দে শ্যুট পিকচার্স। ০১

একেবারে ছোটবেলায় রুবেলের সিনেমা দেখতে বেশ ভালো লাগতো। কোন সিনেমার ‘শ্রেষ্ঠাংশে’ রুবেল থাকা মানে মুহুর্মুহু মারপিট।
আর ভালো লাগতো চম্পাকে। চম্পার হলুদ রং’এর একটা জামা ছিল, যেটা হাঁটু এবং কোমরের মাঝামাঝি গিয়ে শেষ হয়েছিলো। এই জামার নীচে ছি্দ্র ছি্দ্র করা এক ধরণের পোষাক।
ছোটবেলার সিনেমা মানে রোজিনা। ছোটবেলার সিনেমা মানে অঞ্জু ঘোষ, সোনিয়া ‘প্রমুখ চিত্রনায়িকারা’, যাদের উপরের পোষাক একটু নড়বড়ে পজিশনে গেলেই বুকের মধ্যে তালির আওয়াজ হতো।

তখন বিটিভিতে শুক্রবার জুম্মার নামাযের পর দেখানো হতো, ‘পূর্ণদৈর্ঘ্য বাংলা ছায়াছবি’। আর শনিবারে হতো, মুভি অফ দ্য উইক।

বলা যায়, ছোটবেলার সিনেমা মানে, সপ্তাহে একটা পূর্ণদৈর্ঘ্য বাংলা ছায়াছবি আর শুরু হওয়ার পর ঘুম ঘুম লাগা এবং কিছুক্ষণ পর একেবারেই ঘুম পাড়িয়ে দেয়া ‘মুভি অফ দ্য উইক’।

সিনেমায় নায়ক থাকে- নায়িকা থাকে- নায়িকার সখী থাকে- নায়কের একজন বন্ধু থাকে যে সবসময় ‘জোক’ করে আর নায়িকার সখীর সাথে ‘টাংকী’ মারার চেষ্টা করে। সিনেমায় মারামারি থাকে।
সিনেমায় গান থাকে- যে গানের সাথে নায়ক নায়িকা নাচানাচি করে এবং সে নায়িকারা রাতের বেলা বিছানায় কৈশোরের শয্যাসংগিনী হয়-

সিনেমার মূল উপাদান যে এসব কিছু না, তা বুঝতে পেরেছি পরে। ততদিনে হলিউডের মুভির সাথে পরিচয় ঘটেছে। জেট লি কিংবা জ্যাকি চ্যানের সিনেমা ভালো লাগতে শুরু করছে।

ক্লাস সিক্সে যখন টাইটানিক দেখলাম- তখন বললাম, লিওনার্দো ক্যাপ্রিও আর কেট উইন্সলেটের টাইটানিক।
বড় হয়ে একদিন শুনলাম, “ওটা আসলে জেমস ক্যামেরনের টাইটানিক।”
জানতে চাইলাম, “জেমস ক্যামেরন কে?”
শুনলাম, “জেমস ক্যামেরন ‘টাইটানিক’এর পরিচালক।”

বেশ তো।
আমার জানা হলো, একটা সিনেমার মূল হলো একজন পরিচালক। “পথের পাঁচালী” উপন্যাসের সৃষ্টিকর্তা যেমন বিভূতিভূষণ ব্যানার্জী- “পথের পাঁচালী” চলচ্চিত্রের সৃষ্টিকর্তা তেমনি করে, সত্যজিত রায়।

গত কয়েকবছরে অনেক সিনেমা দেখা হয়ে গ্যাছে। বেশ কয়েকজন চলচ্চিত্রকারের সাথে পরিচয় হয়েছে। তাদের অনেকের সিনেমা দেখে বুঝতে পেরেছি, চলচ্চিত্র শুধুমাত্র বিনোদনের চেয়ে আলাদা কিছু। মোদ্দা কথা, নিজেকে বেশ লায়েক দর্শক ভাবতে শিখেছি!

