানতাম না। শুধু জানতাম তুই অসুস্থ তাই দিনরাত প্রার্থনা যেন ভালো থাকিস তুই। রাস্তায় বের হতে পারি না, যেখানেই যাই তোর চন্দনের গন্ধ তাড়া করে বেড়ায় আমাকে। টেলিপ্যাথি ব্যাপারটায় আশ্চর্য বিশ্বাস জন্মে গেল হয়তো পারব তোর সাথে যোগাযোগ করতে। অন্তহীন কষ্টরাজ্যের রাজা আমি সেই যে অন্ধকারময় জগতে হারিয়ে গেলাম, আর খুঁজে পাই নি তোকে। একটার পর একটা উৎসবের দিন আসে আর আমি নিজেকে নেশার জগতে বিলীন করি যেন আজ অন্তত চন্দনের গন্ধটুকু তীব্র না হয়। কারো কোনও যুক্তি মানতে ইচ্ছে করে না, কোনও শক্তি কোনও দোহাই পারে না আমাকে সেই দহনজ্বালা থেকে বের করে আনতে। হাসপাতালের বিছানায় শুয়ে শুধু এইটুকু চেয়েছি যেন তোর স্নিগ্ধ কোমল হাত একটু ছুঁয়ে যাক আমার ললাটে। সৃষ্টিকর্তার কাছে দিনের পর দিন আকুল আবেদন মৃত্যুর। মৃত্যুও যেন তোরই মতো ছলনাময়ী। দূর হতে হাত নেড়েই আঁধারে লুকায় সে। মানুষ আমরা তাই আবার ফেরত আসলাম জীবনযুদ্ধের সম্মুখ কাতারে। তারপরও বাসে বসে নিজের গন্তব্য হারিয়ে কতদিন যে চলে গিয়েছি অজানা গন্তব্যে তা কেউ জানে না। আমার ভেতরের আমিকে হারিয়ে বসে আমি অবাক নয়নে সবার ছুটে চলা দেখেছি কতদিন। ছাদের কার্নিশ ঘেঁষে কতো রাত হেঁটেছি তা তুই জানবিও না কোনদিন। না কাউকে আসতে দেই নি এই জীবনে আর। কারণ বুকের মধ্যে পুরোটা জুড়েই মৃত্যুর নীরবতা। কাউকে জীবনে এনে তার মনটাও মৃত্যুপুরী বানাব কেন অযথা ?

৬ মাস, ১২ মাস, ২৪ মাস এমন করে কেটে গেল কতোগুলো বছর, দিবস, প্রহর, মুহূর্ত জানলামও না কখনো। মরীচিকার মতো তোকে দেখেছি বই এর পাতায়, দীঘির জলের প্রতিচ্ছবিতে, রিকশায়, স্বপ্নে, বাস্তবে আর পালিয়েছি অসহায়ের মতো। কিন্তু তোর দেখা পাই নি। তুই আমাকে কিছুই দিস নাই শুধু অন্তহীন কষ্ট ছাড়া। তোর চোখ হতে ঝরে পড়া অশ্রুবিন্দু এখনও সযতনে রেখে দিয়েছি টিস্যু পেপারের গভীর আণবিক বন্ধনে। আজীবন রাখব। একটা ছোট স্বপ্ন আছে শুধু। আমার মৃত্যুশয্যায় তুই আমার ললাটে তোর স্নিগ্ধ পরশ এঁকে দিচ্ছিস।

পরিশেষ

‘‘ অ্যাই সারা রাত না ঘুমিয়ে এরকম কেবলার মতো তাকিয়ে কি দেখ আমার দিকে ?

আর বিড়বিড় করে কি বকো ?

তুমি যে একটা আস্ত পাগল জানো তো ! কোন দুঃখে যে এই ছাগলকে বিয়ে করতে গিয়েছিলাম আল্লাহ জানে ! ’’

‘‘ কিছু না। এমনেই বকবক করি। জানই তো আমি পাগল।’’

বলি আর গোপনে অবাধ্য অশ্রুর ফোঁটা লুকাই। অনেক কষ্টের পর তোকে পেয়েছি। তোর জানার দরকার নেই কতটা পথ পাড়ি দিয়েছি আমি তোর জন্য। তুই শুধু আমার পাশে থাক আর আমাকে পাগল গালি দিয়ে বুকে মাথা রেখে ঘুমা। তাতেই জীবন চলে যাবে আমার। তোকে বড্ড ভালবাসি রে।

২,৩৬৫ বার দেখা হয়েছে

২২ টি মন্তব্য : “একটি অবাস্তব স্বপ্নের বাস্তবগাথা”

  1. মুসতাকীম (২০০২-২০০৮)

    দোস্ত অসাধারন :boss: :boss: :boss:


    "আমি খুব ভাল করে জানি, ব্যক্তিগত জীবনে আমার অহংকার করার মত কিছু নেই। কিন্তু আমার ভাষাটা নিয়ে তো আমি অহংকার করতেই পারি।"

    জবাব দিন
  2. দিবস (২০০২-২০০৮)

    উদ্দিন ব্লগে স্বাগতম,লেখা অনেক ভাল লাগছে,বিশেষ করে ভাষার প্রয়োগটা,তবে গল্পটা হঠাৎ শেষ করে দিলি।আলসেমীর ভাব প্রকাশ পাইছে :grr:

    এরপর আরো সুন্দর হ্যাপী এন্ডিং এর লেখা চাই 🙂


    হেরে যাব বলে তো স্বপ্ন দেখি নি

    জবাব দিন
  3. আহসান আকাশ (৯৬-০২)

    ব্লগে স্বাগতম মহিউদ্দিন, লেখাটা ভাল লেগেছে, বিশেষ করে শেষ টা। নিয়মিত লিখতে থাক :thumbup:


    আমি বাংলায় মাতি উল্লাসে, করি বাংলায় হাহাকার
    আমি সব দেখে শুনে, ক্ষেপে গিয়ে করি বাংলায় চিৎকার ৷

    জবাব দিন

মওন্তব্য করুন : মহিউদ্দিন (২০০২-২০০৮)

জবাব দিতে না চাইলে এখানে ক্লিক করুন।

দয়া করে বাংলায় মন্তব্য করুন। ইংরেজীতে প্রদানকৃত মন্তব্য প্রকাশ অথবা প্রদর্শনের নিশ্চয়তা আপনাকে দেয়া হচ্ছেনা।