ক্ষনিকের অভিমান

প্রথম যেদিন শ্বেতশুভ্র তুষার,
তোমার কদম চুমে ছিল,
আজও মনে পরে সেই দিনটির কথা!
ছোট্ট শিশুর অকৃত্রিম সরল হাসির মতন,
খিলখিলিয়ে হেসে উঠে বলেছিলে,
“এই দেখো দেখো, কি সুন্দর লাগছে
বরফগুলো দেখতে! যেন সাদা তুলার চাঁদর!”
আমি তখন তুষারপাতের সৌন্দর্য ভুলে
অবাক চোখে তাকিয়ে দেখছিলাম,
তোমার তুষারস্নান!
যেন তুমি ফিরে গিয়েছিলে তোমার শৈশবে,
আপনমনে মাখছিলে তুষার তোমার মুখে!
আবার ক্ষণেক্ষণে হেসে উঠছিলে খিলখিলিয়ে!
আহ্‌! কি অপরূপ সেই দৃশ্য!

হঠাৎ, কপট অভিমানের সুরে তুমি বললে,
“বরফগুলো মুখে লাগলে কেন গলে যায়?
কেন সবসময় জমে থাকে না?”
আমার উত্তরের অপেক্ষা না করেই,
তুমি আবার মেতে উঠলে বরফ বন্দনায়!
আর আমি মনে মনে হেসে বললাম,
“তুমি কি বোঝনা,
বরফের সাথে তোমার অভিমানের সাদৃশ্য?
একটু উষ্ণতা পেলেই,
জলপ্রপাতের মতন গলে গড়িয়ে যায়!”
পরক্ষনেই ভাবলাম,
“না থাক, বোঝার নেই প্রয়োজন।
যখনই মানুষ সরলতাকে বোঝার চেষ্টা করে,
তখনই জটিলতা কেন জানি এসে হানা দেয়!
উল্টে পাল্টে দিতে চায় সবকিছু!”

তাই, কখনো কখনো আপনমনে বসে ভাবি
তোমার এই বুঝতে না পারাটাই,
অনেক বেশী সুন্দর, অনেক নিঃস্পাপ!
একেই বোধয় বলে ভালবাসা!
তুমি হয়ত বলবে পাগল আমায়,
বলবে উন্মাদ কিংবা নিষ্ঠুর!
কিন্তু, আমি আসলেই ভালবাসি
তোমার এই অল্পতে রেগে যাওয়া।
ভালবাসি, অধিকার খাটিয়ে তোমার
কারণে অকারণে করা অভিমান।
স্বার্থপর আমি তাই
রাগিয়ে দেই অহরহ তোমায়।
আর নীরবে উপভোগ করি,
তোমার এই ক্ষনিকের অভিমান!

————

ডেনভার, কলোরাডো,
১৫ই নভেম্বর, ২০১৪
(ইতিপুর্বে কলোরাডো সাহিত্য ও সংস্কৃতি পরিষদের বার্ষিক সাহিত্যপত্র অ্যাস্পেনে প্রকাশিত)

৮ টি মন্তব্য : “ক্ষনিকের অভিমান”

  1. মোস্তফা (১৯৮০-১৯৮৬)

    বাহ, ভালো লাগলো তোমার লেখা। লিখ, তবে তারচেয়ে অনেক বেশি পড়। সমকালীন কাব্যের সাথে পরিচিতি বাড়াও।


    দেখেছি সবুজ পাতা অঘ্রানের অন্ধকারে হতেছে হলুদ

    জবাব দিন
  2. সাইদুল (৭৬-৮২)

    তুমি কি বোঝনা,

    বরফের সাথে তোমার অভিমানের সাদৃশ্য?

    একটু উষ্ণতা পেলেই,

    জলপ্রপাতের মতন গলে গড়িয়ে যায়!”

    চমতকার


    যে কথা কখনও বাজেনা হৃদয়ে গান হয়ে কোন, সে কথা ব্যর্থ , ম্লান

    জবাব দিন

মওন্তব্য করুন : মোস্তফা (১৯৮০-১৯৮৬)

জবাব দিতে না চাইলে এখানে ক্লিক করুন।

দয়া করে বাংলায় মন্তব্য করুন। ইংরেজীতে প্রদানকৃত মন্তব্য প্রকাশ অথবা প্রদর্শনের নিশ্চয়তা আপনাকে দেয়া হচ্ছেনা।