বাংলাদেশে সোয়াইন ফ্লু : মৃত্যু, আতংক নাকি সচেতনতা ???

বাংলাদেশে সোয়াইন ফ্লুতে একজনের মৃত্যুর খবর নিশ্চত হওয়া গেছে। অথচ গনসচেতনতা বৃদ্ধির লক্ষে সরকারী পদক্ষেপ এখনো উল্লেখ করার মত কিছু নয়। তাই সমসাময়িক এই বিষয়ে একটি বিস্তারিত পোস্ট দেয়ার গুরুত্ব অনুভব করছি। চলুন জেনে নেই সোয়াইন ফ্লু সম্পর্কে ।

সোয়াইন ইনফ্লুয়েঞ্জা শূকরের ইনফ্লুয়েঞ্জা ভাইরাস। ২০০৯ সালের এপ্রিল মাসে পৃথিবীর কয়েকটি দেশে মানব মৃত্যুর কারন বলে চিহ্নিত হয়েছে। এটি মূলত শূকরের মাঝেই পাওয়া যেত যা কিনা শূকরকে ইনফ্লুয়েঞ্জাতে আক্রান্ত করত। অন্যান্য ইনফ্লুয়েঞ্জা ভাইরাসের মতই এটি শ্বাসনালীতে সংক্রমন করে থাকে। পূর্বে সোয়াইন ইনফ্লেঞ্জা ভাইরাস মানুষকে আক্রান্ত না করলেও ধারনা করা হচ্ছে, ২০০৯ সালের এপ্রিলে উদ্ভব হওয়া ভাইরাসটি মানুষ, শূকর ও পাখির ইনফ্লুয়েঞ্জা ভাইরাসের সংমিশ্রনে। এটি ইনফ্লুয়েঞ্জা ভাইরাস টাইপ A (H1N1)।

বাংলাদেশে সোয়াইন ফ্লু
২০০৯ সালের ১৮ জুন বাংলাদেশে প্রথম সোয়াইন ফ্লু সনাক্তকরা হয়। ১৭ বছর বয়স্ক রোগী যুক্তরাষ্ট্র সফর করে দেশে ফিরে অসুস্থ হয়ে পড়েন। বাংলাদেশ সরকারের আইডিসিআর, আসিডিডিআর,বি ও সিডিসির সম্বন্নিত সার্ভাইলেন্স কার্যক্রমে রোগীর দেহে সোয়াইন ইনফ্লুয়েঞ্জা ভাইরাসের উপস্থিতি নির্নয় করা হয়। তবে রোগী ধীরে ধীরে সুস্থ হয়ে উঠেন। বাংলাদেশে এই যাবৎ প্রায় দেড় শতাধিক ব্যক্তির মাঝে সোয়াইন ফ্লু ভাইরাস পাওয়া গেছে এবং একজনের মৃত্যু হয়েছে।
পার্শবর্তী দেশ ভারতে সোয়াইন ফ্লু ব্যাপক ছড়িয়ে পড়ায় বাংলাদেশেও সোয়াইন ফ্লু মহামারী আকার ধারণ করতে পারে বলে বিশেষজ্ঞ মহল মনে করেন। তবে সোয়াইন ফ্লু নিয়ে আতংকিত হবার কিছু নেই, দরকার সচেতনতা। যদিও বাংলাদেশ সরকার ব্যাপক গনসচেতনতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে এ ব্যাপারে এখনো উল্লেখযোগ্য কোন পদক্ষেপ নেয়নি। তাই বাসায় আমাদের ব্যাক্তিগত এবং পারিবারিক সচেতনতা খুব বেশি প্রয়োজন। চলুন জেনে নেই সোয়াইন ফ্লুর লক্ষণগুলো কী কী ???

সোয়াইন ফ্লুর লক্ষণ
=> হঠাৎ করে ২/৩ দিন প্রচণ্ড জ্বর ওঠা এবং এই জ্বর ১০০-১০৩ পর্য়ন্ত হবে, এমন কি আরও বেশিও হতে পারে।
=>ওষুধ সেবনের পরেও জ্বর কখনোই ১০০ এর নিচে নামবে না।
=>সারা শরীরে ব্যাথা হওয়া।
=> প্রচুর হাঁচি এবং শ্বাসকষ্ট হতে পারে।
=>ক্ষুদামন্দা ও আলস্যবোধ করা।