এ পোস্টে আমার প্রিয় কয়েকজন চলচ্চিত্রকারের কথাই ধারাবাহিকভাবে বলার চেষ্টা করবো।

আকিরা কুরোসাওয়া

একটা পরিত্যক্ত মন্দিরের সামনে দুজন লোক বসে আছে আর বৃষ্টি হচ্ছে উথাল পাথাল। উথাল পাথাল বৃষ্টিতে ভিজতে ভিজতেই তৃতীয় একজন হাজির হলো।
প্রথম দুইজন- যাদের একজন কাঠুরে এবং অন্যজন ধর্মপ্রচারক, তাদের মুখেই গল্পের সূচনা। উথাল পাথাল বৃষ্টির মাঝে হাজির হওয়া তৃতীয়জন গল্পের শ্রোতা।
গল্পের কেন্দ্রস্থল একটা পাহাড়ী রাস্তা। গল্পের প্রধান চরিত্র- কুখ্যাত ডাকাত তাজোমারু, একজন সামুরাই আর তার সুন্দরী স্ত্রী। যে গল্পে সামুরাই খুন হলো সে পাহাড়ী রাস্তার ধারে আর তার সুন্দরী স্ত্রী হলো ধর্ষিত।
ফ্ল্যাশব্যাকে দেখানো হয় এ গল্পই আদালতে বলা হচ্ছে। বর্ণনাকারী ছয়জন। ধর্মপ্রচারক, কাঠুরে, ধর্ষিতা স্ত্রী, জনৈক নিরাপত্তা রক্ষী, ডাকাত জাজোমারু এবং মৃত সামুরাইয়ের আত্না।
মজার ব্যাপার হলো- বর্ণনা গুলো ছয়রকম। এবং কোনটাই অবিশ্বাস করার মতন নয়।

গল্পটি ‘রাশোমান’ ছবির। আমার দেখা আকিরা কুরোসাওয়ার প্রথম ছবি। মূলত সিনেমার প্রথমে অসাধারণ বৃষ্টির দৃশ্য দেখেই চোখ আটকায়। পরে জানতে পারি, রাশোমান ছবির বৃষ্টির দৃশ্যটা ধারণ করতে গিয়ে ঐদিন কুরোসাওয়া সাহেব স্থানীয় পানির সাপ্লাই পুরোটাই শেষ করেন। পানির সাথে আবার ক্যালিগ্রাফিক কালি মেশান- বৃষ্টিপাতের ভারটা নইলে যে ‘পারফেক্ট’ হবে না!

শুধু ‘রাশোমান’ নয়। কুরোসাওয়ার বিভিন্ন ছবিতে বৃষ্টির দৃশ্যগুলো ছিলো সম্পূর্ণ আলাদা। তাঁর তথা বিশ্ব চলচ্চিত্রের আরেকটি অসামান্য ছবি- ‘সেভেন সামুরাই’এর শেষ যুদ্ধটা হলো ভয়ংকর বৃষ্টির মাঝে। ভয়ংকর সে বর্ষণ দেখে কে বলবে- এটা একজন মানুষের কাজ!

চলচ্চিত্রকার হিসেবে বৃষ্টির প্রতি কুরোসাওয়ার অন্যরকম ভালোবাসা ছিলো।
কুরোসাওয়ার নিজের প্রিয় পরিচালক জন ফোর্ডের সাথে একবার কুরোসাওয়ার দেখা হয়। ‘অলটাইম’ চোখে সানগ্লাস পরে থাকা ফোর্ড কুরোসাওয়াকে বলেন, “আপনি বৃষ্টি সত্যি ভালোবাসেন, না?”
কুরোসাওয়া একটু হাসেন “তার মানে, আপনি আমার সিনেমা বেশ মনোযোগ দিয়েই দেখেছেন!”

পরিচালক কুরোসাওয়ার বেশকিছু উপাধি রয়েছে। প্রত্যেকটা দৃশ্য ‘পারফেক্ট’ হতে হবে বলে, তাঁর নাম হলো ‘দ্য পারফেকশনিস্ট’। চলচ্চিত্র সৃষ্টির সময় স্বৈরাচারী হয়ে যেতেন বলে, নাম হলো ‘এমপেরর’।

নির্মাতা কুরোসাওয়া কোন দৃশ্য ধারণ করবার সময় ক্যামেরা অভিনেতা অভিনেত্রী‌র স্থান থেকে দূরে রাখতে পছন্দ করতেন। আশেপাশে একটা ক্যামেরা সর্বক্ষণ তোমার দিকে চেয়ে আছে- এর থেকে অভিনয় শিল্পীদের কিছুটা মুক্তি দেয়ার জন্য কুরোসাওয়ার এই ‘স্টাইল’।

