আমার নারী-ভাগ্য … …

রাশি-টাশিতে খুব একটা বিশ্বাস করি না। তবুও যখন পেপারে দেখি “প্রেমের জন্য শুভদিন” কিংবা “নতুন প্রেমের সম্ভাবনা আছে” কিংবা তদ্রুপ কোন কিছু, তখন ভাবি, আরে হলেওতো হতে পারে সত্যিই। জন্ম তারিখ হিসেবে রাশি আমার “কুম্ভ”, কিন্তু ভাগ্যবিধাতার বুঝি আমার জন্ম-মাস নিয়ে কিছুটা সন্দিহান, তাহার কৃপায় আমার রাশি “কন্যা”র কাছাকাছি, অর্থাত আমার নারীকপাল বড়ই চওড়া, কমপক্ষে ১০ আঙ্গুলতো হবেই।

লটারিতে আমার ভাগ্য জীবনেও খুব একটা ভাল ছিল না … তবে লটারিতে যদি নারীকূলের জন্য কোন পুরস্কার থাকে, তাহা হইলে ঐটা আমার হাতে আসিবে- এটা সন্দেহতীতভাবে বলিতে পারি । ২০০৫ এ ssc পরীক্ষায় A+ পাওয়ার সৌভাগ্যে গেলাম আলোর মিছিলের সংবর্ধনায়। পুরো অনুষ্ঠান কাটল লাল-নীল-বেগুনী রঙের ললনা দেখে, সবার শেষে লটারী পর্ব। আমাকে অবাক করিয়া লটারির এক পর্যায়ে আমার হাতে আসিয়া উঠিল “একখানা শাড়ি” … … সেই থেকে বরিশালের মেয়েরা আমাকে চেনে “শাড়ি তারিক” নামে … … সবই কপাল !!! যাই হোক, অনুষ্ঠান শেষে কলেজে ফিরে গেলাম। কিন্তু আমার শাড়ি-প্রাপ্তির খবর চাপা রহিল না। আমার just friend এর বান্ধবীরা তাহাকে জানাইল যে, তারিক একখানা শাড়ি বিজয় করিয়াছে। তিনি আমাকে কলাজে চিঠি লিখিলেন “তোমাদের আলোর মিছিলের গল্প শুনলাম, তুমি নাকি একটা শাড়ি পেয়েছ, ছুটিতে আসে দেখাবে কিন্তু … …” ; সেই চিঠি পড়িয়া আমার প্রাণপ্রিয় (ক্লাস ইলেভেন ছিলামতো, তাই) হাউস মাস্টার “পরিসংখ্যান আজাদ” স্যার ডাকিয়া বলিলেন, “তোমাকেতো ভাল ছেলে বলেই জানি, কিন্তু তুমি এসব শাড়ি-টারিতে জড়ালে কবে থেকে … … …”

এইতো কিছুদিন আগে বুয়েট থেকে বাঁধনের (স্বেচ্ছায় রক্তদাতাদের সংগঠন) পিকনিকে গেলাম লাউয়াছড়া। লটারি পর্ব শুরু হতেই আমার বুক দুরুদুরু … … কিন্তু কিছুক্ষণ যেতে না যেতেই মঞ্চে আমার আগমন এবং পুরস্কার “তিব্বত কদুর তেল” … …

আর একটা পিকনিকে র‌্যাফেল-ড্রর পুরস্কার কেনার মহান দায়িত্বও পড়েছিল আমার উপর। অন্যান্য পুরস্কারের পাশাপাশি শুধুমাত্র মেয়েদের জন্য কিছু পুরস্কার রাখার নির্দেশনা দিয়েছিল কমিটি। তাই নিউমার্কেটে একটা দোকানে ঠুকে বললাম, ভাই, সবচেয়ে কম দামে মেয়েদের চুলের কী ব্যান্ড আছে, দেন। কিন্তু তখন যদি জানতাম যে এ ব্যান্ড আমার ঘরেই আসবে , তাহলে অন্তত সবচেয়ে কম দামিটা কিনতাম না।

এ পর্যন্ত জীবনে লটারিতে ৭ টা পুরস্কার পাইছি, তিনটার কথাতো বললাম, বাকি চারটার শুধু নাম বলি: ভ্যানিটি ব্যাগ, হাঁতির দাতের চিরুণী, চুড়ি, কাশ্মিরী শাল। ভাই, দোয়া করেন, দশ টাকার লটারির প্রথম পুরস্করটা “৪০ লক্ষ টাকা অথবা ঢাকায় একটি ফ্লাট বাড়ী” থেকে পাল্টিয়ে “একটি ডায়মন্ড নেকলেস” করুক, তাইলে আমারে আর ঠেকায় কে ??? ??? ??? ও আর একটা দোয়া, বিবাহের পরেও যেন আমার এইরূপ নারী-ভাগ্য বজায় থাকে, তাহা হইলে অন্তত কিছু খরচ বাঁচিবে … … …

