দুঃসহ একটা জীবন কাটানোর মাঝেও সিসিবি তে উকি-ঝুঁকি দিয়েছি বেশ ক’বার। মনের টানের একটা ব্যাপার থেকেই যায়। কিন্তু ফিরে আসা বলতে যা বোঝায়, ঠিক তা করতে পারিনি। পারবও না। সিসিবি তে কাটানো কিছু চমৎকার সময়ই আমার ফিরে আসার পথে বড় বাধা।
২০০৯ সালে আমি যখন সিসিবি নেশায় মত্ত, যখন সানাউল্লাহ ভাই, মাসরুফ, রকিব, জুনায়েদ, তাইফুর, জিহাদ, কাইয়ুম আরও অনেকের পোস্ট আর মন্তব্য পড়ে একা একা হাসতাম, আমার ঘাড়ের পেছন থেকে উকি দিয়ে সিঁথি (আমার স্ত্রী) বলতঃ ‘কি কর? কেন হাসছ? কি লিখেছে এখানে?’ আমি হাসতাম কিন্তু ওর কোন প্রশ্নেরই উত্তর দিতাম না। এক সময় রাগ করে বলত, ‘তুমি থাক তোমার ক্যাডেট কলেজ নিয়ে – আমি গেলাম’
সিসিবি তে আসলেই ওই কথাগুলো মনে পড়ে যায়। তাই আসি না। কিংবা আসলেও লিখিনা কোন কিছুই।
২০১০ সালের ৩০ জানুয়ারি আমার পৃথিবীকে লণ্ডভণ্ড করে, সাধ আর স্বপ্নগুলোকে চুরমার করে, অনুক্ত কথাগুলো না শুনে আর আমার জীবনকে বড় বেশি অগোছালো করে সিঁথি চলে গেল। ১৫-২০ মিনিটের শ্বাসকষ্ট আর ২-৩ মিনিটের অফিসার মেস থেকে সি এম এইচ পর্যন্ত যাত্রার মধ্যে শেষ হয়ে গেল আমাদের ১০ বছর ০ মাস ১ দিনের সংসার। সি এম এইচে যখন আমাকে টেনে-হিঁচড়ে আই সি ইউ থেকে বাইরে নিয়ে যাচ্ছিল, আমি চিৎকার করে বলেছিলামঃ ‘Push me an injection and kill me please – আমাকে একটা ইনজেকশন দিয়ে মেরে ফেল’। আল্লাহ সাক্ষী আমি ওই কথাটা মন থেকেই বলেছি।
আল্লাহর দুনিয়ায় এত বাতাস, কিন্তু আমার সিঁথি সামান্য একটু বাতাসও বুক ভরে নিতে পারল না!
১০ বছর এক দিন – সব শেষ। এর কিছুদিন পরে ঢাকা থেকে যশোরে গিয়ে, নিজের হাতে সিঁথির সাজানো-গোছানো, টিপটপ-ছিমছাম সংসারটা ভেঙ্গে ট্রাংকে ভরে ফেললাম। নিজের সংসারকে নিজে হাতে ভেঙ্গে ফেলা কত তীব্র কষ্টের তার অনুভূতি যেন আমার শত্রুরও না হয়!
মানুষের পেশাগত জীবনে (স্পেশালি আর্মিতে) প্রমোশন একটা বড় অর্জন – একটা বড় আনন্দ। প্রমোশনের পর বাসায় ফিরলে একজন কি তার স্ত্রীকে আবেগে আর আনন্দে জড়িয়ে ধরে – স্ত্রী কি স্বামীর পা ছুঁয়ে সালাম করে – তারা দুজন কি সেদিন বাইরে কোথাও ঘুরতে কিংবা ডিনার করতে যায়?