কুরোসাওয়ার সিনেমার ‘স্টাইল’ দেখে মুগ্ধ হলাম।
‘রাশোমান’এর পর মুগ্ধতার সাথে মাথাও কিছুটা খারাপ করে দিয়ে গেলো- ‘ইয়োজিম্বো’ আর ‘সেভেন সামুরাই’।
এর মাঝে ‘ইয়োজিম্বো’ কিছুটা ওয়েস্টার্ন ধাঁচে করা। একজন প্রাক্তন সামুরাইয়ের লড়াইয়ের ছবি- শত্রুদের বিরুদ্ধে, যারা কিনা আবার দুইদলে বিভক্ত। ‘ইয়োজিম্বো’ থেকে অনুপ্রাণিত হয়ে পরবর্তীতে ছবি বানিয়েছেন- আমার প্রিয় একজন পরিচালক সের্জিও লিওনি। ছবির নাম- ‘এ ফিস্টফুল অফ ডলারস’ , খুব সম্ভবত।

‘সেভেন সামুরাই’ কে ‘এপিক ফিল্ম’ বলে ফেলা যায়। ‘সেভেন সামুরাই’ এমন একটা সিনেমা যেখানে সবকিছু আছে। চাষীদের এক গ্রাম শত্রুদের হাত থেকে নিজেদের রক্ষা করার জন্য “ভাত’এর বিনিময়ে সাতজন সামুরাইকে রাজি করায়। এরপর কখনো কিছুটা হাস্যরস- কখনো প্রেম- কখনো যুদ্ধ- কখনো ক্রন্দন। এবং কখনো বৃষ্টি।

যে বৃষ্টি কম্পিউটারের পর্দায় দেখলে বিশ্বাস করতেই হয়- একজন মানুষ- বৃষ্টি নামাতে পারে।

৪,২২৭ বার দেখা হয়েছে

৪৭ টি মন্তব্য : “দে শ্যুট পিকচার্স। ০১”

  1. আহ্সান (৮৮-৯৪)

    মহিব,
    দেশের বাইরের ছবি তেমন দেখা হয়না বললেই চলে, তাই এই বিষ্যে আমার কোন জ্ঞান নেই। কিন্তু তোমার লেখাটা একটানে পড়ে ফেললাম। সাবলীল বর্ণনার লেখাটি ভালো লেগেছে।

    জবাব দিন
  2. মুহাম্মদ (৯৯-০৫)
    যে বৃষ্টি কম্পিউটারের পর্দায় দেখলে বিশ্বাস করতেই হয়- একজন মানুষ- বৃষ্টি নামাতে পারে।

    আকিরা কুরোসাওয়াকে এর চেয়ে ভালোভাবে তুলে ধরা যেতো বলে মনে হয় না। খুব ভাল লিখেছিস মহিব। কুরোসাওয়ার বৃষ্টির দৃশ্যগুলো দেখলে কম্পিউটারের ভেতরে ঢুকে যেতে মন চায়। কুরোসাওয়া দেখার পর বাস্তবের বৃষ্টিতে আর ভিজতে ইচ্ছা করে না, ইচ্ছা করে সিনেমার মধ্যে ঢুকে বৃষ্টি দেখতে- ভেজার দরকার নাই শুধু দেখলেই চলবে।

    কুরোসাওয়ার কিছু উক্তি পড়েও খুব ভাল লেগেছিল। দুইটা শেয়ার করি- সত্যজিৎ আর কুরোসাওয়া দুজনই দুজনের সিনেমার ভক্ত ছিলেন। মহিব তো উক্তিটা জানিসই, অন্যদের জন্য লিখছি- কুরোসাওয়া বলেছিলেন,

    সত্যজিতের সিনেমা না দেখা মানে চন্দ্র-সূর্য না দেখে পৃথিবীতে থাকা।

    কিয়ারোস্তামি আর সত্যজিৎ দুজনকে নিয়েই কুরোসাওয়ার আরেকটা বিখ্যাত উক্তি হচ্ছে:

    সত্যজিৎ রায়ের মৃত্যুতে খুব কষ্ট পেয়েছিলাম। ভাবতেই পারছিলাম না যে, তাঁর নতুন কোন সিনেমা আর দেখা হবে না। কিন্তু এখন সে দুঃখ কিছুটা হলেও দূর হয়েছে। কারণ তাঁর জায়গা নেয়ার মত আরেকজন চলচ্চিত্রকার এসেছেন, তিনি হলেন আব্বাস কিয়ারোস্তামি।