আক্রান্ত হলে করণীয়

ভয় পাবার কোন কারণ নেই। যদিও এখন পর্যন্ত এ রোগের সরাসরি কোন Medicine আবিস্কার হয়নি, তবুও আপনার সচেতনতা এবং নিয়মিত চিকিৎসার মাধ্যমে সম্পূর্ণ সুস্থ হওয়া সম্ভব। এ ক্ষেত্রে নিচের বিষয়গুলোতে নজর দিন:
=> উপরের লক্ষণগুলো অনুভব করলে দ্রুত কোন বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের কাছে যান।
=> প্রচুর পরিমানে পানি এবং পানি জাতীয় ফল খান।
=> খুব বেশি বিশ্রাম নিন এবং যতটা সম্ভব ঘুমের চেষ্টা করুন।
=> পাবলিক প্লেসে যাতায়াত একদম ব্নধ করতে হবে।
=> কমপক্ষে ৭ দিনের জন্যে Complete BED REST এ চলে যান।
=> প্রচুর পরিমানে মানসম্পন্ন খাদ্যগ্রহণ করুন ।

চিকিৎসার জন্যে কোথায় যাবেন?
নিচের হাসপাতালগুলোতে সরকারীভাবে সোয়াইন ফ্লুর স্বাস্থ্যসেবা পাবেন:
১. ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল
২.স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল
৩.সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল
৪. স্বাস্থ্য অধিদফ্তর, মহাখালী, ঢাকা

সরকারীভাবে ফ্রি H1N1 টেস্ট করাতে স্বাস্থ্য অধিদফ্তরের “রোগ নিয়ন্ত্রন কেন্দ্র (IEDCR) “তে যোগাযোগ করতে পারেন নিচের নম্বরে: +8801937000011

সোয়াইন ইনফ্লুয়েঞ্জা প্রতিরোধে করনীয়
সোয়াইন ফ্লু থেকে নিজেকে দূরে রাখতে শরীর সুস্থ রাখার সব রকম চেষ্টা করতে হবে। সেই সাথে নিজের ফ্লু হলে তা যেন অন্যকে আক্রান্ত না করে সেই ব্যাপারে সচেতন থাকা আবশ্যক। যে সমস্ত কাজ সোয়াইন ফ্লু প্রতিরোধে সাহায্য করতে পারে,

* অসুস্থতার সময় হাচি বা কাশির সময় মুখে রুমাল ব্যবহার করুন।
* ফোমাইট (Fomite) বা নির্জীব বস্তু যেমন দরজার নব, কম্পিউটারের কী বোর্ড, মাউস প্রভৃতি নিয়মিত জীবানুনাশক দিয়ে পরিস্কার রাখুন।
* কফ ও শ্লেষ পরিস্কার করার জন্য টিস্যু পেপার ব্যবহার করা এবং ব্যবহারের পরে নিরাপদ স্থানে ফেলুন।
* সব সময় সাবান দিয়ে হাত ধুয়ে পরিস্কার রাখা বিশেষ কফ ও শেষ পরিস্কার করার পর অবশ্যই সাবান দিয়ে হাত পরিস্কার করুন। সাবান দিয়ে হাত ধোয়ার সময় অবশ্যই অন্তত ২০ সেকেন্ড ব্যাপি সাবান দিয়ে হাত ধুতে হবে। তারপর ভাল মত পানি দিয়ে সাবান সরাতে হবে।
* রোগাক্রান্ত ব্যক্তি থেকে দূরে থাকুন।
* আক্রান্ত হলে জরুরী স্বাস্থ্যসেবা গ্রহন করুন।
* আক্রান্ত হলে স্কুল, কলেজ অথবা কর্মস্থলে না গিয়ে বাড়ীতে, অন্যদের থেকে নিরাপদ দুরত্বে থাকুন, যাতে অন্যরা আক্রান্ত না হয়।

পরিশেষ
সোয়াইন ফ্লু নিয়ে ভয়ের কিছু নেই। আমাদের সচেতনতাই পারে আমাদের বিপদমুক্ত রাখতে। তাই নিজে সচেতন থাকুন এবং প্রিয়জনকে সচেতন করুন।

১,৬৪৫ বার দেখা হয়েছে

২৩ টি মন্তব্য : “বাংলাদেশে সোয়াইন ফ্লু : মৃত্যু, আতংক নাকি সচেতনতা ???”

  1. বন্য (৯৯-০৫)

    সুন্দর ও দরকারী পোষ্ট তারিক।
    তোমার এই পোষ্টগুলা খুব ভালো হয়..যদিও অনেক সময় মন্তব্য করা হয়ে উঠে না...ফিচারটাইপ এই লেখাগুলা সিসিবির লেখার বৈচিত্র্যর উদাহরণ হয়ে থাকে... :salute:

    জবাব দিন

মওন্তব্য করুন : তানভীর (৯৪-০০)

জবাব দিতে না চাইলে এখানে ক্লিক করুন।

দয়া করে বাংলায় মন্তব্য করুন। ইংরেজীতে প্রদানকৃত মন্তব্য প্রকাশ অথবা প্রদর্শনের নিশ্চয়তা আপনাকে দেয়া হচ্ছেনা।