কুরবানি ঈদ ও শৈশব

ছোটবেলার কুরবানি ঈদ গুলোর কথা মনে পড়ে। খুব এক্সাইটেড থাকতাম গ্রামের বাড়িতে যাওয়া নিয়ে। আব্বুর সাথে জেদ ধরতাম “একদিন আগে চল না!!” আত্মীয় -স্বজন, ভাই -বোন সবাই আসবে। গরু কিনে বাড়ির সামনে বেধে রাখা হবে। কাঁঠাল পাতা ছিঁড়ে গরু কে খাওয়াবো। বড় কারো সাথে জেদ ধরব গরু নিয়ে মাঠে নিয়ে যাওয়ার জন্য। গরু একটু লাফালাফি শুরু করলেই ভয়ে কারো পিছনে লুকাবো। অনেক বন্ধুত্ব হয়ে যায় গরুটার সাথে। অতঃপর আসে সেই দিন। নামাজের পর গরুটা জবাই করতে দেখি খারাপই লাগত। হয়ত কেঁদেও দিতাম। কান্না থামত। বড় দের পাশে পাশে ঘুরতাম মাংশ কাটাকাটিতে কোন কাজ পাওয়ার আশায়। নিরাশ করে সবাই বলে “তুমি ছোট। তুমি শুধু দেখ।”

দাদা-দাদী কেউ আর নেই। তাই গ্রামের বাড়িতেও আর যাওয়া হয় না। শহরে গরু আগে থেকে এনে রাখা ঝামেলার। তাই বেশিরভাগ সময়ে গরুর চেহারা দেখি ঈদের আগেরদিন। কোন কোন সময় জবাই করার মুহূর্তেই গরু প্রথম দর্শন হয়। যেহেতু সাথে কোন সময় কাটেনি তাই খারাপও লাগে না ওতটা।

দুইবছর আগে মনে হয় একটা নাটক দেখছিলাম টিভিতে যেটাতে কোন এক গ্রামে অনলাইন গরু বিক্রির প্লান করা হয়। ব্যাপার টা দেখে অনেক হেসেছিলাম। আজ সেটা সত্য। বেশ কয়েকটা অনলাইন শপে এবার গরু বিক্রি হচ্ছে। পরেরবছর হয়ত অনলাইনেই কুরবানি করে মাংশ পার্সেল করে পাঠায় দেয়া হবে। আজকালকার বাচ্চার জানবেও না যে কুরবানির ছাগলটা কে সাথে নিয়ে গ্রাম ঘুরে বেড়ানোর মজা টা কেমন হতে পারে।

আলহামদুলিল্লাহ।। অনেক সুন্দর একটা শৈশব ছিল আমার।

১,১৫১ বার দেখা হয়েছে

৪ টি মন্তব্য : “কুরবানি ঈদ ও শৈশব”

  1. পারভেজ (৭৮-৮৪)

    "পরেরবছর হয়ত অনলাইনেই কুরবানি করে মাংশ পার্সেল করে পাঠায় দেয়া হবে..."
    আমার জানা মতে এবছরেই এই কাজটা করছে কমপক্ষে দুটি প্রতিষ্ঠান। বেঙ্গল মিট ও বিক্রয় ডট কম।
    "আজকালকার বাচ্চার জানবেও না যে কুরবানির ছাগলটা কে সাথে নিয়ে গ্রাম ঘুরে বেড়ানোর মজা টা কেমন হতে পারে..."
    এটা জানা কি সত্যিই কোন জরুরী কিছু?
    আমার মনেহয় না।

    কত কত হাবিজাবি দিয়ে লাড়ু বানিয়ে, মাঞ্জা দিয়ে, ঘুড়ি উড়িয়ে, বাকাট্টা খেলা অথবা স্কুলে যাবার হাতখরচ বাচিয়ে ডাকটিকেট কেনা, দলবেধে সিনেমা বা খেলা দেখা অথবা আরিফ বুক ডিপো থেকে ভাড়ায় কুয়াশা, দস্যু বনহুর এনে পড়া - এসবও ছিল দুর্দান্ত উত্তেজনাকর, রোমহর্ষক।
    আমাদের পরের জেনারেশন যে এসবের কিছুই পায়নি, কি আর হ্রাস-বৃদ্ধি হয়েছে তাতে?
    কিছুই না!
    কিছুই না!!


    Do not argue with an idiot they drag you down to their level and beat you with experience.

    জবাব দিন
  2. লুৎফুল (৭৮-৮৪)

    উন্নত বিশ্বের দেশগুলোতে আমাদের দেশের মতোন ইচ্ছে খুশী মতো নিজ বাড়ী বা যেখানে সেখানে পশু কোরবানী সম্ভব নয়। কারণ তা আইন্সিদ্ধ নয়। যার যার কোরবানীর অর্ডার অনুযায়ী তা স্লটার হাউসে হয়ে বাসায় আসে সব গোছগাছ হয়ে।
    আমাদের দেশের সেই টান তৈরী হবার সুযোগটি হয়তো এক সময়ে বইয়ের পাতায় লিখা থাকবে। সামাজিক বিবর্তন আর পরিচ্ছন্নতার প্রতিপার্শিক চাপ এই পরিবর্তনের সঞ্চালক শক্তি।

    জবাব দিন
  3. খায়রুল আহসান (৬৭-৭৩)

    কুরবানি নিয়ে নতুন চিন্তা ভাবনার প্রয়োজন আছে। মূল বাণী হলো প্রিয় কিছুকে sacrifice করা, আর সেই বিসর্জনের অংশটুকু কম সুবিধাপ্রাপ্ত শ্রেণীর মাঝে বিলিয়ে দেয়া। যখন এ নিয়ম হয়েছিলো, তখন গরু ছাগল উট দুম্বা ভেড়া ইত্যাদি ছিলো মানুষের মূল সম্পদ। এখন মানুষ ঐ পশুগুলো ঈদের দু'দিন আগে কিনে ঈদের দিন sacrifice এর বাহানা করে। মানুষের সম্পদের মধ্যে এখন অর্থই প্রধান, এবং প্রিয়ও বটে। আমার মতে সেটাই sacrifice করা উচিত, পশু sacrifice এর পরিবর্তে।
    নিতান্তই ব্যক্তিগত মতামত। বাহাস কাম্য নয়।

    জবাব দিন

মওন্তব্য করুন : পারভেজ (৭৮-৮৪)

জবাব দিতে না চাইলে এখানে ক্লিক করুন।

দয়া করে বাংলায় মন্তব্য করুন। ইংরেজীতে প্রদানকৃত মন্তব্য প্রকাশ অথবা প্রদর্শনের নিশ্চয়তা আপনাকে দেয়া হচ্ছেনা।