গত অক্টোবরে ঘটে যাওয়া ঘটনাটা থেকে এইসব অনুভূতির ব্যাপারটা আমি বুঝতেও পারলাম না – প্রশ্নগুলোর উত্তরও জানা হল না।
আমি বিশ্বাসীদের দলে। আমি হয়তো আল্লাহর পছন্দের বান্দা নাও হতে পারি, কিন্তু আমি জানি – আমার এই অভাগা বউটির জন্য কত মানুষ কেঁদেছে, কত মানুষ দোয়া করেছে। শত মানুষের মাঝ থেকে একজোড়া হাতও কি আল্লাহ কবুল করবেন না?
জীবনটাকে ঠেলে-ধাক্কা দিয়ে টেনে নিয়ে যাচ্ছি। মাঝে মাঝে মনে হয় – I’ve lived my life – enough! You can take me away ye Merciful, ye All-knower!
একটা ছোট্ট অভ্যাস গড়েছিলাম। রাস্তায় ছুটে যাওয়া এম্বুলেন্স দেখলেই আমি মনে মনে একটা ছোট্ট প্রার্থনা করিঃ ‘হে আল্লাহ, এই এম্বুলেন্সের ভেতরে যিনি আছেন, তাকে তুমি সম্পূর্ণ আরোগ্য দান কর’। এই প্রার্থনাটা আমি নিজের জীবনে করতে পারিনি। আমি ওকে নিয়ে আমার গাড়িটা ড্রাইভ করছিলাম আর ব্যস্ত ছিলাম ওর হাত ধরে সান্ত্বনা দিতে – ‘এইতো একটু কষ্ট কর, সি এম এইচ সামনেই – এসে গেছি’।
জীবনে পাপ হয়তো করেছি বিস্তর। কিন্তু কারও হক নষ্ট করিনি, হারাম অর্জন করিনি-করতে চাইওনি। মা হবার স্বপ্নে বিভোর থাকা আমার স্ত্রীর কোলে একটা সন্তান দেবার জন্য কায়মনোবাক্যে আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করেছি।
আমার সমস্ত পাপের শাস্তি দিয়ে আমার ছোট্ট ভালোগুলোর জন্য কি আল্লাহ আমার প্রার্থনাটি শুনবেন নাঃ
হে আল্লাহ, তুমি আমার সিঁথিকে জান্নাতুল ফিরদৌস নসীব কর, আমার সাথে কাটানো তার জীবনের সমস্ত অপূর্ণ আশা পূরণ করে দিও আর আখিরাতে আমাদের দুজনকে আবার একসাথে থাকার সৌভাগ্য দিও
আমি মানুষের দোয়ায় বিশ্বাস করি – প্রচণ্ডভাবে বিশ্বাস করি। তাই আমার হতভাগ্য, ক্ষনজন্মা, সরল, সৎ ও মিতভাষী স্ত্রীটির জন্য আমার এই দোয়াটা যাতে আল্লাহ কবুল করেন সে জন্য সবার দোয়া ভিক্ষা করে বেড়াই। আপনাদের সবার একাগ্র প্রার্থনার একটা মিনিট কি পেতে পারি আমি?
পুনশ্চঃ সিঁথির জীবনের শেষ দিনটিতে আমরা দুজন যাত্রাপথে থেমেছিলাম, ঝিনাইদহ ক্যাডেট কলেজের ক্রিকেট মাঠে প্রিন্সিপ্যাল আর এডজুটেণ্ট এর আতিথেয়তায় চমৎকার কিছুক্ষণ সময় পার করেছি। ভ্রমণপ্রিয় সিঁথির জীবনের শেষ চমৎকার অনুভূতি ছিল সেটি। কৃতজ্ঞতা ঝিনাইদহ ক্যাডেট কলেজ, প্রিন্সিপ্যাল, এডজুটেণ্ট আর মেস ওয়েটার আকতার ভাইকে (তাঁর দেয়া চা আর সিঙ্গাড়ার জন্য)
[এই লেখাটা সি সি বি সদস্য/পাঠকদের জন্য। অন্য কোথাও শেয়ার না করার জন্য বিনীত অনুরোধ করছি]
Ami amar mon er govir tomo jayga ta theke prarthona korchi.............
''ALLAH..... TUMI VABI KE JANNATUL FERDOUS NOSIB KORO........''
