এই আমরা ১৫…….সব কিছুর উর্দ্ধে আমরা এক ও অবিচ্ছিন্ন… রেড ওয়ারিয়র্স……।।

“সেই সাত জন নেই আজ
টেবিলটা তবুও আছে
সাতটা পেয়ালা আজো খালি নেই…………
একই সে বাগানে আজ
ফুটেছে নতুন কলি
শুধু সেই সে দিনের মালি নেই………।।”

মান্না দে’র সেই কালজয়ী গানটা যখনই মনে আসে তখন আমার মনে পড়ে যাই সেই দিনের কথা। ক্যাডেট কলেজের শেষের দিকে একটা ছুটির দিনে হুনাইন হাউসের সামনে কৃষ্ণচূড়ার ছায়ায় বেঞ্চের উপর বসে আমরা ক্যাডেট কলেজের ফেলে আসা দিনগুলোর স্মৃতিচারণ করছিলাম। সেখানে আমরা কে কে ছিলাম ঠিক মনে নেই। তবে আমাদের হাউসের ১৫ জন এর মধ্যে বেশির ভাগই মনে হয় ছিলাম।

কতো আনন্দ, দুঃখ, রাগ, ঝগড়া, আড্ডা আর উত্তেজনাপূর্ণ সময়ের মধ্য দিয়ে ৬ টা বছর শেষ করে ফেললাম। সব কথা মনে পড়ে যাচ্ছিল। ক্লাস সেভেন থেকে আমরা ১৫ জন ছিলাম একটি শরীরের অবিচ্ছেদ্দ ১৫ টি অংশের মতো। কতো কঠিন সময় একত্রে পার করেছি আমরা। আবার যখন আনন্দ করেছি একত্রে করেছি।

