আফটারনুন প্রেপ

ঢাকায় নাকি এখন ম্যালা গরম। তারওপর বিদ্যুৎ মামা নাকি সারাদিনই লুকোচুরি খেলেন। যানজটের ঠ্যালা নাকি বামে দিয়া চামে আর ডানে দিয়া বামে প্রতিনিয়ত জনগনের বারোটা বাজাইতেছে। নাকি বলিলাম কারন গত দেড় বছর দেশে যাই নাই। লোকমুখে শোনা কাহিনী। ভুক্তভোগি মনে লয় ব্লগের বৃহদাংশ জনগন।

তবে গরমের কথা মনে পড়লেই কলেজের গ্রীষ্মের টার্মটার কথা মনে পড়িয়া যায়। আমার তো শতভাগ ধারনা আফটারনুন প্রেপে কোন পোলা কুনুদিন কিছু পড়ছে কিনা। লাঞ্চের পর দেড় ঘন্টা যাইতে না যাইতেই প্রেপের ঘন্টা। শালারা কি মানুষ না কি! আমি আবার ভাত ঘুমের মানুষ। দুপুরে কিঞ্চিৎ গড়াগড়ি না দিলে শরীরটা ক্যামন জানি ম্যাজম্যাজ করে। কোনমতে বিছানা ছাড়িয়া চোখ রগরাইতে রগরাইতে মুখ ধোয়া, তারপর জেপির ফা*ন চো* ডাক শুনিয়া কোনমতে ছেঁড়া প্যান্টটা টানিয়া ধরিয়া দৌড় দিয়া হাউজের বাইরে। বাহির হইয়াই যেন হাবিয়া দোযখ। ইইহ্‌, এত গরম এই আল্লার দুনিয়ায় কই থিকা যে আহে। তারপর লাইনে দাড়াও আর ব্যাং পোড়া হও। অবশেষে মহান আফটারনুন প্রেপে গিয়া ডেস্কে মাথা দিয়া ঘুমানোর ব্যার্থ চেস্টা। ঘুমানোর কি উপায় আছে, হালায় স্যার গুলারো য্যান খায়া দায়া কোন কাম নাই। কেডা ঘুমায় হেই গুলারে কান ধইরা উঠানো।

আফটারনুন প্রেপের কথা মনে পড়তেই কিঞ্চিৎ অশ্লীল আর বিব্রতকর এক পিস্‌ ঘটনার কথা মনে পড়িয়া গেল। ভুল হইলে জনগন ক্ষমাসুন্দর দৃস্টিতে দেখিবেন। কোন এক আফটারনুন প্রেপের শেষ দিকে ঘন্টা দিয়াছে গেমসে্‌র। যথারীতি স্যারেরা আসিয়া তাগাদা দিতে লাগিলেন সব ঘুম আর আধঘুমে থাকা পোলাপাইনদের। ঘটনা ঘটিল এক নিরীহ ক্যাডেটের ডেস্কে গিয়া। বেচারা যথারীতি ডেস্কে মাথা দিয়া সুখনিদ্রায় ব্যাস্ত ছিল। তবে সেই সুখনিদ্রা মনে হয় একটু বেশিই সুখের ছিল। স্যার আসিয়া দেখিলেন বেচারা ঘুমের ঘোরে এক হাত ডেস্কে মাথার নীচে, আরেক হাত হাফ-প্যান্টের নীচে নিজেকে আলিঙ্গনে ব্যাস্ত। তবে চুড়ান্ত সুখের আগেই ব্যাটা বেরসিক স্যার আসিয়া হাজির।

