ঘটনাপঞ্জি ১

তখন আমরা ক্লাস সেভেনে পড়ি। তখন নাইট প্রেপের পরে কাউন্টিং বলে একটা জিনিস হত। রাতে প্রেপ থেকে এসে ২ মিনিটের মধ্যে ড্রেস চেঞ্জ করে হাউস অফিসের সামনে এসে এক লাইনে দাঁড়াতে হবে, তারপরে কাউন্টিং। যদিও নিয়মটা সবার জন্যেই প্রযোজ্য ছিল, কিন্তু কাউন্টিং আসলে হত সেভেন, এইট আর নাইনের। ক্লাস টেনের হত, তবে ইমিডিয়েট সিনিয়র জেপি হলে তারা আর আসত না। মানে আমরাও আর যাই নি।

যখনকার কথা বলছি তখন শীতকাল। সেদিন ছিলো বৃহস্পতিবার, ঈদের দিন 😀  ডিনার শেষে রাতের কাউন্টিং এর জন্যে অপেক্ষা করছি, কখন কাউন্টিং শেষ হবে আর ঘুমাতে যাব। এমন সময় কাউন্টিং এর বেল পড়ল, আমরা ক্লাস সেভেনের ভেড়ার পাল পড়িমরি করে দৌড় দিলাম। যেন এক্ষুনি একটা যুদ্ধ শুরু হয়ে গেছে, তার সাইরেন বেজেছে, সৈনিকরা অস্ত্রাগারে যাচ্ছে অস্ত্র নেবার জন্যে। যাই হোক কাউন্টিং শুরু হল একজনকে খুঁজে পাওয়া গেল না। মনটাই খারাপ হয়ে গেল। না, একজনকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না দেখে মন খারাপ না, এখন কিছু পোলাও-কোরমা খেতে হবে, আর সেসব খেতে গেলেই ঘুমের দেরী হবে এই ভেবে মন খারাপ হল। কিন্তু কেন জানি জেপি ভাইয়ের সেদিন মন ভাল ছিল, তাই পরবর্তীতে এরকম না করার জন্যে ধমক দিয়ে পাঠিয়ে দিলেন। কিন্তু ঝামেলা তো অন্য জায়গায়। আমাদের রুম লীডার ভাই পাঙ্গাইতে বড়ই পছন্দ করেন। যখন কাউন্টিং এ দাঁড়ায়ে ছিলাম তখন বোধহয় তিনি ঠিক ই সব কিছু খেয়াল করেছেন। আমি শিওর না, কারণ দেখার কোন উপায় নাই, ক্লাস সেভেনের তো ঘাড় ভাঙ্গা, তারা উপরে তাকাতে অক্ষম!  যা ভেবেছিলাম তাই, রুম লিডার ভাই ঠিক ই খেয়াল করেছেন যে একজন নাই। রুমে এসেই তিনি পেলেন আমাদের জনৈক নিখোঁজ ব্যক্তিকে। তার কাছে গিয়ে তিনি একটু পার্ট লইয়া দাঁড়াইলেন। কিন্তু বিধি বাম! যাকে কাউন্টিং এ অনুপস্থিত থাকার জন্যে ধরা হবে সে আসলে জানেই না যে এখন রাত!! ডিনার থেকে এসে সে ঘুমিয়ে পড়েছিল, এবং কাউন্টিং এর বেল দিলে আমরা যখন সবাই সৈনিক দৌড় দিয়েছিলাম সে তখন ঘুম থেকে উঠে ভেবেছে তাকে কেউ ডাক না দিয়েই পিটি তে চলে যাচ্ছে। সেও ঊর্ধশ্বাসে শীতকালীন পিটি ড্রেস পরছে। আর রুম লিডার ভাইকে দেখে বলছে, “ভাই, কেউ আমাকে ডাকে নি ভাই, তাই লেট হয়ে গেছে।”

তখন পড়ি ক্লাস এইটে। ওয়াল ম্যাগাজিন এর কাজ চলছে। আর মাত্র ১০ ঘন্টা আছে পাবলিশ হওয়ার। কিছু একটা সমস্যা হয়েছিল। তার আগে বলে রাখা ভাল যে, আমি সেই ক্লাস সেভেন থেকে হাউসের প্রত্যেকটা ওয়াল ম্যাগাজিন এর সাথে জড়িত থাকি। সারা রাত জাগি। সমস্যাটা নিয়ে কথা চলছে। জনৈক ভাই আমাকে বলছেন, “কি করা যায় বল।” আমি আমার মতামত দিলাম। উনার পছন্দ হল না। আমি আবার বললাম। তারপরে তিনি ক্ষেপে গিয়ে বলেই ফেললেন, “আমি তোমার থেকে এই কলেজের ভাত ৩ বছর বেশি খাইছি। আমারে শিখাইতে আইসো না।”

ক্লাস এইটের ঘটনা। পৌরনীতির ক্লাস চলছে। শুনছি না। শোনার কোন কারণ নেই। যিনি ক্লাস নিচ্ছেন তার ভুল-ভাল ইংরেজি শুনে আমি নিজে যতটুকু পারি তাও গুলায়ে ফেলব। হঠাৎ ভিপি স্যারের আগমন। এসে দেখলেন ক্লাসে দুইজন নাই। ভিপি স্যার আমাদের পাঠদানরত স্যারকে জিজ্ঞেস করলেন দুইজন কোথায়? স্যার তার ইংরেজির স্কিলটা ভিপি স্যার কে দেখানোর জন্যে বললেন, ” স্যার, ওয়ান ফর স্টুল, ওয়ান ফর ইউরিন।”

১,০৪৩ বার দেখা হয়েছে

৭ টি মন্তব্য : “ঘটনাপঞ্জি ১”

মওন্তব্য করুন : সামিয়া (৯৯-০৫)

জবাব দিতে না চাইলে এখানে ক্লিক করুন।

দয়া করে বাংলায় মন্তব্য করুন। ইংরেজীতে প্রদানকৃত মন্তব্য প্রকাশ অথবা প্রদর্শনের নিশ্চয়তা আপনাকে দেয়া হচ্ছেনা।