১লা ফাল্গুন …

১লা ফাল্গুন, বসন্তের আনুষ্ঠানিক শুরু … তবে বসন্ত শুরুর আগেই শুরু হয়ে গেল আমার দিন। ভোর প্রায় ৫ টার দিকে ঘুম ভেঙে গেল। রুমের সামনে বারান্দায় দাড়িয়ে শহীদ স্মৃতি হলের দিকে মুখ করে আকাশ দেখতে বসে গেলাম। আঁধারের বুক চিড়ে একটু খানি আলো উঁকি দিলে প্রকৃতির যে রূপ, তার প্রেমে পড়ে চোখ বন্ধ করে অনায়াসে এ রকম ২০/২৫ বসন্ত কাটিয়ে দেয়া যায় । হঠাৎ পাশের গাছটায় একটা কাঁক ডানা ঝাপটে উড়ে গেল। মোহ কেটে টের পেলাম ক্ষুধা লেগেছে। যথারীতি সেই বকসি-বাজার মোর, নোংরা পেনাংয়ের খাবারই মাঝ মাঝে মনে হয় অমৃত। যখন পেনাং থেকে বের হলাম, তখন বসন্ত শুরু হয়ে গেছে। আজ ১৩ ই ফেব্রুয়ারি … …

এমনিতে ফেব্রুয়ারি মাসটা আমার জন্যে অনেক আনন্দের, ৪ ফেব্রুয়ারি আমার প্রথম কান্নার দিন, তবে এই কান্নাটা কিন্তু আনন্দের, জীবনের প্রথম কান্নাটা অন্যদের আনন্দ দেয়, কী অদ্ভুত, তাই না ! এছাড়া ফেব্রুয়ারি মাসটা বাঙালির জন্যে এমনি অনেক আনন্দের । এই সব চিন্তা করতে করতে কখন যে নতুন করে প্রেমে পড়ে গেলাম … … অনেক দিন পরে নতুন করে প্রেমে পড়লাম … অদ্ভুত একটা প্রেম … … বেশ পুরনো একটা গান … …

মেয়েটা ছিলো সদ্য ফোঁটা, মেয়েটা আধো কুড়ি,
মেয়েটা আবার গোধুলিবেলার স্নিগ্ধ বালুচরি ।
মেয়েটা ছিলো শ্যামলা ঘেঁষা, মেয়েটা আজও সবুজ,
মেয়েটা আমার বুক ভাসানো,প্রেমের মতই অবুঝ।
মেয়েটা ছিলো চোখের পাতায়, মেয়েটা ধ্রুবতারা,
মেয়েটা কখনো মাটির গানে প্রেমিক দোতারা ।
মেয়েটা ছিলো আন্দোলনে, মেয়েটা ভীষণ একা,
মেয়েটার নাম “বায়ান্ন”তে বুলেট দিয়ে লেখা।
মেয়েটা আজও ইচ্ছে মেঘে বৃষ্টি দিনের আশা
মেয়েটা আমার আতর ঢালা ,সাধের বাংলা ভাষা ।
মেয়েটা আমার সাধের বাংলা ভাষা … …

