তিন মুঠো মাটির সাথে সমস্ত হৃদয়…

তিন মুঠো মাটি, তিন রাউন্ড ভলি ফায়ার, বিউগলের অন্তিম সুর আর মরণোত্তর সালাম। ব্যাস, এভাবেই মেজর জেনারেল রফিক, লেঃ কর্নেল মঞ্জুর, লেঃ কর্নেল শহীদ আর কর্নেল গুলজারকে আজ শুইয়ে দিয়ে আসলাম চিরনিদ্রায়। কত সহজ!

কিন্তু এই চার শহীদ কি জানতে পারলেন, যে এই তিন মুঠো মাটি আর সালামের সাথে আমরা আমাদের সমস্ত ভালবাসা, শ্রদ্ধা, অশ্রু আর হৃদয়টাও দিয়ে দিলাম? নিশ্চয়ই আল্লাহ তাঁদের জানাবেন। _45526036_volley_ap_3001
*** *** *** ***
জলজ্যান্ত এক লিজেণ্ডকে সামনাসামনি দেখার সৌভাগ্য সবার হয়না। প্রায় দু’বছর আগে গুলজার স্যারকে যখন প্রথম আমার অফিসে দেখি, স্বাভাবিকভাবেই আশা করেছিলাম একজন গুরুগম্ভীর, স্বল্পভাষী ও রাশভারী মানুষকে। খুব কম সময়ে তিনি আমার ভুল ভাঙালেন। একজন সিনিয়র অফিসার হয়ে তিনি এমনভাবে আমার সাথে কথা বলা শুরু করলেন, যেন আমি উনার অনেকদিনের পরিচিত, যেন উনার সাথেই কাজ করে এসেছি এতদিন।col-gulzar-uddin-ahmed1

আমার একটা বাতিক আছে, কেউ আমার অফিসে এলে মোটামুটি জোর করেই আমাদের স্পেসাল কফি খাইয়ে দেই। স্বভাবসুলভ ভদ্রতায় অনেকেই না করেন। গুলজার স্যার প্রথম দিন থেকেই কখনও না করেননি। কখনও না করেননি আমার বাড়িয়ে দেয়া সিগারেটকে। দারুণ ব্যস্ততার মাঝেও চা/কফি অথবা সিগারেট দিয়ে পছন্দের মানুষগুলোকে কিছুটা সময় আটকে রাখার লোভকে আমি সম্বরণ করতে পারি না। পারি নি দেশের কাজে সবসময় ব্যস্ত গুলজার স্যারের ক্ষেত্রেও। কফি আর সিগারেটের ফাঁকে পেশাগত বিষয়ের বাইরে বিভিন্ন বিষয় নিয়ে গুলজার স্যার আমার সাথে কথা বলতেন। প্রফেশনাল ব্যাপার ছাড়া আমার অফিসে একাধিকবার উনার আসার প্রধান কারণ ছিল আমার বসের কাছে RAB এর অফিসারদের বাসস্থান এর ব্যাপারটা উত্থাপন করে একটা বিহিত নিশ্চিত করা। এই সমস্যাটা নিয়ে উনি যে কত আন্তরিক ছিলেন তা আমি নিজে দেখেছি।

সামান্য একটু বেশি ব্যস্ত হলেই আমার মেজাজ তিরিক্ষি হয়ে যায়। কিন্তু যে মানুষটার ব্যস্ততার ব্যাপ্তি আমি হয়তো কল্পনাও করতে পারি না বা পারব না সেই মানুষটা কিভাবে এত ঠাণ্ডা, নির্লিপ্ত আর সদা-হাস্যময় থাকতে পারে তা ভেবে আমি রীতিমত অবাক হয়েছি অনেকবার।

কর্নেল গুলজার সন্ত্রাসের রাজ্যে এক ভয়ংকর রূপ হতে পারেন, কিন্তু আমার কাছে তিনি এক অদ্ভুত মায়াময় হাসির অধিকারী হয়েই রয়ে যাবেন যতদিন বেঁচে থাকব।