ইউসুফ (তোমাকে তো অ্যাডজুটেন্ট বলেই ডেকেছি, তাই না) তোমার সমব্যথী কখনোই হতে পারবো না। তবে জেনে রেখো, তুমি আমাদের মধ্যে সবসময়ই আছো। ব্লগে এখনো কেউ নতুন এলেই তোমার কথা সবাই বলে। আমাদের আনন্দের সব দারুণ সময়গুলো....... সত্যি ভীষণ মিস করি। কতোদিন দেখা হয় না তোমার সাথে, তবুও সব গেট-টুগেদারে তোমাকে নিয়ে কথা হয়। আমরা সবাই তোমাকে ভালোবাসি অ্যাডজুটেন্ট।
তুমি যে সময় পার করছো, শুধু একটাই কামনা- এই ব্যথা বহন করার শক্তি অর্জন করো সিঁথির সঙ্গে তোমার কাটানো সব ভালোলাগার স্মৃতি নিয়ে। ভালো থেকো, অনেক ভালো থেকো।
"মানুষে বিশ্বাস হারানো পাপ"
আল্লাহ পাক ভাবিকে বেহেশত নসিব করুক.....আমিন
নিশ্চয় শুনবেন, এবং ইনশাআল্লাহ আপনারা দুজন একসাথে অনেক অনেক ভালো ভালো সময় কাটাবেন।
আরেকটা কথা, ইয়ে মানে ভাইয়া, মানে এডজুটেন্ট স্যার, আপনি কি প্রমোশন পাইছেন নাকি?
খাওয়াবেন না?
পালটে দেবার স্বপ্ন আমার এখনও গেল না
অন্তরের অন্তঃস্থল থেকে প্রার্থনা করি ভাবির জন্য ......
আপনাকে অনেক মিস্করি...
আল্লাহ তায়ালা ভাবীকে জান্নাত নসিব করুন। দোয়া করি, আপনারা আবার একসাথে থাকতে পারবেন ইনশাল্লাহ।
ভাইয়া, আপনার কষ্টের সামান্য ভাগও উপলব্ধি করবার মতো ক্ষমতা কিংবা সাহস আমার নেই। কিছু কিছু শূন্যটা কখনোই পূরণ হবার নয়। তবু জেনে রাখবেন, আমরা আপনার পাশে আছি সবসময়।
আমি তবু বলি:
এখনো যে কটা দিন বেঁচে আছি সূর্যে সূর্যে চলি ..
অনেকদিন পর..
কিছু বলার নেই। এমন সময়গুলোতে কিছু বলার থাকেনা। ভালো থাকুন।
সাতেও নাই, পাঁচেও নাই
আল্লাহ তাঁর প্রিয় বান্দাদের নাকি আগে আগেই কাছে ডেকে নেন। ভাবী ভালো থাকুন যেখানেই থাকুন।
এরকম লেখায় বলার কিছু থাকে না। শুধু বলবো, মঙ্গল হোক।
আমার বন্ধুয়া বিহনে
এরকম লেখায় আসলেই বলার কিছু থাকে না। আপনার কষ্ট বুঝবার বিন্দুমাত্রও ক্ষমতা নেই। শুধু প্রার্থণা যেখানেই থাকুন ভাবী ভালো থাকুন।
আল্লাহতা'লা সকলকে শান্তি দিন।
অনেকদিন পর ইউসুফ ভাই। এইসব লেখায় বলার মত কিছুই থাকে না শুধু বলি ভাবী যেখানেই থাকুন ভাল থাকুন
মানুষ তার স্বপ্নের সমান বড়
সামনা সামনি দাঁড়িয়ে অনেক কথা বলা যায় না ...
এখানে হয়ত লেখা যায় ...