শ্রীকান্তের একটা গান … …

বাসায় ফোন দিলাম, সবাইকে একটু বসন্তের শুভেচ্ছা জানালাম। ভাবলাম একটু বাইরে যাওয়া দরকার, চলে গেলাম বুয়েটের মূর্ছনার প্রোগ্রামে … চারিদিকে কেবলই হলুদ, মুগ্ধ দর্শক আমি … প্রকৃতি (!!!) এত রঙিন … … খুব ভাল লাগল এটা দেখে যে, বাঙালি সত্যিই প্রেমিক জাতি … … দুপুরের দিকে রুমে আসতেই নতুন একটা দুশ্চিন্তায় পড়ে গেলাম, প্রতিদিন কাউকে না কাউকে পাওয়া যায় বইমেলায় যাওয়ার জন্যে, কিন্তু আজ কাউকে পাওয়া যাবে না নিশ্চিত, সবাই যে আজ হলুদে মত্ত … অগত্যা বইমেলায় যাওয়ার চিন্তাটা বাদই দিলাম । আপাতত খাওয়ার চিন্তা, দুপুর যে হয়ে এলো … ভাবলাম আজ বসন্তের প্রথম দিন একটু ভাল-মন্দ খাই, সরষে ইলিশ খাওয়ার চিন্তায় রিকশা নিয়ে চলে গেলাম কাঁটাবন … কিন্তু হায়, এ জগতে হায়, সেই বেশি চায়, আছে যার হলদে নারী … পুরো রেস্টুরেন্ট ভরা কপোত-কপোতী, আর প্রতিটি টেবিলের পাশেই লাইনে দাড়িয়ে ওয়েটিং এ আছে আরেক কয়েক জোড়া … নিজেকে বড়ই বেমানান মনে হল। কাল বিলম্ব না করে দ্রুতই প্রস্থান, ফোন দিলাম বন্ধু নাভালকে : “দোস্ত তোদের বাসায় আসতেছি, ভাত খাব ” কিন্তু নাভালের উত্তরটা ছিল বড়ই হতাশার : “আমিতো বাসায় নাই, এই মাত্র বুয়েটে আসছি …” । কি আর করা, অগত্যা ঠিকানা সেই বুয়েট ক্যাফে, এসে দেখি নাভাল পুরো একদল কপোতী নিয়ে বসে আছে। যাই হোক, আমার ক্ষুধা লাগছে, খাবার সেই তেহারী, সাথে পাইন-আপেল জুস … …

এরপর আর্কি বিল্ডিং এর সামনে আড্ডা দিয়ে কাটিয়ে দিলাম বিকাল ৪/৫ টা পর্যন্ত … … এবার আমার সময় হল, একটা ফোন, নাম ‘বিদিতা’ … … …

বিদিতা আসলে আমার কেউ না, আমি একটু প্রক্সি দেই আর কি, সে তন্ময়ের ছাত্রী। বন্ধু তন্ময় সেমিস্টার ব্রেকে দেশের বাইরে বেড়াতে যাওয়ায়, তার প্রক্সিটা আমাকে দিতে হচ্ছে গত কয়েকদিন ধরে । বিকেল ৫ টার দিকে রওনা দিলাম রিকসা নিয়ে, গন্তব্য শাহবাগ, সেখান থেকে বিদিতাদের বাসা … কিন্তু আজ যে ১৩ ফেব্রুয়ারি, ৫ মিনিটের শাহবাগ এজ যে ৫ ঘণ্টার পথ, পুরো রাস্তাই যে আজ সরষে ক্ষেত, হলুদে ঠাসা । অনেক চড়াই – উতরাই পেরিয়ে যখন শাহবাগ পৌঁছলাম, তখন চোখ বড়ই ক্লান্ত … (!!!)

আরও অনেক জ্যাম পেরিয়ে যখন বিদিতাদের বাসায় পৌছাই তখন বিকেল পেরিয়ে সন্ধ্যা … … বিদিতার রুমে গিয়ে দিনের প্রথম মুখোমুখি শুভেচ্ছাটা ওকেই জানাই: “বসন্তের শুভেচ্ছা” … বিদিতা একটা হাসি দিয়ে বলে, “আপনাকেও … কী বই বের করব আজ ? ” আমি বলি, “ও … ও .. হ্যাঁ বই … তন্ময় তোমাকে কীভাবে পড়াতো, তুমি সেভাবেই তোমার সুবিধা মত যে কেন একটা বের কর … ”

রাতে যখন রুমে ফিরি তখন বাঙালির বসন্ত বিদায় নিয়েছে, চলছে ভালবাসা দিবসের প্রস্তুতি … কাল যে ১৪ ই ফেব্রুয়ারি … আমি পিসির পাওয়ারটা অন করে একটা গান প্লে করি …

মেয়েটা আজও ইচ্ছে মেঘে বৃষ্টি দিনের আশা
মেয়েটা আমার আতর ঢালা ,সাধের বাংলা ভাষা ।
মেয়েটা আমার সাধের বাংলা ভাষা … … … … …