এতো গেল, র‌্যাফেলড্রতে আমার ললনা-কথন। এবারে একটু ভিন্নপ্রসঙ্গে আসি …

আমার বাবা বিবাহ করিয়াছিলেন তাহার পছন্দ করা কন্যাকে। কন্যা খুবই ভাল, কিন্তু দেখতে একেবারেই কালো। অর্থাত আমার আম্মুর কথা বলছি। আব্বু-আম্মুর বিয়ের পর আমার দাদি নাকি তাহার পূত্রবধুর সাথে প্রথম তিনমাস কথাই বলেননি , কারণ কন্যা কালো। যাই হোক, দাদু তার জীবনে এই কালো মেয়ের মর্ম বুঝতে পেরেছিলেন কিনা – আমার জানা নেই। তবে আমি অন্তত বুঝিয়াছি। তাইতো মাঝে মাঝেই নিজের মনে বলে উঠি, “আম্মু , তুমি লক্ষী … …” আর আম্মুর ইয়া লম্বা ঘন-কালো চুলের কথা না বললেই নয়। আমারতো মনে হয়, জীবনান্দ দাশ “চুল তার কবেকার … … ” কবিতায় ভুল করেই নাটোরের বনলতা সেনের কথা লিখেছেন। জীবনান্দের সাথে যদি আমার কোনদিন দেখা হয়, তাহলে আম্মুর চুল দেখিয়ে বলব, “আরে ব্যাটা , তোর কবিতা correction করে ওখানে লেখ ‘বরিশালের পরীবিবি’ … … “ ও ভাল কথা , আমার এই কালো আম্মুর নাম কিন্তু আবার “পরী” । এবারে বলি, আম্মুর কন্যার কথা। তিনি দেখিতে আম্মুর মত কালো না হইলেও “আম্মু” বলিতে তিনি অজ্ঞান। আর আমার এলোকেশী আম্মু তাহার কন্যার চুল নিয়েও যে ঢং (!!!) করেন , তাহা দেখিয়া আমি হিংসায় মরে যাই । আপনারাও দেখেন …আম্মু আর আশা (আরে আমার just friend এর মাথায় যে চুল, তাতে জীবনানন্দ বেঁচে থাকলে লজ্জ্বায়ই মরে যেতেন। )। আদরের এই ছোট বোনটির নাম আশা। আম্মু আর আশার চুলকে আমার খুবই হিংসা হয়, ধুর কবে যে ওর (!!!) মাথার চুল একটু আম্মুর মত হবে !!! ইদানিং আম্মু আর আশা আমাকে ওর চুল নিয়ে একটু বেশিই ক্ষেপায় !!! কিন্তু আমার আশায় গুড়ে বালি !!! শোনেন তাহলে সেই কাহিনী। ২০০৮ এর কথা। একদিন তিনি (ইয়ে আরকি …) আমার হাতে একটা প্যাকেট ধরিয়ে দিয়ে বলিলেন, “নাও , এটা তোমার জন্যে।” আমি শুধাই, “কী আছে এতে?” আমার ইয়ে আমাকে অবাক করে দিয়ে বলে, “চুল !!!” ঘটনা হচ্ছে , তিনি পারলারে গমন করিয়া তাহার মাঝারি চুলগুলি কাটিয়া একেবারে ছোট করিয়াছেন এবং কাটা চুলগুলি প্যাকেটে মোরাইয়া আমার জন্য লহিয়া আসিয়াছেন !!! !!! হায়রে কপাল !!! !!! যাহা হউক, সেবার তিনি আশ্বাস দিয়েছেন যে আর চুল কাটিবেন না এবং সেবারের চুল কাটাও নাকি তাহার “চুলের যত্ন”র একটি অংশ ছিল !!! !!! এই দুই বছরে তাহার চুল সামান্যই বড় হইয়াছে, কিন্তু আমি আশায় আছি, একদিন তাহার চুলও বড় হইবে, আমিও আম্মু আর আশাকে তাহার চুল দেখাইয়া বলিব “আমারও চুল আছে … …” তবে মুখে যত যাই বলি না কেন, আমার জীবনের নারীদের নিয়ে আমি খুব সুখী । মা আর আশাকে সব সময়ই খুশী দেখতে চাই, ভাল দেখতে চাই। আর ওকেতো খুশী রাখতেই হয় !!! !!! কিন্তু কী আর বলব ভাই দু:খের কথা। এই লেখাটা যখন লেখা শুরু করছি, তখন রাত ১১টা ৪০। কিছুক্ষণ পরেই একটা ফোন, আমি ফোনটা ধরেই বেশ খুশী মনে “হ্যালোওওও ………” কিন্তু ওপাশে একটা ভারী কণ্ঠস্বর “আজ যে ১৪ই ফেব্রুয়ারী, সে খেয়াল আছে ??? ???” ব্লগ লিখতে গিয়ে wish করার কথা ভুলেই গেছি !!! এসব ব্যাপারে আমি আবার বরাবরই “লেট লতিফ”। কাল আবার তার Anatomy পরীক্ষা, তাই মেজাজ চরমে। আল্লাহ কাল যেন তার পরীক্ষা ভাল হয়, নইলে পরীক্ষার পরে আমার খবর আছে, ইদানিং আবার কথায় কথায় আম্মুর কাছে আমার নামে নালিশ করে, সাথে আশাটাও দিনে দিনে ওর দলে চলে যাচ্ছে … … … দোয়া কইরেন ভাই-বইনেরা … … … ও ভাল কথা “হ্যাপী ভ্যালেন্টাইস ডে” … … …