সে যাই হোক, বলিতেছিলাম গরমের কথা। কি আর বলিব, গেমসে স্যান্ডো গেঞ্জি পড়িয়া প্যারেড স্টেটে দাড়ায়া থাকিতে থাকিতেই গায়ে বিদেশী ললনাদের সান ট্যানের মত অন্তর্বাসের স্থায়ি চিহ্ন বসিয়া যাইত। আর আল্লার অশেষ রহমতে ইডি খাইলে তো কথাই নাই। তবে হঠাৎ করিয়া আজ কেন গরমের কথা মনে পড়িল তার কোন বিশেষ কারন নাই। গত ছয় মাস ধরিয়া এই বিদেশ বিভুঁইয়ে সুর্যের তেমন দেখা পাই নাই। তাপমাত্রা খুব কম না হইলেও শুন্যের কাছাকাছিই ছিল। তাই এতদিন পরে যখন সুর্যের কিঞ্চিৎ দেখা পাইতেছি আর এই সামারে কোই কোই ঘুরিতে যাইব সেই প্ল্যান করিতেছি, তখন হঠাৎ করিয়া আফটারনুন প্রেপের কথা মনে পড়িয়া গেল। তাছাড়া অফিসে কিঞ্চিৎ কাম কম থাকাও একটা কারণ। আহা, আবার যদি আফটারনুন প্রেপ পাইতাম, তবে প্রাণ ভরিয়া ঘুমাইয়া লইতাম। ডেস্কে মাথা দিয়া সেই আধো ঘুমের আরাম আর যে কোথাও পাই না!

১,৪৬১ বার দেখা হয়েছে

২২ টি মন্তব্য : “আফটারনুন প্রেপ”

  1. জুনায়েদ কবীর (৯৫-০১)
    ডেস্কে মাথা দিয়া সেই আধো ঘুমের আরাম আর যে কোথাও পাই না!

    মাইরি, জটিল বলেছেন দাদা... 😀

    মুর্তজা ভাই, আছেন কেমন??
    ভাবী???


    ঐ দেখা যায় তালগাছ, তালগাছটি কিন্তু আমার...হুঁ

    জবাব দিন
  2. আমরা আসার কিছুদিন পুর্বে তখনকার AAG কর্ণেল ফরিদ স্যারের কারনে আফটারনুন প্রেপ বাতিল হয়ে যায়।উনি কলেজে এসে আমাদের সবার কাছ থেকে আফটারনুন প্রেপের সম্পর্কে মতামত নেন।প্রত্যেকে একবাক্যে না করার ফলে তিনি তখনকার AG সিনা ইবনে জামালী(মকক)
    স্যারের কাছে রিপোর্ট করেন।পরের বার ছুটি হতে ফিরে দেখি সেই প্রেপ বাতিল।

    জবাব দিন
  3. আদনান (১৯৯৭-২০০৩)

    ডিসগাস্টিং আফটারনুন প্রেপ... ক্লাস ইলেভেন-টুয়েল্ভ এ থাকতে আমরা আফটারনুন প্রেপ এ কেউ পড়তাম না (বিশেষ করে বি ফর্ম)। জুনিয়র অবস্থায় অবশ্য কোন খানা ছিল না, প্রেপ গার্ড ভাইরা ঘুম/পড়াশুনার গাফিলতি দেখলে চিকেন/হ্যান্ডসডাউন করায় রাখত নাইলে একাডেমিক ব্লকের সামনের লন-এ রগরা দিত পুরা প্রেপ টাইম ধরে (নিজেরা কতক্ষণ কি পড়ত যথেষ্ট ডাউট আছে, জুনিয়র নিয়া ব্যস্ত থাকলে পড়বে কি!)

    জবাব দিন
  4. আহসান আকাশ (৯৬-০২)

    ক্লাস টেন থেকে আফটার নুন প্রেপ গুলো পার করছি গেমস টাইমের ফুটবলের প্লানিং নিয়ে... আমাদের দুইটা পারমানেন্ট টিম ছিল... টিম মিটিং করে আফটার নুন প্রেপগুলো ভালই কাটত।


    আমি বাংলায় মাতি উল্লাসে, করি বাংলায় হাহাকার
    আমি সব দেখে শুনে, ক্ষেপে গিয়ে করি বাংলায় চিৎকার ৷

    জবাব দিন

মওন্তব্য করুন : মরতুজা (৯১-৯৭)

জবাব দিতে না চাইলে এখানে ক্লিক করুন।

দয়া করে বাংলায় মন্তব্য করুন। ইংরেজীতে প্রদানকৃত মন্তব্য প্রকাশ অথবা প্রদর্শনের নিশ্চয়তা আপনাকে দেয়া হচ্ছেনা।