মা, আমার মা……………

আজ “মা” দিবস নয়। তারপরও আজকের লেখাটা মাকে নিয়েই লিখলাম।

ফটিকের গল্পটা মনে আছে? “ছুটি” গল্পে ফটিক কেমন নির্বিকার ভাবে মাকে বলে গেলো, ” মা, আমার ছুটি হয়েছে, আমি যাচ্ছি……”।
ফটিকের সেই বিদায় কেন জানি আজ অবধি আমাকে কাঁদায়।

আমার মা একটু পাগলা কিসিমের। সন্তানের জন্য এত অফুরন্ত ভালোবাসা একজন মা কিভাবে বুকে ধারন করে রাখতে পারে, তা আমি আমার মাকে দিয়েই বুঝেছি। খুব সংগ্রাম করে সমাজে টিকে থাকার লড়াইয়ে ব্যস্ত আমার প্রচণ্ড বাস্তববাদী বাবার সাথে মায়ের বিয়ে হয় ১৯৮০ সালে। অদ্ভুত ব্যপার হলো, আমি আমার এই ২৫ বছরের জীবনে তাদের কোনোদিন বিবাহ বার্ষিকী পালন করতে দেখিনি। আজ যদি জিজ্ঞেস করি কত তারিখে তাদের বিয়ে হয়েছিলো, জানিনা সেই দিনটার কথা তাদের মনে আছে কিনা।

আমার বাবার সংসারে আমার মা যখন প্রবেশ করেন, সেই সংসারে তখন আসবাব বলতে একটি কাঠের চৌকি ছাড়া আর কিছুই ছিলোনা। অষ্টাদশী এক তরুণী, যার কখনও অভাব দেখার সৌভাগ্য(!!) হয়নি, সংসারে তার যাত্রা শুরু হলো প্রচণ্ড অভাবকে সহযাত্রী করে। আমার বাবার জন্মগত এজমার সমস্যা। বেচারার যেদিন শ্বাসকষ্ট হত, সেদিন সেই সদ্যই কৈশোর পেরোনো তরুণী কি অকুল পাথারেই না পরতো। কেউ নেই পাশে সাহায্য করার, সারাটা রাত সেই কাঠের চৌকিতেই বাবার শুশ্রূষা করতে করতে চলে যেত সময়। জানিনা একালের মেয়েরা কতটুকু ধৈর্যশীল, কিন্তু আমার মা এক মুহূর্তের জন্যেও আমার বাবাকে ছেড়ে যাননি। ভালোবাসার প্রগার বন্ধন ছেড়ে যেতে দেয়নি আমার মাকে শত বাধা, শত কষ্ট সত্ত্বেও।

২ বছর পর সংসার আলো করে এলো একটি সন্তান। অনাবিল আনন্দে ভরে উঠলো সংসারটা। ছেলেটির নাম রাখা হোলো “রায়হান নোমানী” ।
কিন্তু আমার মায়ের এতো সুখ মনে হয় স্রষ্টার সহ্য হলনা। রমযান মাসের এক ঘন বর্ষার রাতে, মাঝ নদীতে খেয়া নৌকার উপর আমার বাবার কোলে নিশ্চুপ হয়ে গেলো দেড় বছর বয়সী আমার নিষ্পাপ ভাইটা। বেচারী মা আমার পুত্রশোকে পাগল হয়ে গেলো। ঘরে শিকল আর তালা দিয়ে বেধে রাখতে হতো তাকে। সেই পাগলী মায়ের কোল জুড়ে বছরখানেক বাদে আসলো আরেক সন্তান। তাকে পেয়ে আমার মা সম্পূর্ণ ভালো হয়ে গেলো। তার নাম রাখা হলো “কাওসার মেহেদী”।

আমাকে ঘিরে তাদের ভালোবাসার জাল এমনভাবে বিস্তৃত ছিলো, তাতেই বড় হচ্ছিলাম ধীরে ধীরে। আমার সংগ্রামী বাবা আস্তে আস্তে সংসারে একটা ভিত্তি স্থাপন করলো। আমার মা তার ভালোবাসা দিয়ে আমাকে এমনভাবে ঘিরে রেখেছিলো যে অভাব নামে কোন বস্তু আমার কাছে ভিড়তে পারেনি। ২ বছর বাদে আরও একটি সন্তান এলো সংসারে, নাম রাখা হল ” আদনান হাদী “।