ভাগ্যের আরও নমুনা দেখতে চাইলে আমার “মোবাইল নম্বর” পোস্টে ২ মিনিট ঢুঁ মারেন … …

৬,১৫৮ বার দেখা হয়েছে

১১০ টি মন্তব্য : “আমার নারী-ভাগ্য … …”

  1. মাসরুফ (১৯৯৭-২০০৩)

    আহ ভ্যালেন্টাইন দিবসে নারী বিষয়ক পোস্ট-মনটাই ভালো হয়া গেলো 😡 😡

    অফ টপিক-লেখাটা অনেক অনেক সুন্দর হয়েছে।নিজের পরিবারের মা-বোনদের কথা এত সুন্দরভাবে প্রকাশ করাটা বেশ কঠিন।আমি :just: ফ্রেন্ডদের কথা পৃষ্ঠার পর পৃষ্টা লিখে যেতে পারি কিন্তু সবচাইতে আপন মানুষগুলোর কথা লিখতে কেমন জানি একটু লজ্জা লজ্জা লাগে :shy:

    জবাব দিন
  2. ওয়াহিদা নূর আফজা (৮৫-৯১)

    মা বোন আর ইয়ের কথা খুব সুন্দর ভাবে তুলে ধরলে। বুঝা যাচ্ছে ভালোভাবেই এগুচ্ছো।শুভ কামনা রইলো যে জীবনের মধ্যে দিয়ে যেতে চাও তা জান যেতে পার।


    “Happiness is when what you think, what you say, and what you do are in harmony.”
    ― Mahatma Gandhi

    জবাব দিন
  3. আহসান আকাশ (৯৬-০২)

    লেখা ভাল লেগেছে :thumbup: সারাজীবন এই ভাগ্য তোমার সাথে থাকুক ...


    আমি বাংলায় মাতি উল্লাসে, করি বাংলায় হাহাকার
    আমি সব দেখে শুনে, ক্ষেপে গিয়ে করি বাংলায় চিৎকার ৷

    জবাব দিন
  4. আহমদ (৮৮-৯৪)

    চুল তার কবেকার অন্ধকার ... :boss:

    ভাল লাগল তোমার লেখা পড়ে। বিশেষ করে মা-বোনের প্রতি তোমার ফিলিংস দেখে। আশাকরি একই রকমের ফিলিংস তোমার জীবন-সঙ্গিনীর প্রতিও থাকবে। শুভকামনা সবসময়।


    চ্যারিটি বিগিনস এট হোম

    জবাব দিন
  5. রিফাত (২০০২-২০০৮)

    ..'ইদানিং আবার কথায় কথায় আম্মুর কাছে আমার নামে নালিশ করে, সাথে আশাটাও দিনে দিনে ওর দলে চলে যাচ্ছে..'...

    কি যে সুইট একটা ব্যাপার....ভাই আপনাকে অনেক হিংসা হচ্ছে...আমার কপালে এরকম দিন যে কবে আসবে !!!!!

    জবাব দিন
  6. মাহমুদ (১৯৯৮-২০০৪)
    আশাকরি একই রকমের ফিলিংস তোমার 'জীবন-সঙ্গীর' প্রতিও থাকবে।

    ইয়ে মানে ...আহমদ ভাই,বলতে চাচ্ছিলাম কি,তারিক ছেলেটা ভাল,পাবনায় ছিল না তো কখনো ;)) ওর মনে হয় 'জীবন-সঙ্গিনী' হবে 🙂 🙂 🙂

    জবাব দিন

মওন্তব্য করুন : মেহেদী হাসান (১৯৯৬-২০০২)

জবাব দিতে না চাইলে এখানে ক্লিক করুন।

দয়া করে বাংলায় মন্তব্য করুন। ইংরেজীতে প্রদানকৃত মন্তব্য প্রকাশ অথবা প্রদর্শনের নিশ্চয়তা আপনাকে দেয়া হচ্ছেনা।