আমার দেখা অসম্ভব কিছু ভাল মানুষের তালিকায় একই পরিবারের দুই ভাই আছেন ... যারা সেনাবাহিনীর সীমাবদ্ধতাকে অসীমে নিয়ে গেছেন ... এরা মানুষ নন, অতি-মানুষ ... তাই হয়ত তাদের কষ্টের পরীক্ষা দিতে হয়।
পথ ভাবে 'আমি দেব', রথ ভাবে 'আমি',
মূর্তি ভাবে 'আমি দেব', হাসে অন্তর্যামী॥
... ... ... ...
পথ ভাবে 'আমি দেব', রথ ভাবে 'আমি',
মূর্তি ভাবে 'আমি দেব', হাসে অন্তর্যামী॥
.................
অবশ্যই পেতে পারেন।আর কি লেখা উচিৎ ঠিক বুঝতে পাচ্ছিনা। 🙁
প্রার্থনা করি আল্লাহ আপনার দোয়া কবুল কউক।
আমি বাংলায় মাতি উল্লাসে, করি বাংলায় হাহাকার
আমি সব দেখে শুনে, ক্ষেপে গিয়ে করি বাংলায় চিৎকার ৷
ইউসুফ ভাই ভাবির জন্য আমার হিংসা হয়... আপনি তাকে কি প্রচণ্ড
ভাবে ভালবাসেন ... ভাবির জন্য মনের গভীর থেকে দোয়া করি যেন আল্লাহ তাকে শান্তিতে রাখেন...
কাল লেখাটা পড়েছি। মন্তব্য করতে পারিনি। আজো মনে হয় পারব না।
আল্লাহ ভাবীকে ভাল রাখুক। বেহেস্ত নিসীব করুক।
চ্যারিটি বিগিনস এট হোম
লেখাটা পড়ে কমেন্ট করা যে কত কঠিন তা বুঝতে পারছি। ভাইয়া অনেক অনেক ভাল থাকবেন। (আপনাকে মনে হয় কখনো ভাইয়া ডাকিনি। এডজুট্যান্ট নামেই থাকেন সবসময় আমাদের সাথে)।
ভাইস্যার,
সালাম।
অ-নে-ক দিন পরে আপনার লেখাতে কমেন্ট করার জন্যই শুধু লগ ইন করলাম...
আল্লাহ্ এই অধম বান্দা-র দোয়া কবুল করবেন কি না জানি না... তবে আমার বিশেষ দোয়া রইলো...আপনি যেন ভাবীকে নিয়ে জান্নাতুল ফেরদৌসে একত্রে থাকতে পারেন।
জানি...কিছু কিছু জিনিস কোনদিনই শেয়ার করা যায় না...কারও সাথেই...
তবুও আপনার কাছে আমার/আমাদের বিশেষ দাবী.../আব্দার.../অনুরোধ...আমাদের সাথে যত বেশী পারেন...সবকিছু শেয়ার করবেন...প্লীজ।
আমরা আপনার সহযাত্রী হয়তো বা হতে পারবো না...সমব্যথী হয়ে রইবো!!!
আবারও সালাম রইলো ভাইস্যার!
Proud to be an ex-cadet..... once a cadet, always a cadet
হায় খোদা!
ইউসুফ ভাই, লেখাটা শেষ করতে পারলাম না ...দুৎখিত। েচাখ ঝাপসা হয়ে এলো......
আপনারে আমি খুঁজিয়া বেড়াই
লিখার কিছুই খুঁজে পাচ্ছিনা।
আপনার প্রার্থনা পূরণ হোক। ভাল থাকবেন।
“Happiness is when what you think, what you say, and what you do are in harmony.”
― Mahatma Gandhi
আল্লাহ ভাবীকে জান্নাত নসীব করুন।
ইউসুফ ভাই,
ধৈর্য ধরেন। সিসিবিতে নিয়মিত হোন। আমরা সকলেই আছি আপনার পাশে। নিশ্চয়ই আপনার সুসময় আবার ফিয়ে আসবে।
There is no royal road to science, and only those who do not dread the fatiguing climb of its steep paths have a chance of gaining its luminous summits.- Karl Marx
খুব কাঁদতে ইচ্ছা করতেছে। আল্লাহ আপনার সব প্রার্থনা পূরন করুক, ভাইয়া।