    মহিব, সিরিজটা নিয়মিত চালাবি কিন্তু! দে শ্যুট পিকচার্স আমার প্রিয় মুভি সাইটগুলোর একটা। তোর সিরিজটা বাংলায় সেরকম একটা ওয়েবসাইটের অভাব অনেকটাই পূরণ করবে। পরের পর্বের অপেক্ষায় থাকলাম।

    ওহ হো, ইয়োজিম্বো নিয়ে কিছু না বলেও থাকতে পারছি না। কোন ওয়েস্টার্ন সিনেমাও এত ভাল লাগে নাই। আর এই সিনেমার অনুকরণে তো বোধহয় পৃথিবীর সব দেশই সিনেমা বানাইছে। হ্যা, উদাহরণ হিসেবে লেওনের "ফিস্টফুল অফ ডলার্স" এর কথা বলা যায়। এই সিনেমার সেরা উপহার ছিল "দ্য ম্যান উইথ নো নেইম"। এই থিমে করা সবগুলা সিনেমাই আমার অল টাইম ফেভারিট।

    জবাব দিন
      • মুহাম্মদ (৯৯-০৫)

        একদম ঠিক কথা। আমি আসল মিলটা একটু খোঁজার চেষ্টা করছিলাম। দুইটা মিল চোখের সামনেই দেখতে পাইছি:
        ১। দুজনের সিনেমার বিষয়বস্তুই হয় সাধারণ মানুষের জীবনাচার নয় এন্টারটেইনিং কিছু।
        ২। ফ্লুয়িডিটি (তারল্য)
        ফ্লুয়িডিটি শব্দটা নতুন শিখছি। সত্যজিৎ আর কুরোসাওয়া দুজনেই এমনভাবে সিনেমা এডিট করতো যে মনে হতো, একটা শটের পর আরেকটা শট তরল পদার্থের মত বয়ে চলেছে। কুবরিকের সাথে মেলালে বিষয়টা আরও ভাল বোঝা যায়। কুবরিক তার সিনেমায় বোধহয় তারল্যকে আশ্রয় দিতেন না। তার হঠাৎ কাট করে একেবারে ভিন্ন জগতে চলে যাওয়ার স্বভাব আছে যার কারণে আমাদের আবেগ বাধাগ্রস্ত হয়।
        কিন্তু কুরোসাওয়া-সত্যজিৎ-কিয়ারোস্তামি এই তিনজনের সিনেমাই তারল্যে ভরা।

        খানিকটা আঁতলামি হয়া গেল মনে হয়। 😛

        জবাব দিন
          • মুহাম্মদ (৯৯-০৫)

            হ্যা, মাজিদির সিনেমাতেও ব্যাপারটা আছে। মন শান্ত করতে চাইলে মাজিদির কোন বিকল্প নাই। প্রচণ্ড পিপাসার্ত মানুষের কাছে পানির যে স্বাদ আমাদের মত সিনেমাখোরদের কাছে বোধহয় মাজিদির সিনেমারও সেই স্বাদ।
            মাজিদির তারল্য অবশ্য কিয়ারোস্তামি থেকেই এসেছে। কারণ ইরানে ৩০-এর দশকে যে কবিতা আন্দোলন শুরু হয়েছিল সেটাকেই সিনেমায় নিয়ে এসেছেন কিয়ারোস্তামি আর মাখমালবফ। মাজিদিরা সেই ধারারই অনুসারী যাকে বলা হয় "ইরানিয়ান নিউ ওয়েভ" আন্দোলন। এই ধারার উপর বোধহয় আকিরা কুরোসাওয়া এবং সত্যজিৎদের অনেক প্রভাব আছে। তবে ইরানী সিনেমায় যে স্পিরিচুয়ালিটি দেখা যায় সেটা এসেছে ইংমার বারিমানদের কাছ থেকে। এত মহামতীদের স্বপ্নকে এক করার কারণেই মনে হয় ইরানিয়ান নিউ ওয়েভ আমাদের যুগের সেরা সৃষ্টি।

            জবাব দিন
  3. রাশেদ (৯৯-০৫)

    সিনেমার ব্যাপারে আমার জ্ঞান ঐ বাংলা সিনেমা পর্যন্ত কিন্তু এই লেখা টা পড়ে মনে হচ্ছে মাঝে মাঝে সিনেমা দেখা উচিত, ভাল সিনেমা।

    অফটপিকঃ ৯৯ এর সবাই কি আজকে শীত নিদ্রা ফেলে উঠে আসছে 🙂


    মানুষ তার স্বপ্নের সমান বড়

    জবাব দিন
  4. শওকত (৭৯-৮৫)

