অভিযান।

—————————–

মন, তুই প্রস্তুত হ। আজ আমাদের চিঠি ছেঁড়ার দিন।

নদীর পাশে যে হাতে গড়া পথ, তার একটু পশ্চিমে দাদুর বাড়ি।
ঘুণে ধরা সিন্দুকটায় দেখিস- আমার বুড়ো দাদু মৃত্যুর আগে সব সম্পত্তি দেয়ার পরও
আমার লেখা চিঠিদের রেখে দিল যতন করে- বুঝি বা
বুড়ো মরার পরে সেই চিঠি পড়বে দুই সেন্টিমিটার দূরে চোখ রেখে। কবরের আঁধারে শেষ চিঠিটা? –
সহস্র ক্রোশ দূরের।
“আমি চলে যাওয়ার আগে বিয়েটা কর্ দাদা ভাই! নাতবউয়ের হাতের রান্নাটা খেয়ে যাই!”
সেই শেষ চিঠির জবাব আমি দিয়েছিলাম, মন।

তুই সেই জবাব বুক পকেটে ভরে নিয়ে আয় আমার কাছে।

মন, যাস তুই শেফালীদের বাড়ি, ফিরতি পথে আসিস নিরুপমার বাড়ি হয়ে।
নিরুপমার মেয়েটাকে, ছেলে হলে আমার নামে ডাকা হতো যাকে, কোলে নিয়ে সময় দিস তাকে একটু।
বেচারী স্বামীর চোখে পড়বে না বলে- খুব গভীরে লুকিয়ে রেখেছিল আমার লেখা চিঠি।
এত গভীরে যে সেখানে আর চোখ বেঁধে ডুব দেয়া যায় না।
শেফালীকে বলিস, প্রেমের কাগজে লেখা চিঠির বান্ডিল তুলে দিতে।
আমার বারংবার রচনা করা ভুল শব্দ সব?, মন।

তুই সেই ভুলগুলো বুক পকেটে ভরে নিয়ে আয় আমার কাছে।

মন, পারবি তুই আমাদের বাড়ি যেতে? একটু কষ্ট হবে জানি, দুঃখ রা
বাবা মা’র শোবার ঘরে কাঠের আলমারি- দুই নাম্বার তাকে সব প্রয়োজনীয় কাগজপত্র, পাসপোর্ট।
ওখানে খুঁজে পাবি না তুই! আমার সব চিঠিগুলো মা – অথবা বাবা রেখে দিত
তিন নাম্বার তাকে। আমার অদ্বিতীয়তা লালন করার কী অদ্বিতীয় আকাংখা!
“তোমাদের ছেলে ভালো আছে মা, অথবা বাবা!”
আমার ভালো থাকার অগোছালো অপপ্রয়াস, মন!

তুই সেই ভালো থাকাটুকু বুক পকেটে ভরে নিয়ে আয় আমার কাছে।

এই পৃথিবীতে অনেকগুলো ঘর, বহু মানুষের হৃদয় কিংবা ব্যক্তিগত কাগজের সাথে-
ডায়েরীর ভাঁজে আমার চিঠি।
মন, তুই একটু যাস সবার বাড়ি। খুঁজে পেতে হাত জোড় করে নিয়ে আসিস তাদের।
আমার শুধু একটা ইরেজার লাগবে- সম্ভব হলে একটু আগুন, সব জবাব- সব ভুল- সব ভালো থাকার
অপপ্রয়াস আমি মুছে দেব। পোড়াবো আগুনে।

আমার এই স্মৃতিহীনতার স্মৃতিই না হয় থাকুক, নিয়ন্ত্রণাতীত পতনের সাথে।

——————————————–
১৭/০৪/২০০৯

১,০২৬ বার দেখা হয়েছে

৭ টি মন্তব্য : “অভিযান।”

  1. ফাহিম (৯৯-০৫)

    হুম্‌ম্‌ম্‌....
    :boss: :boss:
    তোর লেখার ব্যপারে কিচ্ছু বলার নাই বরাবরের মতই। :gulli2:
    কিন্তু আমারো প্রশ্ন ঐখানটায় অর্থাৎ প্রেক্ষাপট নিয়েই। হঠাৎ কি মনে করে?? :dreamy:

    জবাব দিন
  2. কামরুল হাসান (৯৪-০০)

    প্রভারে বাদ দিয়া আবার শেফালীরে ধরলি কবে? 😉

    লেখা বরাবরের মতোই। :thumbup:
    এইটুকু বললেই হবে তো? নাকি আরো প্রশংসা করতে হবে? 😀


    ---------------------------------------------------------------------------
    বালক জানে না তো কতোটা হেঁটে এলে
    ফেরার পথ নেই, থাকে না কোনো কালে।।

    জবাব দিন
  3. রাশেদ (৯৯-০৫)

    পরীক্ষা চলাকালীন সময়ে নতুন লেখা দেওয়া ফরয 😀
    তবে লেখাটা কেমন হইছে এইটা জানতে চাইলে আগেরবার যা লিখছিলাম তা পইড়া আয় :boss:


    মানুষ তার স্বপ্নের সমান বড়

    জবাব দিন

মওন্তব্য করুন : আদনান (১৯৯৪-২০০০)

জবাব দিতে না চাইলে এখানে ক্লিক করুন।

দয়া করে বাংলায় মন্তব্য করুন। ইংরেজীতে প্রদানকৃত মন্তব্য প্রকাশ অথবা প্রদর্শনের নিশ্চয়তা আপনাকে দেয়া হচ্ছেনা।