স্যার, এই দেশের জন্য, অভাগা মানুষদের জন্য, সবার শান্তির জন্য অনেক ব্যস্ততায় দিন কাটিয়েছেন। অনেক তো হল। এবার একটু বিশ্রাম নিন। উই শ্যাল জয়েন ইউ সুন।

৫,০৭২ বার দেখা হয়েছে

৩১ টি মন্তব্য : “তিন মুঠো মাটির সাথে সমস্ত হৃদয়…”

  1. মাহমুদ (১৯৯০-৯৬)
    আমার কাছে তিনি এক অদ্ভুত মায়াময় হাসির অধিকারী হয়েই রয়ে যাবেন যতদিন বেঁচে থাকব।

    :boss: :boss:


    There is no royal road to science, and only those who do not dread the fatiguing climb of its steep paths have a chance of gaining its luminous summits.- Karl Marx

    জবাব দিন
  2. ফয়েজ (৮৭-৯৩)

    আমি ওনার কাছে ঋনী আছি, সুযোগ পেলেই শোধ দিব ইনশাআল্লাহ।

    :salute:

    কর্নেল গুলজার সন্ত্রাসের রাজ্যে এক ভয়ংকর রূপ হতে পারেন, কিন্তু আমার কাছে তিনি এক অদ্ভুত মায়াময় হাসির অধিকারী হয়েই রয়ে যাবেন যতদিন বেঁচে থাকব।

    :thumbup: :thumbup:


    পালটে দেবার স্বপ্ন আমার এখনও গেল না

    জবাব দিন
  3. সানাউল্লাহ (৭৪ - ৮০)
    এই তিন মুঠো মাটি আর সালামের সাথে আমরা আমাদের সমস্ত ভালবাসা, শ্রদ্ধা, অশ্রু আর হৃদয়টাও দিয়ে দিলাম

    কতোবার ভেবেছি, ঠিক করেছি RAB অফিসে যাবো। গেলে নিশ্চয়ই কর্ণেল গুলজারের মতো একজন দারুণ মানুষের সঙ্গে পরিচয় হতো। :salute:


    "মানুষে বিশ্বাস হারানো পাপ"

    জবাব দিন
  4. আজ এই প্রথম এই ব্লগ এর খোজ পেলাম. কিভাবে যে পেলাম এত গুলা লেখা পরার পর মনে করতে পারছিনা. মনে পরতেসে আমি তখন ক্লাস নাইনে বা তেন অ পরি. RAB এর সাফল্য দেখে আমি তো খুব এ খুশি. পেপার অ যখন কর্নেল গুলজার এর ইন্টার ভীউ পরতাম মনে হত এই লোক পারবে. আজ তার এই অবস্থার কথা পরে কিসু বলতে পারতেসিনা. আজ আমি দেশে নাই. মনে হয়না কখনো ফিরতে পারব . কিন্তু নিজের উপর লজ্জা হয় যখন দেখি যে দেশের জন্য কিসুই করিনাই কখনো. এত টুকুই সান্তনা যে হয়ত আমাদের প্রবাসীদের পাঠানো টাকা তে দেশের ইকোনমি কিসুটা ভালো হবে. আমাকে মাফ কইরা দিয়েন আপনারা যারা দেশে আছেন কারণ আমি দেশের জন্য directly কিসু করতে pari নাই. but মনে রাখেন আপনারা যারা দেশে আছেন তারা যদি কিসু না করেন এই সন্ত্রাস ও বেকারত্বে নিমগ্ন দেশের জন্য, এই প্রবাসী আমি ও আমাকে মাফ করতে পারবনা

    জবাব দিন

মওন্তব্য করুন : ফয়েজ (৮৭-৯৩)

জবাব দিতে না চাইলে এখানে ক্লিক করুন।

দয়া করে বাংলায় মন্তব্য করুন। ইংরেজীতে প্রদানকৃত মন্তব্য প্রকাশ অথবা প্রদর্শনের নিশ্চয়তা আপনাকে দেয়া হচ্ছেনা।