~x( স্বঘোষিতো ওস্তাদ নামে পরিচিত হাসনাইনের প্যারোডি গান ( বাবারে……তক্তা ) আর আমাদের সর্বজ্ঞানী মোস্তাক (মোস্তাফিজ) এর দার্শনিক টাইপ কথা আমরা কি কেউ ভুলতে পারব!! ক্লাস ইলেভেনে থাকতে এক রাতে এক বাড়িতে জিকরুলের চেয়ার ভেঙ্গে ফেলে নাইট ডিউটি মাস্টার বজলুর রহমান স্যারের কাছে হাতে নাতে ধরা খেলাম আমি এবং আমরা সবাই। আমি আর রাবাত যখন বেড ক্রিকেট খেলতাম সবচেয়ে বিরক্ত হত নাহিদ। মাঝে মাঝে হঠাৎ ঘুম থেকে উঠে এসে খুব জোরে একটা ঘুষি বসিয়ে দিত। এখনও ভয় লাগে। উত্তন পেগে মেঘে মেঘে………………আমাদের শোয়েব…………কলেজ টিমের হকি প্রাক্টিসের সময় ফয়সাল এর মারা হকির বলটা এতো নির্মম কেন হলো……? আর্জেন্টিনা প্রথম রাউন্ডে বাদ পড়ে গেলে সংখালঘু সাপোর্টার (ব্রাজিলের শুধুমাত্র ৩ জন সাপোর্টার ছিল ) সিনার হাউস কাঁপানো উল্লাস……… যেন আমাদের কে খেয়ে ফেলবে…।। মনে হচ্ছিল সিনা ক্লাস সেভেনের সেই দূর্দান্ত গোলটি একটু আগে করে আসলো। “ওস্তাদের মাইর শেষ রাইতে”……… আমাদের রাজনৈতিক উপদেষ্টা……… ফরিদ…… দেখ শোন……।। সার্ভে টেস্টে অংকে ফেল করে এস এস সি তে ফার্স্ট স্টান্ড………… আমাদের সেই প্লেবয় ফরিদ।। চোখা মোর্শেদ…… “কেন তোমরা আমায় ডাকো………আমার মন না মানে”………… কতোবার যে শুনেছি মনে পড়ে না। টম অ্যান্ড জেরি……আমি আর রাবাত ………কে টম আর কে জেরি সেই বিতর্কের শেষ এখনও হয়নি…… আমাদের দুইজনের যন্ত্রনায় ক্লাস সেভেনে ডর্ম ১২, ক্লাস এইটে ডর্ম ৯, ক্লাস টেন এ ডর্ম ১ এবং ক্লাস ইলেভেনে ডর্ম ৩ তে কেউ শান্তিতে থাকতে পারেনি। কলেজ প্রিফেক্ট ফয়সাল। পারে না এমন কিছুই খুজে পাওয়া যায় না। সবকিছুতেই এ ওয়ান… শুধু একটু টিউবলাইট…………। সাহিত্যিক, কবি, নাট্যকার কোনটা বললেই ভূল হবে না আমাদের ইব্রাহিম সম্পর্কে। যেকোন বিতর্কে (ঝগড়ায়) সে কোনদিন হারবে না। মুখের জোরে আর যুক্তি দিয়ে নিশ্চিত ভূলকেও চরম শুদ্ধ বানিয়ে দিবে এবং সবাইকে তা বিশ্বাস করিয়ে ছাড়বে…… ভাগ্যিস ইব্রাহিম ছিলো …।। লাভার বয় রেজা আর সর্ব কাজের কাজি আমাদের কাজী…… দুই জনের মধ্যে এই কতো মিল, কতো ভাব, কতো গোপন শলাপরামর্শ আবার দুজনের মধ্যেই আদায়-কাঁচকলায় সম্পর্ক যেন আজন্মের শত্রুতা। আমাদের রক্ষক…সরি গোলরক্ষক জিকরুল। যেকোন স্ট্রাইকার প্রাণের ভয়েই ২০ গজ দূর থেকে শর্ট নিবে…ভূলেও কাছে আসবে না। যদি একবার জিকরুলের সাথে ধাক্কা খেয়েছে তো তার গোল করার শখ মিটে যাবে……।। জুবায়ের কে ক্ষেপাতাম …… আর ও ক্ষেপতো…।। মাঝে মাঝে হঠাৎ করেই অ্যাটাক করে বসতো…… আমরা সবাই অবাক হতাম। এস এস সি পরীক্ষার আগে ডর্ম ১ এ সবাই পড়ছি। কি নিয়ে যেন জুবায়ের কে ক্ষেপাচ্ছি। কিছুক্ষণ সবাই চুপ। হঠাৎ করেই একটা কাঁটা কম্পাস নাহিদের দুইপায়ের ফাঁক দিয়ে চেয়ারে বিঁধলো…।। নাহিদের ভাগ্যটা ভালো যে কম্পাসটা ওর পায়ে লাগেনি।

ও হ্যাঁ!! এক বার আমরা বিচ্ছিন্ন হয়েছিলাম। তবে সেটা ছিল সাময়িক। ক্লাস টুয়েল্ভে ক্রিকেট নিয়ে আমাদের একটা ঝামেলা হয়েছিল। সে কি গন্ডগোল!! কতো সিরিয়াস ছিলাম। পরে এটা নিয়ে অনেক হাসাহাসি করেছিলাম। ১০-১৫ দিন আমরা কথা পর্যন্ত বলিনি। কত্তো ছেলেমানুষি। হা হা হা হা হা হা। কয়েকদিনের মধ্যেই আবার মিল হয়ে গেলো। আমার জানা মতে এই একবারই আমরা ভেঙ্গে গেছিলাম।

এই আমরা ১৫। সব কিছুর উর্দ্ধে আমরা এক ও অবিচ্ছিন্ন…।। রেড ওয়ারিয়র্স……।।

আবার লেখার প্রথম প্যারাতে চলে যাই, মান্না দে’র গান। ঐদিন কৃষ্ণচূড়া গাছের নিচে এসব স্মৃতিই আমাদের কাঁদিয়েছিল। আমাদের কবি ইব্রাহিম বলেছিল যে মান্না দে’র এই গানের থিমে ও একটা গান লিখবে যাতে থাকবে আমাদের ১৫ জনের যত কথা।