১,৩৪০ বার দেখা হয়েছে

১৭ টি মন্তব্য : “১লা ফাল্গুন …”

  1. আহসান আকাশ (৯৬-০২)

    ব্লগের নামটা ছোটবেলার মত ভুল করে একলা ফ্লাগুন পড়লেই বেশি মানাচ্ছে... আশা করি আগামী বসন্তে সরষে ইলিশ খাওয়ায়ার আশা পূর্ণ হবে 😀


    আমি বাংলায় মাতি উল্লাসে, করি বাংলায় হাহাকার
    আমি সব দেখে শুনে, ক্ষেপে গিয়ে করি বাংলায় চিৎকার ৷

    জবাব দিন
  2. রকিব (০১-০৭)

    ফাল্গুনের শুরুটা সবার ফেসবুক স্ট্যাটাস থেকেই বুঝলাম, আমার এখানে তখনো প্রবল শীত (যাকে বলে ঋণাত্মক মাত্রা)। একটা প্রশ্ন, পহেলা ফাল্গুন পালনের রীতিটা কি আগেও ছিল নাকী অল্প কিছু সময় ধরে চলছে?

    মেয়েটা ছিলো আন্দোলনে, মেয়েটা ভীষণ একা,
    মেয়েটার নাম “বায়ান্ন”তে বুলেট দিয়ে লেখা।
    মেয়েটা আজও ইচ্ছে মেঘে বৃষ্টি দিনের আশা
    মেয়েটা আমার আতর ঢালা ,সাধের বাংলা ভাষা ।

    ভালো লাগার একটা গান। গানটা যখন দিলি, গান নামানোর লিঙ্কটা তখন আমিই জুড়ে দিলাম। এখানে খুঁজলেই পাওয়া যাবে।


    আমি তবু বলি:
    এখনো যে কটা দিন বেঁচে আছি সূর্যে সূর্যে চলি ..

    জবাব দিন
  3. ওয়াহিদা নূর আফজা (৮৫-৯১)

    তারিক অনেকদিন পর তোমাকে দেখলাম। বেশ কিছুদিন ধরে ভাবছিলাম সিসিবির পুরনো অনেক ভালো ভালো ব্লগাররা কোথায় হারিয়ে গেলো? যাইহোক লেখা পড়ে ভালো লাগলো - এক, গুছানো লেখার কারণে - দুই, বুয়েটের এতো উন্নতি হয়েছে দেখে। আমরা যখন পড়তাম তখন মেয়েরা শখ করে মাঝে মধ্যে পহেলা বসন্তে হলুদ শাড়ি পরে বুয়েটে যেতাম। বেরসিক বুয়েটে আমাদেরকে দেখে তখন সং সং লাগতো। অনেকে তো জিজ্ঞেস করেই বসতো - এই তোমরা শাড়ি পরছো ক্যান? তবে অনেক রসিক মানুষজনও ছিল।

    শ্রীকান্তের গানটার কথা অদ্ভুত সুন্দর। যাই শুনে আসি।


    “Happiness is when what you think, what you say, and what you do are in harmony.”
    ― Mahatma Gandhi

    জবাব দিন
  4. আমিন (১৯৯৬-২০০২)

    আরে এ তো দেখি আমার ভার্সিটির সময়কার গল্প লিখলা!!!!
    খুবই ভাল্লাগছে। বইমেলা একলা ফাগুন আর বন্ধুগো আড্ডা মিস কইরা শীতের মধ্যে পইড়া আছি। গানটার জন্য বিশেষ ধন্যবাদ।

    অফটপিক : দুনিয়া তো দেখা যায় আসলেই ছোট। নাভাল ছেলেটাকে তো চিনি মনে হইতাসে 🙂

    জবাব দিন

মওন্তব্য করুন : রাব্বী (১৯৯২-৯৮)

জবাব দিতে না চাইলে এখানে ক্লিক করুন।

দয়া করে বাংলায় মন্তব্য করুন। ইংরেজীতে প্রদানকৃত মন্তব্য প্রকাশ অথবা প্রদর্শনের নিশ্চয়তা আপনাকে দেয়া হচ্ছেনা।