আমি এবং আমার ছোট ভাই সেই থেকে আজ পর্যন্ত তাদের চোখের মণি, ভালোবাসার খনি। কত শত অন্যায়, উপেক্ষা, কতো অত্যাচার মুখ বুজে আজও সহ্য করে আমাদের। আমার নিজেরও হয়ত একদিন সংসার হবে, ভালোবাসার একটি ক্ষেত্র তৈরি হবে। কিন্তু সন্তানের জন্য আমার দুঃখিনী মায়ের অকল্পনীয় ভালোবাসার কাছে সবি মূল্যহীন।

” মা, আমি হয়তো তোমার কুলাঙ্গার একটি সন্তান যে তোমাকে কিছুই দিতে পারেনি। কিন্তু এই ছেলেটি তোমাকে অন্তর দিয়ে ভালোবাসে………অসম্ভব ভালোবাসে………”।।

৫,২৩৩ বার দেখা হয়েছে

৩০ টি মন্তব্য : “মা, আমার মা……………”

  1. আছিব (২০০০-২০০৬)

    আপনি যে লেখাটা লিখতে পেরেছেন তাতেই গর্বে আপনার মায়ের বুক ফুলে যেত। আপনি দীর্ঘজীবী হউন :boss:

    আমাদের সবার মা-ই ধৈর্যের প্রতিমা। সমকালীন মেয়েদের মধ্যে ধৈর্য আর সমঝোতা করার ক্ষমতার (ইংরেজিতে কম্প্রোমাইজ) প্রচন্ড অভাব। শুধু এই আশায় বুক বেঁধে থাকি যে মা হলে তারাও ধৈর্যশীল হতে শিখবে । জয়তু 'মা'...আমরা সবাই মা কে অনেক অনেক ভালোবাসি,ভালোবাসব

    জবাব দিন
  2. রায়হান (১৯৯৮-২০০৪)

    মেহেদি
    ভাল হয়েছে খালেক :boss:
    বিবাহ করে আন্টী কে বউ এনে দে এক টা
    এভাবে ই আন্টী র সেবা করবে
    তারা তারি বিয়া কর


    একটি বাংলাদেশ তুমি জাগ্রত জনতার,সারা বিশ্বের বিস্ময় তুমি আমার অহংকার

    জবাব দিন
  3. রিয়াজ (৯৮-০৪)

    দোস্ত ক্যাডেট কলেজে তুই খুব কম লিখতি...এখন মনে হয় কেন যে লিখতি না!!!!!!!!!! তা হলে হয়তো আরও ভাল ভাল লেখা পাইতাম। অনেক ভাল হইছে রে লেখা টা (সম্পাদিত)


    জানি সত্য নয়,শুধু কল্পনায়...ইচ্ছের ঘুড়ি আমরা ওড়াই...স্বপ্ন গুলো সত্যি হবে তারি অপেক্ষায়

    জবাব দিন
  4. রিয়াজ (৯৮-০৪)

    মা, আমি হয়তো তোমার কুলাঙ্গার একটি সন্তান যে তোমাকে কিছুই দিতে পারেনি। কিন্তু এই ছেলেটি তোমাকে অন্তর দিয়ে ভালোবাসে………অসম্ভব ভালোবাসে……… 🙁


    জানি সত্য নয়,শুধু কল্পনায়...ইচ্ছের ঘুড়ি আমরা ওড়াই...স্বপ্ন গুলো সত্যি হবে তারি অপেক্ষায়

    জবাব দিন
  5. আহ্সান (৮৮-৯৪)

    মা, আমি হয়তো তোমার কুলাঙ্গার একটি সন্তান যে তোমাকে কিছুই দিতে পারেনি। কিন্তু এই ছেলেটি তোমাকে অন্তর দিয়ে ভালোবাসে………অসম্ভব ভালোবাসে………”।।

    ::salute::

    জবাব দিন
  6. Samiur (2002-2008)

    ” মা, আমি হয়তো তোমার কুলাঙ্গার একটি সন্তান যে তোমাকে কিছুই দিতে পারেনি। কিন্তু এই ছেলেটি তোমাকে অন্তর দিয়ে ভালোবাসে………অসম্ভব ভালোবাসে………”।। ::salute:: ::salute:: ::salute::

    জবাব দিন

মওন্তব্য করুন : খালেদ (০১-০৭)

জবাব দিতে না চাইলে এখানে ক্লিক করুন।

দয়া করে বাংলায় মন্তব্য করুন। ইংরেজীতে প্রদানকৃত মন্তব্য প্রকাশ অথবা প্রদর্শনের নিশ্চয়তা আপনাকে দেয়া হচ্ছেনা।