ক্যাডেট কলেজ থেকে বের হয়েছি আজ থেকে ৭ বছর আগে। এর মাঝে ইব্রাহিম একটা নাটক লিখেছে, পরিচালনা করেছে এবং তা টিভিতেও সম্প্রচার করা হয়েছে। আমাদের গানটা কি ইব্রাহিম লিখেছে? মনে হয় না। আজ সবার থেকে অনেক অনেক দূরে বসে ক্যাডেট কলেজ ব্লগ পড়তে গিয়ে আবার মনে পড়ে গেলো সেই দিনের কথা সেই গানের কথা। মনে পড়ে গেলো সেই ১৫ জনের কথা। যে স্মৃতি আমার মনে চিরসবুজ, চিরঅম্লান হয়ে থাকবে………………।।

১,৯০৭ বার দেখা হয়েছে

৩০ টি মন্তব্য : “এই আমরা ১৫…….সব কিছুর উর্দ্ধে আমরা এক ও অবিচ্ছিন্ন… রেড ওয়ারিয়র্স……।।”

  1. কামরুলতপু (৯৬-০২)

    রাবাত, সিনা, ফরিদ, জিকরুল, ফয়সাল, ... সবাইরে চিনি দেখি। ইশশ কতদিন দেখা হয় না। জিকরুল এর পরিচয় দেওয়ার ভংগিটা চরম ছিল । বহুদিন ওরে ভেংগাতাম আমরা হাতটা বাড়িয়ে দিয়ে কেমন করে যেন বলত আমি জিকরুল।

    জবাব দিন
  2. রকিব (০১-০৭)

    রাবাত ভাই আর ফরিদ ভাইয়ের কথা বেশ মনে আছে, ক্লাশ সেভেনে প্রেপগার্ড ছিলেন। জিকরুল ভাইয়ের ড্রাম বাজানোর আগে ড্রাম-স্টিক ঘুরানো দেখে ক্লাস সেভেনের পিচকি আমরা ভয়ানক ইম্প্রেসড হয়েছিলাম। আর হাসান ভাই বলতে যাকে চিনতাম তিনি হলেন সদা হাসিখুশি একজন মানুষ, সিসিবির প্রোফাইল পিকচার দেখে মনে হলো উনি বোধহয় এখনও সেই হাসিখুশিই আছেন। 😀 😀


    আমি তবু বলি:
    এখনো যে কটা দিন বেঁচে আছি সূর্যে সূর্যে চলি ..

    জবাব দিন
  3. নাজমুল (০২-০৮)

    ভাই খালি নস্টালজিক হইয়া গেলাম 🙁
    আমরা ২০/৩০ এখন একসাথে থাকি সব কলেজ মিলিয়ে থাকি মানে আরকি একসাথে আড্ডা মারি।
    আপনাদের হাইজ আলাদা হওয়ার কারণে বোধহয় সব ক্লাস মেইট এর সাথে সেইম সম্পর্ক না।।
    আমাদের আবার ৩ হাউজ একসাথে তো তাই হাউজ এর ব্যাপারটা অন্যরকম

    জবাব দিন
  4. তৌফিক (৯৬-০২)

    আগেই পড়ছিলাম। তুই আর আমি আই এস এস বি একসাথে দিছি না? :-/

    যাহোক, ভর্তি পরীক্ষার আগের রাত পর্যন্ত ডিসিসান ছিল ঝিনাইদহতে পরীক্ষা দিব। সকালবেলায় কি মনে করে মির্জাপুরের এডমিট কার্ড হাতে বের হইছিলাম। 😀

    জবাব দিন

মওন্তব্য করুন : রেজওয়ান (৯৯-০৫)

জবাব দিতে না চাইলে এখানে ক্লিক করুন।

দয়া করে বাংলায় মন্তব্য করুন। ইংরেজীতে প্রদানকৃত মন্তব্য প্রকাশ অথবা প্রদর্শনের নিশ্চয়তা আপনাকে দেয়া হচ্ছেনা।