জানার আছে অনেক কিছু – ১৯ দিনের একটি মাস

কিভাবে সম্ভব…??? ব্যাপারটা শোনার পর আসল কাহিনি জানতে ইচ্ছা হল, আর আসল কাহিনি জানার পর মনে হল অনেকেই হয়তো আমার মত ব্যাপারটা জানেন না। তাই আমার মত ব্যাপারটা যারা জানেন না তাদের জন্য ঘটনাটা সিসিবিতে শেয়ার করার ইচ্ছা হল।
————————————————————————

২ সেপ্টেম্বর ১৭৫২। এইদিন রাতে স্বাভাবিক নিয়মে সবাই ঘুমাতে গেলেও অনেকটা সরকারী নির্দেশেই সবার ঘুম ভাঙ্গে ১১ দিন পর অর্থাৎ ১৪ সেপ্টেম্বর সকালে। আমেরিকা, ব্রিটেন, ব্রিটেনের অংগরাজ্য সমূহ এবং ব্রিটিশ কলোনীগুলোর ক্যালেন্ডারের পাতা থেকে ১১টি দিন (৩-১৩ সেপ্টেম্বর) মুছে ফেলা হয়। ব্যাপারটা অবাক হওয়ার মত হলেও তৎকালীন সময়ে কিন্তু কেউ অবাক হয়নি। যদিও শোনা যায়, জীবনের মূল্যবান ১১টি দিন কেড়ে নেওয়ার জন্য কিছু কিছু দূর্গম গ্রামে সরকারী সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে বিদ্রোহও হয়েছিল।

১৭৫২ সালের ক্যালেন্ডার

খ্রীষ্টপূর্ব ৪৫ সালে জুলিয়াস সিজারের নামানুসারে উদ্ভাবিত হয় “দ্যা জুলিয়ান ক্যালেন্ডার” যেখানে বছরের ব্যাপ্তিকাল ৩৬৫ দিন ৬ ঘন্টা। প্রতি চার বছর পর ফেব্রুয়ারী মাসে একটি দিন যোগ করে এই অতিরিক্ত ৬ ঘন্টা সমন্বয় করা হয়, যাকে আমরা সবাই “লীপ ইয়ার” বলে জানি। The Nicene Council কর্তৃক ৩২৫ খ্রীষ্টাব্দে সরকারী ভাবে জুলিয়ান ক্যালেন্ডারের প্রচলন করা হয়। পরবর্তিতে যখন সৌরবছরের প্রকৃত ব্যাপ্তি পরিমাপ করা সম্ভব হয় তখন দেখা যায় জুলিয়ান ক্যালেন্ডারে প্রতি বছর ১১ মিনিট অর্থাৎ প্রতি ১৩১ বছরে ২৪ ঘন্টা এবং ৪০০ বছরে ৩ দিন করে বেশি হিসাব করা হয়েছে। ১৫৮২ খ্রীষ্টাব্দে পোপ ত্রয়োদশ গ্রেগরী এর নির্দেশে “গ্রেগরিয়ান ক্যালেন্ডার” নামক নতুন ক্যালেন্ডার চালু হওয়া পর্যন্ত এই অতিরিক্ত সময় বেড়ে গিয়ে দাঁড়ায় ১০ দিনে। পৃথিবীর অধিকাংশ দেশ (ব্রিটেন, ব্রিটেনের অংগরাজ্য সমূহ এবং ব্রিটিশ কলোনীগুলো ব্যাতিত) নতুন এই ক্যালেন্ডারকে স্বাগত জানিয়ে ১৫৮২ সালের ৫ অক্টোবর ১০ দিন সময় জাম্প করে এগিয়ে যায়। একই বিভ্রান্তি পরবর্তিতে এড়ানোর জন্য পোপ গ্রেগরী প্রতি ৪০০ বছরে ৩ বার লীপ ইয়ারের অতিরিক্ত দিনটি অগ্রাহ্য করার নির্দেশ দেন। এই নির্দেশ বাস্তবায়ন করতে যেসব শতাব্দী পূর্ণ বছর (যেমনঃ ১৭০০,১৮০০,…) ৪০০ দ্বারা বিভাজ্য নয় সেই বছর গুলোর লীপ ইয়ারের অতিরিক্ত দিনটি অগ্রাহ্য করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। একারনেই ১৭০০, ১৮০০ এবং ১৯০০ সাল তিনটি ৪ দ্বারা বিভাজ্য হওয়া সত্ত্বেও “লীপ ইয়ার” নয় কিন্তু ২০০০ সাল লীপ ইয়ার।

রোমের গীর্জার সাথে দিন-তারিখের সামঞ্জস্য না থাকায় ব্রিটেন, ব্রিটেনের অংগরাজ্য সমূহ এবং ব্রিটিশ কলোনীগুলো নানা ধরনের জটিলতার সম্মুখীন হয় এবং শেষ পর্যন্ত ১৭৫২ সালে গ্রেগরিয়ান ক্যালেন্ডার অনুসরন করতে বাধ্য হয়। ততদিনে জুলিয়ান ক্যালেন্ডার ও প্রকৃত সৌরবছরের ব্যবধান হয়ে যায় ১১ দিন। ফলশ্রুতিতে এই সালেই সেপ্টেম্বর মাসে ক্যালেন্ডার থেকে ১১ দিন মুছে দেওয়া হয় এবং ২ তারিখের পরের দিনকে ১৪ তারিখ ঘোষনা করা হয়। মাত্র ১৯ দিনে একটি মাস সম্পূর্ণ হয়।

মাত্র ১৯ দিনে মাস সম্পন্ন হলেও সরকারীভাবে সকল শ্রমিককে পুরা মাসের (৩০ দিনের) বেতন দেওয়া হয়।

৩২ টি মন্তব্য : “জানার আছে অনেক কিছু – ১৯ দিনের একটি মাস”

মওন্তব্য করুন : ফয়েজ (৮৭-৯৩)

জবাব দিতে না চাইলে এখানে ক্লিক করুন।

দয়া করে বাংলায় মন্তব্য করুন। ইংরেজীতে প্রদানকৃত মন্তব্য প্রকাশ অথবা প্রদর্শনের নিশ্চয়তা আপনাকে দেয়া হচ্ছেনা।