পাঙ্গা

ক্লাস সেভেনে কলেজে যাবার পর দিন সার্জেন্ট লিয়াকত স্টাফের সাথে সবাই কলেজ পরিদর্শনে বের হলাম। খুব স্বাভাবিকভাবেই সবার সম্মিলিত কথাবার্তায় জোরে শব্দ হচ্ছিল। লিয়াকত স্টাফ হঠাত চেঁচিয়ে উঠলেন, “এইপ! ক্যাডেট কোন কথা বলবে না… একখনি পাঙ্গা শুরু হইয়া যাবে”। পাঙ্গা নামক হাস্যকর নতুন শব্দটির কোন অর্থ কেউ বুঝতে পারল না। একজন আরেকজনের মুখ চাওয়া চাওয়ি করতে লাগলাম। তবে এটা বুঝলাম, নিশ্চয়ই সেটা ভাল কিছু হবে না। তখন বুঝি নি, এই শব্দটির সাথে জীবন এত ঘনিষ্ঠভাবে জড়িয়ে যাবে। যাই হোক, এর কয়েকদিন পর দেখি একজন সিনিয়র ভাই গ্রাউন্ডের এক কোনায় কোমরে হাত দিয়ে বসে লাফাচ্ছে। ভাবলাম, ঐটাকেই বোধহয় পাঙ্গা বলে। পরের দিন একজন ভাই যখন জিজ্ঞেস করলেন ক্লাসের কেউ পাঙ্গা কাকে বলে জানে কি না, আমি মহা উৎসাহে বললাম, কোমড়ে হাত দিয়ে বসে ব্যাঙের মত লাফানোকেই পাঙ্গা বলে। উত্তর শুনে তো উনি একেবারেই থ। তারপরের ঘটনা বড়ই করুণ। ঐ ভাই নিজ দায়িত্বে আমাকে একজন “পাঙ্গা স্পেশালিস্ট” বানানোর সিদ্ধান্ত নিলেন। আমিও একজন যোগ্য শিষ্য হিসেবে নিয়মিত হাতে কলমে দীক্ষা নিতে লাগলাম।
আপাতত অলস সময় কাটাচ্ছি। তাই ভাবলাম ব্লগের একটা পাতা নষ্ট করি। ছয় বছরের ক্যাডেট জীবনে খাওয়া বিভিন্ন ধরনের পাঙ্গাগুলোকে শ্রেণীবিন্যাসের আওতায় আনার সিদ্ধান্ত নিলাম। সুযোগ মিললে পরে পেটেন্ট করানোর চেষ্টা করা যাবে।
পাঙ্গা খাওয়ারত ক্যাডেটের শারীরিক ও মানসিক অবস্থা, পাঙ্গা দেয়ারত ক্যাডেটের অবস্থান ইত্যাদি বিবেচনা করে পাঙ্গাকে নানা ভাবে ভাগ করা যায়। নিচে কিছু উদাহরণ দেয়া হল।
1. সাধারন পাঙ্গাঃ এই ধরনের পাঙ্গা ক্যাডেটরা প্রাত্যহিক জীবনে নিয়মিতই খায়। সুতরাং বর্ণনা দেবার প্রয়োজন নেই। যেমনঃ প্রেপে ঘুমানোর কারণে ফ্রন্টরোল।
2. জুনিয়রের কারণে পাঙ্গাঃ খুবই সহজ। জুনিয়রের দোষে গাইড বা রুম প্রিফেক্টের পাঙ্গা খাওয়া।
3. পাঙ্গা খাওয়ার কারণে পাঙ্গাঃ সাধারণত গাইড/রুম প্রিফেক্ট যদি জুনিয়রের কারণে পাঙ্গা খায়, তখন গাইড/রুম প্রিফেক্ট কর্তৃক ঐ জুনিয়রের উপর এ ধরণের পাঙ্গা আরোপিত হয়।