    বাহ। প্রিয় পরিচালক নিয়ে লেখা। নিয়মিত যেন লেখো। ফাঁকি দিও না।
    মনে আছে সত্যজিৎ রায় যেদিন মারা গেলেন সেদিন আপনজন হারানোর মতোই কষ্ট পেয়েছলাম।
    আর কুরোসাওয়া আমার কাছে এখনও বিস্ময়।

    জবাব দিন
  5. তারেক (৯৪ - ০০)

    আররে, তুফান পোস্ট!
    ফিল্ম নিয়ে আমার জ্ঞান গম্যি খুবই কম। এইটুকু সম্বল করেই ঢাঃবি-র ফিল্ম সোসাইটিতে ঢুকছিলাম। কিন্তু ওখানে গিয়ে টিকেট ম্যানের ছদ্মবেশে টিটোর রমণী-হাতের স্পর্শ লাভের বারোটা বাজানো ছাড়া আর কোন কাজ করি নাই। 😀

    নিয়মিত লিখবা অবশ্যই। আমাকে দেখে শিখো, কখনো ফাঁকিবাজি করবা না। 🙂


    www.tareqnurulhasan.com

    জবাব দিন
  6. মন্তব্য না করে পারলাম না। (আসলে আঁতলামো)
    আহা !! সেইসব দিনের কথা মনে পইড়া গেল। আমার জীবনের সেরা সময় কাটছে বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্র, জার্মান , রাশিয়ান কালচারাল সেন্টার, পাবলিক লাইব্রেরী আর জাদুঘরের মিলনায়তনে।
    কুরোসাওয়া আমার সবথেকে প্রিয় পরিচালক।
    ভাই 'Dreams' ছবিটা দেইখো। বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রে এইটা দেইখা আমার মাথা দুইদিন নষ্ট ছিল।
    মাঝখানে আবার জন ফোর্ড রে নিয়া আসলা।
    "How green was my valley" আমার জীবনের সেরা ম্যুভি গুলার মধ্যে একটা। এইটা অবশ্যই দেখবা।
    বহুত (আঁতলামো)হইছে আইজকা থাক।

    জবাব দিন
    • মুহাম্মদ (৯৯-০৫)

      ড্রিমস আমারও খুব ভাল লেগেছে। একেবারে অন্য এক জগতে চলে গিয়েছিলাম।
      ড্রিমসের প্রথম না দ্বিতীয় অংশে একটা অতিপ্রাকৃত নাচের দৃশ্য আছে, বনের মধ্যে। অন্য অনেকগুলোর মত এই দৃশ্যটাও ভোলার মত না। অনেকে বলেন, এই দৃশ্যটার সাথে সত্যজিতের "গুপী গাইন বাঘা বাইন" ছবিতে ভুতদের নাচের দৃশ্যের মিল আছে। এমনও হতে পারে ভুতের নাচকে সম্মান করেই কুরোসাওয়া ড্রিমসে এই নাচ যুক্ত করেছিলেন।
      ড্রিমসে ভ্যান গগের ছবির মত অংশটা দেখে মনে হচ্ছিল আমিও সেই ক্ষেতের মধ্যে আছি।
      একটা জায়গায় দেখেছিলাম ছবি ধীরে ধীরে চলচ্চিত্র হয়ে গেল।
      যোদ্ধাদের নিয়ে করা অংশটাও সেইরকম, জাপানে যুদ্ধের প্রভাব সংশ্লিষ্ট অনেক চেতনাই এখানে স্থান পেয়েছে।

      জবাব দিন
  7. এহসান (৮৯-৯৫)
    যে বৃষ্টি কম্পিউটারের পর্দায় দেখলে বিশ্বাস করতেই হয়- একজন মানুষ- বৃষ্টি নামাতে পারে।

    দারুন বলেছো ভাই। ব্লগটা ভালো লাগলো। তোমার আর মুহম্মদের মন্তব্যগুলোতেও আনন্দ পেয়েছি। :clap:

    এই পোলা তুমি সিসিবিতে এত কম লেখো কেনো?

    জবাব দিন
  8. আদনান (১৯৯৪-২০০০)

    বর্ণনাভংগীর কারণেই কুরাসাওয়ার মুভি দেখার উতসাহ পাচ্ছি । লিওনের ওয়েস্টার্ন কিছু দেখেছি । আমার মুভি দেখা পুরা জগাখিচুরী ধরনের । এই ব্যাটা মহিব তুই গল্প লিখিসনা কেন ?