4. রাগ ঝাড়ার পাঙ্গাঃ ক্লাসমেটদের সাথে দ্বন্দ্বের কারণে সৃষ্ট রাগ জুনিয়রের উপর ঝাড়ার পাঙ্গা।
5. মান-সম্মান পাঙ্কচার হওয়া পাঙ্গাঃ একবার কোন এক কলেজ (ক্যাডেট কলেজ না) শিক্ষাসফরে আমাদের কলেজে আসে। উল্লেখ্য, সেখানে ছাত্রের পাশাপাশি ছাত্রীও ছিল। তখন বিকেলে ইডির সময়ে জনৈক ক্যাডেট শতাধিক সুন্দরী রমণীর সম্মুখে ইডি করায় অপারগতা প্রকাশ করে। এই ঘটনা এডজুট্যান্টকে জানানো হলে তিনি উক্ত ক্যাডেটকে কাঁধে শেল নিয়ে ঐ ছাত্রীদের সামনে দাঁড়িয়ে থাকার নির্দেশ প্রদান করেন। তখন উক্ত ক্যাডেট বাধ্য হয় শেল কাঁধে নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকতে। ক্যাডেট কলেজের প্রাত্যহিক জীবনের এই দৃশ্য স্মৃতিতে ধারণ করার এই দুর্লভ সুযোগও কেউ নষ্ট করতে চাইল না। তারাও ঝটপট ক্যামেরা বের করে ছবি তোলা শুরু করল। উল্লেখ্য, সেই ছবি কয়েকদিন পরে মিউচুয়াল ফ্রেন্ডের মাধ্যমে ফেসবুকেও দেখা গিয়েছিল।
6. আরামে থাকার কারণে পাঙ্গাঃ সাধারণত ক্যাডেটরা অনেক দিন আরামে থাকলে বা ছুটি কাটিয়ে ফিরলে কর্তৃপক্ষ বা সিনিয়র ক্যাডেট কর্তৃক বেশ বৃহৎ পরিসরে পাঙ্গার ব্যবস্থা করা হয়।
7. স্ব উদ্ভাবিত পাঙ্গাঃ এর আরেক নাম আঞ্চলিক পাঙ্গা। এটি সর্বজনীন নয়। বিভিন্ন সময়ে পাঙ্গা বিশেষজ্ঞ খেয়ালি সিনিয়রের উদ্ভাবিত কিছু পাঙ্গা কলেজের ইতিহাসে স্থান করে নেয়। নামকরণের ক্ষেত্রে সাধারণত উদ্ভাবক কর্তৃক প্রদত্ত নাম ব্যবহৃত হলেও অনেক সময় উদ্ভাবকের নামানুসারেও নামকরণের নজির রয়েছে। যেমনঃ পেটিস, পোকা, ফানটা, মিরিন্ডা ইত্যাদি (আগে নাম না শোনাই স্বাভাবিক)।
8. এক্স ক্যাডেট হয়ে পাঙ্গাঃ রি ইউনিয়নের রিভার্স অর্ডারের পাঙ্গা এই শ্রেণীতে পরে।
9. সিসিবিতে পাঙ্গাঃ কোন কিছু না জেনে যখন কোন এক্স ক্যাডেট সিসিবিতে তার প্রথম ব্লগ লিখে ফেলে, তখন সিনিয়রদের চাপে পরে আবশ্যিকভাবে ১০ টি ফ্রন্টরোল দিতে হয়।

১৭ টি মন্তব্য : “পাঙ্গা”

মওন্তব্য করুন : নাফিস (২০০৪-১০)

জবাব দিতে না চাইলে এখানে ক্লিক করুন।

দয়া করে বাংলায় মন্তব্য করুন। ইংরেজীতে প্রদানকৃত মন্তব্য প্রকাশ অথবা প্রদর্শনের নিশ্চয়তা আপনাকে দেয়া হচ্ছেনা।