    জবাব দিন
  9. আন্দালিব (৯৬-০২)

    জগতে দুঃখের শেষ নাই, 'রশোমন' দেখতে দেখতে ডিভিডি'টা আটকে গেলো। তারপরে আর এই মুভিটা দেখা হয় নাই। এখন সংগ্রহ করতে হবে আবার!

    চমৎকার পোস্ট। সিনেমার এমন পোস্টগুলো অনেক ভালো লাগে। আর শেষ লাইনের তুলনাটা অসাধারণ হয়েছে, মহিব।

    জবাব দিন
  10. কামরুল হাসান (৯৪-০০)

    আমার দেখা আকিরা কুরোসাওয়া'র ছবির তালিকা খুব ছোট । রাশোমোন, সেভেন সামুরাই, দেরসু উজালা, দ্য মেন হু ট্রেড অন দ্যা টাইগারস টেইল। এর মধ্যে প্রথম দু'টি ছবি সব সময়ের পছন্দের তালিকায় উপরের দিকে।

    নানা কারনে কুরোসাওয়া অনেকের চেয়ে ব্যতিক্রম। একই সঙ্গে একাধিক ক্যামেরা ব্যবহার করতেন। "টেলিফটো লেন্স" ব্যবহার করতেন অভিনেতার-অভিনেত্রীদের কাছ থেকে ক্যামেরাকে দূরে রাখার জন্যে, তার বিশ্বাস ছিলো ক্যামেরা অভিনেতার-অভিনেত্রীদের কাছ থেকে দূরে থাকলে তাদের অভিনয় ভালো হয়। তার সিনেমার পাত্র-পাত্রীরা সে থিউরি'র প্রমাণ দিয়েছেন ভালো অভিনয় করে। কস্টিউমের ব্যপারে খুব খুঁতখুঁতে ছিলেন, মনে করতেন, অভিনেতাকে সিনেমার শটের জন্য সম্পূর্ণ নতুন পোশাক দিলে বিষয়টা বাস্তবসম্মত হয় না, এজন্য অনেক সময় তিনি অভিনেতাদেরকে শুটিঙের এক সপ্তাহ আগে পোশাক দিয়ে দিতেন যাতে তারা সেটা পরে আগে থেকেই অভ্যস্ত হয়ে থাকে, বিশেষ করে 'সেভেন সামুরাই' ছবিতে তিনি নাকি প্রায় সব অভিনেতার সাথে এমন করেছিলেন কারণ এ ছবির লোকজন অধিকাংশই ছিল গরীব কৃষক, এ কারণে অভিনেতাদেরকে বারবার বলে দেয়া হয়েছিল, তাঁরা যেন কাপড় এমনভাবে পরে যে শুটিঙের সময় বোঝাই যায় সেটার অবস্থা ভালো না।

    তার একশ্যন দৃশ্য থেকে অনুপ্রাণিত হয়েছেন পরবর্তীকালে অনেক ওয়েস্টার্ন ছবির নির্মাতা। মার্শাল-আর্ট জনপ্রিয় করেছেন পৃথিবীময় দর্শকদের কাছে। সব মিলিয়ে কুরোসাওয়া'র তুলনা শুধুই কুরোসাওয়া।

    মহিব, সিরিজটা চলুক। আশা করি আরো অনেক প্রিয় পরিচালক সম্পর্কে জানতে পারবো।


    ---------------------------------------------------------------------------
    বালক জানে না তো কতোটা হেঁটে এলে
    ফেরার পথ নেই, থাকে না কোনো কালে।।

    জবাব দিন
  11. সানাউল্লাহ (৭৪ - ৮০)

    এই মুভি আতেঁলডা দিকি ফৌজদারহাটের (চরম সাম্প্রদায়িক মন্তব্য ~x( )!! এই ছেলে এতো কম লেখ কেন?? তোমাদের কারণে এই বয়সে আমার পা ব্যথা হইয়া গেল!! :hatsoff:


    "মানুষে বিশ্বাস হারানো পাপ"

    জবাব দিন

মওন্তব্য করুন : মুহাম্মদ (৯৯-০৫)

জবাব দিতে না চাইলে এখানে ক্লিক করুন।

দয়া করে বাংলায় মন্তব্য করুন। ইংরেজীতে প্রদানকৃত মন্তব্য প্রকাশ অথবা প্রদর্শনের নিশ্চয়তা আপনাকে দেয়া হচ্ছেনা।